ঢাকা ১২:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোংলায় মাদকের খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতা কারা?

মোংলায় অবাধে চলছে মাদক ব্যবসা। আর এসব চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের প্রকাশ্য বিচরণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে পৌর শহরের  ৯টি ওয়ার্ডের  এলাকাবাসী। কেউ কিছু বললে তাদের ওপর নেমে আসে হুমকি ধামকি সহ নানা জটিলতা। 
এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা বলেন,  মোংলাসহ গ্রামে  দিনরাত সবসময় চলে মাদক কারবারিদের ব্যবসা। মাদকসেবীদের  নির্বিঘ্নে চলে তাদের  ইয়াবা, গাঁজা ও বাংলা মদ, হুইস্কি, বিয়ারসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক সেবনের কাজ। তবে মাদকসেবীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায় সন্ধ্যা থেকে  গভীর রাত পর্যন্ত। রাত যত বাড়ে মাদকসেবীদের জন্য মোংলার বিভিন্ন স্থান হয়  অভয়ারণ্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোংলার  অনেকে জানিয়েছেন, এ  প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে যেসব এলাকার  চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের নাম জানা যায়, সে সকল  মাদক ব্যাবসায়ীরা হলো কবর স্থান রোড এলাকার বড় পুকুর পাড়ের খাদেম মজিবরের ছেলে  রুবেল,  চোরা সাইন, আব্দুল্লাহ, গাঁজা বিক্রেতা কবির, জুয়েল, শাহাদৎ,দুখু। মাদ্রাসা রোড এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী নজরুল নজু, হোসেন, কুমাড়খালি এলাকার আকবার, নারকেল তলা আবাসন এলাকার হিজরা জাবেদ, মালগাজী এলাকার মাজা, বাজার এলাকার বেবী, সাদ্দাম, সিগনাল টাওয়ার এলাকার সিগনাল টাওয়ার এলাকার এমরান, আল-আমিন, দেলো, রুবেল, জাহিদ, আনোয়ার, তাহেরের মোড় এলাকার মোহাম্মদ আলী গ্রিক, অবৈধ বাংলা মদ বিক্রেতা মালেক, বান্ধা ঘাটা এলাকার ইয়াবা সেলিম, সেলিমেরর ছোট ভাই  ডালিম, বিএলএস রোডের বড় পুকুর পাড়ের গাঁজা বিক্রেতা রবিউল, রাজ্জাক সড়কের ও বর্তমান কাইনমারি এলাকার মাদক ব্যবসায়ী তিশা, তিশার আপন ভাই রনি ও তিশার পুরো পরিবারের সদস্য, লুৎফরের ছেলে মেহেদী,  গাঁজা বিক্রেতা ইসমাইল, ৫নং ওয়ার্ড বাজার এলাকার সালমা, ছাড়াবাড়ির এলাকায় লিটন, কুমাড়খালী এলাকার লিটন, তাহেরের মোড় এলাকার মোহাম্মদ আলী,  গ্রিকের ছেলে জাহাঙ্গীর, জোহরা কমিশনারের ছেলে শুভ, নুরু, বাচ্চু, আলাল, মগা শহিদ, বেড়ি বাধের সাদ্দাম, বেবীর মেয়ের জামাই রাসেল, নফর আলীর ছেলে ইসমাইল, সম্রাট, মোংলা পৌর শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের  শিল্পাঞ্চল এলাকার মাদক  ব্যবসায়ীরা হলো- সরকার মার্কেট এলাকার এস. এম মনির, মংলা বাস স্ট্যান্ড এলাকার  রাসেল, ডালিম, তামিম, জহিরুল, দিগরাজ বালুর মাঠ এলাকার  শফিক এরাই  ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা বলে জানা গেছে।
পৌর শহরের ৫ নং ওয়ার্ড  বালুর মাঠ এলাকার জাহাঙ্গীরের বৌ তানিয়া গাঁজার পাইকারি বিক্রেতা। খুলনা থেকে  এ গাঁজা  আনে তানিয়া। তানিয়ার গাঁজা সরবারাহের কাজে তার দুই জন সহযোগী রয়েছে রুবি ও জুলফুর ছেলে বাদশা। তানিয়া কিছুদিন ইয়াবার ব্যবসা করেছেন বলে জানা যায়।
মোংলা শহরের পাইকারি ইয়াবার ব্যবসাহী হলো- কবর স্থান রোডের রুবেল, উপজেলা সংলগ্ন পলাশ, সামসুর রহমান রোডের মোকতার, পলাস সন্ধ্যার পর পাইকারি ইয়াবা বিক্রির জন্য প্লাটিনাম মোটরসাইকেলে করে সারা শহরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে   ইয়াবা পৌছে দেন তিনি।
ইয়াবার  পাইকারি বিক্রেতা আফসার উদ্দিন সড়কে কবীর। কবিরের ইয়াবা আসে ফেনি জেলা থেকে। তার ইয়াবা বিক্রি হয় কার্গো জাহাজের মাদকসেবীদের কাছে। এই জন্য কবীরকে শহরে কম দেখা যায়। কবীর মোংলা নদীতে ইয়াবা সরবরাহ দিয়ে থাকে।
মোংলায় মাদকের বড়  ডিলার আলি হেসেন ও তার  স্ত্রী শারমিন এবং  ৯ নং ওয়ার্ডের  মোসারেফ মোশা   ও তার  দুই স্ত্রী শারমিন ও শিউলি।  এরাই মোংলা পৌর শহরের মরণ নেশা ইয়াবার  বড়  গডফাদার বলে জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা ইয়াবা ব্যাবসায়ী। আলি হোসেন ও মোসারেফের ইয়াবা আসে টেকনাফ থেকে।
কবর স্থান রোডের  রুবেলের ইয়াবা আসে চট্রগ্রাম থেকে। শাহাদাত চট্রগ্রাম থেকে ইয়াবা এনে পাইকারি দিয়ে থাকে কবর স্থান রোডের খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে। বান্ধাঘাটার ইয়াবা সেলিম নিজে ইয়াবা আনেন চট্টগ্রাম থেকে।
মোংলা শহরের আগে যারা মাদকের সম্রাট ছিলেন তাদের নাম লোকমুখে শোনা গেলেও তারা ধরাছোয়ার বাহিরে। প্রশাসন সম্প্রতি তাদের বাসা বাড়িতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করলেও তাদের কাছ থেকেও ছিটে ফাঁটা কোন মাদক উদ্বার করতে সক্ষম হয় নি। তারা অনেকেই এখন পৌর শহরে বসবাস করে না। আবার কেউ মৃত্যুবরণ করেছে।
নিজ বাড়ীতে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রয় করে থাকে।  দূর দূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন মাদকসেবী ইয়াবা, গাঁজা  ক্রয় করে থাকে এ সকল মাদক ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে।
এ সকল মাদক ব্যবসায়ীরা মাঝেমধ্যে কৌশল পরিবর্তন করে ভাড়াটে লোক দিয়ে মাদক বিক্রয়ের নিরাপদ আস্তানা গড়ে তোলে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এছাড়াও  বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  পরিত্যক্ত ভবনে মাদকসেবনসহ  কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতেও ইয়াবা তুলে দিয়ে তাদের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা।
মাদক সেবীরা বেশির ভাগ মোবাইল জুয়ায় আসক্ত। এ জন্য তারা জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধে। কিশোর গ্যাং তৈরি সহ নানা ধরনের অপকর্মে মোংলা শহরের কানাইনগর এলাকার মাদকসেবী অস্র মামলার আসামী নয়ন জড়িত বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী একজন সচেতন ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাদক ব্যবসায়ী পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর কর্তৃক মাঝে মধ্যে মাদক ব্যবসায়ীদের  গ্রেফতার হলেও জামিনে এসে অজ্ঞাত কারণে এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্য চালিয় যাচ্ছে মাদক ব্যবসা । এর মধ্যে রয়েছে সামসুর রহমান রোডের মাদক ব্যাবসায়ী মোকতার, তিশা, ভোলা, সেলিম।
মাদক বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে মোংলাবাসী।
সহকারী এ্যাটনি জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, মাদক-ব্যবসায়ীরা  দেশ ও জাতির সবচেয়ে বড় শত্রু। এদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। মাদকাসক্ত অভ্যাস নির্মূলের জন্য সারাদেশসহ মোংলার  যুব সমাজের একটি সিদ্ধান্ত যথেষ্ট। যুব সমাজের একটি দৃপ্ত শপথই পারে তাদের মাদকের অন্ধকার থেকে ফেরাতে। মাদকাসক্ত হয়ে পৃথিবীতে কেউ কিছুই করতে পারেনি নিজেকে ধ্বংস ছাড়া। তাই আসুন মাদক মুক্ত সমাজ গঠনে মোংলায় সামাজিক আন্দোলন করা উচিত । মাদকমুক্ত মোংলা  হোক সবার অহংকার।
তিনি আরো বলেন,  মোংলায় মাদক নির্মূল করতে সর্বোচ্চ আইনি সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন  সহকারী   অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান।
মোংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবিব হাসান বলেন, মোংলায় মাদকের অপব্যবহার ও মাদকাসক্তিরা ও মাদক বিক্রেতারা দেশের উন্নয়নে অন্যতম বাধা । মোংলায়  মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে । সেই সঙ্গে মাদকসহ গ্রেপ্তারকৃতরা এবং মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে জামিনে ছাড়া না পায়, সেজন্য নিতে হবে কঠোর আইনি ব্যবস্থা।
মোংলা রামপাল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান দিপু বলেন,  মোংলার  ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে নেশায় আসক্ত না হয়, সর্বনাশা নেশায় পথ না হারায়, সে লক্ষ্যে মোংলা থানা  পুলিশ প্রশাসন  কাজ করছে । মাদকের বিরুদ্ধে মোংলাসহ আশপাশ এলাকায়  অভিযান চালানোসহ মাদকবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো  হবে  বলেও জানান তিনি।
মোংলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার সুমী বলেন, যুব সমাজকে মাদকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মোংলা উপজেলা মাদকমুক্ত করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, মোংলা থানা, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  (ওসি) কে  জানিয়ে দ্রুত সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনারও পরিকল্পনা রয়েছে।
মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা  থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালমান রয়েছে । মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতে কিছুটা সক্ষম হচ্ছি, জুলাই মাসেই মাদকের বিরুদ্বে ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছেে মোংলা থানায়। পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে মাদকের জন্য এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানায় থানার এ কর্মকর্তা।
মোংলায় কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের সদর দপ্তর অবস্থিত হওয়ায়, এ অঞ্চলে মাদকবিরোধী অভিযান কার্যকরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। গত কয়েক মাসে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের একক ও যৌথ অভিযানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে এবং একাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ধারাবাহিক সাফল্য মোংলা ও আশেপাশের এলাকাকে মাদকমুক্ত রাখতে কোস্ট গার্ডের প্রতিশ্রুতির একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
মোংলা থানা পুলিশ ও  কোস্ট গার্ডে যৌথ অভিযানে সম্প্রতি কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। মোংলা  থানা পুলিশ এককভাবে মাদক বিরোধী অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে কিছুটা  সক্ষম হচ্ছে।
এছাড়াও মোংলা পৌর শহরসহ ৬টি ইউনিয়নগুলোতে  রয়েছে অজানা অনেক মাদক ব্যবসায়ী যারা পরিকল্পিতভাবে মোংলার যুব সমাজ ধ্বংস করছে মরণ নেশা ইয়াবা বিক্রি করে।
ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

জনপ্রিয় সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

মোংলায় মাদকের খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতা কারা?

আপডেট সময় ১০:১৩:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
মোংলায় অবাধে চলছে মাদক ব্যবসা। আর এসব চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের প্রকাশ্য বিচরণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে পৌর শহরের  ৯টি ওয়ার্ডের  এলাকাবাসী। কেউ কিছু বললে তাদের ওপর নেমে আসে হুমকি ধামকি সহ নানা জটিলতা। 
এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা বলেন,  মোংলাসহ গ্রামে  দিনরাত সবসময় চলে মাদক কারবারিদের ব্যবসা। মাদকসেবীদের  নির্বিঘ্নে চলে তাদের  ইয়াবা, গাঁজা ও বাংলা মদ, হুইস্কি, বিয়ারসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক সেবনের কাজ। তবে মাদকসেবীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায় সন্ধ্যা থেকে  গভীর রাত পর্যন্ত। রাত যত বাড়ে মাদকসেবীদের জন্য মোংলার বিভিন্ন স্থান হয়  অভয়ারণ্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোংলার  অনেকে জানিয়েছেন, এ  প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে যেসব এলাকার  চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের নাম জানা যায়, সে সকল  মাদক ব্যাবসায়ীরা হলো কবর স্থান রোড এলাকার বড় পুকুর পাড়ের খাদেম মজিবরের ছেলে  রুবেল,  চোরা সাইন, আব্দুল্লাহ, গাঁজা বিক্রেতা কবির, জুয়েল, শাহাদৎ,দুখু। মাদ্রাসা রোড এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী নজরুল নজু, হোসেন, কুমাড়খালি এলাকার আকবার, নারকেল তলা আবাসন এলাকার হিজরা জাবেদ, মালগাজী এলাকার মাজা, বাজার এলাকার বেবী, সাদ্দাম, সিগনাল টাওয়ার এলাকার সিগনাল টাওয়ার এলাকার এমরান, আল-আমিন, দেলো, রুবেল, জাহিদ, আনোয়ার, তাহেরের মোড় এলাকার মোহাম্মদ আলী গ্রিক, অবৈধ বাংলা মদ বিক্রেতা মালেক, বান্ধা ঘাটা এলাকার ইয়াবা সেলিম, সেলিমেরর ছোট ভাই  ডালিম, বিএলএস রোডের বড় পুকুর পাড়ের গাঁজা বিক্রেতা রবিউল, রাজ্জাক সড়কের ও বর্তমান কাইনমারি এলাকার মাদক ব্যবসায়ী তিশা, তিশার আপন ভাই রনি ও তিশার পুরো পরিবারের সদস্য, লুৎফরের ছেলে মেহেদী,  গাঁজা বিক্রেতা ইসমাইল, ৫নং ওয়ার্ড বাজার এলাকার সালমা, ছাড়াবাড়ির এলাকায় লিটন, কুমাড়খালী এলাকার লিটন, তাহেরের মোড় এলাকার মোহাম্মদ আলী,  গ্রিকের ছেলে জাহাঙ্গীর, জোহরা কমিশনারের ছেলে শুভ, নুরু, বাচ্চু, আলাল, মগা শহিদ, বেড়ি বাধের সাদ্দাম, বেবীর মেয়ের জামাই রাসেল, নফর আলীর ছেলে ইসমাইল, সম্রাট, মোংলা পৌর শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের  শিল্পাঞ্চল এলাকার মাদক  ব্যবসায়ীরা হলো- সরকার মার্কেট এলাকার এস. এম মনির, মংলা বাস স্ট্যান্ড এলাকার  রাসেল, ডালিম, তামিম, জহিরুল, দিগরাজ বালুর মাঠ এলাকার  শফিক এরাই  ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা বলে জানা গেছে।
পৌর শহরের ৫ নং ওয়ার্ড  বালুর মাঠ এলাকার জাহাঙ্গীরের বৌ তানিয়া গাঁজার পাইকারি বিক্রেতা। খুলনা থেকে  এ গাঁজা  আনে তানিয়া। তানিয়ার গাঁজা সরবারাহের কাজে তার দুই জন সহযোগী রয়েছে রুবি ও জুলফুর ছেলে বাদশা। তানিয়া কিছুদিন ইয়াবার ব্যবসা করেছেন বলে জানা যায়।
মোংলা শহরের পাইকারি ইয়াবার ব্যবসাহী হলো- কবর স্থান রোডের রুবেল, উপজেলা সংলগ্ন পলাশ, সামসুর রহমান রোডের মোকতার, পলাস সন্ধ্যার পর পাইকারি ইয়াবা বিক্রির জন্য প্লাটিনাম মোটরসাইকেলে করে সারা শহরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে   ইয়াবা পৌছে দেন তিনি।
ইয়াবার  পাইকারি বিক্রেতা আফসার উদ্দিন সড়কে কবীর। কবিরের ইয়াবা আসে ফেনি জেলা থেকে। তার ইয়াবা বিক্রি হয় কার্গো জাহাজের মাদকসেবীদের কাছে। এই জন্য কবীরকে শহরে কম দেখা যায়। কবীর মোংলা নদীতে ইয়াবা সরবরাহ দিয়ে থাকে।
মোংলায় মাদকের বড়  ডিলার আলি হেসেন ও তার  স্ত্রী শারমিন এবং  ৯ নং ওয়ার্ডের  মোসারেফ মোশা   ও তার  দুই স্ত্রী শারমিন ও শিউলি।  এরাই মোংলা পৌর শহরের মরণ নেশা ইয়াবার  বড়  গডফাদার বলে জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা ইয়াবা ব্যাবসায়ী। আলি হোসেন ও মোসারেফের ইয়াবা আসে টেকনাফ থেকে।
কবর স্থান রোডের  রুবেলের ইয়াবা আসে চট্রগ্রাম থেকে। শাহাদাত চট্রগ্রাম থেকে ইয়াবা এনে পাইকারি দিয়ে থাকে কবর স্থান রোডের খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে। বান্ধাঘাটার ইয়াবা সেলিম নিজে ইয়াবা আনেন চট্টগ্রাম থেকে।
মোংলা শহরের আগে যারা মাদকের সম্রাট ছিলেন তাদের নাম লোকমুখে শোনা গেলেও তারা ধরাছোয়ার বাহিরে। প্রশাসন সম্প্রতি তাদের বাসা বাড়িতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করলেও তাদের কাছ থেকেও ছিটে ফাঁটা কোন মাদক উদ্বার করতে সক্ষম হয় নি। তারা অনেকেই এখন পৌর শহরে বসবাস করে না। আবার কেউ মৃত্যুবরণ করেছে।
নিজ বাড়ীতে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রয় করে থাকে।  দূর দূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন মাদকসেবী ইয়াবা, গাঁজা  ক্রয় করে থাকে এ সকল মাদক ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে।
এ সকল মাদক ব্যবসায়ীরা মাঝেমধ্যে কৌশল পরিবর্তন করে ভাড়াটে লোক দিয়ে মাদক বিক্রয়ের নিরাপদ আস্তানা গড়ে তোলে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এছাড়াও  বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  পরিত্যক্ত ভবনে মাদকসেবনসহ  কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতেও ইয়াবা তুলে দিয়ে তাদের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা।
মাদক সেবীরা বেশির ভাগ মোবাইল জুয়ায় আসক্ত। এ জন্য তারা জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধে। কিশোর গ্যাং তৈরি সহ নানা ধরনের অপকর্মে মোংলা শহরের কানাইনগর এলাকার মাদকসেবী অস্র মামলার আসামী নয়ন জড়িত বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী একজন সচেতন ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাদক ব্যবসায়ী পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর কর্তৃক মাঝে মধ্যে মাদক ব্যবসায়ীদের  গ্রেফতার হলেও জামিনে এসে অজ্ঞাত কারণে এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্য চালিয় যাচ্ছে মাদক ব্যবসা । এর মধ্যে রয়েছে সামসুর রহমান রোডের মাদক ব্যাবসায়ী মোকতার, তিশা, ভোলা, সেলিম।
মাদক বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে মোংলাবাসী।
সহকারী এ্যাটনি জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, মাদক-ব্যবসায়ীরা  দেশ ও জাতির সবচেয়ে বড় শত্রু। এদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। মাদকাসক্ত অভ্যাস নির্মূলের জন্য সারাদেশসহ মোংলার  যুব সমাজের একটি সিদ্ধান্ত যথেষ্ট। যুব সমাজের একটি দৃপ্ত শপথই পারে তাদের মাদকের অন্ধকার থেকে ফেরাতে। মাদকাসক্ত হয়ে পৃথিবীতে কেউ কিছুই করতে পারেনি নিজেকে ধ্বংস ছাড়া। তাই আসুন মাদক মুক্ত সমাজ গঠনে মোংলায় সামাজিক আন্দোলন করা উচিত । মাদকমুক্ত মোংলা  হোক সবার অহংকার।
তিনি আরো বলেন,  মোংলায় মাদক নির্মূল করতে সর্বোচ্চ আইনি সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন  সহকারী   অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান।
মোংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবিব হাসান বলেন, মোংলায় মাদকের অপব্যবহার ও মাদকাসক্তিরা ও মাদক বিক্রেতারা দেশের উন্নয়নে অন্যতম বাধা । মোংলায়  মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে । সেই সঙ্গে মাদকসহ গ্রেপ্তারকৃতরা এবং মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে জামিনে ছাড়া না পায়, সেজন্য নিতে হবে কঠোর আইনি ব্যবস্থা।
মোংলা রামপাল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান দিপু বলেন,  মোংলার  ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে নেশায় আসক্ত না হয়, সর্বনাশা নেশায় পথ না হারায়, সে লক্ষ্যে মোংলা থানা  পুলিশ প্রশাসন  কাজ করছে । মাদকের বিরুদ্ধে মোংলাসহ আশপাশ এলাকায়  অভিযান চালানোসহ মাদকবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো  হবে  বলেও জানান তিনি।
মোংলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার সুমী বলেন, যুব সমাজকে মাদকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মোংলা উপজেলা মাদকমুক্ত করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, মোংলা থানা, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  (ওসি) কে  জানিয়ে দ্রুত সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনারও পরিকল্পনা রয়েছে।
মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা  থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালমান রয়েছে । মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতে কিছুটা সক্ষম হচ্ছি, জুলাই মাসেই মাদকের বিরুদ্বে ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছেে মোংলা থানায়। পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে মাদকের জন্য এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানায় থানার এ কর্মকর্তা।
মোংলায় কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের সদর দপ্তর অবস্থিত হওয়ায়, এ অঞ্চলে মাদকবিরোধী অভিযান কার্যকরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। গত কয়েক মাসে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের একক ও যৌথ অভিযানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে এবং একাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ধারাবাহিক সাফল্য মোংলা ও আশেপাশের এলাকাকে মাদকমুক্ত রাখতে কোস্ট গার্ডের প্রতিশ্রুতির একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
মোংলা থানা পুলিশ ও  কোস্ট গার্ডে যৌথ অভিযানে সম্প্রতি কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। মোংলা  থানা পুলিশ এককভাবে মাদক বিরোধী অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে কিছুটা  সক্ষম হচ্ছে।
এছাড়াও মোংলা পৌর শহরসহ ৬টি ইউনিয়নগুলোতে  রয়েছে অজানা অনেক মাদক ব্যবসায়ী যারা পরিকল্পিতভাবে মোংলার যুব সমাজ ধ্বংস করছে মরণ নেশা ইয়াবা বিক্রি করে।