দক্ষিণ গাজার নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় আলজাজিরার ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ সালামাসহ পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এই হামলায় মোট নিহত হয়েছেন ২০ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার (২৫ আগস্ট) জানিয়েছে, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় দুই দফায় হামলা চালানো হয়। প্রথমে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, তারপর উদ্ধারকারী দল পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরেই আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়।
নিহত অন্য তিন সাংবাদিক হলেন— বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক হুসাম আল-মাসরি, মরিয়ম আবু দাক্কা, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যারাবিক ও দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে কাজ করতেন তিনি এবং সাংবাদিক মোয়াজ আবু তাহা। রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার সময় তাদের লাইভ ভিডিও ফিড হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে ইসরায়েল, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সকে এই ‘জঘন্য নৃশংস অপরাধের’ জন্য দায়ী করেছে। এই হামলায় রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক হাতেম খালেদও আহত হয়েছেন।
গণহত্যার এই সময়ে সালামা গত বছর আরেক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক হালা আসফোরকে বিয়ে করেছিলেন। অন্যদিকে, মরিয়ম আবু দাক্কা ১২ বছরের এক ছেলেকে রেখে গেছেন, যাকে যুদ্ধের শুরুতে গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
এর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে, গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের সামনে আলজাজিরার বিখ্যাত সাংবাদিক আনাস আল-শরীফসহ চার সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল।
আলজাজিরার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের সংখ্যা কমপক্ষে ২৭৪ জনে দাঁড়িয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, আধুনিক ইতিহাসে যেকোনো সংঘাতের চেয়ে গাজায় বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
আলজাজিরার হিন্দ খোদারি বলেন, ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা রিপোর্টিং চালিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতালগুলোর ইন্টারনেট ও বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করছেন। এসব হাসপাতাল থেকে তারা আহত, অপুষ্টিতে ভোগা ও নিহত মানুষের খবর সংগ্রহ করছেন।
ইসরায়েল একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে, তারা নাসের হাসপাতালের এলাকায় হামলা চালিয়েছে, তবে হামলার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেনি। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘সাংবাদিকদের এভাবে লক্ষ্য করে না’।
এদিকে, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো গাজায় সাংবাদিকদের ওপর ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মিডিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক মোহাম্মদ এলমাসরি বলেন, ইসরায়েল শিখেছে যে তারা গাজা যুদ্ধের সময় কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।
গাজায় ২২ মাসের এই যুদ্ধে ৬২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।