ঢাকা ০৯:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অগ্নি দুর্ঘটনা : যেভাবে রক্ষা পাবে জান-মাল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন নাগরিকদের। অগ্নি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি রোধে বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন অভিমত প্রকাশ করেছেন। তুলে ধরেছেন ভবনে আগুন লাগা প্রতিরোধে কি ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আগাম সুরক্ষায় যা রাখবেন

কোনো একটি ভবনে আগুন লাগার পর সেটি ছড়িয়ে পড়তে কিছুটা হলেও সময় লাগে। এই সময়ের ওপরেই সবকিছু নির্ভর করে। আগুন লাগার প্রথম দশ মিনিটকে বলা হয় প্লাটিনাম আওয়ার। অর্থাৎ দমকল কর্মীকে খবর দেয়ার পর তাদের পৌঁছানো পর্যন্ত সময়। এই সময়ের মধ্যে যদি অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা দিয়ে সেটি নিভিয়ে ফেলা যায় বা অন্তত নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

প্রাথমিক অবস্থায় ভবনে কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে এই অগ্নি নির্বাপণ সম্ভব যার মধ্যে রয়েছে ফায়ার এক্সটিংগুইশার, পানির ব্যবস্থা, ফায়ার হাইড্রেন্ট পয়েন্ট, স্প্রিঙ্কলার, হোস রিল, রাইজার, পাম্প, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম, স্মোক ডিটেক্টর ইত্যাদি।

প্লাটিনাম আওয়ারে আগুন নেভাতে
সাধারণত আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবনে দুই ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করা হয়। সেফটি ম্যানুয়াল অনুযায়ী, প্রতি এক হাজার বর্গফুটের জন্য একটি করে এবিসি ড্রাই কেমিকেল ফায়ার এক্সটিংগুইশার এবং বৈদ্যুতিক সংযোগের জায়গাগুলোয় একটি সিওটু বা কার্বন ডাই অক্সাইড ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখতে হবে। সহজ করে বললে পুরো ভবনের মোট ফায়ার এক্সটিংগুইশারের ৭০ শতাংশ হবে এবিসি ড্রাই কেমিকেল ফায়ার এক্সটিংগুইশার এবং ৩০ শতাংশ হবে কার্বন ডাই অক্সাইড ফায়ার এক্সটিংগুইশার। উচিত হবে ভবনের প্রতিটি তলায় বর্গফুট হিসেবে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বসানো। এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরিবর্তন করা। এই ফায়ার এক্সটিংগুইশার কীভাবে ব্যবহার করা হয় সেটি মহড়ার মাধ্যমে ভবনের প্রতিটি সদস্য শেখা উচিত। এছাড়া ফায়ার বিধিমালায় রান্নাঘরের চুলার আগুন নির্বাপণের জন্য ওয়েট কেমিক্যাল সিস্টেম রাখার কথা বলা আছে।

স্প্রিঙ্কলার
আগুন নেভানোর আরেকটি কার্যকর উপায় হলো স্প্রিঙ্কলার। এটি মূলত ভবনের ছাদে বসানো শাওয়ারের মতো একটি ব্যবস্থা যা ভবনের পানি সঞ্চালন লাইনের সাথে যুক্ত থাকে। কোনো একটি স্থানের তাপমাত্রা ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে এই স্প্রিঙ্কলার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিস্ফোরিত হয়ে পানি ছেটাতে শুরু করে। এতে আগুন নিভে যায়। চেষ্টা করতে হবে প্রতি ২০০ বর্গফুট জায়গায় একটি করে স্প্রিঙ্কলার হেড বসাতে। ভবন যদি বহুতল বিশিষ্ট হয় সেটা বাণিজ্যিক হোক বা আবাসিক তাহলে স্প্রিঙ্কলার লাগাতে হবে। আবার এক তলা বিশিষ্ট হলেও সেটি যদি পণ্যের গুদাম বা কেমিকেল রাখার কাজে ব্যবহার হয় তাহলেও স্প্রিঙ্কলার লাগানো প্রয়োজন। এই কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে যেকোনো ভবনে প্লাটিনাম আওয়ারের মধ্যেই আগুন নিভিয়ে ফেলা সম্ভব।

হোস রিল
দমকল বাহিনী আসার পর
আগুন যদি ছড়িয়েও যায় তাহলে দমকল বাহিনী যেন কার্যকর উপায়ে অগ্নি নির্বাপণ করতে পারে সেজন্য ভবনের ভেতরে কিছু ব্যবস্থা রাখতে হবে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত পানি পৌঁছানো নিশ্চিত করা। এজন্য প্রতিটি তলায় ৩৩ মিটার জায়গার জন্য একটি করে হোস রিল বসানো প্রয়োজন। যার ব্যাস হবে হবে দেড় ইঞ্চি থেকে আড়াই ইঞ্চির মতো। একে ল্যান্ডিং ভালভও বলা হয়। এই হোস রিলে পানি আসে রাইজারের মাধ্যমে। রাইজার হলো ভবনের ভেতরে পানির পাইপের একটি ব্যবস্থা যা দুর্ঘটনার সময় হোস রিলে দ্রুত পানি সরবরাহ করে। ফায়ার বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতি তলার ছয়শ বর্গমিটার ফ্লোর এরিয়ার জন্য একটি ও অতিরিক্ত ফ্লোর এরিয়ার জন্য আরও একটি রাইজার পয়েন্ট থাকতে হবে। এজন্য ন্যূনতম ৫০ হাজার গ্যালন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রাখার কথাও বিধিমালায় বলা হয়েছে। রিজার্ভার থেকে পানি যাতে নেয়া যায় সেজন্য ড্রাইভওয়ে থাকতে হবে। এছাড়া অগ্নি নিরোধক সামগ্রী দিয়ে ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ নির্মাণের কথাও বিধিমালায় আছে।
ক্ষয়ক্ষতি কমাতে যা দরকার

বনানীর এফ আর টাওয়ারে যখন আগুন ধরেছিল তখন ওপরের তলার অনেকে ঘুণাক্ষরেও টের পাননি ভবনে আগুন লেগেছে। কারণ ভবনটিতে কোনো ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম কাজ করছিল না। এমনকি সবশেষ বেইলি রোডের আগুন লাগার বিষয় মানুষ বুঝতে পেরেছে ধোঁয়া ছড়িয়ে যাওয়ার পর। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা মানুষদের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে এমন তথ্য জানা গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালার্ম সিস্টেম চালু থাকলে অগ্নিকাণ্ডের সাথে সাথে সবাই সতর্ক হতে পারে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। নতুন পুরানো সব ভবনে স্মোক ডিটেক্টর এবং অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপন এবং সেগুলো কাজ করছে কি না তা নিয়মিত পরীক্ষা করার ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আগুন লাগলে পুরো ভবনের বাসিন্দারাই আগুন সম্পর্কে জানতে পারেন এবং দ্রুত তারা ভবন খালি করে নিচে নেমে আসতে পারেন। ফলে প্রাণহানি ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব।
নিরাপদে বের হতে

আগুন লাগার পর সবচেয়ে জরুরি হলো ভবনের প্রতিটি মানুষকে নিরাপদে বের করে আনা আর এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় বহির্নিগমন সিঁড়ি। সাধারণত ভবনের আয়তন যতো বড় হবে সিঁড়ির সংখ্যা ও পরিধিও ততো বেশি থাকতে হয়। ফায়ার সার্ভিস বিধিমালা অনুযায়ী সব ধরনের ভবনে জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ও ফ্লোর প্ল্যানে এটি থাকতে হবে। এ পথ যাতে সহজে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আবাসিক ভবন ছয় তলার বেশি হলে দুটি সিঁড়ি থাকতে হবে এবং সিঁড়িগুলো কমপক্ষে তিন ফুট প্রশস্ত হতে হবে। আবার বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে জনবলের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে সিঁড়ি কম বেশি হতে পারে। যদি ৫০০ জনের কম মানুষের আনাগোনা হয় তাহলে অন্তত দুটো সিঁড়ি থাকা প্রয়োজন। ৫০০ থেকে এক হাজার মানুষের আনাগোনা থাকলে তিনটি সিঁড়ি। তার বেশি হলে চারটি সিঁড়ি রাখতে হবে। পুরনো ভবনে চাইলে সংস্কার করে এই পরিবর্তন আনা সম্ভব। সিঁড়ির চারদিকে যদি আগুন প্রতিরোধক রক উল বসানো হয়, সিলিকনের প্রলেপ দেয়া থাকে কিংবা ক্যালসিয়াম সিলিকেট বোর্ড ব্যবহার করা হয় তাহলে আগুন টানা তিন চার ঘণ্টার জন্য প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে প্রতি অন্তত ১০ তলা পর পর রিফিউজ এরিয়া অর্থাৎ আগুন, তাপ ও ধোঁয়ামুক্ত নিরাপদ ফাঁকা এলাকা রাখার কথা ফায়ার বিধিমালায় বলা রয়েছে।
আগুন ছড়ানো আটকাতে

ভবন নির্মাণের সময় দেয়াল, ছাদ, মেঝে, দরজা এবং আসবাবপত্রের জন্য আগুন-প্রতিরোধী বা অ-দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করাও নিরাপদ থাকার আরেকটি উপায় হতে পারে। এক্ষেত্রে সিনথেটিক বা হাইড্রোকার্বন উপাদান থাকে এমন উপকরণ যেমন পারটেক্স বোর্ড দিয়ে ভবনের ভেতরের সাজসজ্জা না করাই ভাল। এটি অত্যন্ত দাহ্য।
এসব উপাদানের মাধ্যমে একদিকে যেমন আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্যদিকে তেমনি আগুন লাগলে এসব উপাদান পুড়ে বিষাক্ত ধোয়া তৈরি হয় যা নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে মানুষ প্রায় সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এমনকি মারাও যেতে পারে। ফলে আগুনে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ে। এর পরিবর্তে সিলিকনের প্রলেপ বা মিনারেল ফাইবারে তৈরি রক উল জাতীয় উপকরণ কিংবা ক্যালসিয়াম সিলিকেট বোর্ড ব্যবহার করা নিরাপদ বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক শাকিল নওয়াজ।

শর্ট সার্কিট রোধে
ভবনগুলোয় আগুন লাগার পেছনে অন্যতম বড় কারণ হলো বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট। বৈদ্যুতিক সংযোগ সুরক্ষিত না থাকলে শর্ট সার্কিট হয়। আর এই সুরক্ষা নির্ভর করে ক্যাবলের ওপরে কী ধরনের আবরণ দেয়া আছে তার ওপর। আবাসিক ভবনগুলোয় সাধারণত তামার তারের ওপর পিভিসির আবরণ দেয়া থাকে। এই আবরণ মাইনাস ৫৫ থেকে ১০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম যা শর্ট সার্কিট বা যেকোনো অগ্নি দুর্ঘটনায় সুরক্ষা দেয়। এক্সপিএলই আবরণের সহনশীলতা এর চাইতেও বেশি। বিদ্যুতের লোড অনুযায়ী যদি ক্যাবল ব্যবহার করা না হয়, তখন সেটি গরম হয়ে যায়। ফলে ধীরে-ধীরে ক্যাবলের উপরে প্লাস্টিকের আবরণ নষ্ট হয়ে দুটো ক্যাবল মিলে গিয়ে শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি তৈরি হয়।

এক্ষেত্রে বাড়ি নির্মাণের সময় বৈদ্যুতিক লাইনে যেন মানসম্পন্ন ক্যাবল ব্যবহার করা হয় এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের লোড যেন সীমার মধ্যে রাখা হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অপারেশন্স ও মেইনন্টেন্যান্স বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

বহুতল ভবনগুলোয় এসি, হিটিং, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগের জন্য যে পাইপগুলো টানা হয়, সেগুলো যায় ডাক্ট লাইন এবং ক্যাবল হোলের ভেতর দিয়ে। এই ডাক্ট লাইন ও গর্ত দিয়ে ধোঁয়া এবং আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। নওয়াজ বলছেন, এজন্যে ডাক্ট লাইন ও ক্যাবল হোলগুলো আগুন প্রতিরোধক উপাদান দিয়ে ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে।
সিলিন্ডার ব্যবস্থাপনা

আজকাল যেসব বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ নেই তারা বাসায় সিলিন্ডারে গ্যাস ব্যবহার করেন। আবার অনেক বাসার নিচ তলায় সব সিলিন্ডার বসানো হয়, সেখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে যার যার চুলায় গ্যাস পৌঁছায়। সিলিন্ডারগুলো যথেষ্ট নিরাপদভাবে তৈরি করা হলেও এর অসতর্ক ব্যবহার আগুন ধরার বড় কারণ।

ঘরে ঘরে বিশেষ করে চুলার আশেপাশে সিলিন্ডার না রেখে আবাসিক ভবনের নিচে সব সিলিন্ডারগুলো একসাথে রাখা নিরাপদ বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক এবং অগ্নি নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বিএম ইন্টারন্যাশনাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর একেএম শাকিল নওয়াজ। তার পরামর্শ, সিলিন্ডার রাখার জায়গাটি এমন হতে হবে যেন বাতাস কোনো বাধা ছাড়াই চলাচল করতে পারে। এতে কোনো সিলিন্ডার লিক হলেও গ্যাস জমার আশঙ্কা থাকবে না। সেই সাথে সিলিন্ডারগুলো সুরক্ষিত রাখতে চারিদিকে গ্রিলের খাঁচা বানাতে হবে।

সিলিন্ডার রাখার জায়গাটি পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। আশেপাশে যেন কোনো দাহ্য পদার্থ বা বিদ্যুতের লাইন না থাকে। সিলিন্ডারে এমন রেগুলেটর বসাতে হবে যেগুলোয় অটো শাটডাউন সিস্টেম রয়েছে। বাসায় যদি রাখতেই হয় তাহলে এটি সোজা দাঁড় করিয়ে চুলা থেকে অন্তত ১০ ফুট দূরে রাখতে হবে। সিলিন্ডারের গ্যাস বেশ ভারী হয়। সেক্ষেত্রে সিলিন্ডারের নিচে ও ওপরে দুদিকেই যেন ভেন্টিলেশন সিস্টেম থাকে। গ্যাসের পাইপ ছয় মাস পর পর পরিবর্তন করতে হবে। গ্যাস লিক হচ্ছে কিনা বুঝতে চুলা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। সিলিন্ডার ট্যাপ খেলে বা মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাতিল করে দেবেন।

মহড়া করতে চাইলে
সাধারণত বড় বড় বাণিজ্যিক ভবনগুলোয় অগ্নি মহড়া হতে দেখা যায়। অর্থাৎ হঠাৎ আগুন লাগলে সবাই কীভাবে, কোন পথে নিরাপদে বেরিয়ে আসবেন, কীভাবে প্রাথমিক পরিস্থিতিতে অগ্নি নির্বাপণ করবেন, যন্ত্রগুলো কীভাবে ব্যবহার করবেন তা বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ঢাকার অগ্নি দুর্ঘটনার যে পরিস্থিতি তা বিবেচনা করলে আবাসিক ভবনও নিরাপদ নয়। এখানেও অগ্নি মহড়ার প্রয়োজন আছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

অগ্নি দুর্ঘটনা : যেভাবে রক্ষা পাবে জান-মাল

আপডেট সময় ১১:৪৩:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন নাগরিকদের। অগ্নি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি রোধে বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন অভিমত প্রকাশ করেছেন। তুলে ধরেছেন ভবনে আগুন লাগা প্রতিরোধে কি ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আগাম সুরক্ষায় যা রাখবেন

কোনো একটি ভবনে আগুন লাগার পর সেটি ছড়িয়ে পড়তে কিছুটা হলেও সময় লাগে। এই সময়ের ওপরেই সবকিছু নির্ভর করে। আগুন লাগার প্রথম দশ মিনিটকে বলা হয় প্লাটিনাম আওয়ার। অর্থাৎ দমকল কর্মীকে খবর দেয়ার পর তাদের পৌঁছানো পর্যন্ত সময়। এই সময়ের মধ্যে যদি অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা দিয়ে সেটি নিভিয়ে ফেলা যায় বা অন্তত নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

প্রাথমিক অবস্থায় ভবনে কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে এই অগ্নি নির্বাপণ সম্ভব যার মধ্যে রয়েছে ফায়ার এক্সটিংগুইশার, পানির ব্যবস্থা, ফায়ার হাইড্রেন্ট পয়েন্ট, স্প্রিঙ্কলার, হোস রিল, রাইজার, পাম্প, ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম, স্মোক ডিটেক্টর ইত্যাদি।

প্লাটিনাম আওয়ারে আগুন নেভাতে
সাধারণত আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবনে দুই ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করা হয়। সেফটি ম্যানুয়াল অনুযায়ী, প্রতি এক হাজার বর্গফুটের জন্য একটি করে এবিসি ড্রাই কেমিকেল ফায়ার এক্সটিংগুইশার এবং বৈদ্যুতিক সংযোগের জায়গাগুলোয় একটি সিওটু বা কার্বন ডাই অক্সাইড ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখতে হবে। সহজ করে বললে পুরো ভবনের মোট ফায়ার এক্সটিংগুইশারের ৭০ শতাংশ হবে এবিসি ড্রাই কেমিকেল ফায়ার এক্সটিংগুইশার এবং ৩০ শতাংশ হবে কার্বন ডাই অক্সাইড ফায়ার এক্সটিংগুইশার। উচিত হবে ভবনের প্রতিটি তলায় বর্গফুট হিসেবে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বসানো। এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরিবর্তন করা। এই ফায়ার এক্সটিংগুইশার কীভাবে ব্যবহার করা হয় সেটি মহড়ার মাধ্যমে ভবনের প্রতিটি সদস্য শেখা উচিত। এছাড়া ফায়ার বিধিমালায় রান্নাঘরের চুলার আগুন নির্বাপণের জন্য ওয়েট কেমিক্যাল সিস্টেম রাখার কথা বলা আছে।

স্প্রিঙ্কলার
আগুন নেভানোর আরেকটি কার্যকর উপায় হলো স্প্রিঙ্কলার। এটি মূলত ভবনের ছাদে বসানো শাওয়ারের মতো একটি ব্যবস্থা যা ভবনের পানি সঞ্চালন লাইনের সাথে যুক্ত থাকে। কোনো একটি স্থানের তাপমাত্রা ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে এই স্প্রিঙ্কলার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিস্ফোরিত হয়ে পানি ছেটাতে শুরু করে। এতে আগুন নিভে যায়। চেষ্টা করতে হবে প্রতি ২০০ বর্গফুট জায়গায় একটি করে স্প্রিঙ্কলার হেড বসাতে। ভবন যদি বহুতল বিশিষ্ট হয় সেটা বাণিজ্যিক হোক বা আবাসিক তাহলে স্প্রিঙ্কলার লাগাতে হবে। আবার এক তলা বিশিষ্ট হলেও সেটি যদি পণ্যের গুদাম বা কেমিকেল রাখার কাজে ব্যবহার হয় তাহলেও স্প্রিঙ্কলার লাগানো প্রয়োজন। এই কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে যেকোনো ভবনে প্লাটিনাম আওয়ারের মধ্যেই আগুন নিভিয়ে ফেলা সম্ভব।

হোস রিল
দমকল বাহিনী আসার পর
আগুন যদি ছড়িয়েও যায় তাহলে দমকল বাহিনী যেন কার্যকর উপায়ে অগ্নি নির্বাপণ করতে পারে সেজন্য ভবনের ভেতরে কিছু ব্যবস্থা রাখতে হবে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত পানি পৌঁছানো নিশ্চিত করা। এজন্য প্রতিটি তলায় ৩৩ মিটার জায়গার জন্য একটি করে হোস রিল বসানো প্রয়োজন। যার ব্যাস হবে হবে দেড় ইঞ্চি থেকে আড়াই ইঞ্চির মতো। একে ল্যান্ডিং ভালভও বলা হয়। এই হোস রিলে পানি আসে রাইজারের মাধ্যমে। রাইজার হলো ভবনের ভেতরে পানির পাইপের একটি ব্যবস্থা যা দুর্ঘটনার সময় হোস রিলে দ্রুত পানি সরবরাহ করে। ফায়ার বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতি তলার ছয়শ বর্গমিটার ফ্লোর এরিয়ার জন্য একটি ও অতিরিক্ত ফ্লোর এরিয়ার জন্য আরও একটি রাইজার পয়েন্ট থাকতে হবে। এজন্য ন্যূনতম ৫০ হাজার গ্যালন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রাখার কথাও বিধিমালায় বলা হয়েছে। রিজার্ভার থেকে পানি যাতে নেয়া যায় সেজন্য ড্রাইভওয়ে থাকতে হবে। এছাড়া অগ্নি নিরোধক সামগ্রী দিয়ে ফায়ার ফাইটিং পাম্প হাউজ নির্মাণের কথাও বিধিমালায় আছে।
ক্ষয়ক্ষতি কমাতে যা দরকার

বনানীর এফ আর টাওয়ারে যখন আগুন ধরেছিল তখন ওপরের তলার অনেকে ঘুণাক্ষরেও টের পাননি ভবনে আগুন লেগেছে। কারণ ভবনটিতে কোনো ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম কাজ করছিল না। এমনকি সবশেষ বেইলি রোডের আগুন লাগার বিষয় মানুষ বুঝতে পেরেছে ধোঁয়া ছড়িয়ে যাওয়ার পর। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা মানুষদের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে এমন তথ্য জানা গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালার্ম সিস্টেম চালু থাকলে অগ্নিকাণ্ডের সাথে সাথে সবাই সতর্ক হতে পারে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। নতুন পুরানো সব ভবনে স্মোক ডিটেক্টর এবং অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপন এবং সেগুলো কাজ করছে কি না তা নিয়মিত পরীক্ষা করার ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আগুন লাগলে পুরো ভবনের বাসিন্দারাই আগুন সম্পর্কে জানতে পারেন এবং দ্রুত তারা ভবন খালি করে নিচে নেমে আসতে পারেন। ফলে প্রাণহানি ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব।
নিরাপদে বের হতে

আগুন লাগার পর সবচেয়ে জরুরি হলো ভবনের প্রতিটি মানুষকে নিরাপদে বের করে আনা আর এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় বহির্নিগমন সিঁড়ি। সাধারণত ভবনের আয়তন যতো বড় হবে সিঁড়ির সংখ্যা ও পরিধিও ততো বেশি থাকতে হয়। ফায়ার সার্ভিস বিধিমালা অনুযায়ী সব ধরনের ভবনে জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ও ফ্লোর প্ল্যানে এটি থাকতে হবে। এ পথ যাতে সহজে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আবাসিক ভবন ছয় তলার বেশি হলে দুটি সিঁড়ি থাকতে হবে এবং সিঁড়িগুলো কমপক্ষে তিন ফুট প্রশস্ত হতে হবে। আবার বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে জনবলের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে সিঁড়ি কম বেশি হতে পারে। যদি ৫০০ জনের কম মানুষের আনাগোনা হয় তাহলে অন্তত দুটো সিঁড়ি থাকা প্রয়োজন। ৫০০ থেকে এক হাজার মানুষের আনাগোনা থাকলে তিনটি সিঁড়ি। তার বেশি হলে চারটি সিঁড়ি রাখতে হবে। পুরনো ভবনে চাইলে সংস্কার করে এই পরিবর্তন আনা সম্ভব। সিঁড়ির চারদিকে যদি আগুন প্রতিরোধক রক উল বসানো হয়, সিলিকনের প্রলেপ দেয়া থাকে কিংবা ক্যালসিয়াম সিলিকেট বোর্ড ব্যবহার করা হয় তাহলে আগুন টানা তিন চার ঘণ্টার জন্য প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে প্রতি অন্তত ১০ তলা পর পর রিফিউজ এরিয়া অর্থাৎ আগুন, তাপ ও ধোঁয়ামুক্ত নিরাপদ ফাঁকা এলাকা রাখার কথা ফায়ার বিধিমালায় বলা রয়েছে।
আগুন ছড়ানো আটকাতে

ভবন নির্মাণের সময় দেয়াল, ছাদ, মেঝে, দরজা এবং আসবাবপত্রের জন্য আগুন-প্রতিরোধী বা অ-দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করাও নিরাপদ থাকার আরেকটি উপায় হতে পারে। এক্ষেত্রে সিনথেটিক বা হাইড্রোকার্বন উপাদান থাকে এমন উপকরণ যেমন পারটেক্স বোর্ড দিয়ে ভবনের ভেতরের সাজসজ্জা না করাই ভাল। এটি অত্যন্ত দাহ্য।
এসব উপাদানের মাধ্যমে একদিকে যেমন আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্যদিকে তেমনি আগুন লাগলে এসব উপাদান পুড়ে বিষাক্ত ধোয়া তৈরি হয় যা নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে মানুষ প্রায় সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এমনকি মারাও যেতে পারে। ফলে আগুনে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ে। এর পরিবর্তে সিলিকনের প্রলেপ বা মিনারেল ফাইবারে তৈরি রক উল জাতীয় উপকরণ কিংবা ক্যালসিয়াম সিলিকেট বোর্ড ব্যবহার করা নিরাপদ বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক শাকিল নওয়াজ।

শর্ট সার্কিট রোধে
ভবনগুলোয় আগুন লাগার পেছনে অন্যতম বড় কারণ হলো বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট। বৈদ্যুতিক সংযোগ সুরক্ষিত না থাকলে শর্ট সার্কিট হয়। আর এই সুরক্ষা নির্ভর করে ক্যাবলের ওপরে কী ধরনের আবরণ দেয়া আছে তার ওপর। আবাসিক ভবনগুলোয় সাধারণত তামার তারের ওপর পিভিসির আবরণ দেয়া থাকে। এই আবরণ মাইনাস ৫৫ থেকে ১০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম যা শর্ট সার্কিট বা যেকোনো অগ্নি দুর্ঘটনায় সুরক্ষা দেয়। এক্সপিএলই আবরণের সহনশীলতা এর চাইতেও বেশি। বিদ্যুতের লোড অনুযায়ী যদি ক্যাবল ব্যবহার করা না হয়, তখন সেটি গরম হয়ে যায়। ফলে ধীরে-ধীরে ক্যাবলের উপরে প্লাস্টিকের আবরণ নষ্ট হয়ে দুটো ক্যাবল মিলে গিয়ে শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি তৈরি হয়।

এক্ষেত্রে বাড়ি নির্মাণের সময় বৈদ্যুতিক লাইনে যেন মানসম্পন্ন ক্যাবল ব্যবহার করা হয় এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের লোড যেন সীমার মধ্যে রাখা হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অপারেশন্স ও মেইনন্টেন্যান্স বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

বহুতল ভবনগুলোয় এসি, হিটিং, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগের জন্য যে পাইপগুলো টানা হয়, সেগুলো যায় ডাক্ট লাইন এবং ক্যাবল হোলের ভেতর দিয়ে। এই ডাক্ট লাইন ও গর্ত দিয়ে ধোঁয়া এবং আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। নওয়াজ বলছেন, এজন্যে ডাক্ট লাইন ও ক্যাবল হোলগুলো আগুন প্রতিরোধক উপাদান দিয়ে ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে।
সিলিন্ডার ব্যবস্থাপনা

আজকাল যেসব বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ নেই তারা বাসায় সিলিন্ডারে গ্যাস ব্যবহার করেন। আবার অনেক বাসার নিচ তলায় সব সিলিন্ডার বসানো হয়, সেখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে যার যার চুলায় গ্যাস পৌঁছায়। সিলিন্ডারগুলো যথেষ্ট নিরাপদভাবে তৈরি করা হলেও এর অসতর্ক ব্যবহার আগুন ধরার বড় কারণ।

ঘরে ঘরে বিশেষ করে চুলার আশেপাশে সিলিন্ডার না রেখে আবাসিক ভবনের নিচে সব সিলিন্ডারগুলো একসাথে রাখা নিরাপদ বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক এবং অগ্নি নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বিএম ইন্টারন্যাশনাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর একেএম শাকিল নওয়াজ। তার পরামর্শ, সিলিন্ডার রাখার জায়গাটি এমন হতে হবে যেন বাতাস কোনো বাধা ছাড়াই চলাচল করতে পারে। এতে কোনো সিলিন্ডার লিক হলেও গ্যাস জমার আশঙ্কা থাকবে না। সেই সাথে সিলিন্ডারগুলো সুরক্ষিত রাখতে চারিদিকে গ্রিলের খাঁচা বানাতে হবে।

সিলিন্ডার রাখার জায়গাটি পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। আশেপাশে যেন কোনো দাহ্য পদার্থ বা বিদ্যুতের লাইন না থাকে। সিলিন্ডারে এমন রেগুলেটর বসাতে হবে যেগুলোয় অটো শাটডাউন সিস্টেম রয়েছে। বাসায় যদি রাখতেই হয় তাহলে এটি সোজা দাঁড় করিয়ে চুলা থেকে অন্তত ১০ ফুট দূরে রাখতে হবে। সিলিন্ডারের গ্যাস বেশ ভারী হয়। সেক্ষেত্রে সিলিন্ডারের নিচে ও ওপরে দুদিকেই যেন ভেন্টিলেশন সিস্টেম থাকে। গ্যাসের পাইপ ছয় মাস পর পর পরিবর্তন করতে হবে। গ্যাস লিক হচ্ছে কিনা বুঝতে চুলা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। সিলিন্ডার ট্যাপ খেলে বা মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাতিল করে দেবেন।

মহড়া করতে চাইলে
সাধারণত বড় বড় বাণিজ্যিক ভবনগুলোয় অগ্নি মহড়া হতে দেখা যায়। অর্থাৎ হঠাৎ আগুন লাগলে সবাই কীভাবে, কোন পথে নিরাপদে বেরিয়ে আসবেন, কীভাবে প্রাথমিক পরিস্থিতিতে অগ্নি নির্বাপণ করবেন, যন্ত্রগুলো কীভাবে ব্যবহার করবেন তা বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ঢাকার অগ্নি দুর্ঘটনার যে পরিস্থিতি তা বিবেচনা করলে আবাসিক ভবনও নিরাপদ নয়। এখানেও অগ্নি মহড়ার প্রয়োজন আছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।