ঢাকা ০৮:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবৈধ আয়! কি বলে ইসলাম?

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন
দেশে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে নানান আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা যাচ্ছে।

যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল সরকারি চাকরিজীবীরাই নয়, বরং অন্যান্য পেশার মানুষদের মধ্যেও অনেকে অবৈধভাবে অর্থ-সম্পদ উপার্জন করছেন।

অনেকে সেই অর্থ আবার ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করছেন, যা নিয়ে কেউ কেউ আপত্তিও তুলছেন। কিন্তু ধর্মগুলো কি অবৈধ আয়কে সমর্থন করে? ইসলাম ধর্মে এ বিষয়ে কী বলা আছে?

ইসলাম কী বলে?
ইসলাম ধর্মে, অবৈধ উপার্জনকে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান এবং হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. মুহম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, “কোরানের একাধিক সূরায় আল্লাহ অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন না করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন, যা মেনে চলা প্রতিটি মুসলমানের কতর্ব্য,” ।

কোরানের সূরা নিসার ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না।” একই বিষয়ে বলা হয়েছে, সূরা বাকারার ১৮৮ নম্বর আয়াতে। সেখানে বলা হচ্ছে, “আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের ধন অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে ভোগ করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণকে ঘুস হিসেবে দিও না।”

“কোরানের এসব আয়ের মাধ্যমে চুরি-ডাকাতি করা, অন্যের হক ফাঁকি বা হক নষ্ট করা, লোক ঠকানো, ঘুষ দেওয়া-নেওয়াসহ যাবতীয় অসৎ উপার্জনকে সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে,” বলেন আব্দুর রশীদ।

অসৎ উপার্জন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সৎ পথে আয় করার ব্যাপারে মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থে তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন মুসলিম পণ্ডিতরা। কোরানে সূরা বাকারার ১৬৮ নম্বর আয়াতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, “হে মানবকুল! তোমরা পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র বস্তু ভোগ করো।”

অপর একটি সূরা মুমিনুনের ৫১ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, “হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার করো এবং সৎকর্ম করো। তোমরা যা করো, সে বিষয়ে আমি জানি।”

বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা বলেন, “কোরানে এই বিষয়টিকে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, নামাজ-রোজা, হজ-যাকাতের মতো হালাল বা সৎ পথে উপার্জন করাটাও আরেকটি ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে,” ।

‘ইবাদত কবুল হয় না’
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা বলেন, অসৎ উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করলে সৃষ্টিকর্তা সেই ব্যক্তির প্রার্থনা গ্রহণ করেন না বলে জানাচ্ছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা। “কারণ হাদিসে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র বস্তুকেই ভালোবাসেন বা গ্রহণ করেন,” । “কাজেই হালাল উপার্জনের সঙ্গে কারও যদি সামান্যতম হারাম উপার্জনও মিশে যায়, তাহলে তাহলে সেই ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না,” ।

সৎ উপার্জনের মাধ্যমে প্রার্থনা কবুলের বিষয়ে প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ মুসলিম শরিফে বর্ণিত একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন মুসলিম পণ্ডিতরা। সেখানে ইসলামের নবীকে উদ্ধৃত করে বলা আছে, “এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধুলিধূসরিত দেহ নিয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে ‘হে প্রভু!’ বলে মুনাজাত করে। অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারাই সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কীভাবে কবুল হবে?”

হাদিসটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তখন নবীর এক সঙ্গী সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস বলেন, “হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমার দোয়া কবুল হয়।” এর জবাবে নবী স. বলেন, “হে সাদ! তোমার উপার্জনকে হালাল রাখো, তোমার দোয়া কবুল হবে।”

ইসলাম ধর্মমতে, মুসলমানদের মধ্যে যারা পূণ্যবান, মৃত্যুর পর তারা জান্নাতে বসবাস করবেন। “কিন্তু হাদিসে এটা এসেছে, যে ব্যক্তি হারামের দ্বারা শরীর গঠন করেছে, তার ইবাদত কবুল হবে না এবং সে জাহান্নামে পুড়বে,” বলেন বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা।

মুসলমানদের কাছে অন্যতম প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ বুখারী শরিফে বলা হয়েছে যে, নবী বলেছেন, “আল্লাহর কসম! তোমরা যে কেউ অবৈধভাবে কোনো কিছু গ্রহণ করবে, সে কিয়ামতের দিন তা বয়ে নিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হবে।”

মুসলিম পণ্ডিতরা বলছেন, অবৈধভাবে অর্জিত ওইসব ধন-সম্পদ তার মালিকের সকল অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিবে। “এক্ষেত্রে তারা হারামভাবে উপার্জিত অর্থ ব্যবহার করে হজ বা অন্য কোনও ইবাদত কিংবা দান-সদকা করলেও সেগুলো কবুল হবে না,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. মুহম্মদ আব্দুর রশীদ।

এ বিষয়ে একমত পোষণ করে মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা বলছেন, “উল্টো লোক দেখানো ইবাদত করার কারণে পরকালে তাদের আরও কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।” সূত্র : বিবিসি।

আরো পড়ুন : যার কাছে থাকে মক্কার কাবা শরীফের চাবি

 

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

অবৈধ আয়! কি বলে ইসলাম?

আপডেট সময় ১২:১৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন
দেশে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে নানান আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা যাচ্ছে।

যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল সরকারি চাকরিজীবীরাই নয়, বরং অন্যান্য পেশার মানুষদের মধ্যেও অনেকে অবৈধভাবে অর্থ-সম্পদ উপার্জন করছেন।

অনেকে সেই অর্থ আবার ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করছেন, যা নিয়ে কেউ কেউ আপত্তিও তুলছেন। কিন্তু ধর্মগুলো কি অবৈধ আয়কে সমর্থন করে? ইসলাম ধর্মে এ বিষয়ে কী বলা আছে?

ইসলাম কী বলে?
ইসলাম ধর্মে, অবৈধ উপার্জনকে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান এবং হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. মুহম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, “কোরানের একাধিক সূরায় আল্লাহ অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন না করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন, যা মেনে চলা প্রতিটি মুসলমানের কতর্ব্য,” ।

কোরানের সূরা নিসার ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না।” একই বিষয়ে বলা হয়েছে, সূরা বাকারার ১৮৮ নম্বর আয়াতে। সেখানে বলা হচ্ছে, “আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের ধন অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে ভোগ করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণকে ঘুস হিসেবে দিও না।”

“কোরানের এসব আয়ের মাধ্যমে চুরি-ডাকাতি করা, অন্যের হক ফাঁকি বা হক নষ্ট করা, লোক ঠকানো, ঘুষ দেওয়া-নেওয়াসহ যাবতীয় অসৎ উপার্জনকে সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে,” বলেন আব্দুর রশীদ।

অসৎ উপার্জন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সৎ পথে আয় করার ব্যাপারে মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থে তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন মুসলিম পণ্ডিতরা। কোরানে সূরা বাকারার ১৬৮ নম্বর আয়াতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, “হে মানবকুল! তোমরা পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র বস্তু ভোগ করো।”

অপর একটি সূরা মুমিনুনের ৫১ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, “হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার করো এবং সৎকর্ম করো। তোমরা যা করো, সে বিষয়ে আমি জানি।”

বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা বলেন, “কোরানে এই বিষয়টিকে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, নামাজ-রোজা, হজ-যাকাতের মতো হালাল বা সৎ পথে উপার্জন করাটাও আরেকটি ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য বলে হাদিস শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে,” ।

‘ইবাদত কবুল হয় না’
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা বলেন, অসৎ উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করলে সৃষ্টিকর্তা সেই ব্যক্তির প্রার্থনা গ্রহণ করেন না বলে জানাচ্ছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা। “কারণ হাদিসে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র বস্তুকেই ভালোবাসেন বা গ্রহণ করেন,” । “কাজেই হালাল উপার্জনের সঙ্গে কারও যদি সামান্যতম হারাম উপার্জনও মিশে যায়, তাহলে তাহলে সেই ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না,” ।

সৎ উপার্জনের মাধ্যমে প্রার্থনা কবুলের বিষয়ে প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ মুসলিম শরিফে বর্ণিত একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন মুসলিম পণ্ডিতরা। সেখানে ইসলামের নবীকে উদ্ধৃত করে বলা আছে, “এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধুলিধূসরিত দেহ নিয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে ‘হে প্রভু!’ বলে মুনাজাত করে। অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারাই সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কীভাবে কবুল হবে?”

হাদিসটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তখন নবীর এক সঙ্গী সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস বলেন, “হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমার দোয়া কবুল হয়।” এর জবাবে নবী স. বলেন, “হে সাদ! তোমার উপার্জনকে হালাল রাখো, তোমার দোয়া কবুল হবে।”

ইসলাম ধর্মমতে, মুসলমানদের মধ্যে যারা পূণ্যবান, মৃত্যুর পর তারা জান্নাতে বসবাস করবেন। “কিন্তু হাদিসে এটা এসেছে, যে ব্যক্তি হারামের দ্বারা শরীর গঠন করেছে, তার ইবাদত কবুল হবে না এবং সে জাহান্নামে পুড়বে,” বলেন বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা।

মুসলমানদের কাছে অন্যতম প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ বুখারী শরিফে বলা হয়েছে যে, নবী বলেছেন, “আল্লাহর কসম! তোমরা যে কেউ অবৈধভাবে কোনো কিছু গ্রহণ করবে, সে কিয়ামতের দিন তা বয়ে নিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হবে।”

মুসলিম পণ্ডিতরা বলছেন, অবৈধভাবে অর্জিত ওইসব ধন-সম্পদ তার মালিকের সকল অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিবে। “এক্ষেত্রে তারা হারামভাবে উপার্জিত অর্থ ব্যবহার করে হজ বা অন্য কোনও ইবাদত কিংবা দান-সদকা করলেও সেগুলো কবুল হবে না,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. মুহম্মদ আব্দুর রশীদ।

এ বিষয়ে একমত পোষণ করে মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা বলছেন, “উল্টো লোক দেখানো ইবাদত করার কারণে পরকালে তাদের আরও কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।” সূত্র : বিবিসি।

আরো পড়ুন : যার কাছে থাকে মক্কার কাবা শরীফের চাবি