ঢাকা ০৭:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লিচুর যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

গ্রীষ্মকালীন রসালো ফল লিচু। সুস্বাদু এ ফলটি ছোট-বড় সবারই বেশ পছন্দ। লিচু শুধু স্বাদেই ভরপুর নয়, পুষ্টিগুণও আছে যথেষ্ট। ইতোমধ্যে বাজারে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জাতের লিচু। রসালো ফল লিচুতে রয়েছে প্রচুর মিনারেল। এর বাইরে এতে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকে খুব অল্প পরিমাণে। ফ্যাট না থাকায় সবার জন্য উপকারী একটি ফল। পাশাপাশি এতে ক্যালরিও কম, তাই সবার জন্যে উপযুক্ত।

১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ গ্রাম ক্যালোরি, ০.৪ গ্রাম প্রোটিন, ১.৩ গ্রাম ফাইবার, ১৫.২ গ্রাম চিনি, ০.৩ গ্রাম ফ্য়াট, ১৬.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি, কপার, পটাসিয়াম।

রসালো ফল লিচুর ফাইবার, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট ও চিনির মাত্রার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত খেলে কীভাবে শরীরকে সুস্থ রাখে, তা একঝলকে দেখে নিন-

ওজন কমাতে সাহায্য করে: যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য কার্যকরী একটি খাবার হতে পারে লিচু। এতে ক্যালোরি থাকে খুব কম। যে কারণে ওজন বাড়ার ভয় থাকে না। আঁশযুক্ত হওয়ার কারণে লিচু খেলে তা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। নিয়মিত লিচু খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়। বেশি পরিমাণে চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকা সত্ত্বেও, নিয়মিত লিচু খাওয়া ক্লান্তি এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ওয়ার্কআউটের পরে এবং পেটের জেদি চর্বিও কমাতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: লিচুতে এপিকেচিন ও রুটিনের মতো দুটি অ্যান্টি–অক্সিজেন্ট যৌগ রয়েছে, যা এ গরমে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। লিচুতে রয়েছে অলিগোনল নামের একটি উপাদান। লিচু শরীরকে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে: লিচুতে রয়েছে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫০, যার ফলে ধীরে ধীরে রক্তের মধ্যে সুগার প্রবেশ করে। আর গ্লাইসেমিক লোডের পরিমাণ ৭.৬, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ। যাদের শরীরে রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে, তারা প্রতিষেধক হিসেবে লিচু গ্রহণ করতে পারেন। লিচুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ব্যথা দূর করে: শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করতে কাজ করে লিচু। শুনতে অবাক করা হলেও এটি সত্যি। লিচু একটি কার্যকরী ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এটি খেলে কমে প্রদাহ। সেইসঙ্গে এটি টিস্যুর ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

হার্ট ভালো রাখে: হার্ট ভালো রাখার পক্ষে সহায়ক একটি ফল হলো লিচু। এতে থাকে অলিগোনল, যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে এই নাইট্রিক অক্সাইড। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ভাসকুলার ফাংশন উন্নত করে। ফলে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লিচু খেলে হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: যাদের শরীরে রক্ত নালীতে রক্তচাপ বেড়ে যায় বা প্রেশার বারবার উঠানামা করে, তারা খাবারের তালিকায় নিয়মিত লিচু রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ লিচুর রসের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে কাজ করে। ফলে রক্তচাপ কমিয়ে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ক্যানসার থেকে মুক্তি দেয়: লিচুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে লিচু স্তন ক্যানসার ঠেকাতে বেশ কার্যকর।

পেটের সমস্যায় মুক্তি: লিচু হজম শক্তি উন্নত করে। এতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার ও প্রচুর পানি থাকে। যা হজমের জন্য কাজ করে। গরমে আমাদের পেটে নানা সমস্যা হয়। লিচু খেলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

চোখের ছানি পড়া দূর করে: লিচু আপনার চোখ জোড়াও যত্ন নিবে। এটি খেলে চোখের ছানি পড়ার সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন। লিচুতে রয়েছে বিশেষ ফাইটোকেমিক্যাল।যা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও চোখের সুরক্ষার জন্য দরকারী। যা চোখে ছানি পড়াও আটকাতে সাহায্য করে।

ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে: লিচুর রস ব্যবহার করে ত্বকের কালচে দাগ দূর হয়। এমনকি রোদে পোড়া ত্বকের ট্যান দূর করতেও লিচুর রস কার্যকর। লিচু রস মুখে লাগিয়ে নিলেই উপকার মিলবে। তাছাড়া এটি ত্বকের বলিরেখাও দূর করবে।

কিডনির জন্য উপকারী: কিডনি ভালো রাখতে খাবারের দিকে নজর রাখা জরুরি। লিচুতে পর্যাপ্ত পানি এবং পটাসিয়াম থাকার কারণে তা কিডনিতে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এই ফল ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্বও কমায়। যে কারণে কমে কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি।

লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামের একধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি হতে বাধা দেয়। যে কারণে শিশুরা খালি পেটে অনেকগুলো লিচু খেয়ে ফেললে শরীরের শর্করা কমে শিশুর বমি ও খিঁচুনি হয়। অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরো পড়ুন : আমের পুষ্টিগুণ কেমন, দিনে কতটুকু আম খাওয়া উচিত

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

লিচুর যত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

আপডেট সময় ০৭:২৯:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪

গ্রীষ্মকালীন রসালো ফল লিচু। সুস্বাদু এ ফলটি ছোট-বড় সবারই বেশ পছন্দ। লিচু শুধু স্বাদেই ভরপুর নয়, পুষ্টিগুণও আছে যথেষ্ট। ইতোমধ্যে বাজারে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জাতের লিচু। রসালো ফল লিচুতে রয়েছে প্রচুর মিনারেল। এর বাইরে এতে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকে খুব অল্প পরিমাণে। ফ্যাট না থাকায় সবার জন্য উপকারী একটি ফল। পাশাপাশি এতে ক্যালরিও কম, তাই সবার জন্যে উপযুক্ত।

১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ গ্রাম ক্যালোরি, ০.৪ গ্রাম প্রোটিন, ১.৩ গ্রাম ফাইবার, ১৫.২ গ্রাম চিনি, ০.৩ গ্রাম ফ্য়াট, ১৬.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি, কপার, পটাসিয়াম।

রসালো ফল লিচুর ফাইবার, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট ও চিনির মাত্রার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত খেলে কীভাবে শরীরকে সুস্থ রাখে, তা একঝলকে দেখে নিন-

ওজন কমাতে সাহায্য করে: যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য কার্যকরী একটি খাবার হতে পারে লিচু। এতে ক্যালোরি থাকে খুব কম। যে কারণে ওজন বাড়ার ভয় থাকে না। আঁশযুক্ত হওয়ার কারণে লিচু খেলে তা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। নিয়মিত লিচু খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়। বেশি পরিমাণে চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকা সত্ত্বেও, নিয়মিত লিচু খাওয়া ক্লান্তি এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ওয়ার্কআউটের পরে এবং পেটের জেদি চর্বিও কমাতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: লিচুতে এপিকেচিন ও রুটিনের মতো দুটি অ্যান্টি–অক্সিজেন্ট যৌগ রয়েছে, যা এ গরমে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। লিচুতে রয়েছে অলিগোনল নামের একটি উপাদান। লিচু শরীরকে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে: লিচুতে রয়েছে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫০, যার ফলে ধীরে ধীরে রক্তের মধ্যে সুগার প্রবেশ করে। আর গ্লাইসেমিক লোডের পরিমাণ ৭.৬, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ। যাদের শরীরে রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে, তারা প্রতিষেধক হিসেবে লিচু গ্রহণ করতে পারেন। লিচুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ব্যথা দূর করে: শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করতে কাজ করে লিচু। শুনতে অবাক করা হলেও এটি সত্যি। লিচু একটি কার্যকরী ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এটি খেলে কমে প্রদাহ। সেইসঙ্গে এটি টিস্যুর ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

হার্ট ভালো রাখে: হার্ট ভালো রাখার পক্ষে সহায়ক একটি ফল হলো লিচু। এতে থাকে অলিগোনল, যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে এই নাইট্রিক অক্সাইড। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ভাসকুলার ফাংশন উন্নত করে। ফলে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লিচু খেলে হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: যাদের শরীরে রক্ত নালীতে রক্তচাপ বেড়ে যায় বা প্রেশার বারবার উঠানামা করে, তারা খাবারের তালিকায় নিয়মিত লিচু রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ লিচুর রসের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে কাজ করে। ফলে রক্তচাপ কমিয়ে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ক্যানসার থেকে মুক্তি দেয়: লিচুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে লিচু স্তন ক্যানসার ঠেকাতে বেশ কার্যকর।

পেটের সমস্যায় মুক্তি: লিচু হজম শক্তি উন্নত করে। এতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার ও প্রচুর পানি থাকে। যা হজমের জন্য কাজ করে। গরমে আমাদের পেটে নানা সমস্যা হয়। লিচু খেলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

চোখের ছানি পড়া দূর করে: লিচু আপনার চোখ জোড়াও যত্ন নিবে। এটি খেলে চোখের ছানি পড়ার সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন। লিচুতে রয়েছে বিশেষ ফাইটোকেমিক্যাল।যা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও চোখের সুরক্ষার জন্য দরকারী। যা চোখে ছানি পড়াও আটকাতে সাহায্য করে।

ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে: লিচুর রস ব্যবহার করে ত্বকের কালচে দাগ দূর হয়। এমনকি রোদে পোড়া ত্বকের ট্যান দূর করতেও লিচুর রস কার্যকর। লিচু রস মুখে লাগিয়ে নিলেই উপকার মিলবে। তাছাড়া এটি ত্বকের বলিরেখাও দূর করবে।

কিডনির জন্য উপকারী: কিডনি ভালো রাখতে খাবারের দিকে নজর রাখা জরুরি। লিচুতে পর্যাপ্ত পানি এবং পটাসিয়াম থাকার কারণে তা কিডনিতে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এই ফল ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্বও কমায়। যে কারণে কমে কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি।

লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামের একধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি হতে বাধা দেয়। যে কারণে শিশুরা খালি পেটে অনেকগুলো লিচু খেয়ে ফেললে শরীরের শর্করা কমে শিশুর বমি ও খিঁচুনি হয়। অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরো পড়ুন : আমের পুষ্টিগুণ কেমন, দিনে কতটুকু আম খাওয়া উচিত