ঢাকা ০৭:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুরবানির আদি ইতিহাস

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
মহান আল্লাহর নৈকট্য, আত্মত্যাগ, ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দের সুমহান মহিমায় ভাস্বর কুরবানি। কুরবানি আমাদের আদি পিতা আদম আলাইহিস সালামের প্রিয় পুত্র হাবিল এবং জাতির পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের প্রিয় সন্তান ইসমাইল আলাইহিস সালামের সুমহান আত্মত্যাগের অনুপম সংস্কৃতি।
শাব্দিক ও আভিধানিক অর্থ
আরবি ‘কুরবুন’ বা ‘কুরবানুন’ শব্দটি উর্দু ও ফার্সিতে ‘কুরবানি’ রূপে রূপান্তরিত হয়েছে। যার শাব্দিক অর্থ ‘আত-তাকাররুবু’ বা নৈকট্য লাভ করা, ‘আস-সুহবাতু’ বা সান্নিধ্য লাভ করা। কুরআন-হাদিসে এর কয়েকটি সমার্থ শব্দ পরিলক্ষিত হয়। যেমন : ‘আন-নাহরু’ তথা রক্ত প্রবাহিত করা। এই অর্থে কুরবানির দিনকে ‘ইয়াওমুন নাহর’ বলা হয়। ‘আন-নুসুক’ তথা উৎসর্গ করা। ‘আল-আযহা’ তথা কোনো কিছু ত্যাগ করা। এই অর্থে কুরবানির ইদকে ইদুল আযহা বলা হয়। যেহেতু কুরবানির মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে, আল্লাহর সামনে ত্যাগের নমুনা পেশ করে, তাই এটাকে ‘কুরবানি’ বলা হয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
কুরবানির ইতিহাস ততটাই প্রাচীন যতটা প্রাচীন মানবজাতির ইতিহার। সেই আদি পিতা আদম আলাইহিস সালামের যুগ থেকেই কুরবানির বিধান চলে আসছে। আদম (আ.) এর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের কুরবানি পেশ থেকেই মূলত কুরবানির প্রচলন। সে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে।
আদমের দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও। যখন তারা উভয়ে কুরবানি করেছিল, একজনের কুরবানি কবুল হলো, আর অন্যজনের কুরবানি কবুল হলো না। তাদের একজন বলল, ‘আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব।’ অপরজন বলল, ‘আল্লাহ তো মুত্তাকিদের কুরবানিই কবুল করে থাকেন।’ [সুরা মায়িদা : ২৭]
মূল ঘটনা
যখন আদম ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন হাওয়া আলাইহাস সালামের গর্ভ থেকে জোড়া জোড়া (জময) অর্থাৎ একসাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এভাবে সন্তান জন্মগ্রহণ করত। কেবল শীশ (আ.) ব্যতিরেকে। কারণ, তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। তখন ভাই-বোন ছাড়া আদম আলাইহিস সালামের আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আদম আলাইহিস সালামের শরিয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম। কিন্তু পূর্বে জন্মগ্রহণকারী পুত্রের জন্য পরেরবারে জন্মগ্রহণকারী কন্যা সহোদরা বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। সুতরাং সে সময় আদম (আ.) একটি জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের বিয়ে দিতেন।
ঘটনাক্রমে কাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে ছিল পরমা সুন্দরী। তার নাম ছিল আকলিমা। কিন্তু হাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে দেখতে অতটা সুন্দরী ছিল না। সে ছিল কুশ্রী ও কদাকার। বিবাহের সময় হলে শরয়ি নিয়মানুযায়ী হাবিলের সহোদরা কুশ্রী বোন কাবিলের ভাগে পড়ল। তাই কাবিল চাইছিল তার সহোদরা বোনকে বিয়ে করতে। ফলে আদম (আ.) তৎকালীন শরিয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাকে তার নির্দেশ মানতে বললেন। কিন্তু সে মানল না। তিনি তাকে বকাঝকা করলেন। তবুও সে কথা শোনল না। অবশেষে আদম (আ.) হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানি পেশ কর, যার কুরবানি গৃহীত হবে, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে দেয়া হবে।’ সে সময় কুরবানি গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কুরবানিকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কুরবানি কবুল হতো না তারটা পড়ে থাকত।
তাদের কুরবানির পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায় যে, কাবিল ছিল চাষী। তাই তিনি গমের শীষ থেকে ভাল ভাল মালগুলো বের করে নিয়ে বাজে মালগুলোর একটি আটি কুরবানির জন্য পেশ করল। আর হাবিল ছিল পশুপালক। তাই সে তার জন্তুর মধ্যে থেকে সবচেয়ে সেরা একটি দুম্বা কুরবানির জন্য পেশ করল। এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবিলের কুরবানিটি ভষ্মীভুত করে দিল। কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হাবিলের পেশকৃত দুম্বাটি জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তা জান্নাতে বিচরণ করতে থাকে। অবশেষে ইসমাইল যাবিহুল্লাহকে ঐ দুম্বাটি পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হয়।
আর কাবিলের কুরবানি যথাস্থানেই পড়ে থাকল। অর্থাৎ হাবিলেরটি গৃহীত হলো আর কাবিলেরটি হলো না। কিন্তু কাবিল এ আসমানি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে তার ভাইকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব।’ হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিবাক্য উচ্চারণ করল, এতে কাবিলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। হাবিল বলেছিল, ‘আল্লাহ তো মুত্তাকির কর্মই গ্রহণ করেন। সুতরাং তুমি তাকওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাকওয়া অবলম্বন করলে তোমার কুরবানিও গৃহীত হতো। তুমি তা করোনি, তাই তোমার কুরবানি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কোথায়?…..তবুও এক পর্যায়ে কাবিল হাবিলকে হত্যা করে ফেলল। [তথ্যসূত্র : তাফসির ইবনু কাসির ও ফাতহুল কাদির]
কুরআনে বর্ণিত হাবিল ও কাবিলের কুরবানির এ ঘটনা থেকেই মূলত কুরবানির ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে।
যাহোক, এরপর থেকে সকল উম্মতের ওপরে কুরবানির বিধান জারি ছিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানির বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে―এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন। [সুরা হজ : ৩৪]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, ‘আদম (আ.) থেকে মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তায়ালা তার নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানির বিধান দিয়েছেন।’ [তাফসিরে নাসাফি, ৩/৭৯; কাশশাফ, ২/৩৩]
আদম (আ.) এর যুগে তারই পুত্র কাবিল ও হাবিলের কুরবানির পর থেকে ইবরাহিম (আ.) পর্যন্ত কুরবানি চলতে থাকে। মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যত শরিয়ত নাযিল হয়েছে, প্রত্যেক শরিয়তে কুরবানির বিধান জারি ছিল। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল এক অপরিহার্য অংশ। তবে ঐসব কুরবানির নিয়ম-কানুন, ধরণ-প্রকৃতির কোন বর্ণনা কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় না। মূলত সেসব আমাদেরকে জানানো হয়নি।

আরো পড়ুন : কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

কুরবানির আদি ইতিহাস

আপডেট সময় ০৬:৪২:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
মহান আল্লাহর নৈকট্য, আত্মত্যাগ, ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দের সুমহান মহিমায় ভাস্বর কুরবানি। কুরবানি আমাদের আদি পিতা আদম আলাইহিস সালামের প্রিয় পুত্র হাবিল এবং জাতির পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের প্রিয় সন্তান ইসমাইল আলাইহিস সালামের সুমহান আত্মত্যাগের অনুপম সংস্কৃতি।
শাব্দিক ও আভিধানিক অর্থ
আরবি ‘কুরবুন’ বা ‘কুরবানুন’ শব্দটি উর্দু ও ফার্সিতে ‘কুরবানি’ রূপে রূপান্তরিত হয়েছে। যার শাব্দিক অর্থ ‘আত-তাকাররুবু’ বা নৈকট্য লাভ করা, ‘আস-সুহবাতু’ বা সান্নিধ্য লাভ করা। কুরআন-হাদিসে এর কয়েকটি সমার্থ শব্দ পরিলক্ষিত হয়। যেমন : ‘আন-নাহরু’ তথা রক্ত প্রবাহিত করা। এই অর্থে কুরবানির দিনকে ‘ইয়াওমুন নাহর’ বলা হয়। ‘আন-নুসুক’ তথা উৎসর্গ করা। ‘আল-আযহা’ তথা কোনো কিছু ত্যাগ করা। এই অর্থে কুরবানির ইদকে ইদুল আযহা বলা হয়। যেহেতু কুরবানির মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে, আল্লাহর সামনে ত্যাগের নমুনা পেশ করে, তাই এটাকে ‘কুরবানি’ বলা হয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
কুরবানির ইতিহাস ততটাই প্রাচীন যতটা প্রাচীন মানবজাতির ইতিহার। সেই আদি পিতা আদম আলাইহিস সালামের যুগ থেকেই কুরবানির বিধান চলে আসছে। আদম (আ.) এর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের কুরবানি পেশ থেকেই মূলত কুরবানির প্রচলন। সে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে।
আদমের দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও। যখন তারা উভয়ে কুরবানি করেছিল, একজনের কুরবানি কবুল হলো, আর অন্যজনের কুরবানি কবুল হলো না। তাদের একজন বলল, ‘আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব।’ অপরজন বলল, ‘আল্লাহ তো মুত্তাকিদের কুরবানিই কবুল করে থাকেন।’ [সুরা মায়িদা : ২৭]
মূল ঘটনা
যখন আদম ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন হাওয়া আলাইহাস সালামের গর্ভ থেকে জোড়া জোড়া (জময) অর্থাৎ একসাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এভাবে সন্তান জন্মগ্রহণ করত। কেবল শীশ (আ.) ব্যতিরেকে। কারণ, তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। তখন ভাই-বোন ছাড়া আদম আলাইহিস সালামের আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আদম আলাইহিস সালামের শরিয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম। কিন্তু পূর্বে জন্মগ্রহণকারী পুত্রের জন্য পরেরবারে জন্মগ্রহণকারী কন্যা সহোদরা বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। সুতরাং সে সময় আদম (আ.) একটি জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের বিয়ে দিতেন।
ঘটনাক্রমে কাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে ছিল পরমা সুন্দরী। তার নাম ছিল আকলিমা। কিন্তু হাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে দেখতে অতটা সুন্দরী ছিল না। সে ছিল কুশ্রী ও কদাকার। বিবাহের সময় হলে শরয়ি নিয়মানুযায়ী হাবিলের সহোদরা কুশ্রী বোন কাবিলের ভাগে পড়ল। তাই কাবিল চাইছিল তার সহোদরা বোনকে বিয়ে করতে। ফলে আদম (আ.) তৎকালীন শরিয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাকে তার নির্দেশ মানতে বললেন। কিন্তু সে মানল না। তিনি তাকে বকাঝকা করলেন। তবুও সে কথা শোনল না। অবশেষে আদম (আ.) হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানি পেশ কর, যার কুরবানি গৃহীত হবে, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে দেয়া হবে।’ সে সময় কুরবানি গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কুরবানিকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কুরবানি কবুল হতো না তারটা পড়ে থাকত।
তাদের কুরবানির পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায় যে, কাবিল ছিল চাষী। তাই তিনি গমের শীষ থেকে ভাল ভাল মালগুলো বের করে নিয়ে বাজে মালগুলোর একটি আটি কুরবানির জন্য পেশ করল। আর হাবিল ছিল পশুপালক। তাই সে তার জন্তুর মধ্যে থেকে সবচেয়ে সেরা একটি দুম্বা কুরবানির জন্য পেশ করল। এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবিলের কুরবানিটি ভষ্মীভুত করে দিল। কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হাবিলের পেশকৃত দুম্বাটি জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তা জান্নাতে বিচরণ করতে থাকে। অবশেষে ইসমাইল যাবিহুল্লাহকে ঐ দুম্বাটি পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হয়।
আর কাবিলের কুরবানি যথাস্থানেই পড়ে থাকল। অর্থাৎ হাবিলেরটি গৃহীত হলো আর কাবিলেরটি হলো না। কিন্তু কাবিল এ আসমানি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে তার ভাইকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব।’ হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিবাক্য উচ্চারণ করল, এতে কাবিলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। হাবিল বলেছিল, ‘আল্লাহ তো মুত্তাকির কর্মই গ্রহণ করেন। সুতরাং তুমি তাকওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাকওয়া অবলম্বন করলে তোমার কুরবানিও গৃহীত হতো। তুমি তা করোনি, তাই তোমার কুরবানি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কোথায়?…..তবুও এক পর্যায়ে কাবিল হাবিলকে হত্যা করে ফেলল। [তথ্যসূত্র : তাফসির ইবনু কাসির ও ফাতহুল কাদির]
কুরআনে বর্ণিত হাবিল ও কাবিলের কুরবানির এ ঘটনা থেকেই মূলত কুরবানির ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে।
যাহোক, এরপর থেকে সকল উম্মতের ওপরে কুরবানির বিধান জারি ছিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানির বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে―এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন। [সুরা হজ : ৩৪]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, ‘আদম (আ.) থেকে মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তায়ালা তার নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানির বিধান দিয়েছেন।’ [তাফসিরে নাসাফি, ৩/৭৯; কাশশাফ, ২/৩৩]
আদম (আ.) এর যুগে তারই পুত্র কাবিল ও হাবিলের কুরবানির পর থেকে ইবরাহিম (আ.) পর্যন্ত কুরবানি চলতে থাকে। মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যত শরিয়ত নাযিল হয়েছে, প্রত্যেক শরিয়তে কুরবানির বিধান জারি ছিল। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল এক অপরিহার্য অংশ। তবে ঐসব কুরবানির নিয়ম-কানুন, ধরণ-প্রকৃতির কোন বর্ণনা কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় না। মূলত সেসব আমাদেরকে জানানো হয়নি।

আরো পড়ুন : কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত