ঢাকা ০৯:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রায় আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করেছে। প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সনদ নেয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি তাদের মধ্যে যারা সরকারি ভাতা গ্রহণ করেছে সেই টাকাও ফেরত আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৮৩ হাজারের সামান্য বেশি। তবে এর মধ্যে এখন বেঁচে আছেন প্রায় এক লাখ। মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ শোনা গেছে। এমনকি বাংলাদেশে ভুয়া বা অ-মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ঠিক কত, সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার তথ্য নেই মন্ত্রণালয়ের কাছে।

সরকার ২০১৪ সালে আগে যেসব মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকায় আসেনি তাদের আবেদনের সুযোগ দিলে সারাদেশে অসংখ্য আবেদন জমা পড়ে। এমনকি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম তালিকাভুক্তির আবেদন করেন।

তবে ২০১৪ সালেই পাঁচ জন সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে সরকার, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। তখন সনদ বাতিলের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছিলো দুর্নীতি দমন কমিশন। যদিও দেশে প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েই গেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অপূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছিলো সরকার যেখানে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জনের নাম ছিল।

২০১৪ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়া শুরু করে সরকার। প্রথমে ২০ হাজার জন মুক্তিযোদ্ধাকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হতো, যা পরে বিভিন্ন সময় বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধারা মাসে বিশ হাজার টাকা করে সম্মানী পান। সম্প্রতি এ টাকা ত্রিশ হাজারে উন্নীত করার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি চাকরিজীবী হলে এখন দুই বছর বেশি চাকরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসা, আবাসন ও রেশনসহ নানারকম সুযোগ সুবিধা আছে। এসব সুবিধা পেতে অনেকেই এখন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসতে চান বলে অভিযোগ আছে।

ভুয়া সনদের শাস্তি কিংবা ভাতা ফেরতের বিষয়ে সরাসরি কোনো জবাব দেননি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। তবে অনেক বছর ধরেই মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ এ নিয়ে ক্ষোভ বা অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন। আবার এই আট হাজারের মধ্যে কতজন ভাতা তুলেছেন এবং তাদেরকে কত টাকা ভাতা দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কিত কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।

যারা ভুয়া সনদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠিয়েছিলো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সেই সাথে যারা ভাতা পেয়েছে তাও ফেরত আনা উচিত। এছাড়া ভুয়া সনদধারীদের কারা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসার সুযোগ করে দিয়েছে তাদেরকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভুয়া সনদধারীদের দেয়া সুবিধা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব।

আরো পড়ুন : ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের মধ্যে নিহিত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্কটের সমাধান

 

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক

আপডেট সময় ১১:১৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রায় আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করেছে। প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সনদ নেয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি তাদের মধ্যে যারা সরকারি ভাতা গ্রহণ করেছে সেই টাকাও ফেরত আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৮৩ হাজারের সামান্য বেশি। তবে এর মধ্যে এখন বেঁচে আছেন প্রায় এক লাখ। মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ শোনা গেছে। এমনকি বাংলাদেশে ভুয়া বা অ-মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ঠিক কত, সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার তথ্য নেই মন্ত্রণালয়ের কাছে।

সরকার ২০১৪ সালে আগে যেসব মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকায় আসেনি তাদের আবেদনের সুযোগ দিলে সারাদেশে অসংখ্য আবেদন জমা পড়ে। এমনকি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম তালিকাভুক্তির আবেদন করেন।

তবে ২০১৪ সালেই পাঁচ জন সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে সরকার, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। তখন সনদ বাতিলের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছিলো দুর্নীতি দমন কমিশন। যদিও দেশে প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েই গেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অপূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছিলো সরকার যেখানে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জনের নাম ছিল।

২০১৪ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়া শুরু করে সরকার। প্রথমে ২০ হাজার জন মুক্তিযোদ্ধাকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হতো, যা পরে বিভিন্ন সময় বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধারা মাসে বিশ হাজার টাকা করে সম্মানী পান। সম্প্রতি এ টাকা ত্রিশ হাজারে উন্নীত করার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি চাকরিজীবী হলে এখন দুই বছর বেশি চাকরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসা, আবাসন ও রেশনসহ নানারকম সুযোগ সুবিধা আছে। এসব সুবিধা পেতে অনেকেই এখন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসতে চান বলে অভিযোগ আছে।

ভুয়া সনদের শাস্তি কিংবা ভাতা ফেরতের বিষয়ে সরাসরি কোনো জবাব দেননি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। তবে অনেক বছর ধরেই মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ এ নিয়ে ক্ষোভ বা অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন। আবার এই আট হাজারের মধ্যে কতজন ভাতা তুলেছেন এবং তাদেরকে কত টাকা ভাতা দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কিত কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।

যারা ভুয়া সনদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠিয়েছিলো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সেই সাথে যারা ভাতা পেয়েছে তাও ফেরত আনা উচিত। এছাড়া ভুয়া সনদধারীদের কারা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসার সুযোগ করে দিয়েছে তাদেরকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভুয়া সনদধারীদের দেয়া সুবিধা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব।

আরো পড়ুন : ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের মধ্যে নিহিত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্কটের সমাধান