ঢাকা ০৯:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের মধ্যে নিহিত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্কটের সমাধান

ইসরায়েলে ইরানের হামলায় ধ্বংস হওয়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন ইসরায়েলি সেনা। ছবি : এএফপি

ইসরাইলে ইরানের প্রতিশোধমূলক নজিরবিহিন ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সমন্বিত হামলার পর গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিরাজ করছে যুদ্ধাবস্থা। বিষয়টি নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, এই প্রথম ইরান তার ভূখণ্ড থেকে সরাসরি ইসরাইলে আক্রমণ করেছে এবং দু’টি দেশের মধ্যে এটি সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ। সংবাদপত্রটি সতর্ক করেছে যে, এই হামলার ফলে ইসরাইলি প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে পারে।
এদিকে ইরানের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম রাইসি বলেছেন, তার দেশ দায়িত্বশীল ও আনুপাতিক পদক্ষেপে কিছু ইসরাইলি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

মার্কিন প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণাত্মক অভিযানে অংশ নেবে না। যদিও আমেরিকা ইসরাইলের পাশে দাঁড়াবে এবং ইরানের যেকোন হুমকির মুখে তার প্রতিরক্ষাকে সমর্থন করবে।

বাইডেন একটি নির্বাচনী বছরের ভরা রাজনীতির মধ্যে কাজ করছেন। ৭ অক্টোবর ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের বিস্ফোরণ বাইডেনকে তার নিজ দেশে আঘাত করেছে। গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান অস্বীকার করায় তার সমর্থন হ্রাস পেয়েছে।

ইরান আক্রমণ শুরু করার কয়েক ঘণ্টা আগে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইসরাইলে তাদের সমকক্ষদের সাথে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শনিবার মার্কিন সামরিক বাহিনী কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে বাধা দিয়েছে। এতে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতিরক্ষায় নিবেদিত’ বাইডেনের এই প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়েছে। এর ফলে আগে যুক্তরাষ্ট্রে ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের সমর্থন কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এ ঘটনার পর অনেকে সেটির অবনতির আশঙ্কা করছেন।

ইরানের একশোরও বেশি ড্রোনের সাথে একত্রে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ এই অঞ্চলে বিস্তৃত যুদ্ধের উত্তেজনা তৈরি করলেও এখানকার বেশির ভাগ কুশীলব- যুক্তরাষ্ট্র, আরব রাষ্ট্র, এমনকি হিজবুল্লাহ- গত ছয় মাসে তা এড়াতে চেয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটা গাজার যুদ্ধের সম্প্রসারণ নয়; এটা তার অনিবার্য প্রতিফলন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সিরিয়ায় মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং ছয়জন আইআরজিসি অফিসারকে ইসরাইলের হত্যার প্রতি ইরানের এই প্রতিক্রিয়া উত্তেজনাকর পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বমুখিতাকে কেবল আরেকটু উপরে নিয়ে গেছে।

ইসরাইলের প্রতি বৈশ্বিক সহানুভূতি হ্রাস এবং বাইডেন ও নেতানিয়াহুর সম্পর্কের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পটভূমিতে ইরানের হামলা ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি সকলেই ইসরাইলের জন্য সমর্থন ঘোষণা করেছে। তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যক্তিগতভাবে ইসরাইলকে আঞ্চলিক যুদ্ধের সর্পিলতা রোধ করার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টায় সংযমের সাথে প্রতিক্রিয়া জানাতে উৎসাহিত করতে পারে।

আরব দেশগুলো এই পরিস্থিতিতে তেমন কিছুই করছেন না। অথচ এমন আরব দেশ রয়েছে যারা ইরানের শক্তি এবং ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর ক্ষমতা সম্পর্কে সতর্ক। আরব দেশগুলো, বিশেষত যারা ইসরাইলের সাথে স্বাভাবিকীকরণকে উৎসাহিত করে, তাদের অবশ্যই জানতে হবে যে দখলদারত্বের সাথে সম্পর্ক ইসরাইলের বক্তব্যকে বিশ্বাস করে যে আরবরা ফিলিস্তিনি ইস্যুকে পাত্তা দেয় না এবং ইসরাইল দখল চালিয়ে যেতে পারে। ভূমি ও জনসংখ্যাকে বহিষ্কার করে একই সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক, জোট এবং সামরিক সমন্বয় স্থাপন করতে পারে।

আশার বাণী হলো, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্বসহকারে ভাবতে শুরু করেছে যে, আন্তর্জাতিক শক্তি ছাড়া এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমিত করার কোনো উপায় নেই। ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার মাধ্যমেই এই সঙ্কটের সমাধান সম্ভব।

আরো পড়ুন : বাঙালি জাতির গৌরব পহেলা বৈশাখ

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের মধ্যে নিহিত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্কটের সমাধান

আপডেট সময় ০৯:৪৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ইসরাইলে ইরানের প্রতিশোধমূলক নজিরবিহিন ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সমন্বিত হামলার পর গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিরাজ করছে যুদ্ধাবস্থা। বিষয়টি নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, এই প্রথম ইরান তার ভূখণ্ড থেকে সরাসরি ইসরাইলে আক্রমণ করেছে এবং দু’টি দেশের মধ্যে এটি সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ। সংবাদপত্রটি সতর্ক করেছে যে, এই হামলার ফলে ইসরাইলি প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে পারে।
এদিকে ইরানের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম রাইসি বলেছেন, তার দেশ দায়িত্বশীল ও আনুপাতিক পদক্ষেপে কিছু ইসরাইলি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

মার্কিন প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণাত্মক অভিযানে অংশ নেবে না। যদিও আমেরিকা ইসরাইলের পাশে দাঁড়াবে এবং ইরানের যেকোন হুমকির মুখে তার প্রতিরক্ষাকে সমর্থন করবে।

বাইডেন একটি নির্বাচনী বছরের ভরা রাজনীতির মধ্যে কাজ করছেন। ৭ অক্টোবর ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের বিস্ফোরণ বাইডেনকে তার নিজ দেশে আঘাত করেছে। গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান অস্বীকার করায় তার সমর্থন হ্রাস পেয়েছে।

ইরান আক্রমণ শুরু করার কয়েক ঘণ্টা আগে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইসরাইলে তাদের সমকক্ষদের সাথে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শনিবার মার্কিন সামরিক বাহিনী কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে বাধা দিয়েছে। এতে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতিরক্ষায় নিবেদিত’ বাইডেনের এই প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়েছে। এর ফলে আগে যুক্তরাষ্ট্রে ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের সমর্থন কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এ ঘটনার পর অনেকে সেটির অবনতির আশঙ্কা করছেন।

ইরানের একশোরও বেশি ড্রোনের সাথে একত্রে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ এই অঞ্চলে বিস্তৃত যুদ্ধের উত্তেজনা তৈরি করলেও এখানকার বেশির ভাগ কুশীলব- যুক্তরাষ্ট্র, আরব রাষ্ট্র, এমনকি হিজবুল্লাহ- গত ছয় মাসে তা এড়াতে চেয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটা গাজার যুদ্ধের সম্প্রসারণ নয়; এটা তার অনিবার্য প্রতিফলন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সিরিয়ায় মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং ছয়জন আইআরজিসি অফিসারকে ইসরাইলের হত্যার প্রতি ইরানের এই প্রতিক্রিয়া উত্তেজনাকর পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বমুখিতাকে কেবল আরেকটু উপরে নিয়ে গেছে।

ইসরাইলের প্রতি বৈশ্বিক সহানুভূতি হ্রাস এবং বাইডেন ও নেতানিয়াহুর সম্পর্কের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পটভূমিতে ইরানের হামলা ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি সকলেই ইসরাইলের জন্য সমর্থন ঘোষণা করেছে। তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যক্তিগতভাবে ইসরাইলকে আঞ্চলিক যুদ্ধের সর্পিলতা রোধ করার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টায় সংযমের সাথে প্রতিক্রিয়া জানাতে উৎসাহিত করতে পারে।

আরব দেশগুলো এই পরিস্থিতিতে তেমন কিছুই করছেন না। অথচ এমন আরব দেশ রয়েছে যারা ইরানের শক্তি এবং ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর ক্ষমতা সম্পর্কে সতর্ক। আরব দেশগুলো, বিশেষত যারা ইসরাইলের সাথে স্বাভাবিকীকরণকে উৎসাহিত করে, তাদের অবশ্যই জানতে হবে যে দখলদারত্বের সাথে সম্পর্ক ইসরাইলের বক্তব্যকে বিশ্বাস করে যে আরবরা ফিলিস্তিনি ইস্যুকে পাত্তা দেয় না এবং ইসরাইল দখল চালিয়ে যেতে পারে। ভূমি ও জনসংখ্যাকে বহিষ্কার করে একই সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক, জোট এবং সামরিক সমন্বয় স্থাপন করতে পারে।

আশার বাণী হলো, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুরুত্বসহকারে ভাবতে শুরু করেছে যে, আন্তর্জাতিক শক্তি ছাড়া এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমিত করার কোনো উপায় নেই। ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার মাধ্যমেই এই সঙ্কটের সমাধান সম্ভব।

আরো পড়ুন : বাঙালি জাতির গৌরব পহেলা বৈশাখ