ঢাকা ০৭:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘ অপেক্ষার পর রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হলো মোংলা বন্দর

মাসুদ রানা, মোংলা প্রতিনিধি:

অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হলো দেশের দ্বিতীয় মোংলা বন্দর। শনিবার (১ জুন) সকাল ১০টায় ৬০০ যাত্রী নিয়ে মোংলা প্লাটফর্মে এসে পৌঁছায় মোংলা এক্সপ্রেস নামে একটি কমিউটার। এর আগে এই ট্রেনটি বেনাপোল থেকে সকাল ১০টায় ছেড়ে আসে। পথিমধ্যে বেনাপোল থেকে নাভারণ, ঝিকরগাছা, যশোর জংশন, রূপদিয়া, সিঙ্গিয়া, চেঙ্গুটিয়া, নওয়াপাড়া, বেজেরডাঙ্গা, ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালি, চুলকাটি বাজার, ভাগা ও দিগরাজ স্টেশনে যাত্রাবিরতির পর. দুপুর ২টায় মোংলায় আসে। এরপর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে এই ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

এসময় মোংলায় আসা নতুন ট্রেনটিকে স্বাগত জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নাসহ রেল কর্তৃপক্ষের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।

কমিউটার ট্রেনটি মোংলায় এসে পৌঁছালে এই এলাকার মানুষে মধ্যে উৎসবের আমেজ শুরু হয়। অনেকে এই দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে টিকিট কেটে ট্রেনে চেপে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এসময় অনুভূতি জানতে চাইলে, আব্দুস সালাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিলাম কখন মোংলা থেকে ট্রেন চলবে, আজ আশা পূরণ হলো। নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হচ্ছে’।

সুস্মিতা বালা নামে নারী যাত্রী বলেন, মোংলা থেকে ফুলতলা যাবো, এজন্য সাকাল ১০টায় এসে স্বপরিবারে বসে ছিলাম। খরচ কম এবং আরামদায়ক ভ্রমন উপভোগ করবো’। তাদের মতো শত শত অনেক যাত্রী নতুন ট্রেনে উঠবে বলে মোংলা প্লাটফর্মে এদিন অপেক্ষায় ছিলেন।

এদিকে এই রেলপথ চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণসহ দক্ষিনাঞ্চলের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে জানিয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর পর দেশের রেল নেটওয়ার্কে মোংলা বন্দর যুক্ত হয়েছে। এতে করে খুলনা-মোংলা রেল পথ ঘিরে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভবনার দুয়ার খুলবে। ঢাকার সাথে সহজ হবে মোংলা বন্দরের সাথে যোগাযোগ। একই সাথে এই বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময়ে কম খরচে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন। এছাড়া বহুল কাঙ্খিত এই রেলপথ চালু হওয়ায় মোংলা বন্দরের সাথে ভারত, ভূটান ও নেপালের ব্যবসা বানিজ্য প্রসারিত হবে’ বলেও জানান তিনি।

মোংলা রেল ষ্টেশন মাষ্টার এস এম মনির আহম্মেদ জানান, গত বছরের ১ নভেম্বর এই রেলপথ বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভার্সুয়ালি উদ্ধোধন করেন। এর ৭ মাস পর শনিবার (১ জুন) খুলনা-মোংলা রেলপথে আনুষ্ঠানিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এই পথে মঙ্গলবার বন্ধ রেখে সপ্তাহে ৬ দিন চলবে মোংলা এক্সপ্রেস নামে একটি কমিউটার ট্রেন।

এছাড়া মোংলা-চুলকাঠি ২০ টাকা, মোংলা-কাটাখালি ২০ টাকা, মোংলা-মোহাম্মদনগর ৩৫ টাকা, মোংলা-ফুলতলা ৪৫ টাকা, মোংলা-নওয়াপাড়া ৫৫ টাকা, মোংলা-সিঙ্গিয়া ৬০ টাকা, মোংলা-যশোর ৬৫ টাকা, মোংলা-ঝিকরগাছা ৭৫ টাকা, মোংলা-নাভারন ৮০ টাকা এবং মোংলা-বেনাপোল ৮৫ টাকা ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মানের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আরিফুজ্জামান বলেন, মোংলা বন্দরকে দেশের রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে ২০১৬ সালে শুরু হয় খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ। ২০১৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৫ দফা সময় বাড়িয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে রয়েছে রুপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার একটি রেলসেতু, ১০৭ টি ছোট বড় কালভার্ট, ৮ টি প্লাটফর্ম ও ৯ টি আন্ডারপাস।

এই রেলপথ চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কম খরচে সহজে যাতায়াত এবং আরামদায়ক ভ্রমণও করতে পারবেন। চিকিৎসাসহ ব্যবসা বানিজ্যের কাজেও ভারতে যেতে এই রুট তাদের সহজ হবে বলেও জানান তিনি।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

দীর্ঘ অপেক্ষার পর রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হলো মোংলা বন্দর

আপডেট সময় ০৯:৪৪:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪
মাসুদ রানা, মোংলা প্রতিনিধি:

অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হলো দেশের দ্বিতীয় মোংলা বন্দর। শনিবার (১ জুন) সকাল ১০টায় ৬০০ যাত্রী নিয়ে মোংলা প্লাটফর্মে এসে পৌঁছায় মোংলা এক্সপ্রেস নামে একটি কমিউটার। এর আগে এই ট্রেনটি বেনাপোল থেকে সকাল ১০টায় ছেড়ে আসে। পথিমধ্যে বেনাপোল থেকে নাভারণ, ঝিকরগাছা, যশোর জংশন, রূপদিয়া, সিঙ্গিয়া, চেঙ্গুটিয়া, নওয়াপাড়া, বেজেরডাঙ্গা, ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালি, চুলকাটি বাজার, ভাগা ও দিগরাজ স্টেশনে যাত্রাবিরতির পর. দুপুর ২টায় মোংলায় আসে। এরপর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে এই ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

এসময় মোংলায় আসা নতুন ট্রেনটিকে স্বাগত জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নাসহ রেল কর্তৃপক্ষের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।

কমিউটার ট্রেনটি মোংলায় এসে পৌঁছালে এই এলাকার মানুষে মধ্যে উৎসবের আমেজ শুরু হয়। অনেকে এই দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে টিকিট কেটে ট্রেনে চেপে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। এসময় অনুভূতি জানতে চাইলে, আব্দুস সালাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিলাম কখন মোংলা থেকে ট্রেন চলবে, আজ আশা পূরণ হলো। নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হচ্ছে’।

সুস্মিতা বালা নামে নারী যাত্রী বলেন, মোংলা থেকে ফুলতলা যাবো, এজন্য সাকাল ১০টায় এসে স্বপরিবারে বসে ছিলাম। খরচ কম এবং আরামদায়ক ভ্রমন উপভোগ করবো’। তাদের মতো শত শত অনেক যাত্রী নতুন ট্রেনে উঠবে বলে মোংলা প্লাটফর্মে এদিন অপেক্ষায় ছিলেন।

এদিকে এই রেলপথ চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণসহ দক্ষিনাঞ্চলের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে জানিয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর পর দেশের রেল নেটওয়ার্কে মোংলা বন্দর যুক্ত হয়েছে। এতে করে খুলনা-মোংলা রেল পথ ঘিরে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভবনার দুয়ার খুলবে। ঢাকার সাথে সহজ হবে মোংলা বন্দরের সাথে যোগাযোগ। একই সাথে এই বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময়ে কম খরচে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন। এছাড়া বহুল কাঙ্খিত এই রেলপথ চালু হওয়ায় মোংলা বন্দরের সাথে ভারত, ভূটান ও নেপালের ব্যবসা বানিজ্য প্রসারিত হবে’ বলেও জানান তিনি।

মোংলা রেল ষ্টেশন মাষ্টার এস এম মনির আহম্মেদ জানান, গত বছরের ১ নভেম্বর এই রেলপথ বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভার্সুয়ালি উদ্ধোধন করেন। এর ৭ মাস পর শনিবার (১ জুন) খুলনা-মোংলা রেলপথে আনুষ্ঠানিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এই পথে মঙ্গলবার বন্ধ রেখে সপ্তাহে ৬ দিন চলবে মোংলা এক্সপ্রেস নামে একটি কমিউটার ট্রেন।

এছাড়া মোংলা-চুলকাঠি ২০ টাকা, মোংলা-কাটাখালি ২০ টাকা, মোংলা-মোহাম্মদনগর ৩৫ টাকা, মোংলা-ফুলতলা ৪৫ টাকা, মোংলা-নওয়াপাড়া ৫৫ টাকা, মোংলা-সিঙ্গিয়া ৬০ টাকা, মোংলা-যশোর ৬৫ টাকা, মোংলা-ঝিকরগাছা ৭৫ টাকা, মোংলা-নাভারন ৮০ টাকা এবং মোংলা-বেনাপোল ৮৫ টাকা ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মানের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আরিফুজ্জামান বলেন, মোংলা বন্দরকে দেশের রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে ২০১৬ সালে শুরু হয় খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ। ২০১৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৫ দফা সময় বাড়িয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে রয়েছে রুপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার একটি রেলসেতু, ১০৭ টি ছোট বড় কালভার্ট, ৮ টি প্লাটফর্ম ও ৯ টি আন্ডারপাস।

এই রেলপথ চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কম খরচে সহজে যাতায়াত এবং আরামদায়ক ভ্রমণও করতে পারবেন। চিকিৎসাসহ ব্যবসা বানিজ্যের কাজেও ভারতে যেতে এই রুট তাদের সহজ হবে বলেও জানান তিনি।