ঢাকা ১০:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়কে চাঁদা তোলায় প্রতিবাদ, শ্রমিক লীগ নেতার হাতে মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি ইবনে মাসুদ লাক্সুর বিরুদ্ধে মো. আব্দুস সামাদ নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ‘লাঞ্ছিত’ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার এ বিষয়ে একটি অভিযোগ থানায় জমা দেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় তারা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত বিচার দাবি করেন।

ইবনে মাসুদসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে আখাউড়ার বিভিন্ন সড়কে যানবাহন থেকে চাঁদা তোলা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। চাঁদার বিষয়ে প্রতিবাদ করায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত হতে হয় বলে ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম বলেন, সোমবার বিকেলে বীরা মুক্তিযোদ্ধারা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন। বিষয়টি দেখব।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, এ বিষয়ে আব্দুস সামাদের লিখিত অভিযোগ আইনমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বরাবর ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া থানার পাশাপাশি তারা ইউএনও বরাবরও এ অভিযোগ দিবেন। এছাড়া তারা সড়ক থেকে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিও জানান।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার ইজারার নাম করে ইবনে মাসুদসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ছোট যানবাহন থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৫০ টাকা ও বড় যানবাহন থেকে ৫০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করা হয়। পৌরসভার নিয়ম অনুসারে শুধুমাত্র নির্ধারিত স্ট্যান্ড ব্যবহারকারী যানবাহন থেকে দৈনিক ১০ টাকা হারে টাকা তোলার কথা থাকলেও সেটার তোয়াক্কা করছেন না তারা।

গত ২০ এপ্রিল দুপুরে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় কয়েকজন ভারতীয় যাত্রী স্থলবন্দরে যাওয়ার জন্য একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেন। এ সময় অটোরিকশার চালকের কাছে এক ব্যক্তি চাঁদা দাবি করে। চালক চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ার ভারতীয় যাত্রীদেরকে ওই অটোরিকশা থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় এবং অটোরিকশার চাবি নিয়ে যাওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনায় চাঁদা চাওয়া ব্যক্তি তার উপর ক্ষিপ্ত হন ও আপত্তিজনক আচরণ করেন।

এক পর্যায়ে ইবনে মাসুদকে ফোন করেন চাঁদা দাবি করা ব্যক্তি। ইবনে মাসুদ ৫-১০ মিনিটের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন লোক নিয়ে এসে আব্দুস সামাদকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। গায়ে পরিহিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লোগো খুলে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করে কথা বলে আব্দুস সামাদের ওপর চড়াও হয় ইবনে মাসুদ। পরে আশেপাশে থাকা লোকজন তাকে এসে রক্ষা করেন। রক্ষাকারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতারাও রয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল হক ধনুসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ‘যানবাহন থেকে চাঁদা তোলার নামে আখাউড়াতে এক ধরণের অরাজকতা চলছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

তবে এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক লীগ সভাপতি ইবনে মাসুদ লাক্সু জানান, স্টেশন এলাকার নিয়ম হলো সিরিয়াল অনুযায়ী সিএনজি অটোরিকশা চলবে। কিন্তু সেদিন সিরিয়াল ছাড়া একজন চালক তার গাড়িতে যাত্রী উঠালে এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে বিতণ্ডা হয়। পরে আমি এলে বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে বিতণ্ডা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ একজনকে দিয়ে দুর্গাপুর এলাকায় যানবাহন থেকে টাকা তোলা শুরু করেছেন। এটার প্রতিবাদ করায় মূলত তিনি এভাবে আমাদের পিছনে লেগেছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে আমিও সংবাদ সম্মেলন করবো।

আরো পড়ুন : কেএনএফের ৫১ সদস্য কারাগারে

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

সড়কে চাঁদা তোলায় প্রতিবাদ, শ্রমিক লীগ নেতার হাতে মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত

আপডেট সময় ১০:১৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি ইবনে মাসুদ লাক্সুর বিরুদ্ধে মো. আব্দুস সামাদ নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ‘লাঞ্ছিত’ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার এ বিষয়ে একটি অভিযোগ থানায় জমা দেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় তারা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত বিচার দাবি করেন।

ইবনে মাসুদসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে আখাউড়ার বিভিন্ন সড়কে যানবাহন থেকে চাঁদা তোলা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। চাঁদার বিষয়ে প্রতিবাদ করায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত হতে হয় বলে ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম বলেন, সোমবার বিকেলে বীরা মুক্তিযোদ্ধারা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন। বিষয়টি দেখব।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, এ বিষয়ে আব্দুস সামাদের লিখিত অভিযোগ আইনমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বরাবর ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া থানার পাশাপাশি তারা ইউএনও বরাবরও এ অভিযোগ দিবেন। এছাড়া তারা সড়ক থেকে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিও জানান।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার ইজারার নাম করে ইবনে মাসুদসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ছোট যানবাহন থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৫০ টাকা ও বড় যানবাহন থেকে ৫০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করা হয়। পৌরসভার নিয়ম অনুসারে শুধুমাত্র নির্ধারিত স্ট্যান্ড ব্যবহারকারী যানবাহন থেকে দৈনিক ১০ টাকা হারে টাকা তোলার কথা থাকলেও সেটার তোয়াক্কা করছেন না তারা।

গত ২০ এপ্রিল দুপুরে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় কয়েকজন ভারতীয় যাত্রী স্থলবন্দরে যাওয়ার জন্য একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেন। এ সময় অটোরিকশার চালকের কাছে এক ব্যক্তি চাঁদা দাবি করে। চালক চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ার ভারতীয় যাত্রীদেরকে ওই অটোরিকশা থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় এবং অটোরিকশার চাবি নিয়ে যাওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনায় চাঁদা চাওয়া ব্যক্তি তার উপর ক্ষিপ্ত হন ও আপত্তিজনক আচরণ করেন।

এক পর্যায়ে ইবনে মাসুদকে ফোন করেন চাঁদা দাবি করা ব্যক্তি। ইবনে মাসুদ ৫-১০ মিনিটের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন লোক নিয়ে এসে আব্দুস সামাদকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। গায়ে পরিহিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লোগো খুলে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করে কথা বলে আব্দুস সামাদের ওপর চড়াও হয় ইবনে মাসুদ। পরে আশেপাশে থাকা লোকজন তাকে এসে রক্ষা করেন। রক্ষাকারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতারাও রয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল হক ধনুসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ‘যানবাহন থেকে চাঁদা তোলার নামে আখাউড়াতে এক ধরণের অরাজকতা চলছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

তবে এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক লীগ সভাপতি ইবনে মাসুদ লাক্সু জানান, স্টেশন এলাকার নিয়ম হলো সিরিয়াল অনুযায়ী সিএনজি অটোরিকশা চলবে। কিন্তু সেদিন সিরিয়াল ছাড়া একজন চালক তার গাড়িতে যাত্রী উঠালে এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে বিতণ্ডা হয়। পরে আমি এলে বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে বিতণ্ডা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ একজনকে দিয়ে দুর্গাপুর এলাকায় যানবাহন থেকে টাকা তোলা শুরু করেছেন। এটার প্রতিবাদ করায় মূলত তিনি এভাবে আমাদের পিছনে লেগেছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে আমিও সংবাদ সম্মেলন করবো।

আরো পড়ুন : কেএনএফের ৫১ সদস্য কারাগারে