ঢাকা ০২:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সাবেক এমপি

আমিরুল ইসলাম, পঞ্চগড় প্রতিনিধি :
পঞ্চগড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ স্বাস্থ্য ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের কয়েকটি অফিসে কর্মকর্তাদের সাথে মত বিনিময় করেছেন। এসময় পঞ্চগড় ডায়াবেটিক সমিতি ও মকবুলার রহমান হাসপাতালে ছাত্রদের তোপের মুখে পড়ে পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক এমপি ও ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান।

সোমবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা জানায়, ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা জানতে পেরে ডায়াবেটিক সমিতির হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন তারা। এসময় সাবেক ওই সংসদ সদস্য মিটিং করছিলেন। শিক্ষার্থীরা এসময় তাকে বলেন আপনি যে কমিটির সভাপতি সেই কমিটির বৈধতা নেই। সমাজ সেবা অধিদপ্তর এই কমিটিকে অনুমোদন দেয়নি। বৈধ কাগজ পত্র থাকলে আপনি দেখান। এসময় এমপি বলেন এ বিষয়ে সাধারন সম্পাদক বলতে পারবে। আগামী কাল আপনারা আসেন। সকল কাগজ পত্র দেখানো হবে। শিক্ষার্থীরা এসময় বলেন আপনি আমাদের অভিভাবকের মতো। সম্মানীয় মানুষ । এই হাসপাতালে অনেক দুর্নীতি হয়। এ বিষয়ে পত্রিকা টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হয়েছে। এসময় তারা এমপিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানান। পরে সাবেক ওই সংসদ সদস্য সবার কাছে সময় চেয়ে কক্ষ ত্যাগ করে মাইক্রোতে চলে যান।

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মখলেছার রহমান, সহ সমন্বয়ক মুরাদ হাসান ও ইতি আক্তারের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সাধারন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্য বিরোধী নাগরিক সমাজ পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক একেএম আনোয়ারুল ইসলাম খায়ের উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি ২০ বছর আগে আজীবন সদস্য হয়েছি। কোনদিন একটি মিটিংয়ে আমাকেও ডাকা হয়নি। সাধারন সদস্যরা এই হাসপাতাল নিয়ে কিছুই জানেনা। একটি সিন্ডিকেট এই হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করে লুটপাট করছে।

শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, ১৯৯৩ সালে পঞ্চগড় শহরের অদূরে মিঠাপুকুর এলাকায় ১ একর ৬২ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় পঞ্চগড় ডায়াবেটিক সমিতি। সেই সময় জেলার কয়েক হাজার আখচাষি এবং ব্যবসায়ি সহ সমাজের নানা স্তরের মানুষের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। পরবর্তিতে সরকারী অনুদানে নির্মিত ৪ তলা ভবন ২০১৩ সালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য সরকারি উদ্যোগে অফিস এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ডাত্তার কক্ষ, নার্সদের কক্ষ সহ রোগীদের জন্য উন্নত মানের বিছানা প্রদান করা হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে ৩৫ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি দ্বারা এই হাসপাতাল পরিচালিত হলেও ২০২০ সালে জেলা প্রশাসককে বাদ দিয়ে কমিটির সভাপতি হন পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান। তবে এই কমিটি অনুমোদন দেয়নি সমাজসেবা অধিদপ্তর। ২০১৮-১৯ সালে সরকারী অনুদানে ৭ কোটি টাকা মুল্যের আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনা হয়। ব্যবহারের অভাবে অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে। হাসপাতালের কেনা কাটা ও হিসাব নিকাশেও অসচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্র সহ অন্যান্য লাভজনক খাত থেকে লাভ্যাংশb ডায়াবেটিক সমিতির হিসাবে জমা হয়না। ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্রটি ডায়াবেটিক সমিতি দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি ব্যাক্তিগত ভাবে পরিচালনা করছেন কয়েকজন কর্মচারী। হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারীরাও নিয়ম বহির্ভুত ভাবে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট অন্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে এই হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসতে চাইলেও অসাধু কর্মচারীদের উৎসাহে অন্য ক্লিনিক বা ডায়াগষ্টিকে চলে যাচ্ছেন তারা। আয়ের চেয়ে ব্যায় বেশি হওয়ার কারণে ৮ মাসের বেতনও পাচ্ছেন না কর্মচারী কর্মকর্তারা। পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও রয়েছে। পরে তারা প্রাণী সম্পদ বিভাগে কর্মচারী কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করে।

আরো পড়ুন : স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা ভিডিও নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সাবেক এমপি

আপডেট সময় ০৭:৫৯:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪

আমিরুল ইসলাম, পঞ্চগড় প্রতিনিধি :
পঞ্চগড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ স্বাস্থ্য ও প্রাণী সম্পদ বিভাগের কয়েকটি অফিসে কর্মকর্তাদের সাথে মত বিনিময় করেছেন। এসময় পঞ্চগড় ডায়াবেটিক সমিতি ও মকবুলার রহমান হাসপাতালে ছাত্রদের তোপের মুখে পড়ে পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক এমপি ও ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান।

সোমবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা জানায়, ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা জানতে পেরে ডায়াবেটিক সমিতির হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন তারা। এসময় সাবেক ওই সংসদ সদস্য মিটিং করছিলেন। শিক্ষার্থীরা এসময় তাকে বলেন আপনি যে কমিটির সভাপতি সেই কমিটির বৈধতা নেই। সমাজ সেবা অধিদপ্তর এই কমিটিকে অনুমোদন দেয়নি। বৈধ কাগজ পত্র থাকলে আপনি দেখান। এসময় এমপি বলেন এ বিষয়ে সাধারন সম্পাদক বলতে পারবে। আগামী কাল আপনারা আসেন। সকল কাগজ পত্র দেখানো হবে। শিক্ষার্থীরা এসময় বলেন আপনি আমাদের অভিভাবকের মতো। সম্মানীয় মানুষ । এই হাসপাতালে অনেক দুর্নীতি হয়। এ বিষয়ে পত্রিকা টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হয়েছে। এসময় তারা এমপিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানান। পরে সাবেক ওই সংসদ সদস্য সবার কাছে সময় চেয়ে কক্ষ ত্যাগ করে মাইক্রোতে চলে যান।

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মখলেছার রহমান, সহ সমন্বয়ক মুরাদ হাসান ও ইতি আক্তারের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সাধারন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্য বিরোধী নাগরিক সমাজ পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক একেএম আনোয়ারুল ইসলাম খায়ের উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি ২০ বছর আগে আজীবন সদস্য হয়েছি। কোনদিন একটি মিটিংয়ে আমাকেও ডাকা হয়নি। সাধারন সদস্যরা এই হাসপাতাল নিয়ে কিছুই জানেনা। একটি সিন্ডিকেট এই হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করে লুটপাট করছে।

শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, ১৯৯৩ সালে পঞ্চগড় শহরের অদূরে মিঠাপুকুর এলাকায় ১ একর ৬২ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় পঞ্চগড় ডায়াবেটিক সমিতি। সেই সময় জেলার কয়েক হাজার আখচাষি এবং ব্যবসায়ি সহ সমাজের নানা স্তরের মানুষের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। পরবর্তিতে সরকারী অনুদানে নির্মিত ৪ তলা ভবন ২০১৩ সালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য সরকারি উদ্যোগে অফিস এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ডাত্তার কক্ষ, নার্সদের কক্ষ সহ রোগীদের জন্য উন্নত মানের বিছানা প্রদান করা হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে ৩৫ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি দ্বারা এই হাসপাতাল পরিচালিত হলেও ২০২০ সালে জেলা প্রশাসককে বাদ দিয়ে কমিটির সভাপতি হন পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান। তবে এই কমিটি অনুমোদন দেয়নি সমাজসেবা অধিদপ্তর। ২০১৮-১৯ সালে সরকারী অনুদানে ৭ কোটি টাকা মুল্যের আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনা হয়। ব্যবহারের অভাবে অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে। হাসপাতালের কেনা কাটা ও হিসাব নিকাশেও অসচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্র সহ অন্যান্য লাভজনক খাত থেকে লাভ্যাংশb ডায়াবেটিক সমিতির হিসাবে জমা হয়না। ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্রটি ডায়াবেটিক সমিতি দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি ব্যাক্তিগত ভাবে পরিচালনা করছেন কয়েকজন কর্মচারী। হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারীরাও নিয়ম বহির্ভুত ভাবে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট অন্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে এই হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসতে চাইলেও অসাধু কর্মচারীদের উৎসাহে অন্য ক্লিনিক বা ডায়াগষ্টিকে চলে যাচ্ছেন তারা। আয়ের চেয়ে ব্যায় বেশি হওয়ার কারণে ৮ মাসের বেতনও পাচ্ছেন না কর্মচারী কর্মকর্তারা। পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও রয়েছে। পরে তারা প্রাণী সম্পদ বিভাগে কর্মচারী কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করে।

আরো পড়ুন : স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা ভিডিও নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার