ঢাকা ০২:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিরাজগঞ্জে ৬ এমপিসহ আ.লীগের নেতারা আত্মগোপনে

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় কঠিন বিপদে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের ৬ টি আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। জেলার দাপটে এমপি ও দলের নেতারা বর্তমানে কে কোথায় আছেন জানেন না কেউ।’

প্রাণভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন ৬টি আসনের সাবেক এমপিসহ দলের জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এতে অভিভাবকশূন্য সংকটময় এ দিনগুলোতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমপি ও নেতারা নিজের মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকও বন্ধ রেখেছেন। এমনকি এমপি ও নেতাদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এমপি ও দলীয় নেতাদের বাড়িতে। এ হামলা ও অগ্নিসংযোগ থেকে বাদ যায়নি ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও।

আত্মগোপনে চলে যাওয়া সাবেক এমপিরা হলেন-সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর-সদরের একাংশ) প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) ড. জান্নাত আরা হেনরি, সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) ডা. আব্দুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) শফিকুল ইসলাম শফি, সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আব্দুল মমিন মণ্ডল ও সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের চয়ন ইসলাম।

চলমান এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের ৬ জন নেতাকর্মীকে হত্যা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত (৪ আগস্ট’) সিরাজগঞ্জ শহরে শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলা ও গুলিবর্ষণের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো জেলা। এতে শহর যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু খান (৩৮), পৌর শহরের গয়লা মহল্লার আসু মুন্সীর ছেলে যুবদলের সদস্য আব্দুল লতিফ (২৫) ও একই মহল্লার গঞ্জের আলীর ছেলে ছাত্রদলের সদস্য সুমন সেখ (১৮) নিহত হয়। এতে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একই সঙ্গে সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিযোগ করে। পরে এদিন রাতে জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ি থেকে ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন শেখ (১৮) গজারিয়া গ্রামের অটোরিকশা চালক জাহাঙ্গীর আলম (৪৬) এর কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।

একই দিনে জেলার রায়গঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকসহ ৬ জন এবং এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন পুলিশ নিহত হয়। পরদিন আরও দুই পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা যান। এতে চলমান আন্দোলনে সিরাজগঞ্জে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে জেলার থানা, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।’

স্থানীয় সাধারণ মানুষেরা বলেন, আওয়ামীলীগের কিছু এমপি ও অনেক নেতারা সাধারণ মানুষদের কোন সময় মানুষ মনে করেন নাই। তাদের ব্যবহারে সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ। তারা ১৫ বছর অতিবাহিত করে টাকার পাহাড় বানিয়ে এখন আত্মগোপনে গেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, এমপি বা জেলার শীর্ষ নেতারা কে কোথায় আছেন কেউ জানি না। কারো সঙ্গে যোগাযোগও নেই। এমপিরা ও জেলার নেতারাই নন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে কেন্দ্রীয় নির্দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল রাখবেন বলে জানিয়েছেন তারা।’

 

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

সিরাজগঞ্জে ৬ এমপিসহ আ.লীগের নেতারা আত্মগোপনে

আপডেট সময় ১১:০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৪

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় কঠিন বিপদে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের ৬ টি আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। জেলার দাপটে এমপি ও দলের নেতারা বর্তমানে কে কোথায় আছেন জানেন না কেউ।’

প্রাণভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন ৬টি আসনের সাবেক এমপিসহ দলের জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এতে অভিভাবকশূন্য সংকটময় এ দিনগুলোতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমপি ও নেতারা নিজের মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকও বন্ধ রেখেছেন। এমনকি এমপি ও নেতাদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এমপি ও দলীয় নেতাদের বাড়িতে। এ হামলা ও অগ্নিসংযোগ থেকে বাদ যায়নি ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও।

আত্মগোপনে চলে যাওয়া সাবেক এমপিরা হলেন-সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর-সদরের একাংশ) প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) ড. জান্নাত আরা হেনরি, সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) ডা. আব্দুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) শফিকুল ইসলাম শফি, সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আব্দুল মমিন মণ্ডল ও সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের চয়ন ইসলাম।

চলমান এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের ৬ জন নেতাকর্মীকে হত্যা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত (৪ আগস্ট’) সিরাজগঞ্জ শহরে শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলা ও গুলিবর্ষণের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো জেলা। এতে শহর যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু খান (৩৮), পৌর শহরের গয়লা মহল্লার আসু মুন্সীর ছেলে যুবদলের সদস্য আব্দুল লতিফ (২৫) ও একই মহল্লার গঞ্জের আলীর ছেলে ছাত্রদলের সদস্য সুমন সেখ (১৮) নিহত হয়। এতে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একই সঙ্গে সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিযোগ করে। পরে এদিন রাতে জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ি থেকে ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন শেখ (১৮) গজারিয়া গ্রামের অটোরিকশা চালক জাহাঙ্গীর আলম (৪৬) এর কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।

একই দিনে জেলার রায়গঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকসহ ৬ জন এবং এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন পুলিশ নিহত হয়। পরদিন আরও দুই পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা যান। এতে চলমান আন্দোলনে সিরাজগঞ্জে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে জেলার থানা, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।’

স্থানীয় সাধারণ মানুষেরা বলেন, আওয়ামীলীগের কিছু এমপি ও অনেক নেতারা সাধারণ মানুষদের কোন সময় মানুষ মনে করেন নাই। তাদের ব্যবহারে সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ। তারা ১৫ বছর অতিবাহিত করে টাকার পাহাড় বানিয়ে এখন আত্মগোপনে গেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, এমপি বা জেলার শীর্ষ নেতারা কে কোথায় আছেন কেউ জানি না। কারো সঙ্গে যোগাযোগও নেই। এমপিরা ও জেলার নেতারাই নন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে কেন্দ্রীয় নির্দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল রাখবেন বলে জানিয়েছেন তারা।’