ঢাকা ১০:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অলৌকিক: আব্বা আমাকে সাথে নিয়ে শাহজাহানপুর মোড় পর্যন্ত গেলেন; তারপর উধাও!

জামিউর রহমান লেমন
আমি তখন শাহজাহানপুর গভঃ অফিসার্স কলোনীর আট নম্বর বিল্ডিং এ থাকি। বেশ কয়েক বছর হলো আব্বা মারা গেছেন। মাঝে মধ্যেই আব্বার কবরের কথা মনে করে যেকোন গোরস্তান সামনে পেলেই জিয়ারত করাটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। তবে শাহজাহানপুর গোরস্তানে যাওয়া হয়নি। তখন টেন টিভি নামে নতুন একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল আসে। সেখানকার অনুষ্ঠান বিভাগে আমি চাকুরির পাশাপাশি খণ্ডকালীন দায়িত্ব পালন করছি। বাসায় ফিরতে রাত হতো। তবুও চান্দা মাহজাবিনের অনুরোধে আমি বেশ কটি ভাল অনুষ্ঠান নির্মাণের দায়িত্ব পালন করছি।

সেদিন সম্ভবত বৃহস্পতিবার ছিল। রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে শুতে গেলাম। কলোনীর পাশেই রেললাইন। সারারাত রেলের শব্দে ঠিকমত ঘুম হতো না। সেদিনও তার কিছু ব্যত্যয় ঘটলো না। মাঝরাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ স্বপ্নে দেখি আব্বা আমার কলোনীর ফ্ল্যাটের দরজা নক করছেন। আমি দরজা খুলতেই দেখলাম তিনি আমার পায়ের দিকে ভাল করে নজর দিচ্ছেন। আমি তাঁকে ভিতরে আসতে বললেও তিনি আসলেন না। আমি তাঁর কাছে যেতেই তিনি আমার বাম পায়ের উপর বার বার হাত বোলাতে লাগলেন। আব্বা আমাকে নিচে নেমে আসার জন্য ইঙ্গিত করলেন। আমরা দুজন হাত ধরাধরি করে কলোনী পেরিয়ে শাহজাহানপুর মোড় পর্যন্ত এগিয়ে আসলাম। তারপর চেয়ে দেখি তিনি নেই। আমি হন্যে হয়ে তাঁকে খুঁজছি। আমি চিৎকার করে ডাকছি। আমার ঘুম ভেঙে যায়। ভীষণ খারাপ লাগছে। পাশে তাকিয়ে দেখি মিনু ঘুমাচ্ছে। কাউকে কিছু না বলে চটজলদি আমি ঘরের বাইরে এসে একটু উপলব্ধি করতে চেষ্টা করি। এইতো এই দরজার সামনেই তিনি বসেছিলেন। দরজার সামনে তখনো তাঁর বসে থাকার চিহ্নের মতো আছে বলে মনে হচ্ছে। ফজরের আজান হচ্ছে। দুইতলার মজলিশ ভাই নামাজের যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে। আমি দরজায় তালা লাগিয়ে দোতালায় গিয়ে তাঁকে সব ঘটনাটা বললাম। শুনে মজলিশ ভাই বললেন, আপনার আব্বা আপনাকে বেশি ভালবাসতেন। তাই স্বপ্নে বিভিন্নভাবে তিনি দেখা দেন। যাইহোক, আপনি নামাজ পড়ে তার জন্য দোয়া করবেন আর সময় পেলেই তার কবর জিয়ারত করে আসবেন। আমি তাকে বললাম, আচ্ছা ভাই শাহজাহানপুর মোড়ে কি কোন কবরস্থান আছে? আব্বাতো ওখানে গিয়ে উধাও হলেন। তিনি বললেন, ঠিক মোড়ে নয় মোড়ের কাছেই, মির্জা আব্বাসদের পারিবারিক কবরস্থান। খুব সুন্দর গোছানো। যাবেন নাকি? আমি বললাম, আপনি যাবেন, উনি বললেন, ঠিক আছে নামাজ সেরে তারপর আপনি রেড়ি হয়ে কলোনীর গেটে থাকবেন। আমি যথারীতি বেড়ী হচ্ছি। মিনুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। এতো সকালে কোথায় যাচ্ছি। জিজ্ঞেস করলে, আমি পুরো ইতিবৃত্ত বললাম। সে বললো, বাবা মারা যাবার পর পুরো নামাজি হয়ে গেলে, হঠাৎ ছেড়ে দিলেতো এরকমই হবে। নামাজ পড়ো। গোরস্তানে যাচ্ছ যাও, সাবধানে যেও। গোসল করে যেও।

আমি ও মজলিশ ভাই দুজনে শাহজাহানপুর গোরস্থানের সামনে এসে দাঁড়ালাম, তখন বৈশাখ মাস, গোরস্থানের আম কাঠাল জামরুল সব গাছে থরে থরে ফল ঝুলছে। এ যেন পবিত্র কোরানে বলা বেহেস্তের এক টুকরো অংশ। ভিতরে ঢুকে মন ভরে গেল। কিছুটা পেরিয়ে একটা জামরুল গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আমরা সকল মূর্দার সাথে আব্বার কবরের কথা মনে নিয়ে কবর যিয়ারত করলাম। মজলিশ ভাই জোরে জোরে সকল কবরবাসীদের সালাম দিতে লাগলেন। ততক্ষণে প্রায় ভোর। মনটা ভীষণ হালকা হয়ে গেল। মনে হলো আমার প্রিয় আব্বা যেন আমার পাশেই আমার সাথেই রয়েছেন।

মজলিশ ভাই ও আমি একটা রিকশা নিয়ে কলোনীতে ফিরলাম। ফ্লাটের গেটে ঢুকতেই দেখি আমার নিয়োজিত ফ্ল্যাটের দারোয়ার আনছার টুপি মাথায় দাঁড়িয়ে, আমাকে দেখা মাত্রই সে বললো স্যার রাতে কি কেউ আসছিল, আপনার নাম ধরে ডাকতে শুনছি। আমি বললাম, গেটের চাবি তোমার কাছে ফজরের আজানের আগে খুলে দাও, আসলেতো তুমি দেখতে। আনছার বললো না স্যার ডাক শুইনা আমিতো উঠছিলাম, কি জানি! আনছারের কথা ও আমার স্বপ্নের মধ্যে মিল দেখে আমি মজলিশ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। মজলিশ ভাই বললো, ও কিছুনা ভাই, মন দূর্বল থাকলে এরকম হয়।

পরের দিন শুক্রবার শবেবরাতের রাত। টেন টিভিতে আমার ডিউটি সামান্য ছিল। চটজলদি একটা শবেবরাতের ফিলার তৈরি করে দিয়ে কলোনীতে ফিরলাম। ক্যামেরাম্যান মনির তখন আমার সাথে কাজ করে। তাকে বললাম তোমার মটরসাইকেলটা নিয়ে এসো রাতে শাহজাহারপুর কবরস্থানে যাবো তারপর আজিমপুর। যথারীতি মনির এসে হাজির। রুটি মাংস খেয়ে, কাপড় পাল্টিয়ে আমরা দুজন মটরসাইকেল চেপে শাহজাহানপুর গোরস্থানের দিকে রওয়ানা দিলাম। বাইরে মটর সাইকেল রেখে আমরা দুজন গোরস্থানে ঢুকলাম। ছোট গোরস্থান, লোকে লোকারণ্য। কোথাও নিরিবিলি দাঁড়িয়ে জিয়ারত করবো তার সুযোগ নেই। আমি যুতসই জায়গা নির্বাচন করতে না পেরে একটা কবর ডিঙ্গিয়ে অন্যদিকে যাই। মনির বললো স্যার এটাতো ঠিক হলোনা। আমি বললাম এটা যে কবর আমি বুঝতে পারিনি ভাই। আমরা দুজন ওখানেই একটা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সকল মুর্দার জন্য দোয়া করলাম। তারপর বের হয়ে আমি মনিরকে বললাম, চলো গোরানে ওখানে তোমার ভাবীরা আসবে তার ভাইয়ের বাড়িতে, তারপর রাতে না হয় যাবো আজিমপুরে।

খিলগাঁও রেলগেইট পেরিয়ে বাসাবোর দিকে ঢুকতে যাবো, এমন সময় রাস্তায় পড়ে থাকা মবিলে আমাদের মটর সাইকেল পিছলে গেল। আমি কমপক্ষে দশ বারো হাত দুরে ছিটকে পড়লাম। লোকজন দৌড়ে আসলো। সবাই বলছে ভাই আল্লাহ বাঁচিয়েছেন আর একহাত আসলে রোড ডিভাইডারে লেগে আপনার মাথাটাই যেতো। মাশআল্লাহ্ কিছু হয়নি দাঁড়ান, দাঁড়ান। মনিরের হাত ছিলে কিছুটা রক্ত ঝরছে। আমারও। সবাই আমাকে দাঁড় করাতে চাচ্ছে কিন্তু আমি বা পায়ে কোন শক্তি পাচ্ছি না। সবাই ধরাধরি করে আমাকে আবার মটর সাইকেলে বসিয়ে দিলো। দুইজনারই ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে, তবুও মনির আমাকে কোনভাবে গোরানে পৌঁছে দিলো। সারারাত অসহ্য যন্ত্রণায় মিনুর ভাইয়ের বাসায় কাটলো। আমার শাশুড়ি আর মিনু নির্ঘুম রাত কাটিয়ে আমার পাশে বসে রইলো, যত্ন করলো, সাহস দিলো। সকালে আমাকে হাসপাতালে নেয়া হলো, ডাক্তার বললেন হাড় ফ্র্যাকচার হয়েছে। এখুনি প্লাস্টার করতে হবে, তিনমাস বেড রেষ্ট।

প্লাস্টারের পর হাসপাতালের বেডে শুয়ে আমি খালি ভাবছি আর ভাবছি, গোরস্থানে আমি কি অন্যায় করে ফেলেছি। এই পাটাতে তো আমার আব্বা হাত বুলিয়েছিলেন। একটুর জন্যে কেন আমার মাথাটা চৌচির হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেলো। খালি ভাবি আর ভাবি উত্তর পাইনি।

আরো পড়ুন : একটা বিশাল ষাড় আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে!

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

অলৌকিক: আব্বা আমাকে সাথে নিয়ে শাহজাহানপুর মোড় পর্যন্ত গেলেন; তারপর উধাও!

আপডেট সময় ১০:০১:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

জামিউর রহমান লেমন
আমি তখন শাহজাহানপুর গভঃ অফিসার্স কলোনীর আট নম্বর বিল্ডিং এ থাকি। বেশ কয়েক বছর হলো আব্বা মারা গেছেন। মাঝে মধ্যেই আব্বার কবরের কথা মনে করে যেকোন গোরস্তান সামনে পেলেই জিয়ারত করাটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। তবে শাহজাহানপুর গোরস্তানে যাওয়া হয়নি। তখন টেন টিভি নামে নতুন একটি স্যাটেলাইট চ্যানেল আসে। সেখানকার অনুষ্ঠান বিভাগে আমি চাকুরির পাশাপাশি খণ্ডকালীন দায়িত্ব পালন করছি। বাসায় ফিরতে রাত হতো। তবুও চান্দা মাহজাবিনের অনুরোধে আমি বেশ কটি ভাল অনুষ্ঠান নির্মাণের দায়িত্ব পালন করছি।

সেদিন সম্ভবত বৃহস্পতিবার ছিল। রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে শুতে গেলাম। কলোনীর পাশেই রেললাইন। সারারাত রেলের শব্দে ঠিকমত ঘুম হতো না। সেদিনও তার কিছু ব্যত্যয় ঘটলো না। মাঝরাতের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ স্বপ্নে দেখি আব্বা আমার কলোনীর ফ্ল্যাটের দরজা নক করছেন। আমি দরজা খুলতেই দেখলাম তিনি আমার পায়ের দিকে ভাল করে নজর দিচ্ছেন। আমি তাঁকে ভিতরে আসতে বললেও তিনি আসলেন না। আমি তাঁর কাছে যেতেই তিনি আমার বাম পায়ের উপর বার বার হাত বোলাতে লাগলেন। আব্বা আমাকে নিচে নেমে আসার জন্য ইঙ্গিত করলেন। আমরা দুজন হাত ধরাধরি করে কলোনী পেরিয়ে শাহজাহানপুর মোড় পর্যন্ত এগিয়ে আসলাম। তারপর চেয়ে দেখি তিনি নেই। আমি হন্যে হয়ে তাঁকে খুঁজছি। আমি চিৎকার করে ডাকছি। আমার ঘুম ভেঙে যায়। ভীষণ খারাপ লাগছে। পাশে তাকিয়ে দেখি মিনু ঘুমাচ্ছে। কাউকে কিছু না বলে চটজলদি আমি ঘরের বাইরে এসে একটু উপলব্ধি করতে চেষ্টা করি। এইতো এই দরজার সামনেই তিনি বসেছিলেন। দরজার সামনে তখনো তাঁর বসে থাকার চিহ্নের মতো আছে বলে মনে হচ্ছে। ফজরের আজান হচ্ছে। দুইতলার মজলিশ ভাই নামাজের যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে। আমি দরজায় তালা লাগিয়ে দোতালায় গিয়ে তাঁকে সব ঘটনাটা বললাম। শুনে মজলিশ ভাই বললেন, আপনার আব্বা আপনাকে বেশি ভালবাসতেন। তাই স্বপ্নে বিভিন্নভাবে তিনি দেখা দেন। যাইহোক, আপনি নামাজ পড়ে তার জন্য দোয়া করবেন আর সময় পেলেই তার কবর জিয়ারত করে আসবেন। আমি তাকে বললাম, আচ্ছা ভাই শাহজাহানপুর মোড়ে কি কোন কবরস্থান আছে? আব্বাতো ওখানে গিয়ে উধাও হলেন। তিনি বললেন, ঠিক মোড়ে নয় মোড়ের কাছেই, মির্জা আব্বাসদের পারিবারিক কবরস্থান। খুব সুন্দর গোছানো। যাবেন নাকি? আমি বললাম, আপনি যাবেন, উনি বললেন, ঠিক আছে নামাজ সেরে তারপর আপনি রেড়ি হয়ে কলোনীর গেটে থাকবেন। আমি যথারীতি বেড়ী হচ্ছি। মিনুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। এতো সকালে কোথায় যাচ্ছি। জিজ্ঞেস করলে, আমি পুরো ইতিবৃত্ত বললাম। সে বললো, বাবা মারা যাবার পর পুরো নামাজি হয়ে গেলে, হঠাৎ ছেড়ে দিলেতো এরকমই হবে। নামাজ পড়ো। গোরস্তানে যাচ্ছ যাও, সাবধানে যেও। গোসল করে যেও।

আমি ও মজলিশ ভাই দুজনে শাহজাহানপুর গোরস্থানের সামনে এসে দাঁড়ালাম, তখন বৈশাখ মাস, গোরস্থানের আম কাঠাল জামরুল সব গাছে থরে থরে ফল ঝুলছে। এ যেন পবিত্র কোরানে বলা বেহেস্তের এক টুকরো অংশ। ভিতরে ঢুকে মন ভরে গেল। কিছুটা পেরিয়ে একটা জামরুল গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আমরা সকল মূর্দার সাথে আব্বার কবরের কথা মনে নিয়ে কবর যিয়ারত করলাম। মজলিশ ভাই জোরে জোরে সকল কবরবাসীদের সালাম দিতে লাগলেন। ততক্ষণে প্রায় ভোর। মনটা ভীষণ হালকা হয়ে গেল। মনে হলো আমার প্রিয় আব্বা যেন আমার পাশেই আমার সাথেই রয়েছেন।

মজলিশ ভাই ও আমি একটা রিকশা নিয়ে কলোনীতে ফিরলাম। ফ্লাটের গেটে ঢুকতেই দেখি আমার নিয়োজিত ফ্ল্যাটের দারোয়ার আনছার টুপি মাথায় দাঁড়িয়ে, আমাকে দেখা মাত্রই সে বললো স্যার রাতে কি কেউ আসছিল, আপনার নাম ধরে ডাকতে শুনছি। আমি বললাম, গেটের চাবি তোমার কাছে ফজরের আজানের আগে খুলে দাও, আসলেতো তুমি দেখতে। আনছার বললো না স্যার ডাক শুইনা আমিতো উঠছিলাম, কি জানি! আনছারের কথা ও আমার স্বপ্নের মধ্যে মিল দেখে আমি মজলিশ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। মজলিশ ভাই বললো, ও কিছুনা ভাই, মন দূর্বল থাকলে এরকম হয়।

পরের দিন শুক্রবার শবেবরাতের রাত। টেন টিভিতে আমার ডিউটি সামান্য ছিল। চটজলদি একটা শবেবরাতের ফিলার তৈরি করে দিয়ে কলোনীতে ফিরলাম। ক্যামেরাম্যান মনির তখন আমার সাথে কাজ করে। তাকে বললাম তোমার মটরসাইকেলটা নিয়ে এসো রাতে শাহজাহারপুর কবরস্থানে যাবো তারপর আজিমপুর। যথারীতি মনির এসে হাজির। রুটি মাংস খেয়ে, কাপড় পাল্টিয়ে আমরা দুজন মটরসাইকেল চেপে শাহজাহানপুর গোরস্থানের দিকে রওয়ানা দিলাম। বাইরে মটর সাইকেল রেখে আমরা দুজন গোরস্থানে ঢুকলাম। ছোট গোরস্থান, লোকে লোকারণ্য। কোথাও নিরিবিলি দাঁড়িয়ে জিয়ারত করবো তার সুযোগ নেই। আমি যুতসই জায়গা নির্বাচন করতে না পেরে একটা কবর ডিঙ্গিয়ে অন্যদিকে যাই। মনির বললো স্যার এটাতো ঠিক হলোনা। আমি বললাম এটা যে কবর আমি বুঝতে পারিনি ভাই। আমরা দুজন ওখানেই একটা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সকল মুর্দার জন্য দোয়া করলাম। তারপর বের হয়ে আমি মনিরকে বললাম, চলো গোরানে ওখানে তোমার ভাবীরা আসবে তার ভাইয়ের বাড়িতে, তারপর রাতে না হয় যাবো আজিমপুরে।

খিলগাঁও রেলগেইট পেরিয়ে বাসাবোর দিকে ঢুকতে যাবো, এমন সময় রাস্তায় পড়ে থাকা মবিলে আমাদের মটর সাইকেল পিছলে গেল। আমি কমপক্ষে দশ বারো হাত দুরে ছিটকে পড়লাম। লোকজন দৌড়ে আসলো। সবাই বলছে ভাই আল্লাহ বাঁচিয়েছেন আর একহাত আসলে রোড ডিভাইডারে লেগে আপনার মাথাটাই যেতো। মাশআল্লাহ্ কিছু হয়নি দাঁড়ান, দাঁড়ান। মনিরের হাত ছিলে কিছুটা রক্ত ঝরছে। আমারও। সবাই আমাকে দাঁড় করাতে চাচ্ছে কিন্তু আমি বা পায়ে কোন শক্তি পাচ্ছি না। সবাই ধরাধরি করে আমাকে আবার মটর সাইকেলে বসিয়ে দিলো। দুইজনারই ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে, তবুও মনির আমাকে কোনভাবে গোরানে পৌঁছে দিলো। সারারাত অসহ্য যন্ত্রণায় মিনুর ভাইয়ের বাসায় কাটলো। আমার শাশুড়ি আর মিনু নির্ঘুম রাত কাটিয়ে আমার পাশে বসে রইলো, যত্ন করলো, সাহস দিলো। সকালে আমাকে হাসপাতালে নেয়া হলো, ডাক্তার বললেন হাড় ফ্র্যাকচার হয়েছে। এখুনি প্লাস্টার করতে হবে, তিনমাস বেড রেষ্ট।

প্লাস্টারের পর হাসপাতালের বেডে শুয়ে আমি খালি ভাবছি আর ভাবছি, গোরস্থানে আমি কি অন্যায় করে ফেলেছি। এই পাটাতে তো আমার আব্বা হাত বুলিয়েছিলেন। একটুর জন্যে কেন আমার মাথাটা চৌচির হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেলো। খালি ভাবি আর ভাবি উত্তর পাইনি।

আরো পড়ুন : একটা বিশাল ষাড় আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে!