ঢাকা ০৯:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভ্রমণ কাহিনী-১

মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন
লারার সাথে সাথীর বিয়ে বছর খানেক এখনো হয়নি। এক রকম সেটেল্ড ম্যারেজ। উভয়ের পরিবারের সম্মতিতে এই বিয়ে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া সাথীর জীবনে লারার আগমন অনেকটা মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো। মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল, পাতলা গড়ন সাথীর সাথে আগ বাড়িয়ে ক্যাম্পাসে কখনো কেউ কথা বলেনি। মফস্বল শহর থেকে উঠে আসা সাথীর জীবনে প্রেম হানা দেবে এটা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি সে। গান বাজনা লেখালেখি নাটক সব মিলিয়ে একটা বাউণ্ডেলে জীবন।

ছায়ানটের বটমুলে বৈশাখের কাকডাকা ভোরে একান্তে নিজের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে ফ্রেমে আটকা পড়ে লারার ছবি। লারা আগ বাড়িয়ে বলে ছবিটার প্রিন্ট কি করে পাবো? তখন এতসব মোবাইলের বাহাদুরি ছিলনা। সাথীর সোজা সাপটা উত্তর, ফোন নম্বরটা দিন, পেয়ে যাবেন। লারা বলে, ফোন নাম্বার দেয়া যাবেনা, মহাখালী ওয্যারলেছ গেটের ৫৫ নম্বরে থাকি, বাবা পুলিশ। সাথী উত্তরে বলে, আমিতো চোর নই, অতএব পুলিশ দারোগা কেয়ার করি না । তারপর ছবি বিনিময়, একবার দুইবার করে বহুবার মহাখালী লারাদের বাসায় যাতায়াত সাথীর।

অনার্স মাস্টার্স শেষ সাথীর, যেমনটি বদরুন্নেসায় ডিগ্রীও শেষ লারার। সাথী সবেমাত্র যোগ দিয়েছে একটা ট্রাভলিং কোম্পানিতে, উদ্দেশ্য দেশটা ঘুরে দেখার। বিয়ের প্রথম রাতেই লারা সাথীকে বলে, তোমার কোম্পানিতে তুমি গাইড আর আমি তোমার গাইড, সাথে নেবে তো। সাথী বলে সাথেইতো নিলাম।

পঁচিশ জন পর্যটক নিয়ে টুরিস্ট বাস এগিয়ে চলেছে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। লারা মাইক্রফোন হাতে নিয়ে বর্ণনা করছে, রাস্তার দুপাশের বিভিন্ন বিষয়। চট্রগ্রামে গাড়ি ঢুকতেই লারা বলছে, প্রিয় পর্যটকবৃন্দ, আর মাত্র কিছুক্ষণ পর আমরা দেখতে পাবো পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স যে শহরের নাম দিয়েছিলেন ‘কক্সবাজার’। কিন্তু এর আগে ঐ জায়গার নাম ছিল প্যানওয়া। এখানকার একশত পঞ্চাশ কিলোমিটার স্যাণ্ডি বীচ বিশ্বখ্যাত। বাসের যাত্রীদের এ ধরনের মায়াবীকণ্ঠে সমুদ্র সৈকতের বর্ণনা ও বীচ শহরের ইতিহাস ও অন্যান্য বিষয় শুনতে মোটেও খারাপ লাগছিলো না। কথা শোনার পাশাপাশি সাথীর সরবরাহ করা চিপস, বাদাম সবারই রসনায় তৃপ্তি এনে দেয়।

ইতোমধ্যে কক্সবাজারে গাড়ি প্রবেশ করেছে। দূর থেকে সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য পর্যটকদের নজরে পড়ছে, এক অজানা আনন্দে সাগর দেখার ইচ্ছায় সবার মন আনচান করছে। তখন সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু, লাবনী পয়েন্টে সাথীর কোম্পানির পূর্বনির্ধারিত হোটেলের সামনে এসে গাড়ি থামে। লারা জানিয়ে দেয় সন্ধ্যায় বীচে না যাওয়াই ভাল। কাল সকালে ব্রেকফাস্টের পর সবাই মিলে যাবো সাগর অবগাহনে।

হোটেলের হালকা নীল আলোয় সাথীর বুকে মাথা রেখে লারা বলে “জানো আমার আজন্মের স্বপ্ন ছিল দেশটা ঘুরে দেখবো, সেটা সম্ভব হয়েছে তোমাকে পেয়ে, আই এ্যাম হ্যাপী” সাথী আলতো করে লারাকে আরো কাছে টেনে নিলো… (চলবে)।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

ভ্রমণ কাহিনী-১

আপডেট সময় ১১:৩০:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন
লারার সাথে সাথীর বিয়ে বছর খানেক এখনো হয়নি। এক রকম সেটেল্ড ম্যারেজ। উভয়ের পরিবারের সম্মতিতে এই বিয়ে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া সাথীর জীবনে লারার আগমন অনেকটা মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো। মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল, পাতলা গড়ন সাথীর সাথে আগ বাড়িয়ে ক্যাম্পাসে কখনো কেউ কথা বলেনি। মফস্বল শহর থেকে উঠে আসা সাথীর জীবনে প্রেম হানা দেবে এটা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি সে। গান বাজনা লেখালেখি নাটক সব মিলিয়ে একটা বাউণ্ডেলে জীবন।

ছায়ানটের বটমুলে বৈশাখের কাকডাকা ভোরে একান্তে নিজের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে ফ্রেমে আটকা পড়ে লারার ছবি। লারা আগ বাড়িয়ে বলে ছবিটার প্রিন্ট কি করে পাবো? তখন এতসব মোবাইলের বাহাদুরি ছিলনা। সাথীর সোজা সাপটা উত্তর, ফোন নম্বরটা দিন, পেয়ে যাবেন। লারা বলে, ফোন নাম্বার দেয়া যাবেনা, মহাখালী ওয্যারলেছ গেটের ৫৫ নম্বরে থাকি, বাবা পুলিশ। সাথী উত্তরে বলে, আমিতো চোর নই, অতএব পুলিশ দারোগা কেয়ার করি না । তারপর ছবি বিনিময়, একবার দুইবার করে বহুবার মহাখালী লারাদের বাসায় যাতায়াত সাথীর।

অনার্স মাস্টার্স শেষ সাথীর, যেমনটি বদরুন্নেসায় ডিগ্রীও শেষ লারার। সাথী সবেমাত্র যোগ দিয়েছে একটা ট্রাভলিং কোম্পানিতে, উদ্দেশ্য দেশটা ঘুরে দেখার। বিয়ের প্রথম রাতেই লারা সাথীকে বলে, তোমার কোম্পানিতে তুমি গাইড আর আমি তোমার গাইড, সাথে নেবে তো। সাথী বলে সাথেইতো নিলাম।

পঁচিশ জন পর্যটক নিয়ে টুরিস্ট বাস এগিয়ে চলেছে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। লারা মাইক্রফোন হাতে নিয়ে বর্ণনা করছে, রাস্তার দুপাশের বিভিন্ন বিষয়। চট্রগ্রামে গাড়ি ঢুকতেই লারা বলছে, প্রিয় পর্যটকবৃন্দ, আর মাত্র কিছুক্ষণ পর আমরা দেখতে পাবো পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স যে শহরের নাম দিয়েছিলেন ‘কক্সবাজার’। কিন্তু এর আগে ঐ জায়গার নাম ছিল প্যানওয়া। এখানকার একশত পঞ্চাশ কিলোমিটার স্যাণ্ডি বীচ বিশ্বখ্যাত। বাসের যাত্রীদের এ ধরনের মায়াবীকণ্ঠে সমুদ্র সৈকতের বর্ণনা ও বীচ শহরের ইতিহাস ও অন্যান্য বিষয় শুনতে মোটেও খারাপ লাগছিলো না। কথা শোনার পাশাপাশি সাথীর সরবরাহ করা চিপস, বাদাম সবারই রসনায় তৃপ্তি এনে দেয়।

ইতোমধ্যে কক্সবাজারে গাড়ি প্রবেশ করেছে। দূর থেকে সমুদ্র সৈকতের দৃশ্য পর্যটকদের নজরে পড়ছে, এক অজানা আনন্দে সাগর দেখার ইচ্ছায় সবার মন আনচান করছে। তখন সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু, লাবনী পয়েন্টে সাথীর কোম্পানির পূর্বনির্ধারিত হোটেলের সামনে এসে গাড়ি থামে। লারা জানিয়ে দেয় সন্ধ্যায় বীচে না যাওয়াই ভাল। কাল সকালে ব্রেকফাস্টের পর সবাই মিলে যাবো সাগর অবগাহনে।

হোটেলের হালকা নীল আলোয় সাথীর বুকে মাথা রেখে লারা বলে “জানো আমার আজন্মের স্বপ্ন ছিল দেশটা ঘুরে দেখবো, সেটা সম্ভব হয়েছে তোমাকে পেয়ে, আই এ্যাম হ্যাপী” সাথী আলতো করে লারাকে আরো কাছে টেনে নিলো… (চলবে)।