ঢাকা ০৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলা সংবাদপত্রের পথিকৃত ও বহুধা গুণাধিকারী মোহাম্মদ আকরম খাঁ

বাংলা সংবাদপত্রের পথিকৃত ও বহুধা গুণাধিকারী
মোহাম্মদ আকরম খাঁ
(৭ জুন ১৮৬৮-১৮ আগস্ট ১৯৬৮)
মাহমুদুন্নবী জ্যোতি
মোহাম্মদ আকরম খাঁ ছিলেন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক এবং ইসলামী পণ্ডিত। তিনি বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং মাসিক মোহাম্মদীর সম্পাদক ছিলেন।
প্রাথমিক জীবন
আকরম খাঁ ১৮৬৮ সালে ৭জুন পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ গাজী আব্দুল বারি খাঁ ও মাতা বেগম রাবেয়া খাতুন।
শিক্ষা জীবন
শৈশবে গ্রামের মক্তবে শিক্ষা শুরু করেন। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আশৈশব অনুরাগবশত ইংরেজি স্কুল ছেড়ে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
রাজনৈতিক জীবন
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন আরম্ভ করেন। মওলানা আকরম খাঁ ছিলেন ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯১৯ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি খেলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।
১৯২০ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি নিখিল ভারত খেলাফত আন্দোলন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনে খেলাফত আন্দোলনের অন্যতম নেতা মওলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এবং মওলানা মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। আকরাম খাঁর দায়িত্ব ছিল তুর্কি খেলাফত থেকে ফান্ড সংগ্রহ করা।
১৯২০-১৯২৩ সময়ের মধ্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থানে জনসভা বা সম্মেলনের আয়োজন করে খেলাফত আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলন গতিশীল করার চেষ্টা করেন। হিন্দু মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রে ১৯২২ সালে আকরম খাঁ চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টির পক্ষ নেন এবং ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট সন্ধির সময়ও তিনি একই পক্ষে ছিলেন।
১৯২৬-১৯২৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং অন্যান্য সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলির কারণে আকরম খাঁ ভারতীয় রাজনীতিতে তার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন এবং তিনি স্বায়ত্তশাসন পার্টি এবং কংগ্রেস থেকে সরে দাঁড়ান।
১৯২৯ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে তিনি পর্জা বা গ্রাম্য রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩৬ সালে তিনি গ্রাম্য রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে সক্রিয়ভাবে মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, পাকিস্তান মুসলিম লীগ, প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৪ সালে গণপরিষদ ভেঙে দেওয়া হলে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান।
আকরাম খান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে গঠিত পাকিস্তান কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডোলজির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন।
সাংবাদিকতা
১৯১০ সালে সাপ্তাহিক মোহাম্মদী ও দৈনিক খাদেম প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর ১৯২১ সালে উর্দু জামানা ও বাংলা দৈনিক সেবক প্রকাশ করেন। ১৯২৭ সালে পুনরায় মাসিক মোহাম্মদী প্রকাশ করেন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত চালু ছিল এ পত্রিকা। বর্তমানে পত্রিকার বেশ কিছু সংখ্যা বাংলা একাডেমি, বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। মুসলিম সমাজকে জাগাবার জন্য ১৯৩৬ সালে তার সম্পাদনায় দৈনিক আজাদ প্রকাশ করেন।
আজাদ পত্রিকা
১৯৩৬ সালের অক্টোবর মাসে মওলানা আকরম দৈনিক আজাদ পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। সেই সময় এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। মুসলিম লীগের সমর্থন যোগাতে এই বাংলা পত্রিকাটি সেই সময় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে পত্রিকার বহু পুরনো সংখ্যা সংরক্ষিত আছে।
সাহিত্য কর্ম
তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো হলো, সমস্যা ও সমাধান, আমপারার বাংলা অনুবাদ, মোস্তফা-চরিত (বর্তমানে খোশরোজ কিতাব মহল হতে প্রকাশিত), মোস্তফা-চরিতের বৈশিষ্ট্য, বাইবেলের নির্দেশ ও প্রচলিত খ্রীষ্টান ধর্ম, মোছলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস (ঐতিহ্য হতে প্রকাশিত), তাফসীরুল কোরআন (১-৫ খণ্ড) (খোশরোজ কিতাব মহল হতে প্রকাশিত), মুক্তি ও ইসলাম।
মৃত্যু
তিনি ১৯৬৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকেশ্বরী রোড লালবাগের নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন।
সম্মাননা ও পদক
১৯৮১ সালে বাংলদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন।
সূত্র : উইকিপিডিয়া।

আরো পড়ুন : কাজী নজরুল ইসলাম; জাতীয় জীবনে যাঁর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

বাংলা সংবাদপত্রের পথিকৃত ও বহুধা গুণাধিকারী মোহাম্মদ আকরম খাঁ

আপডেট সময় ১১:০১:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪

বাংলা সংবাদপত্রের পথিকৃত ও বহুধা গুণাধিকারী
মোহাম্মদ আকরম খাঁ
(৭ জুন ১৮৬৮-১৮ আগস্ট ১৯৬৮)
মাহমুদুন্নবী জ্যোতি
মোহাম্মদ আকরম খাঁ ছিলেন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক এবং ইসলামী পণ্ডিত। তিনি বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং মাসিক মোহাম্মদীর সম্পাদক ছিলেন।
প্রাথমিক জীবন
আকরম খাঁ ১৮৬৮ সালে ৭জুন পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ গাজী আব্দুল বারি খাঁ ও মাতা বেগম রাবেয়া খাতুন।
শিক্ষা জীবন
শৈশবে গ্রামের মক্তবে শিক্ষা শুরু করেন। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আশৈশব অনুরাগবশত ইংরেজি স্কুল ছেড়ে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
রাজনৈতিক জীবন
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন আরম্ভ করেন। মওলানা আকরম খাঁ ছিলেন ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯১৯ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি খেলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।
১৯২০ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি নিখিল ভারত খেলাফত আন্দোলন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনে খেলাফত আন্দোলনের অন্যতম নেতা মওলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এবং মওলানা মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। আকরাম খাঁর দায়িত্ব ছিল তুর্কি খেলাফত থেকে ফান্ড সংগ্রহ করা।
১৯২০-১৯২৩ সময়ের মধ্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থানে জনসভা বা সম্মেলনের আয়োজন করে খেলাফত আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলন গতিশীল করার চেষ্টা করেন। হিন্দু মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রে ১৯২২ সালে আকরম খাঁ চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টির পক্ষ নেন এবং ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট সন্ধির সময়ও তিনি একই পক্ষে ছিলেন।
১৯২৬-১৯২৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং অন্যান্য সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলির কারণে আকরম খাঁ ভারতীয় রাজনীতিতে তার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন এবং তিনি স্বায়ত্তশাসন পার্টি এবং কংগ্রেস থেকে সরে দাঁড়ান।
১৯২৯ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে তিনি পর্জা বা গ্রাম্য রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩৬ সালে তিনি গ্রাম্য রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে সক্রিয়ভাবে মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, পাকিস্তান মুসলিম লীগ, প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৪ সালে গণপরিষদ ভেঙে দেওয়া হলে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান।
আকরাম খান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে গঠিত পাকিস্তান কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডোলজির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন।
সাংবাদিকতা
১৯১০ সালে সাপ্তাহিক মোহাম্মদী ও দৈনিক খাদেম প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর ১৯২১ সালে উর্দু জামানা ও বাংলা দৈনিক সেবক প্রকাশ করেন। ১৯২৭ সালে পুনরায় মাসিক মোহাম্মদী প্রকাশ করেন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত চালু ছিল এ পত্রিকা। বর্তমানে পত্রিকার বেশ কিছু সংখ্যা বাংলা একাডেমি, বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। মুসলিম সমাজকে জাগাবার জন্য ১৯৩৬ সালে তার সম্পাদনায় দৈনিক আজাদ প্রকাশ করেন।
আজাদ পত্রিকা
১৯৩৬ সালের অক্টোবর মাসে মওলানা আকরম দৈনিক আজাদ পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। সেই সময় এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। মুসলিম লীগের সমর্থন যোগাতে এই বাংলা পত্রিকাটি সেই সময় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে পত্রিকার বহু পুরনো সংখ্যা সংরক্ষিত আছে।
সাহিত্য কর্ম
তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো হলো, সমস্যা ও সমাধান, আমপারার বাংলা অনুবাদ, মোস্তফা-চরিত (বর্তমানে খোশরোজ কিতাব মহল হতে প্রকাশিত), মোস্তফা-চরিতের বৈশিষ্ট্য, বাইবেলের নির্দেশ ও প্রচলিত খ্রীষ্টান ধর্ম, মোছলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস (ঐতিহ্য হতে প্রকাশিত), তাফসীরুল কোরআন (১-৫ খণ্ড) (খোশরোজ কিতাব মহল হতে প্রকাশিত), মুক্তি ও ইসলাম।
মৃত্যু
তিনি ১৯৬৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকেশ্বরী রোড লালবাগের নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন।
সম্মাননা ও পদক
১৯৮১ সালে বাংলদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ লাভ করেন।
সূত্র : উইকিপিডিয়া।

আরো পড়ুন : কাজী নজরুল ইসলাম; জাতীয় জীবনে যাঁর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম