জমি নিয়ে বিরোধের মিমাংসার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে রাস্তা বন্ধ করে বাঁশ দিয়ে বেড়া দেয়াকে কেন্দ্র করে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের নাটকটোকা ডাকুয়াপাড়া এলাকায়। এনিয়ে বিচার চেয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রী রুমী আক্তর আদালতে মামলাও করেছেন। রুমি আক্তার একই এলাকার রুহুল আমিনের স্ত্রী। মামলাটি বর্তমানে পঞ্চগড়ের বিজ্ঞ আমলী আদালত (দেবীগঞ্জ) এ বিচারাধীন রয়েছে।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় লোকজন মাধ্যমে জানা যায়, রুমি আক্তার ও রুহুল আমিনের বাড়ির সীমানা নিয়ে আসামীদের চলাচলের রাস্তা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এনিয়ে গত ২০ জুন বাড়ির সীমানা মাপার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তার আগেই ১৫ জুন বাড়ির চলাচলের বন্ধ করে দিয়ে সইজ উদ্দিন সেখানে বাঁশের বেড়া দিতে থাকে। পরে হাফিজ উদ্দিন সেখানে গিয়ে বেড়া দিতে বাধা দেন। বাঁধা দেয়ার পর সইজ উদ্দিন, সুলতান ও রবিউল বাঁশের লাঠি, লোহার রডসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র নিয়ে হাফিজ উদ্দিনকে আঘাত করার সময় অস্ত্র সরে গিয়ে সুলতানের শরীরে গিয়ে লাগে। এরপর সইজ উদ্দিন, সুলতান ও রবিউল চিৎকারে বাকি আসামীরা এসে হাফিজ উদ্দিনের উপর হামলা চালায়। তাকে রক্তাক্ত জখম করে ফেলে রেখে রুবিনা আক্তারের উপর হামলা করে। তাকে চুলের মুঠি ধরে মারপিট করে গুরুতর আহত করে। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বুকের উপর উঠে গলাচিপে ধরে। পরে তাকে শ্লীলতাহানি করে।
তারা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন তাদের কে উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের কে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরের দিন তারা রংপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার কারনে ১৬ জুন বাড়িতে রুমি আক্তার একা থাকার সুযোগে আসামীরা রুহুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে তার বাড়িঘর ভাংচুর করে। এতে তার প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়। ভাংচুর করে চলে যাওয়ার সময় গরু, ছাগল, ট্র্যাংক ভর্তি কাপড় চোপড়, ধান, চাল, স্বর্ণাংলকারসহ প্রায় ১২ লক্ষ ৭১ হাজার মালামাল ও জমির কাগজপত্র নিয়ে যায় বলে জানান রুমি আক্তার। পরে রুহুল আমিনের স্ত্রী রুমি আক্তার বাদী হয়ে ৯ জুলাই পঞ্চগড় জেলার বিজ্ঞ আমলী আদালত (দেবীগঞ্জ) এ একটি মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর সিআর ১৯৮।
সে মামলায় আসামী করা হয়েছে নাটকটোকা ডাকুয়াপাড়া এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে সইজ উদ্দিন, সুলতান ও রবিউল, আব্দুল হকের ছেলে আব্দুল বারেক, শামসুল হকের ছেলে শাহ আলম ও সফিকুল, মোঃ আলাউদ্দিনের ছেলে আব্দুল হালিম, মৃত হাচান আলীর ছেলে আকবর আলী ও লালু, আজগর আলীর ছেলে তৈয়ব আলী ও তফসের আলী, মৃত মনছুরের ছেলে আজগর, শাহ আলমের ছেলে আন্নাছ আলী, আব্দুর রশিদের ছেলে মুক্তাদে ও রামগঞ্জ বিলাসী এলাকার সইজ উদ্দিনের স্ত্রী মমেনা খাতুনকে। তবে সইজ উদ্দিন ও তার ভাই সুলতান বাড়ির মালামাল লুটপাট করার কথা অস্বীকার করে বলেন, রুহুল আমিনের পরিবার পরিকল্পিত ভাবে বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিয়ে আমাদের নামে যে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা।
মামলার বাদী রুমি আক্তার জানান, আসামীরা আমার সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে গিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আসামীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয় ও আমি যেন ক্ষতিপুরন পাই তার জন্য ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় আমি আদালতে মামলা করেছি।
দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহেল রানা জানান, এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলা দুটিই বর্তমানে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবো। মামলার রায় দিবে আদালত। রুমি আক্তার তার দুই বাচ্চাসহ স্বামীর বাড়িতে থাকতে পারছেনা এমন কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে রুমি আক্তার যদি এলাকার কারো ভয়ে বাড়িতে থাকতে না পারে তাহলে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।
উল্লেখ্য, এ জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে ইতিপূর্বে বাদশা মিয়া নামের এক ব্যক্তি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তখন ৪ জনকে আসামী করে দেবীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামি রুহুল আমিন, রবিউল ইসলাম ও রুবিনা আক্তার বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। বাকি হাফিজ উদ্দিন এখনো পলাতক রয়েছে।