আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বহুল আলোচিত ২১ অগাস্ট মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় জানা যেতে পারে আজ। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চের রোববারের কার্যতালিকার ৫৪ ও ৫৫ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে মামলা দুটি।
হাই কোর্টের এ বেঞ্চে গত ২১ নভেম্বর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ শেষ হয় এবং মামলা দুটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।
সেদিন শুনানি শেষে আসামির পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, “ (আদালত) সিএভি করে রেখেছে, রায় যেকোনো দিন দিতে পারে। তবে এটা তো লিখতে হয়, কাগজপত্র দেখতে হয়, গুছিয়ে আনতে আরও সময় লাগে।”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওই সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়।
১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলার রায় দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের ওই রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, খালেদার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
আরও ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তার বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়।
বিচারিক আদালতে রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র ও ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে পাঠানো হয়। পরে তা সংশ্লিষ্ট শাখায় ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষে ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর এ মামলার ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শুরু হয়।
তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করার কারণে আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। এ কারণে তিনি আপিল করতে পারেননি।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ফাঁসি কার্যকর করতে উচ্চ আদালতের অনুমোদন লাগে। সেই অনুমোদনের জন্য যে আবেদনটি (রায় ও মামলার নথিসহ) করা হয়, সেটি ‘ডেথ রেফারেন্স’ নামে পরিচিত।
এরপর মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও রায়সহ যাবতীয় নথিপত্র হাই কোর্টে দাখিল করা হয়।
গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুই মামলায় রায়ের কপিসহ মোট ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথি হাই কোর্টের রেকর্ড রুমে সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার রায় ৩৬৯ পৃষ্ঠার এবং হত্যা মামলার রায় ৩৫৬ পৃষ্ঠার।
এসব প্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন।
আসামিদের করা আপিল, জেল আপিল, ডেথ রেফারেন্স, মামলার রায় ও যাবতীয় নথি যাচাই-বাছাই করে পেপারবুক তৈরির জন্য পাঠানো হয় সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসে। সেখানেই পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৬ অগাস্ট পেপারবুক পৌঁছায় সুপ্রিম কোর্টে।
তা আরেক দফা যাচাই-বাছাই শেষে শুনানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। পরে শুনানি শুরু হয় ওই বছর ডিসেম্বরে, যা শেষ হয় গত ২১ নভেম্বর।