নিজস্ব প্রতিনিধি: মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গঠিত অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের প্রত্যাশা শীর্ষক আলোচনা সভা” অনুষ্ঠিত।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘সরকার পতন হলেও দেশের বিভিন্ন সেক্টরে আওয়ামী লীগের নিয়োগকৃত অসৎ, দুর্নীতিবাজ ও চাঁদবাজ রয়েছে। দেশের বাইরে বিভিন্ন দূতাবাস, হাইকমিশনেও এমন অনেক অসৎ লোক রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভিপি নুর আরো বলেন, দেশের ক্লান্তিলগ্নে প্রবাসীরা ভূমিকা রেখেছে কিন্তু এই প্রবাসীরা অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান প্রবাসীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন। প্রবাসীদের কথা শুনুন, তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করুন। বিভিন্ন সময় দেশ থেকে বিতাড়িত, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রোষাণলের শিকার সাংবাদিক, লেখক, এক্টিভিটিস্ট, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে যথাযথ সম্মান দিতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো: রাশেদ খাঁন বলেন, প্রবাসীরা দেশের রত্ন। তাদের ভোটাধিকার ও দ্বৈত নাগরিকত্বের দাবি যৌক্তিক। অবশ্যই এটির বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কবীর হোসেন বলেন, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের সংহতি জানিয়ে সারাবিশ্বে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স শাটডাউনসহ রাজপথে ও বাংলাদেশী দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। আন্দোলনে সংহতি জানানোর কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৪ জন প্রবাসীসহ অন্যান্য দেশে আটক সকল প্রবাসীদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে।
প্রবাসী সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান (দূতাবাস, পাসপোর্ট অফিস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিমানবন্দর, বিমান অফিস, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, বোয়েসেল, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক) এ আওয়ামী সরকারের নিয়োগকৃত দলীয় সকল দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, সচিব, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করে সৎ ও মেধাবী ও প্রবাসবান্ধব রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে।
সর্বশেষ তিনি প্রবাসীদের যৌক্তিক ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে:
১.অনিয়মিত, আনডকুমেন্টেড, দুস্থ এবং অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীর মরদেহ পরিবহন ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২২ দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।
২. প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার চাই।
৩. বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ ও যথাযথ সম্মান চাই।
৪. প্রবাসীদের জন্য যুগপোযোগী দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন ও পেনশন সুবিধা চাই।
৫. সহজ প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট সংশোধনের সুযোগসহ দালাল ও হয়রানি মুক্ত পাসপোর্ট ও দূতাবাস সেবা চাই।
৬. প্রবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চাই।
৭. জাতীয় বাজেটে প্রবাসীদের জন্য (৫%) বিশেষ বরাদ্দ চাই।
৮. বিদেশে কাগজপত্র বিহীন প্রবাসীদের বৈধকরণ ও আটককৃতদের মুক্তির জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।
৯. বিদেশে প্রবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত বাংলাদেশী দূতাবাস ও শ্রম কল্যাণ উইং চাই।
১০. অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ও প্রবাস ফেরতদের কর্মসংস্থান, সুদমুক্ত পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা চাই।
জাপান প্রবাসী আরিফ হোসেন অর্ক বলেন, জাপান দূতাবাসে জাপানের অফিস টাইমে ১০-৫টা পর্যন্ত সকল প্রবাসীদেরক সেবা প্রদান করতে হবে। পাসপোর্ট সেবা দ্রুত সময়ের মধ্যে দিতে হবে। জাপান থেকে সরকারি খরচে লাশ দেশে আনতে হবে।
প্রবাসী অধিকার পরিষদের প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান সহ-সম্পাদক আইয়ুব আল আনসারীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, মাহফুজুর রহমান, মানবাধিকার কর্মী শামসুল আলম লিটু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিল, উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, জলবায়ু ও পরিবেশ-বিষয়ক সম্পাদক মিমজাল মুফতি, মানব পাচার প্রতিরোধ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শিহাব উদ্দিন প্রমুখ।