বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে ঢাকার পূর্বাচলের কূটনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে নাম আসা যুক্তরাজ্যের দুর্নীতি-বিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক এবার আরও চাপে পড়েছেন। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এ চাপ আরও বেড়েছে।
গতকাল সোমবার (১৩ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমস এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি ও দুর্নীতি-বিরোধী মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দুর্নীতির তদন্তে নাম এসেছে। বাংলাদেশে তার খালার প্রাক্তন শাসনামলে পরিবারের জন্য জমি অধিগ্রহণের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ তদন্ত করা হচ্ছে।
ঢাকার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর কূটনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দের ঘটনায় তদন্তাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে লেবার পার্টির দুর্নীতি দমন মন্ত্রী সিদ্দিকও রয়েছেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দাবি করেছে, টিউলিপ সিদ্দিক “তার প্রভাব এবং বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে” ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার পরিবারের সদস্যদের জমি বরাদ্দের জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
টিউলিপ সকল দাবি অস্বীকার করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে এবং তার সমর্থকরা উল্লেখ করেছেন যে, এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
তবে ৪২ বছর বয়সী সিদ্দিকের ওপর এটি চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিতে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে দুদকের একটি পৃথক তদন্তে ইতোমধ্যেই তার নাম উঠে এসেছে। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলি এই অভিযোগগুলিকে তার খালার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের “ছড়ানো” বলে বর্ণনা করেছে।
আগস্টে ব্যাপক বিক্ষোভের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হাসিনার সঙ্গে লন্ডনের সম্পত্তিতে তার যোগসূত্র প্রকাশের পর সিদ্দিক নিজেকে মন্ত্রী পর্যায়ের মান বিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে তদন্তের জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছেন।
২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ঢাকায় জমি দখল এবং রাশিয়া প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত অর্থ আত্মসাৎ।
সানডে টাইমস সপ্তাহান্তে প্রকাশ করেছে যে, লেবার পার্টির পোস্টার এবং সিদ্দিকের বিভিন্ন রাজনৈতিক লেখা হাসিনার ভাংচুর করা প্রাক্তন বাসভবনে পাওয়া গেছে।
টিউলিপ সিদ্দিক পূর্বে তার খালার আগের শাসনামল থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলেন এবং ২০১৭ সালে বলেছিলেন যে তারা “কখনও” রাজনীতি নিয়ে কথা বলেননি।
যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী জোট সিদ্দিককে অর্থনৈতিক অপরাধ, অর্থ পাচার এবং অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধের দায়িত্ব অন্য একজন সরকারি মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, তার “গুরুতর স্বার্থের দ্বন্দ্ব” রয়েছে, কারণ তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থপাচার বিধিমালা এবং অর্থনৈতিক অপরাধের বাস্তবায়ন বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত। পাশাপাশি একটি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সঙ্গে তার সরাসরি পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে যা ওই কাঠামোর আওতায় তদন্ত করা হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ সালাউদ্দিনের এক বিবৃতিতে “বিভিন্ন সূত্র” থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন যে, সিদ্দিক জানতেন যে তার খালা শেখ হাসিনা তার কর্তৃত্ব ব্যবহার করে পূর্বাচল নিউ টাউন প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্প থেকে ১০ কাঠা বা ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের প্লট বরাদ্দ করেছেন।
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, সিদ্দিক “তার প্রভাব এবং বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে তার খালা শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন এবং একই প্রকল্পে পরিবারের সদস্যদের নামে একই ধরণের প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছিলেন” বলে জানা গেছে।
তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনা ২০২২ সালে “ব্যক্তিগত এবং তৃতীয় পক্ষের লাভের জন্য” প্লট বরাদ্দের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেছিলেন।
সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি তার প্রভাব খাটিয়ে মোট ৩০ কাঠা জমির তিনটি প্লট দখল করেছেন। জমিটি ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত বলে জানানো হয়েছে।
হাসিনার একজন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দাবি করেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক দাবিগুলি অস্বীকার করেছেন এবং দুদকের প্রথম তদন্তে কোনো অন্যায় কাজ করার কথাও অস্বীকার করেছেন। এ ছাড়া রাশিয়ার অর্থায়নে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ব্যয়ের কৃত্রিম মুদ্রাস্ফীতি থেকে তহবিল আত্মসাতে বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেছেন।
সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র বলেছেন: “টিউলিপ এই বিষয়গুলির ওপর স্বাধীনভাবে তদন্তের জন্য মন্ত্রী পর্যায়ের স্বাধীন উপদেষ্টার কাছে স্ব-প্রতিবেদন করেছেন। তিনি স্পষ্ট যে তিনি কোনো ভুল করেননি। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালীন এ বেশি মন্তব্য করা অনুচিত হবে।”