ঢাকা ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
আজ বেনাপোল বন্দরের কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করাচি টু চট্টগ্রাম রুটে চালু হলো কনটেইনার জাহাজ হোয়াইট হাউসে নববির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্বাগত জানালেন বাইডেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হবে বইমেলা : ফারুকী শেখ মুজিবকে ‘জাতির পিতা’ বলা মূল সংবিধানের পরিপন্থী : অ্যাটর্নি জেনারেল অনলাইনে আয়কর পরিশোধের চার্জ নির্ধারণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে ভারত : ফখরুল নাহিদ ইসলামকে ঘিরে হ্যাশট্যাগ ‘উই আর নাহিদ’ পৃথিবীর সুরক্ষায় ‘জিরো কার্বন’ ভিত্তিক জীবনধারার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ট্রাম্প প্রশাসনে পদ পাচ্ছেন ইলন মাস্ক ও বিবেক রামাস্বামী

আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা কী? বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব?

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচন ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারে বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রশ্নে অনেক রাজনৈতিক দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবিও তুলছেন।

সম্প্রতি এ নিয়ে একটি সেমিনারে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টিসহ অনেক রাজনৈতিক দল আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটের পক্ষে দাবি তুলেছেন। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষেই অবস্থান করছে।

নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা একদিকে যেমন স্বৈরশাসনের পথ রোধ করে, অন্যদিকে এই পদ্ধতিতে ভোটারদের জনমতেরও প্রতিফলন নিশ্চিত হয়। এমন বড় একটি রাজনৈতিক দলের আপত্তিতে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব কী না সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রশ্নে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, সব দল রাজি হলে এরকম একটি ব্যবস্থার ব্যপারে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

বিশ্বের যে সব দেশে এই পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে তার উদাহরণ টেনে বিশ্লেষকরা বলছেন, শিগগিরই চালু না হলেও ধীরে ধীরে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটের পথে হাটতে পারে বাংলাদেশ।

আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কী?
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর হচ্ছে নির্বাচনি ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কোন দল মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১০ শতাংশ পায়, তাহলে সেই দল আনুপাতিক হারে সংসদের ১০ শতাংশ বা ৩০টি আসন পাবেন। পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুক্ত, গোপন ও মিশ্র তিনটি আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

কোনো দল নির্বাচনে যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তারা সেই অনুপাতে আসন পাবে, নির্বাচনের এই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি যদি চালু হয় তাহলে তা সুশাসন নিশ্চিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনে দেওয়া প্রত্যেকটি ভোট কাজে লাগে এবং প্রতিটি ভোট সংসদে সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব করে।

তাছাড়া একটি নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ও হারের ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টন হয়। সব ভোটারদের মতামতের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব এই পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে। অনেক সময় খুব সামান্য পার্থক্য থাকলেও অনেক দল সংসদে একটি আসনও পায় না। কিন্তু এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে তাতে নূন্যতম ভোট পেলে সব রাজনৈতিক দলেরই প্রতিনিধিত্ব থাকার সুযোগ রয়েছে সংসদে।

প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে পার্থক্য কী?
বর্তমান বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় ৩০০টি আসনে আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে রাজনৈতিক দলগুলো।

ধরা যাক, বর্তমান পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনে একটি আসনে মোট চারজন প্রার্থী চারটি দল থেকে নির্বাচন করছে। এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তিনজন প্রার্থীই ২০ শতাংশ করে ভোট পেল। আর চতুর্থ প্রার্থী পেলো ২৫ শতাংশ ভোট।

বর্তমান পদ্ধতি অনুযায়ী চতুর্থ প্রার্থীই এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। আর ওই তিনটি দলের ৬০ শতাংশ ভোট তেমন কোন কাজে আসছে না।

একই ভাবে সারাদেশের অন্তত ২৯০ আসনে যদি একই হারে ভোট পেয়ে চতুর্থ দলটির প্রার্থীরা জয়লাভ করে, তাহলে মাত্র ২৫ শতাংশ ভোট নিয়ে তারা সরকার গঠনসহ সংসদে একচ্ছত্রভাবে আধিপত্য করবে।

অথচ বাকি তিন দল মিলে ৬০ শতাংশ ভোট পেলেও তাদের কোন প্রতিনিধিত্ব থাকলো না সংসদে। এতে সংসদে প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ থাকে না।

এই পদ্ধতিতে ভোট হলে নিজস্ব ভোট ব্যাংকে কাজে লাগিয়ে বা স্থানীয় ইমেজ কাজে লাগিয়ে কেউ জিতে সরকার গঠন করতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় মেজরিটি ভোটারে মতের প্রতিফলন হয় না।

আর আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে ভোটের আগে প্রতিটি দল ক্রম ভিত্তিতে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল তার প্রাপ্ত ভোটের হার অনুসারে আসন সংখ্যা পাবে।

কিছু রাজনৈতিক দল সারাদেশে গড়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট পেলেও সংসদে তাদের কোন প্রতিনিধিত্ব থাকে না আসনভিত্তিক একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হওয়ার কারণে। এই পদ্ধতিতে ভোট হলে সে সব দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের ১৭০টি দেশের মধ্যে ৯১টি দেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ, ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গত এক দশকে বিভিন্ন সময়ে আনুপাতিক হারে নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সুপারিশ করে আসছিল। তাদের মতে, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নানা বিতর্ক যেমন রয়েছে, তেমনি বর্তমান পদ্ধতি ভোটে যে কোন রাজনৈতিক দলের স্বৈরাচারি হয়ে উঠলেও তা রোধ করা যায় না।

বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হলে এই পদ্ধতিতে ভোট চালু করা যায়। সেক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতিতে কী কী লাভ হয়েছে সেটি বিশ্লেষণ করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব।

রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি ও সম্মতি
সম্প্রতি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন এন্ড ডেমোক্রেসি। সেই সেমিনারে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টিসহ দেশের অনেকগুলো রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

এই সেমিনারে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় অংশ বিদ্যমান পদ্ধতির পরিবর্তে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দেন।

ওই দলগুলোর মধ্যে অনেক দলই প্রধান উপদেষ্টার সাথে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংলাপে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালুরও দাবি জানিয়ে আসছিল।

এই পদ্ধতিতে মধ্য ও ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত থাকলেও এ নিয়ে আপত্তি আছে অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির। দলটি শুরু থেকেই বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থাকে সমর্থন করে আসছে জাতীয় নির্বাচনে। আরেকটি বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে অবশ্য এসব সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

বিএনপি মনে করে এখন প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোট হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন তারাই পাবে। তারা অন্য কাউকে কিছু দিতে চায় না। যে কারণে তারা আনুপাতিক ভোটের বিপক্ষে”।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু বিএনপি না, অতীতে এই প্রস্তাব আসলেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দুটি দল না চাওয়াতে এই পদ্ধতি চালু হয় নি। এই ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে যদি বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলও জনমতের চাপ থাকে তাহলে দুই একটি রাজনৈতিক দল না চাইলেও এই ব্যবস্থায় ভোট করা সম্ভব।

ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকেই খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে এই পদ্ধতিতে দ্রুত ভোট চালুর জন্য। আবার বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে এটা চাইছে না। এখন দুই পক্ষেরই যৌক্তিক জায়গা থেকে চিন্তা করতে হবে।

সূত্র:বিবিসি বাংলা

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা কী? বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব?

আপডেট সময় ০৬:০৭:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচন ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারে বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রশ্নে অনেক রাজনৈতিক দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবিও তুলছেন।

সম্প্রতি এ নিয়ে একটি সেমিনারে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টিসহ অনেক রাজনৈতিক দল আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটের পক্ষে দাবি তুলেছেন। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষেই অবস্থান করছে।

নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা একদিকে যেমন স্বৈরশাসনের পথ রোধ করে, অন্যদিকে এই পদ্ধতিতে ভোটারদের জনমতেরও প্রতিফলন নিশ্চিত হয়। এমন বড় একটি রাজনৈতিক দলের আপত্তিতে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব কী না সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রশ্নে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, সব দল রাজি হলে এরকম একটি ব্যবস্থার ব্যপারে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

বিশ্বের যে সব দেশে এই পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে তার উদাহরণ টেনে বিশ্লেষকরা বলছেন, শিগগিরই চালু না হলেও ধীরে ধীরে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটের পথে হাটতে পারে বাংলাদেশ।

আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কী?
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর হচ্ছে নির্বাচনি ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কোন দল মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১০ শতাংশ পায়, তাহলে সেই দল আনুপাতিক হারে সংসদের ১০ শতাংশ বা ৩০টি আসন পাবেন। পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুক্ত, গোপন ও মিশ্র তিনটি আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

কোনো দল নির্বাচনে যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তারা সেই অনুপাতে আসন পাবে, নির্বাচনের এই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি যদি চালু হয় তাহলে তা সুশাসন নিশ্চিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনে দেওয়া প্রত্যেকটি ভোট কাজে লাগে এবং প্রতিটি ভোট সংসদে সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব করে।

তাছাড়া একটি নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ও হারের ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টন হয়। সব ভোটারদের মতামতের প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব এই পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে। অনেক সময় খুব সামান্য পার্থক্য থাকলেও অনেক দল সংসদে একটি আসনও পায় না। কিন্তু এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে তাতে নূন্যতম ভোট পেলে সব রাজনৈতিক দলেরই প্রতিনিধিত্ব থাকার সুযোগ রয়েছে সংসদে।

প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে পার্থক্য কী?
বর্তমান বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় ৩০০টি আসনে আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে রাজনৈতিক দলগুলো।

ধরা যাক, বর্তমান পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনে একটি আসনে মোট চারজন প্রার্থী চারটি দল থেকে নির্বাচন করছে। এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তিনজন প্রার্থীই ২০ শতাংশ করে ভোট পেল। আর চতুর্থ প্রার্থী পেলো ২৫ শতাংশ ভোট।

বর্তমান পদ্ধতি অনুযায়ী চতুর্থ প্রার্থীই এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। আর ওই তিনটি দলের ৬০ শতাংশ ভোট তেমন কোন কাজে আসছে না।

একই ভাবে সারাদেশের অন্তত ২৯০ আসনে যদি একই হারে ভোট পেয়ে চতুর্থ দলটির প্রার্থীরা জয়লাভ করে, তাহলে মাত্র ২৫ শতাংশ ভোট নিয়ে তারা সরকার গঠনসহ সংসদে একচ্ছত্রভাবে আধিপত্য করবে।

অথচ বাকি তিন দল মিলে ৬০ শতাংশ ভোট পেলেও তাদের কোন প্রতিনিধিত্ব থাকলো না সংসদে। এতে সংসদে প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণ থাকে না।

এই পদ্ধতিতে ভোট হলে নিজস্ব ভোট ব্যাংকে কাজে লাগিয়ে বা স্থানীয় ইমেজ কাজে লাগিয়ে কেউ জিতে সরকার গঠন করতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় মেজরিটি ভোটারে মতের প্রতিফলন হয় না।

আর আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে ভোটের আগে প্রতিটি দল ক্রম ভিত্তিতে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল তার প্রাপ্ত ভোটের হার অনুসারে আসন সংখ্যা পাবে।

কিছু রাজনৈতিক দল সারাদেশে গড়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট পেলেও সংসদে তাদের কোন প্রতিনিধিত্ব থাকে না আসনভিত্তিক একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হওয়ার কারণে। এই পদ্ধতিতে ভোট হলে সে সব দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের ১৭০টি দেশের মধ্যে ৯১টি দেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ, ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গত এক দশকে বিভিন্ন সময়ে আনুপাতিক হারে নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সুপারিশ করে আসছিল। তাদের মতে, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নানা বিতর্ক যেমন রয়েছে, তেমনি বর্তমান পদ্ধতি ভোটে যে কোন রাজনৈতিক দলের স্বৈরাচারি হয়ে উঠলেও তা রোধ করা যায় না।

বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হলে এই পদ্ধতিতে ভোট চালু করা যায়। সেক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতিতে কী কী লাভ হয়েছে সেটি বিশ্লেষণ করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব।

রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি ও সম্মতি
সম্প্রতি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন এন্ড ডেমোক্রেসি। সেই সেমিনারে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টিসহ দেশের অনেকগুলো রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

এই সেমিনারে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় অংশ বিদ্যমান পদ্ধতির পরিবর্তে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দেন।

ওই দলগুলোর মধ্যে অনেক দলই প্রধান উপদেষ্টার সাথে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংলাপে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালুরও দাবি জানিয়ে আসছিল।

এই পদ্ধতিতে মধ্য ও ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত থাকলেও এ নিয়ে আপত্তি আছে অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির। দলটি শুরু থেকেই বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থাকে সমর্থন করে আসছে জাতীয় নির্বাচনে। আরেকটি বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে অবশ্য এসব সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

বিএনপি মনে করে এখন প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোট হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন তারাই পাবে। তারা অন্য কাউকে কিছু দিতে চায় না। যে কারণে তারা আনুপাতিক ভোটের বিপক্ষে”।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু বিএনপি না, অতীতে এই প্রস্তাব আসলেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দুটি দল না চাওয়াতে এই পদ্ধতি চালু হয় নি। এই ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে যদি বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলও জনমতের চাপ থাকে তাহলে দুই একটি রাজনৈতিক দল না চাইলেও এই ব্যবস্থায় ভোট করা সম্ভব।

ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকেই খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে এই পদ্ধতিতে দ্রুত ভোট চালুর জন্য। আবার বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে এটা চাইছে না। এখন দুই পক্ষেরই যৌক্তিক জায়গা থেকে চিন্তা করতে হবে।

সূত্র:বিবিসি বাংলা