ঢাকা ০৪:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :

মানবাধিকারের ক্রান্তিকাল

  • এম. এস. খান
  • আপডেট সময় ১২:১৫:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
  • 39

বর্তমান বিশ্বে চলছে মানবাধিকারের চরম ক্রান্তিকাল। প্রতিটি দেশে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবতা। যদিও পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রে রয়েছে মানবাধিকার সনদ। অথচ এসব রাষ্ট্র দ্বারাই আবার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে মানুষের অধিকার। সর্বস্তরের মানুষের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তথা নারী, পুরুষ, শিশু, নৃজাতি, রিফিউজি, অধিবাসী, রাষ্ট্রবিহীন অধিবাসী, পঙ্গু, অবহেলিত, সব মানুষের অধিকার রক্ষার্থে মানবাধিকার সনদ থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে এক দেশের সাথে অন্য দেশের যেমন রয়েছে যুদ্ধ, লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার, তেমনি আবার দেশের অভ্যন্তরে হচ্ছে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি।

পৃথিবীর সকল ধর্মই শান্তির কথা বলে। মানবতার বার্তা দেয়। কোন ধর্মেই হত্যা, ধর্ষণ, জুলুম, নির্যাতন, নীপিড়নের কোন স্থান নেই। তারপরও এসব বন্ধ হচ্ছে না। ধর্মের নামে চলছে বাড়াবাড়ি। চলছে হত্যাযজ্ঞ। রাষ্ট্র কর্তৃক পূরণ হচ্ছে না শিক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান মানুষের সর্বজনীন মৌলিক অধিকার।

প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবেই মানবাধিকারের অধিকারী। যা সে নিজে ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানব পরিবারের সব সদস্যের সর্বজনীন, সহজাত, অ-হস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। একটি পরিবার ও সমাজের কর্তারা তাদের অধীনস্থদের অধিকার রক্ষা করবে, রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করবে। জাতিসঙ্ঘের ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউমান রাইটসের প্রথম অনুচ্ছেদে রয়েছে যে, জন্মগতভাবে সব মানুষ স্বাধীন এবং সমান সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত মানুষ নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা হলেও তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা কোনো কথা বলে না। তাদের মধ্য এমন প্রবণতা বিদ্যমান, মানুষ হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু থেকে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভূমিকাও এখন স্পষ্ট। এ যুদ্ধ প্রলম্বিত করার ক্ষেত্রে তাদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। আফ্রিকার অনেক দেশ এখন দুর্ভিক্ষের কবলে। সেখানে না খেয়ে মানুষ মরছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের কোনো কথা নেই।

এশিয়া মহাদেশের রাষ্ট্রগুলো অন্যান্য মহাদেশের মতো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে এশিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য মানবাধিকার রক্ষা আদালত গঠিত হয়নি। ফলে রাষ্ট্র দ্বারা নাগরিকদের মানবাধিকার খর্ব করার কারণে মানবাধিকার রক্ষা আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে না। যেমনটি মানবাধিকার আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেনি, ভারতের মুসলমান গোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা।

মানবাধিকারের বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। কিন্তু বাস্তবে তাদের এই মানবাধিকারের বুলি শুধু নিজ দেশের কিংবা নিজ রাজনৈতিক বিবেচনার পছন্দের লোকের জন্য, অন্য ধর্ম বা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকদের জন্য নয়।
সবখানেই চলছে অধিকার লঙ্ঘনের মহোৎসব, এক অরাজক পরিস্থিতি। স্বাভাবিকভাবে জীবনধারণের অধিকার হারিয়েছে মানুষ। শুধু ক্ষমতার লোভে বিশ্বজুড়ে ধ্বংসলীলায় মেতেছে বিশ্বের রাজনীতিকরা। সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার হরণ করছে মানবতার কথিত রক্ষকরাই। গোটা বিশ্বের মানবতা আজ বিবেকের কাঠগড়ায়। মানবতা আজ বিবেক, আদর্শ আর

নীতিনৈতিকতা দিয়ে পরিচালিত নয় বরং তা অন্যদের বঞ্চিত করে নিজ দেশ আর সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। শক্তিধর দেশগুলো নিজস্ব বলয় ধরে রাখতে হেন কাজ নেই যা করছে না। বিশ্বব্যাপী মানুষের দুর্দশা লাঘবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে জাতিসংঘ। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা আজ একপ্রস্থ কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়।

সর্বোপরি মানবতা ও মানবাধিকারের বিচারে বর্তমান বিশ্ব এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। তবে আমাদের হতাশ হলে চলবে না। আমাদের চিরকালের মানবিক মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার দিকে তাকাতে হবে। পৃথিবীতে শুধু অমানবিকসম্পন্ন মানুষই নেই, এখানে রয়েছে বিবেক বোধসম্পন্ন মানুষ। যাদের মাঝে রয়েছে মানবিক মূল্যবোধ, মানবপ্রেম। সময় আসবে, তাদের কল্যাণে মানবতার জয় হবে, বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হবে সত্যিকারের মানবাধিকার।

 

উন্নয়ন গতিশীলতায় মানবাধিকার অপরিহার্য

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

মানবাধিকারের ক্রান্তিকাল

আপডেট সময় ১২:১৫:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বর্তমান বিশ্বে চলছে মানবাধিকারের চরম ক্রান্তিকাল। প্রতিটি দেশে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবতা। যদিও পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রে রয়েছে মানবাধিকার সনদ। অথচ এসব রাষ্ট্র দ্বারাই আবার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে মানুষের অধিকার। সর্বস্তরের মানুষের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তথা নারী, পুরুষ, শিশু, নৃজাতি, রিফিউজি, অধিবাসী, রাষ্ট্রবিহীন অধিবাসী, পঙ্গু, অবহেলিত, সব মানুষের অধিকার রক্ষার্থে মানবাধিকার সনদ থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে এক দেশের সাথে অন্য দেশের যেমন রয়েছে যুদ্ধ, লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার, তেমনি আবার দেশের অভ্যন্তরে হচ্ছে খুন, হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি।

পৃথিবীর সকল ধর্মই শান্তির কথা বলে। মানবতার বার্তা দেয়। কোন ধর্মেই হত্যা, ধর্ষণ, জুলুম, নির্যাতন, নীপিড়নের কোন স্থান নেই। তারপরও এসব বন্ধ হচ্ছে না। ধর্মের নামে চলছে বাড়াবাড়ি। চলছে হত্যাযজ্ঞ। রাষ্ট্র কর্তৃক পূরণ হচ্ছে না শিক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান মানুষের সর্বজনীন মৌলিক অধিকার।

প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবেই মানবাধিকারের অধিকারী। যা সে নিজে ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানব পরিবারের সব সদস্যের সর্বজনীন, সহজাত, অ-হস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। একটি পরিবার ও সমাজের কর্তারা তাদের অধীনস্থদের অধিকার রক্ষা করবে, রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করবে। জাতিসঙ্ঘের ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউমান রাইটসের প্রথম অনুচ্ছেদে রয়েছে যে, জন্মগতভাবে সব মানুষ স্বাধীন এবং সমান সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত মানুষ নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা হলেও তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা কোনো কথা বলে না। তাদের মধ্য এমন প্রবণতা বিদ্যমান, মানুষ হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু থেকে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভূমিকাও এখন স্পষ্ট। এ যুদ্ধ প্রলম্বিত করার ক্ষেত্রে তাদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। আফ্রিকার অনেক দেশ এখন দুর্ভিক্ষের কবলে। সেখানে না খেয়ে মানুষ মরছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের কোনো কথা নেই।

এশিয়া মহাদেশের রাষ্ট্রগুলো অন্যান্য মহাদেশের মতো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে এশিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য মানবাধিকার রক্ষা আদালত গঠিত হয়নি। ফলে রাষ্ট্র দ্বারা নাগরিকদের মানবাধিকার খর্ব করার কারণে মানবাধিকার রক্ষা আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে না। যেমনটি মানবাধিকার আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেনি, ভারতের মুসলমান গোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা।

মানবাধিকারের বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। কিন্তু বাস্তবে তাদের এই মানবাধিকারের বুলি শুধু নিজ দেশের কিংবা নিজ রাজনৈতিক বিবেচনার পছন্দের লোকের জন্য, অন্য ধর্ম বা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকদের জন্য নয়।
সবখানেই চলছে অধিকার লঙ্ঘনের মহোৎসব, এক অরাজক পরিস্থিতি। স্বাভাবিকভাবে জীবনধারণের অধিকার হারিয়েছে মানুষ। শুধু ক্ষমতার লোভে বিশ্বজুড়ে ধ্বংসলীলায় মেতেছে বিশ্বের রাজনীতিকরা। সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার হরণ করছে মানবতার কথিত রক্ষকরাই। গোটা বিশ্বের মানবতা আজ বিবেকের কাঠগড়ায়। মানবতা আজ বিবেক, আদর্শ আর

নীতিনৈতিকতা দিয়ে পরিচালিত নয় বরং তা অন্যদের বঞ্চিত করে নিজ দেশ আর সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। শক্তিধর দেশগুলো নিজস্ব বলয় ধরে রাখতে হেন কাজ নেই যা করছে না। বিশ্বব্যাপী মানুষের দুর্দশা লাঘবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে জাতিসংঘ। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা আজ একপ্রস্থ কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়।

সর্বোপরি মানবতা ও মানবাধিকারের বিচারে বর্তমান বিশ্ব এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। তবে আমাদের হতাশ হলে চলবে না। আমাদের চিরকালের মানবিক মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার দিকে তাকাতে হবে। পৃথিবীতে শুধু অমানবিকসম্পন্ন মানুষই নেই, এখানে রয়েছে বিবেক বোধসম্পন্ন মানুষ। যাদের মাঝে রয়েছে মানবিক মূল্যবোধ, মানবপ্রেম। সময় আসবে, তাদের কল্যাণে মানবতার জয় হবে, বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হবে সত্যিকারের মানবাধিকার।

 

উন্নয়ন গতিশীলতায় মানবাধিকার অপরিহার্য