ঢাকা ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদসহ ৫ জনের নামে মামলা সাড়ে ৯ লাখ টাকার জুতা পরেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান মেগা প্রজেক্টের নামে দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার : বিএনপি মহাসচিব জার্মানিতে ব্যাটারিচালিত ট্রেনের যুগে টেসলার অভিষেক সেনাবাহিনীকে সবখানে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া ঠিক হবে না: ফখরুল অর্পিত দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা চাইলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না : উপদেষ্টা ফাওজুল কবির যুক্তরাষ্ট্রে ইউনূস-মোদি বৈঠক হচ্ছে না চয়নিকার সিনেমায় দেবকে নায়ক হিসেবে চান , নায়িকা কে হবেন? ঢাবিতে যুবক ও জাবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা: আইন হাতে তুলে না নিতে আহ্বান

দেশ-বিদেশের স্বৈরশাসকদের করুণ পরিণতি

এম. মাহমুদ

স্বৈরশাসকদের হাত থেকে যখন ক্ষমতা ফসকে যায়, সেটা বেশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে তার জন্য। তাদের ক্ষমতা শেষ শেষের দিকে চলে আসে তখন শাস্তি, কারাদণ্ড কিংবা জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়। সেজন্য স্বৈরশাসকদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য তাদের সামনে এটাই একমাত্র পথ খোলা থাকে। বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থান, সামরিক অভ্যুত্থান এবং গৃহযুদ্ধের কারণে যখন ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়, তখন তারা দেশের বাইরে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দেখা গেছে, স্বৈরশাসকদের ক্ষেত্রে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া তাদের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যত স্বৈর শাসক ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, তাদের মধ্যে ২০ শতাংশ নির্বাসনে গিয়েছিলেন।
অনেক সময় দেখা যায়, স্বৈরশাসকদের নির্বাসনে যাবার বিষয়টি সংঘাত নিরসনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। যেমন ১৯৭৯ সালে উগান্ডার বিদ্রোহী এবং তানজানিয়ার সৈন্যরা যখন উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন উগান্ডার স্বৈরশাসক ইদি আমিন লিবিয়ায় পালিয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

এরপর ১৯৮৬ সালে ফিলিপিন্সের স্বৈরশাসক ফার্ডিনান্ড মার্কোস জণ-বিক্ষোভের মুখে আমেরিকার সহায়তায় দেশ ছেড়ে হাওয়াইতে যান।

একই সময়ে হাইতির স্বৈরশাসক জ্যঁ-ক্লদ ডুভেলি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ফ্রান্সে গিয়ে আশ্রয় নেন।

এই তিনটি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, স্বৈরশাসকরা নির্বাচনে যাবার মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল নির্বিঘ্নে হয়েছিল। তাদের নির্বাচনে যাবার সুযোগ না থাকলে পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হতে পারতো।

২০১১ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে শুরু হয় জনবিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ ‘আরব বসন্ত’ হিসেবে পরিচিত। এসব দেশের সরকার কোন নির্বাচন ছাড়াই দশকের পর দশক ক্ষমতায় ছিলেন।

আরব বসন্তের প্রথম বলি হয়েছিলেন তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসক বেন আলী, ২৩ বছর ক্ষমতায় থাকার পর জনবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরব পালিয়ে যায় বেন আলী। পরে সৌদি আরবে তার মৃত্যু হয়।

আরব বসন্তের পরের ধাক্কা এসে পড়ে মিশরের প্রেসিডেন্ট হুসনি মুবারকের ওপর। তিনি প্রায় তিন দশক ক্ষমতায় ছিলেন। মাত্র ১৮ দিনের বিক্ষোভে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশের বাইরে পালিয়ে যাবার সুযোগ পাননি তিনি। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১২ সালে যাবজ্জীবন দণ্ড হয় তার। এর ছয় মাস পর এ দণ্ড বাতিল করা হয় ও পুনরায় বিচারের আদেশ দেয়া হয়। তাকে কায়রোর একটি সামরিক হাসপাতালে বন্দী রাখা হয়। অবশ্য ২০১৭ সালে মিসরের সর্বোচ্চ আদালত তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় এবং তিনি মুক্তি পান। এরপর ৯১ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

আরেক স্বৈরশাসক লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফির পরিণতি ছিল আরো ভয়াবহ। আরব বসন্তের প্রেক্ষাপটে লিবিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। গাদ্দাফি মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভ করতে গেলে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ৪২ বছর ক্ষমতায় থাকা গাদ্দাফি এক পর্যায়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাবার সময় বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়লে তাকে হত্যা করা হয়।

এছাড়া ১৯৭৯ সালে ইরানের মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ইসলামী বিপ্লবের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন। তার ক্ষমতাচ্যুতির মাধ্যমে ইরানের রাজতন্ত্রের অবসান হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ক ছিল বেশ ভালো। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হবার পরে মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি মিশরে নির্বাসনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে যখন জন-বিক্ষোভ প্রবল হয়ে ওঠে তখন পশ্চিমা মিত্ররা আলোচনা করেন কীভাবে তাকে পরিত্যাগ করা যায়।

এরপর অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছিল পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ক্ষেত্রে। সেনাবাহিনীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন নওয়াজ শরীফ। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেবার জন্য সব বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং সৌদি বাদশার চাপে সেনাশাসক পারভেজ মোশারফকে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হন।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এদিন তিনি সামরিক হেলিকপ্টারে বোন শেখ রেহানাকে সাথে করে ভারত পালিয়ে যান।

আরো  পড়ুন : যে কারণে পতন হয় স্বৈরশাসকের

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদসহ ৫ জনের নামে মামলা

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

দেশ-বিদেশের স্বৈরশাসকদের করুণ পরিণতি

আপডেট সময় ০৭:৪০:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪

এম. মাহমুদ

স্বৈরশাসকদের হাত থেকে যখন ক্ষমতা ফসকে যায়, সেটা বেশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে তার জন্য। তাদের ক্ষমতা শেষ শেষের দিকে চলে আসে তখন শাস্তি, কারাদণ্ড কিংবা জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়। সেজন্য স্বৈরশাসকদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য তাদের সামনে এটাই একমাত্র পথ খোলা থাকে। বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থান, সামরিক অভ্যুত্থান এবং গৃহযুদ্ধের কারণে যখন ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়, তখন তারা দেশের বাইরে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দেখা গেছে, স্বৈরশাসকদের ক্ষেত্রে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া তাদের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যত স্বৈর শাসক ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, তাদের মধ্যে ২০ শতাংশ নির্বাসনে গিয়েছিলেন।
অনেক সময় দেখা যায়, স্বৈরশাসকদের নির্বাসনে যাবার বিষয়টি সংঘাত নিরসনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। যেমন ১৯৭৯ সালে উগান্ডার বিদ্রোহী এবং তানজানিয়ার সৈন্যরা যখন উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন উগান্ডার স্বৈরশাসক ইদি আমিন লিবিয়ায় পালিয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

এরপর ১৯৮৬ সালে ফিলিপিন্সের স্বৈরশাসক ফার্ডিনান্ড মার্কোস জণ-বিক্ষোভের মুখে আমেরিকার সহায়তায় দেশ ছেড়ে হাওয়াইতে যান।

একই সময়ে হাইতির স্বৈরশাসক জ্যঁ-ক্লদ ডুভেলি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ফ্রান্সে গিয়ে আশ্রয় নেন।

এই তিনটি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, স্বৈরশাসকরা নির্বাচনে যাবার মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল নির্বিঘ্নে হয়েছিল। তাদের নির্বাচনে যাবার সুযোগ না থাকলে পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হতে পারতো।

২০১১ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে শুরু হয় জনবিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ ‘আরব বসন্ত’ হিসেবে পরিচিত। এসব দেশের সরকার কোন নির্বাচন ছাড়াই দশকের পর দশক ক্ষমতায় ছিলেন।

আরব বসন্তের প্রথম বলি হয়েছিলেন তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসক বেন আলী, ২৩ বছর ক্ষমতায় থাকার পর জনবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরব পালিয়ে যায় বেন আলী। পরে সৌদি আরবে তার মৃত্যু হয়।

আরব বসন্তের পরের ধাক্কা এসে পড়ে মিশরের প্রেসিডেন্ট হুসনি মুবারকের ওপর। তিনি প্রায় তিন দশক ক্ষমতায় ছিলেন। মাত্র ১৮ দিনের বিক্ষোভে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশের বাইরে পালিয়ে যাবার সুযোগ পাননি তিনি। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১২ সালে যাবজ্জীবন দণ্ড হয় তার। এর ছয় মাস পর এ দণ্ড বাতিল করা হয় ও পুনরায় বিচারের আদেশ দেয়া হয়। তাকে কায়রোর একটি সামরিক হাসপাতালে বন্দী রাখা হয়। অবশ্য ২০১৭ সালে মিসরের সর্বোচ্চ আদালত তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় এবং তিনি মুক্তি পান। এরপর ৯১ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

আরেক স্বৈরশাসক লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফির পরিণতি ছিল আরো ভয়াবহ। আরব বসন্তের প্রেক্ষাপটে লিবিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। গাদ্দাফি মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভ করতে গেলে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ৪২ বছর ক্ষমতায় থাকা গাদ্দাফি এক পর্যায়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাবার সময় বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়লে তাকে হত্যা করা হয়।

এছাড়া ১৯৭৯ সালে ইরানের মোহাম্মদ রেজা পাহলভি ইসলামী বিপ্লবের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন। তার ক্ষমতাচ্যুতির মাধ্যমে ইরানের রাজতন্ত্রের অবসান হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ক ছিল বেশ ভালো। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হবার পরে মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি মিশরে নির্বাসনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে যখন জন-বিক্ষোভ প্রবল হয়ে ওঠে তখন পশ্চিমা মিত্ররা আলোচনা করেন কীভাবে তাকে পরিত্যাগ করা যায়।

এরপর অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছিল পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ক্ষেত্রে। সেনাবাহিনীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন নওয়াজ শরীফ। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেবার জন্য সব বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং সৌদি বাদশার চাপে সেনাশাসক পারভেজ মোশারফকে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হন।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এদিন তিনি সামরিক হেলিকপ্টারে বোন শেখ রেহানাকে সাথে করে ভারত পালিয়ে যান।

আরো  পড়ুন : যে কারণে পতন হয় স্বৈরশাসকের