আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় ‘নৌকা’ প্রতীক নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। একই সঙ্গে ‘শাপলা’ প্রতীক তফসিলভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছে দলটি।
রোববার (১৩ জুলাই) এনসিপির প্রতিনিধিদল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবি জানায়।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মূসা।
এসময় নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টা থেকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সিইসির সঙ্গে প্রতিনিধিদলটির বৈঠক চলে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার প্রতীক তালিকায় নতুন যুক্ত করে সব মিলিয়ে ১১৫টির বিষয়ে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসি।
তবে এরমধ্যে ‘শাপলা’ প্রতীক হিসেবে তফসিলভুক্ত করা হয়নি। পাশাপাশি নিবন্ধন পুনর্বহালের পর ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক তফসিলে যুক্ত করা হয়েছে এবং নিবন্ধন স্থগিত থাকলেও ‘নৌকা’ প্রতীক বহাল রয়েছে।
সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে জহিরুল ইসলাম মূসা বলেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকাবস্থায় নৌকাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। আমরা এ বিষয়টি ইসির নজরে এনেছি। আইনগতভাবে নৌকা প্রতীক তালিকায় রাখতে পারে না ইসি।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইসির নিবন্ধনও হারিয়েছে দলটি।
জহিরুল ইসলাম মূসা বলেন, যতদিন আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের অন্য কোনো সিদ্ধান্ত বা আদালতের কোনো নির্দেশনা না আসে ততদিন নৌকা প্রতীক ইসির তালিকায় রাখা যাবে না।
প্রবাসী ভোটারদের ভোট পদ্ধতির অগ্রগতির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা করেন এনসিপির প্রতিনিধিদল।
শাপলাকে প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত ও ইসি পুনর্গঠন ছাড়া বিকল্প নেই উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, নির্বাচনের আগে ইসি পুনর্গঠন করতে হবে। এটা স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। ‘শাপলা’ প্রতীক পেতে আইনি কোনো বাধা নেই। যদি বাধা দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে আমরা রাজনৈতিকভাবে লড়াই করবো।
নিবন্ধনপ্রত্যাশী এনসিপি গত ২২ জুন দলটির প্রতীক শাপলার জন্য আবেদন করেছে। পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীক পছন্দের তালিকায় দিয়েছে দলটি। এর আগে নিবন্ধিত নাগরিক ঐক্য গত ১৭ জুন তাদের ‘কেটলি’ প্রতীকের পরিবর্তে ‘শাপলা’ চেয়ে আবেদন করে।
জহিরুল ইসলাম মূসা জানান, জাতীয় প্রতীক হচ্ছে ভাসমান শাপলা, ধানের শীষ তারা, পাটপাতা। চারটি উপাদানের মধ্যে ধানের শীষ এখন বিএনপির প্রতীক। তারকা একটি ও সোনালী আঁশ আরেকটি দলের প্রতীক। জাতীয় ফল কাঁঠালও একটি দলের রয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রতীক আসলে শাপলা নয়, এটিকে মিসব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। জাতীয় প্রতীক চারটি আলাদা আলাদা উপাদানের সমন্বয়ে একটি চিহ্ন।…রং, ব্যাসার্ধ সবই বিধিতে আছে।
আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পরও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিল সংশোধনের দাবি জানায় এনসিপি।
জহিরুল ইসলাম মূসা বলেন, আমরা নৌকার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি, তালিকার ভেতরে রাখা যাবে না। এটি করতে গেলে ইসিকে ওই তালিকায় সংযোজন বিয়োজন করতে হবে। সে জায়গায় আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে নতুন দরখাস্ত দিয়েছি। শাপলাকে তালিকাভুক্ত না করার বিষয়ে ইসি ভুল ব্যাখ্যার ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে শাপলাকে রাখায় আইনগত কোনো বাধা নেই তা জানিয়েছি।
আগামীতে এনসিপি নিবন্ধিত হলে যেন শাপলাই বরাদ্দ পায় সে বিষয়ে আবেদনও জানানো হয়।
‘শাপলাকে তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি এনসিপি নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারলে তখন যেন শাপলা প্রতীক বরাদ্দ পায়। কমিশন সাধারণত দরখাস্ত গ্রহণ করে তা বিবেচনা করে থাকে’- বলেন এনসিপি নেতা মূসা।
নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ে প্রতীকের তালিকা পাঠানোর পর নতুন করে এনসিপি আবেদন করে। দলটি শাপলা প্রতীক পাবে বলে মনে করেন এ এনসিপি নেতা।
তিনি বলেন, ইসি যখন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়; এরপর প্রথম দল হিসেবে আমরা শাপলা চেয়ে আবেদন করি। এখন আমাদের অধিকার আগে, শাপলা আমরা পাবো আশা করি। আইনি ব্যাখ্যার পর কমিশন বিবেচনা করবে বা আমাদের চেয়েও ভালো আইনি ব্যাখ্যা কমিশনকে দিতে হবে।
২০২২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ‘সিইসি ও ইসি নিয়োগ আইনের’ অধীনে এ এম এম নাসির উদ্দিন কমিশন গঠন হওয়ায় বরাবরই ইসি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে এনসিপি।
জহিরুল ইসলাম মূসা বলেন, যে প্রক্রিয়ায় ইসি গঠন হয়েছিল তা আমরা সমর্থন করিনি। এখনো আমরা সেই অবস্থানে আছি।
কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সংস্কার নয়, শুধু নির্বাচন চায়: নাহিদ ইসলাম