বাংলাদেশে গত বছর অগাস্টে আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ক্ষমতার অংশ হওয়া আন্দোলনকারী ছাত্রদের ঘনিষ্ঠরা দল গঠনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছে দেশের এই মুহূর্তের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।
এ নিয়ে বিএনপি ও আন্দোলনকারী ছাত্র এবং তাদের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের জেরে রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন প্রশ্নও উঠছে যে বিএনপি কেন নতুন দল গঠনের এ উদ্যোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন? সরকার ঘনিষ্ঠ ছাত্ররা দল গঠন করলে তাতের বিএনপির বিরোধিতা করারই বা কারণ কি?
বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলছেন নতুন দল গঠনকে বিএনপি ভয় পাচ্ছে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে সামনে নির্বাচন আয়োজন করবে। এখন কেউ ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করলে সেটি আর নিরপেক্ষ থাকবে না।
সবশেষ বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য দলগুলো সেটি মেনে নিবে না।ছাত্ররা তারা একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা চিন্তা করছেন। সেখানে যদি ছাত্রদের প্রতিনিধি এই সরকারে থাকে, তাহলে তো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। ওইটা হচ্ছে, সম্ভাব্য কথা।
তার এ বক্তব্য প্রচার হওয়ার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান সরকারের দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সরকারে থেকে কেউ নির্বাচনে অংশ নিবে না। “কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সরকার ছেড়ে দিবে। দল গঠনে প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চাইলে সরকার ছেড়ে দিবো”।
বিএনপি নেতারা বলছেন, নতুন দল গঠন নিয়ে তাদের কোন প্রতিক্রিয়াই নেই কারণ তাদের বিশ্বাস নতুন দল জনমনে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না। বরং তাদের উদ্বেগের একমাত্র জায়গা হলো -নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হয় সেটি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা, বিএনপি ভয় বা উদ্বেগের কথা স্বীকার না করলেও ভোট ব্যাংকের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বিএনপি কিছুটা চিন্তিত হতেই পারে। ছাত্ররা যেই মোটো নিয়ে এখন কাজ করছে তাহলো- প্রো ইসলামিক, ভারত বিরোধী ও আওয়ামী লীগ বিরোধী সেন্টিমেন্ট। বিএনপি ও জামায়াতের ভোট ব্যাংকটাও সেখানে। বিএনপি ভাবতে পারে যে ছাত্রদের দল হলে সেটি তাদের ভোট ব্যাংকে প্রভাব ফেলার আশংকা তৈরি করতে পারে”।
বড় দল হিসেবে বিএনপি এমন সব রাজনৈতিক উত্থান পতন বিভিন্ন সময় দেখেছে এবং অস্থিতিশীল পরিবেশে কিংস পার্টি কিংবা বিএনপি ভেঙ্গে সংস্কারপন্থীরা কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা করেও সফল হয়নি। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে তাদের উদ্বেগের কিছু নেই। তবে বিএনপি মনে করতে পারে উপদেষ্টারা কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠরা বা অনুসারীরা নির্বাচনের মাঠে সরকারের সমর্থন পেতে পারে। তাই নির্বাচনে নিরপেক্ষতার অভাব দেখা দেয়ার আশংকা করছেন তারা। আর এটিই তাদের বর্তমান অবস্থানের মূল কারণ।