ঢাকা ১০:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিজের রোপন করা ধান কাটতে গিয়ে খেলেন চুরির মামলা!

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ খলিলুর রহমান। চলতি আমন মৌসুমে তিনি এবং তার অংশীরা প্রায় ৮ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন। রোপা লাগানো থেকে শুরু করে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত পরিচর্যা করেও তারা ধান কাটতে গিয়ে পড়েছেন বাধার মুখে। ক্ষেতের ধান ঘরে আনার আগেই দেয়া হয়েছে ধান চুরির মামলা।

খলিলুর রহমানের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলের অমরখানা ইউনিয়নের ধোপাপাড়া গ্রামে। তার সঙ্গে মামলায় জড়ানো হয়েছে ওই এলাকার আরো ১৫ জনকে।

গত ১৪ নভেম্বর পঞ্চগড় সদর থানায় মামলাটি করেন একই এলাকার আহসান হাবিব নামে এক ব্যক্তি। তবে দুই পক্ষের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ পুরনো।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, সংশ্লিষ্ট জমিগুলোতে এ বছর ধানের আবাদ করেছেন মামলার বাদী আহসান হাবিব। সেই ধানগুলো পরিপক্ব হলে গত ১৩ নভেম্বর আসামীরা দলবদ্ধ হয়ে জমিতে গিয়ে কর্তন করে চুরি করে নিয়ে যায়। ধানের আনুমানিক পরিমাণ দেখানো হয়েছে, ১২০ মন, যার বাজার মূল্য এক লাখ ২৬ হাজার টাকা। এছাড়া একটি খড়ের গাদায় অগ্নিসংযোগেরও অভিযোগ তোলা হয় মামলায়।

তবে সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলেনি। দেখা যায়, কর্তনকৃত ধান জমিতেই বিছানো। পুরোপুরি না শুকানোর কারণে এখনো মাড়াই উপযোগি হয়নি। তবে ধানগুলো পরিপক্ব হওয়ায় খলিলুর রহমানরাই কর্তন করে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

খলিলুর রহমানের দাবি- জমিগুলো নিয়ে বিরোধ চললেও গত দুই বছর ধরে তারাই চাষাবাদ করছেন। এবারও তারাই ধানের আবাদ করেছেন। ধান চুরির অভিযোগটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। খড়ের গাদায় আগুনের বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।

তিনি বলেন, যখন রোপা লাগাই তখন কেউ বাধা দেয়নি, পুরো মৌসুম ফসলের পরিচর্যা করার সময়ও কেউ বাধা দেয়নি। এখন নিজের আবাদ ঘরে তোলার সময় বাধা দেয়া হচ্ছে। ধান ঘরে তোলার আগেই চুরির মামলা দেয়া হলো। মামলার খবর পেয়ে ধান ঘরে আনিনি। দীর্ঘ সময় জমিতে পড়ে থাকলে ধানগুলো নষ্ট হবে, যেহেতু মামলা হয়েছে- তাই দাবি করছি আইনের মাধ্যমে ধানগুলো সংরক্ষণ করা হোক।

মামলার স্বাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আজিজ বলেন, দুইপক্ষের মধ্যে জমিগুলো নিয়ে বিরোধ চলছে। এজন্য ধান কর্তনের সময় এই পক্ষ ছবি তুলতে যায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তবে ধানের আবাদ খলিলুর রহমানরাই করেছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। খড়ের গাদায় কে আগুন দিয়েছে- তা দেখেননি বলেও জানান।

মামলার বাদী আহসান হাবীব বলেন, আমাদের জমির ধান তারা কর্তন করতে গেলে আমরা বাধা দেই। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের খড়ের গাদায় আগুন দেয় এবং বিভিন্নরকম হুমকি প্রদান করে। আমরা এখন ভয়ে এলাকায় থাকিনা। বাধ্য হয়ে থানায় মামলা করেছি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক তৈয়ব আলী সরকার বলেন, একটি মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে।

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

নিজের রোপন করা ধান কাটতে গিয়ে খেলেন চুরির মামলা!

আপডেট সময় ০৭:৩২:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ খলিলুর রহমান। চলতি আমন মৌসুমে তিনি এবং তার অংশীরা প্রায় ৮ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করে বিপাকে পড়েছেন। রোপা লাগানো থেকে শুরু করে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত পরিচর্যা করেও তারা ধান কাটতে গিয়ে পড়েছেন বাধার মুখে। ক্ষেতের ধান ঘরে আনার আগেই দেয়া হয়েছে ধান চুরির মামলা।

খলিলুর রহমানের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলের অমরখানা ইউনিয়নের ধোপাপাড়া গ্রামে। তার সঙ্গে মামলায় জড়ানো হয়েছে ওই এলাকার আরো ১৫ জনকে।

গত ১৪ নভেম্বর পঞ্চগড় সদর থানায় মামলাটি করেন একই এলাকার আহসান হাবিব নামে এক ব্যক্তি। তবে দুই পক্ষের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ পুরনো।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, সংশ্লিষ্ট জমিগুলোতে এ বছর ধানের আবাদ করেছেন মামলার বাদী আহসান হাবিব। সেই ধানগুলো পরিপক্ব হলে গত ১৩ নভেম্বর আসামীরা দলবদ্ধ হয়ে জমিতে গিয়ে কর্তন করে চুরি করে নিয়ে যায়। ধানের আনুমানিক পরিমাণ দেখানো হয়েছে, ১২০ মন, যার বাজার মূল্য এক লাখ ২৬ হাজার টাকা। এছাড়া একটি খড়ের গাদায় অগ্নিসংযোগেরও অভিযোগ তোলা হয় মামলায়।

তবে সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলেনি। দেখা যায়, কর্তনকৃত ধান জমিতেই বিছানো। পুরোপুরি না শুকানোর কারণে এখনো মাড়াই উপযোগি হয়নি। তবে ধানগুলো পরিপক্ব হওয়ায় খলিলুর রহমানরাই কর্তন করে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

খলিলুর রহমানের দাবি- জমিগুলো নিয়ে বিরোধ চললেও গত দুই বছর ধরে তারাই চাষাবাদ করছেন। এবারও তারাই ধানের আবাদ করেছেন। ধান চুরির অভিযোগটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। খড়ের গাদায় আগুনের বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি।

তিনি বলেন, যখন রোপা লাগাই তখন কেউ বাধা দেয়নি, পুরো মৌসুম ফসলের পরিচর্যা করার সময়ও কেউ বাধা দেয়নি। এখন নিজের আবাদ ঘরে তোলার সময় বাধা দেয়া হচ্ছে। ধান ঘরে তোলার আগেই চুরির মামলা দেয়া হলো। মামলার খবর পেয়ে ধান ঘরে আনিনি। দীর্ঘ সময় জমিতে পড়ে থাকলে ধানগুলো নষ্ট হবে, যেহেতু মামলা হয়েছে- তাই দাবি করছি আইনের মাধ্যমে ধানগুলো সংরক্ষণ করা হোক।

মামলার স্বাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আজিজ বলেন, দুইপক্ষের মধ্যে জমিগুলো নিয়ে বিরোধ চলছে। এজন্য ধান কর্তনের সময় এই পক্ষ ছবি তুলতে যায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তবে ধানের আবাদ খলিলুর রহমানরাই করেছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। খড়ের গাদায় কে আগুন দিয়েছে- তা দেখেননি বলেও জানান।

মামলার বাদী আহসান হাবীব বলেন, আমাদের জমির ধান তারা কর্তন করতে গেলে আমরা বাধা দেই। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের খড়ের গাদায় আগুন দেয় এবং বিভিন্নরকম হুমকি প্রদান করে। আমরা এখন ভয়ে এলাকায় থাকিনা। বাধ্য হয়ে থানায় মামলা করেছি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক তৈয়ব আলী সরকার বলেন, একটি মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে।