ঢাকা ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জুলাই আন্দোলন নিয়ে ৮ সিনেমা; নির্মাতা চূড়ান্ত বেশি সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন : প্রেস সচিব পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন আন্দোলনে আহত ১০০ জন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ১৪৪ ধারা ভেঙে সচিবালয় ঘেরাওয়ের চেষ্টা, পুলিশের ধাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার কাজের তালিকা দিলেন উপদেষ্টা মাহফুজ সরকার গঠনের পর অভিযুক্ত কাউকে দেশত্যাগ করতে দেয়া হয়নি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ট্রুডো কেন হঠাৎ পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন? কে হতে যাচ্ছে তার উত্তরসূরি? গঠিত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’,  ইরানে হিজাব খুলে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতিবাদ শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিব্বতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৩

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি
মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ
(১ জানুয়ারি ১৯৩৬-২৯ ডিসেম্বর ২০১৩)
মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি। এছাড়া সাহিত্যিক, সাহিত্য সমালোচক, সাংবাদিক ও বাংলা ভাষা আন্দোলনের কর্মী হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে।

প্রাথমিক জীবন :
মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ১ জানুয়ারি ১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের নাওঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নাওঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৫০ সালে তালশহর হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এর পর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫২ সালে আইএ ও ১৯৫৫ সালে বিএ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ১৯৫৫-১৯৫৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে তিনি শিক্ষাজীবনের ইতিটানেন। তিনি বিবাহিত এবং দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। সুরকার মকসুদ জামিল মিন্টু তার ছেলে।

কর্মজীবন :
মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার সিনিয়র সহসম্পাদক ছিলেন। ছিলেন মাসিক ‘দ্যুতি’ পত্রিকার সহসম্পাদক। মাসিক মাহে নও পত্রিকায় ১৯৫৬ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সহসম্পাদক, দৈনিক জেহাদ পত্রিকায় ১৯৬১ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত সাহিত্য সম্পাদক। মাসিক পুবালি পত্রিকায় ১৯৬১ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত সহসম্পাদক, দৈনিক বাংলা (সাবেক পাকিস্তান) পত্রিকায় ১৯৬৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সিনিয়র সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

নজরুল ইনস্টিটিউট ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা হলে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে নির্বাহী সদস্য ও নজরুল প্রত্রিকার প্রধান উপদেষ্টা, পরবর্তীতে নিবার্হী পরিচালক হিসেবে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রযত্ন পরিষদের (২০০৩-২০০৫) সদস্য। তিনি ছিলেন নজরুল ইসলাম ও ফররুখ গবেষক। রবীন্দ্র গবেষণাতেও তার খ্যাতি ছিল।

রচিত গ্রন্থাবলী :
কাব্যগ্রন্থ :
জুলেখার মন (১৯৫৯), অন্ধকারে একা (১৯৬০), রক্তিম হৃদয় (১৯৬৬), আপন ভুবনে (১৯৭৪), মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহর কাব্যসম্ভার (১৯৮০), বৈরিতার হাতে বন্দী (১৯৯৬)।

প্রবন্ধ-গবেষণা :
নজরুল ইসলাম ও আধুনিকতা (১৯৬৩), সমকালীন সাহিত্যের ধারা (১৯৬৫), মধুসূদন-রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৭), সাহিত্য-সংস্কৃতি-জাতীয়তা (১৯৭০), নজরুল কাব্যের শিল্পরূপ (১৯৭৪), কবিতা ও প্রসঙ্গ-কথা (১৯৭৫), সাহিত্য ও সাহিত্যিক (১৯৭৮), বুদ্ধির মুক্তি ও রেনেসাঁ আন্দোলন (১৯৮০), সাহিত্যের রূপকার (১৯৮১), দগঁংষরস ঞৎধফরঃরড়হং রহ ইবহমধষর খরঃবৎধঃঁৎব’ (১৯৮১), মুসলিম বাংলার সাংবাদিকতা ও আবুল কালাম শামসুদ্দীন (১৯৮৩), প্রাতিষ্ঠানিক নজরুল-চর্চার ইতিবৃত্ত, ভাষা আন্দোলনে আবুল কালাম শামসুদ্দীন, রেখাচিত্র : যাঁদের হারায়ে খুঁজি (২০০৬)।

জীবনী :
গোলাম মোস্তফা (১৯৮৭), ‘সুফী মোতাহার হোসেন’ (১৯৮৮)।

সম্পাদনা :
পূর্ববাংলার কবিতা (আবু হেনা মোস্তফা কামাল সহযোগে), ফররুখ রচনাবলী (আবদুল মান্নান সৈয়দ সহযোগে), ফররুখ আহমদ অনূদিত ‘ইকবালের কবিতা’, আবুল কালাম শামসুদ্দীন রচনাবলী (১ম থেকে ৩য় খণ্ড-১৯৯৫)।
আরো কয়েকখানা বই :
দিক-দিগন্তরে (কিশোর সাহিত্য), পূর্ব-বাংলার কবিতা (সম্পাদিত), পাণ্ডুর আকাশ (উপন্যাস), সনেট-গুচ্ছ (প্রকাশিতব্য)।

পুরস্কার ও সম্মাননা :
একুশে পদক (২০০৭), বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৭), নজরুল স্মৃতি পুরস্কার, কলকাতা (১৯৮৫), তমদ্দুন মজলিশ মাতৃভাষা পদক, তমদ্দুন মজলিশ গুণীজন পদক, জাতীয় প্রেসক্লাব লেখক সম্মাননা পদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সম্মাননা পদক, নজরুল ইনস্টিটিউট নজরুল পদক (২০০৪)।

মৃত্যু :
মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে ঢাকার মিরপুরে মৃত্যুবরণ করেন। মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ’র একগুচ্ছ কবিতা

জুলেখার মন

দক্ষিণের বাতায়নে আসে স্নিগ্ধ মালতীর ঘ্রাণ,
সুন্দরী জুলেখা জাগে একা রাত্রি নৈঃশব্দের বুকে
ঘুমের ঝরোকা তার খুলে দিয়ে চাঁদের আলোকে
সারা রাত কান পেতে শোনে দূর-অরণ্যের গান;
যেখানে তারার ফুল গুচ্ছবদ্ধ রয়েছে অম্লান,
দুধের মতন চাঁদ একাকীই জানালায় জ্বলে–
আকাশ-সমুদ্র থেকে সেও যেন মৃদু কথা বলে
জুলেখা শুনেছে আজ সেই দূর-চাঁদের আহ্বান।
জ্যোৎস্নায় ভরেছে বন, তারি ঢেউ লাগে বাতায়নে,
মনের অরণ্যে তার প্রেমের সোনালি ফুল ফোটে
কে যেন একাকী এসে বলে তাকে একান্ত অস্ফূটে–
অরণ্যের গন্ধ মেখে প্রেমিকের স্বপ্ন নিয়ে মনেঃ
‘প্রেমের অজস্র ফুল তুলে নেবো আমরা দু’জন’
মালতীর সুরভিতে জেগে ওঠে জুলেখার মন!

একটি মেয়ের চোখে

একটি মেয়ের চোখে দেখি আমি সমুদ্রের নীল,
প্রতিদিন, প্রতি-সন্ধ্যা তার দু’টি চোখ যেন জ্বলে
যেমন আকাশে জাগে রূপালি রেখার ঝিল্মিল্;
না-বলে অনেক কথা সেই মেয়ে দু’টি চোখে বলে।
তা’র গায়ে কে মেখেছে লাবণ্যের গোলাবী-পরাগ!
সে যেন ফুলের মতো হেসে ওঠে সবুজ সকালে
তার মুখ-অবয়বে লাগেনি তো কলঙ্কের দাগ,
ফুটন্ত পদ্মের মতো ফুটে আছে চিকন-মৃণালে।
লাবণ্যময়ীর দেহে উচ্ছ্বসিত প্রথম যৌবন
তাকে পেয়ে ফিরে পাই স্নিগ্ধ এই পৃথিবীর মন।

বৃষ্টির জন্য

অফুরন্ত বৃষ্টি চাই আজ।
গ্রীষ্মের দুপুরে ক্ষীণ-কন্ঠে বাজে কান্নার আওয়াজ
অফুরন্ত বৃষ্টি চাই আজ॥
আষাঢ়ে যেমন ছিল নতুন মেঘের অভিসার
এখন এখানে যদি স্নিগ্ধ ছায়া তা’র
পাওয়া যেতো
অথবা, চঞ্চলা সেই শ্রাবণ-রাতের কোনো নদী
বয়ে যেতো যদি
তা’হলে হৃদয় হতো আঙুরের রসে টুপ্টুপ
হঠাৎ আকাশ-প্রান্তে যদি বৃষ্টি নামে ঝুপ-ঝুপ!

স্বশিক্ষিত পণ্ডিত আরজ আলী মাতুব্বর (১৭ ডিসেম্বর ১৯০০-১৫ মার্চ ১৯৮৫)

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ

আপডেট সময় ০৬:৪৬:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি
মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ
(১ জানুয়ারি ১৯৩৬-২৯ ডিসেম্বর ২০১৩)
মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি। এছাড়া সাহিত্যিক, সাহিত্য সমালোচক, সাংবাদিক ও বাংলা ভাষা আন্দোলনের কর্মী হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে।

প্রাথমিক জীবন :
মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ১ জানুয়ারি ১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের নাওঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নাওঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৫০ সালে তালশহর হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এর পর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫২ সালে আইএ ও ১৯৫৫ সালে বিএ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ১৯৫৫-১৯৫৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে তিনি শিক্ষাজীবনের ইতিটানেন। তিনি বিবাহিত এবং দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। সুরকার মকসুদ জামিল মিন্টু তার ছেলে।

কর্মজীবন :
মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার সিনিয়র সহসম্পাদক ছিলেন। ছিলেন মাসিক ‘দ্যুতি’ পত্রিকার সহসম্পাদক। মাসিক মাহে নও পত্রিকায় ১৯৫৬ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সহসম্পাদক, দৈনিক জেহাদ পত্রিকায় ১৯৬১ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত সাহিত্য সম্পাদক। মাসিক পুবালি পত্রিকায় ১৯৬১ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত সহসম্পাদক, দৈনিক বাংলা (সাবেক পাকিস্তান) পত্রিকায় ১৯৬৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সিনিয়র সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

নজরুল ইনস্টিটিউট ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা হলে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে নির্বাহী সদস্য ও নজরুল প্রত্রিকার প্রধান উপদেষ্টা, পরবর্তীতে নিবার্হী পরিচালক হিসেবে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রযত্ন পরিষদের (২০০৩-২০০৫) সদস্য। তিনি ছিলেন নজরুল ইসলাম ও ফররুখ গবেষক। রবীন্দ্র গবেষণাতেও তার খ্যাতি ছিল।

রচিত গ্রন্থাবলী :
কাব্যগ্রন্থ :
জুলেখার মন (১৯৫৯), অন্ধকারে একা (১৯৬০), রক্তিম হৃদয় (১৯৬৬), আপন ভুবনে (১৯৭৪), মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহর কাব্যসম্ভার (১৯৮০), বৈরিতার হাতে বন্দী (১৯৯৬)।

প্রবন্ধ-গবেষণা :
নজরুল ইসলাম ও আধুনিকতা (১৯৬৩), সমকালীন সাহিত্যের ধারা (১৯৬৫), মধুসূদন-রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৭), সাহিত্য-সংস্কৃতি-জাতীয়তা (১৯৭০), নজরুল কাব্যের শিল্পরূপ (১৯৭৪), কবিতা ও প্রসঙ্গ-কথা (১৯৭৫), সাহিত্য ও সাহিত্যিক (১৯৭৮), বুদ্ধির মুক্তি ও রেনেসাঁ আন্দোলন (১৯৮০), সাহিত্যের রূপকার (১৯৮১), দগঁংষরস ঞৎধফরঃরড়হং রহ ইবহমধষর খরঃবৎধঃঁৎব’ (১৯৮১), মুসলিম বাংলার সাংবাদিকতা ও আবুল কালাম শামসুদ্দীন (১৯৮৩), প্রাতিষ্ঠানিক নজরুল-চর্চার ইতিবৃত্ত, ভাষা আন্দোলনে আবুল কালাম শামসুদ্দীন, রেখাচিত্র : যাঁদের হারায়ে খুঁজি (২০০৬)।

জীবনী :
গোলাম মোস্তফা (১৯৮৭), ‘সুফী মোতাহার হোসেন’ (১৯৮৮)।

সম্পাদনা :
পূর্ববাংলার কবিতা (আবু হেনা মোস্তফা কামাল সহযোগে), ফররুখ রচনাবলী (আবদুল মান্নান সৈয়দ সহযোগে), ফররুখ আহমদ অনূদিত ‘ইকবালের কবিতা’, আবুল কালাম শামসুদ্দীন রচনাবলী (১ম থেকে ৩য় খণ্ড-১৯৯৫)।
আরো কয়েকখানা বই :
দিক-দিগন্তরে (কিশোর সাহিত্য), পূর্ব-বাংলার কবিতা (সম্পাদিত), পাণ্ডুর আকাশ (উপন্যাস), সনেট-গুচ্ছ (প্রকাশিতব্য)।

পুরস্কার ও সম্মাননা :
একুশে পদক (২০০৭), বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৭), নজরুল স্মৃতি পুরস্কার, কলকাতা (১৯৮৫), তমদ্দুন মজলিশ মাতৃভাষা পদক, তমদ্দুন মজলিশ গুণীজন পদক, জাতীয় প্রেসক্লাব লেখক সম্মাননা পদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সম্মাননা পদক, নজরুল ইনস্টিটিউট নজরুল পদক (২০০৪)।

মৃত্যু :
মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে ঢাকার মিরপুরে মৃত্যুবরণ করেন। মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ’র একগুচ্ছ কবিতা

জুলেখার মন

দক্ষিণের বাতায়নে আসে স্নিগ্ধ মালতীর ঘ্রাণ,
সুন্দরী জুলেখা জাগে একা রাত্রি নৈঃশব্দের বুকে
ঘুমের ঝরোকা তার খুলে দিয়ে চাঁদের আলোকে
সারা রাত কান পেতে শোনে দূর-অরণ্যের গান;
যেখানে তারার ফুল গুচ্ছবদ্ধ রয়েছে অম্লান,
দুধের মতন চাঁদ একাকীই জানালায় জ্বলে–
আকাশ-সমুদ্র থেকে সেও যেন মৃদু কথা বলে
জুলেখা শুনেছে আজ সেই দূর-চাঁদের আহ্বান।
জ্যোৎস্নায় ভরেছে বন, তারি ঢেউ লাগে বাতায়নে,
মনের অরণ্যে তার প্রেমের সোনালি ফুল ফোটে
কে যেন একাকী এসে বলে তাকে একান্ত অস্ফূটে–
অরণ্যের গন্ধ মেখে প্রেমিকের স্বপ্ন নিয়ে মনেঃ
‘প্রেমের অজস্র ফুল তুলে নেবো আমরা দু’জন’
মালতীর সুরভিতে জেগে ওঠে জুলেখার মন!

একটি মেয়ের চোখে

একটি মেয়ের চোখে দেখি আমি সমুদ্রের নীল,
প্রতিদিন, প্রতি-সন্ধ্যা তার দু’টি চোখ যেন জ্বলে
যেমন আকাশে জাগে রূপালি রেখার ঝিল্মিল্;
না-বলে অনেক কথা সেই মেয়ে দু’টি চোখে বলে।
তা’র গায়ে কে মেখেছে লাবণ্যের গোলাবী-পরাগ!
সে যেন ফুলের মতো হেসে ওঠে সবুজ সকালে
তার মুখ-অবয়বে লাগেনি তো কলঙ্কের দাগ,
ফুটন্ত পদ্মের মতো ফুটে আছে চিকন-মৃণালে।
লাবণ্যময়ীর দেহে উচ্ছ্বসিত প্রথম যৌবন
তাকে পেয়ে ফিরে পাই স্নিগ্ধ এই পৃথিবীর মন।

বৃষ্টির জন্য

অফুরন্ত বৃষ্টি চাই আজ।
গ্রীষ্মের দুপুরে ক্ষীণ-কন্ঠে বাজে কান্নার আওয়াজ
অফুরন্ত বৃষ্টি চাই আজ॥
আষাঢ়ে যেমন ছিল নতুন মেঘের অভিসার
এখন এখানে যদি স্নিগ্ধ ছায়া তা’র
পাওয়া যেতো
অথবা, চঞ্চলা সেই শ্রাবণ-রাতের কোনো নদী
বয়ে যেতো যদি
তা’হলে হৃদয় হতো আঙুরের রসে টুপ্টুপ
হঠাৎ আকাশ-প্রান্তে যদি বৃষ্টি নামে ঝুপ-ঝুপ!

স্বশিক্ষিত পণ্ডিত আরজ আলী মাতুব্বর (১৭ ডিসেম্বর ১৯০০-১৫ মার্চ ১৯৮৫)