গাজীপুরের শ্রীপুরে পরকীয়া প্রেমিককে কুপিয়ে হত্যা ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় স্বামী আজিজ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। গতকাল সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় র্যাব-১ ও র্যাব-১৪ যৌথ অভিযান চালিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার কাঁঠাল ইউনিয়ন এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-১ পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর জুন্নুরাইন বিন আলম।
আজিজ মিয়া (৩৪) ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার রাজাবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় স্ত্রী তসলিমা আক্তার (৩০) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আশরাফুল ইসলামকে (২৫) এক ঘরে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে বটি দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীকে আহত ও পরকীয়া প্রেমিককে হত্যা করে পালিয়ে যান। নিহত আশরাফুল ইসলাম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার আসগ্রামের মো. ওয়াহাব বিশ্বাসের ছেলে। পেশায় নির্মাণশ্রমিক ঘাতক আজিজ মিয়া শ্রীপুর পৌরসভার চন্নাপাড়া গ্রামে জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে।
রোমহর্ষক হত্যার বর্ণনা ও হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে র্যাবের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক স্বামী আজিজ মিয়া জানায়, পেশায় নির্মাণ শ্রমিক (রাজমিস্ত্রি) আজিজ মিয়া আট বছর আগে তাসলিমাকে বিয়ে করে শ্রীপুরের চন্নাপাড়া গ্রামে বসবাস করে আসছেন। তাঁর স্ত্রী তাসলিমা নিহত আশরাফুলের মালিকানাধীন এসএস ফ্যাশন নামে স্থানীয় একটি গার্মেন্টসের শ্রমিক ছিল। এই সুবাদে তাদের মধ্যে পরিচয় ও পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে।
গত ৪ নভেম্বর ঘাতক আজিজ মিয়া বাড়ির পাশে জনৈক মামুনের বাড়িতে যান। সেখান থেকে এসে পাশের কড়ইতলা গ্রামে কাজের যাওয়ার জন্য নির্মাণকাজের সরঞ্জামাদি (মেজারমেন্ট টেপ, করাত, হাতুড়ি) বাড়িতে ভুলে ফেলে যান। সেগুলো নিতে ফের বাড়িতে এলে ঘরে মোবাইল ফোনে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক আশরাফুলের সঙ্গে মুঠোফোনের কথোপকথনে শুনতে পান ‘আজিজ দূরে কোথাও কাজে যাবে, দুই সন্তান স্কুলে গেছে তাই বাসা ফাঁকা, তুমি সাড়ে ১০টার মধ্যে বাসায় আস। স্ত্রী তসলিমা ধারণা করেছিলেন, তার স্বামী অন্যান্য দিনের মতো কাজের উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছেন, সন্ধ্যায় ফিরবেন। স্ত্রী তসলিমা ও পরকীয়া প্রেমিকের ফোনালাপ শুনে স্বামী আজিজ মিয়া বাসার পাশে নতুন নির্মাণ করা শৌচাগারে লুকিয়ে প্রেমিক আশরাফুলের আসার অপেক্ষায় থাকেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে তসলিমা আক্তারের ঘরে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে টেলিভিশনের ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। পুরো ঘটনাটি লুকিয়ে থাকা শৌচাগার থেকে আজিজ মিয়া দেখতে পেয়ে দরজার কড়া নেড়ে চিৎকার করতে থাকলে একপর্যায়ে তসলিমা ঘরের দরজার খুলে দেন। এ সময় পরকীয় প্রেমিক আশরাফুলকে ঘরের ভেতরে থেকে তালা লাগিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় কয়েক মাস ধরে তাদের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক চলছে বলে জানান আশরাফুল। এ কথা শুনে আজিজ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে বেলা ১১টার সময় ঘরের টেবিলের নিচে থাকা ধারালো বটি দিয়ে আশরাফুলকে মাথায় ও পিঠে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা ও স্ত্রী তসলিমা আক্তারকে গলা ও গালে কুপিয়ে আত্মগোপনে চলে যান বলে র্যাবকে জানান।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, এই ঘটনায় নিহত আশরাফুল ইসলামের বাবা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানার একটি হত্যা মামলা করেছেন। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আজিজ মিয়াকে শ্রীপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।