বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে এক অনন্য সাধারণ দিন স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এদিনে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠেন গোটা জাতি। উৎসাহ উদ্দীপনার জোয়ারে ভাসে আপামর জনগণ। বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন ৩০ লাখ শহিদ আর দুই লাখ বীরাঙ্গনাকে। এবারও সারা দেশে পালিত হবে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫৩তম বছর। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সবুজ জমিন রক্তে ভেসেছিলো শহিদদের রক্তে, মুক্ত আকাশে ভেসে বেড়াতো বীরাঙ্গনাদের করুণ আর্তনাদ, সেই দেশের বুকে আজ প্রাপ্তির উৎসব, স্বাধীনতা দিবসের উৎসব।
স্বাধীনতার লড়াইটা শুরু হয়েছিলো মূলত ১৯৪৭ সাল থেকে। বিভিন্ন আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়…।’ ‘এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।
মুক্তিপাগল বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণা ব্যর্থ হয়নি। স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতি আরেকবারের মতো প্রমাণ করেছে শোষক আর অত্যাচারীর দল ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেই।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৩ পেরিয়েছে। ১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট আজ পরিণত হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে। সেদিনের ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশটিতে বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮১৪ মার্কিন ডলার।
এক সময় যখন বলা হতো বাংলাদেশের উন্নয়ন হতে সময় লাগবে ২০০ বছর। তাদের সেই ধারণাকে পদদলিত করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির নানা চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা আত্মপ্রত্যয়ী শেখ হাসিনা কোন সংস্থা বা দেশের কাছে নতি স্বীকার করেননি। তার স্বপ্নের প্রচেষ্টার ফল পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলেই দ্রুত সমাপ্তির পথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে। উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেট্রোরেলের যুগে এখন বাংলাদেশ। স্বপ্নের এই মেট্রোরেল দ্রুতগতিতে ছুটছে রাজধানীর বুকে।
এই যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যার শুরু হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। আমরা দেখি ১৯৭২ সালের প্রথম স্বাধীনতাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে এক যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে। তখন জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত এক বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বভাবসুলভ প্রত্যয়দৃপ্ত কণ্ঠে বাংলাদেশের সুখী-সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের অভয়মন্ত্র উচ্চারণ করে বলেছিলেন ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত এই শ্মশান বাংলার বুকেই আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলব।’ আজ তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর এখন এগুলো সম্ভব হচ্ছে তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত প্রচেষ্টায়। বিশ্ব নানামুখী সংকটে আবর্তিত হচ্ছে। বিশ্বের এই নানামুখী সংকটের মধ্যে থেকেও বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে। আর এই উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখে উচ্ছ্বসিত উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কেরা।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুয়েন লুইস বাংলাদেশের প্রশংসা করতে গিয়ে বলছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়া, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পরিকল্পনা এই দেশের অগ্রগতির স্মারক। আর এসবই সম্ভব হয়েছে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে। তাঁর হাত ধরেই দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। এগিয়ে যাচ্ছে জাতির পিতার আজন্ম স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। যেখানে বাংলাদেশ হবে একটি স্মার্ট দেশ। বিশে^র বুকে মাথা উঁচু দাঁড়াবো আমরা, দাঁড়াবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম।
আরো পড়ুন : দৈহিক সুস্থতার সাথে সাথে আত্মিক উৎকর্ষতাও সাধিত হোক