ঢাকা ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জেএসএস ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র বাস্তবায়নে মাঠে নামলে ‘পাশে থাকবে’ ইউপিডিএফ

‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র বিরোধিতা করেই আড়াই দশকের বেশি সময় আগে জেএসএস থেকে বেরিয়ে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল হিসেবে ইউপিডিএফের জন্ম হলেও দলটির মুখপাত্র এখন বলছেন, চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য লড়াইয়ে শামিল হতে তাদের কোনো ‘আপত্তি’ নেই।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএসকে (সন্তু লারমা) ২৭ বছর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হওয়া এই ‘শান্তি চুক্তি’র মূল অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা বলছেন, “পার্বত্য শান্তি চুক্তির মূল স্টেকহোল্ডার জেএসএস। এই চুক্তিতে নানা অসংগতি আছে, চুক্তিটি অসম্পূর্ণ। তবু পাহাড়ের অধিকাংশ মানুষই এই চুক্তিটি চায়।

“ফলে জেএসএস যদি এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করে এবং তাতে ইউপিডিএফের সহযোগিতা চায় তাহলে ইউপিডিএফ আন্তরিকভাবে তাতে শামিল হবে।”

তবে প্রসীত খিসা নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ মুখপাত্রের এই ‘উপলব্ধিকে স্বাগত’ জানালেও এটা ‘পরিস্থিতি বুঝে হঠাৎ করে বলা’ বলে মনে করেন জেএসএস (সন্তু লারমা) নেতা সজীব চাকমা।

জেএসএসের (সন্তু লারমা) এই সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রতিক্রিয়ায় বলছিলেন, “সমস্যা হচ্ছে, ইউপিডিএফ সারা বছর চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে কথা বলে, চুক্তি ও জনসংহতি সমিতির বিরোধী কাজ করে, ষড়যন্ত্র করে।

“কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে হঠাৎ করে তারা আবার চুক্তির বাস্তবায়নের পক্ষেও কাজ করতে চায় বলে; এটা জনগণ বিশ্বাস করতে চায় না।”

পাহাড়ের আরো দুটি আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এবং জেএসএস (এম এন লারমা) নেতারাও মনে করেন, পাহাড়ের ‘ভ্রাতৃঘাতী’ হানাহানি বন্ধের স্বার্থে এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন।

তবে পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠী সদস্য অধ্যুষিত চারটি সংগঠনের নেতারাই মনে করেন, চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ‘সদিচ্ছার অভাব’ ছিল এবং দেড় দশকের বেশি সময় ধরে টানা ক্ষমতায় থাকার পরেও বিভিন্ন ‘কলাকৌশল’ সামনে এনে চুক্তিটিকে এগিয়ে নেয়নি।

অপরদিকে শুরু থেকেই চুক্তির বিরোধিতা করলেও পাহাড়ের বাঙালিদের অনেকেই এখন আর সেই অবস্থানে নেই। বরং তারা চুক্তিটির ‘পুনর্মূল্যায়নের’ দাবির কথা বলেন। তবে পাহাড়ের বাঙালি রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ আগের ধারাবাহিকতায় চুক্তি বাতিলের দাবি এখনও অব্যাহত রেখেছেন।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাহাড়ের সংঘাত থামাতে জেএসএসের সঙ্গে চুক্তি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। যার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে তিন দশক ধরে চলে সহিংসতার অবসান ঘটে। এই চুক্তির অনেকগুলো ধারা ছিল। যার কিছু তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়; বাকিগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল। যদিও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।

এই চুক্তির বিরোধিতা করেই ১৯৯৮ সালের জুনে ইউপিডিএফের জন্ম হয়। সংগঠনটি পাহাড়ি তরুণদের মধ্যে অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়। ফলে ‘আধিপত্য বিস্তারের’ জেরে ইউপিডিএফ ও জেএসএস বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে জড়িয়েছে, সংগঠন দুটির শত শত সদস্যকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। আতঙ্কে থেকেছে পাহাড়।

যদিও ইউপিডিএফ মুখপাত্র অংগ্য মারমা দাবি করেছেন, “চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের বিষয়টি ইউপিডিএফ ২০০৯ সালেই রাঙামাটিতে একটি সমাবেশে ঘোষণা করেছিল।”

সেখানে চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য জেএসএসকে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছিল বলে ভাষ্য অংগ্য মারমার।

চুক্তির ‘অসম্পূর্ণতার’ দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে পাহাড়িদের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও বাঙালিদের পুনর্বাসন নিয়ে কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। এটা চুক্তির একটি বড় অসম্পূর্ণতা। এ ধরনের আরো কিছু বিষয় আছে।”

“আওয়ামী লীগ লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলেও চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন প্রয়োজন থাকলেও সেটা হয়নি।”

জেএসএসের সঙ্গে সংঘাত ও নিজেদের মধ্যে হানাহানির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইউপিডিএফ মুখপাত্র বলেন, “হানাহানি বন্ধের ব্যাপারে ২০১৫ সালে দুই দলের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তি হয়েছিল। কেউ পরস্পরের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে জড়াবে না। তারপর তিন বছর পর্যন্ত পাহাড়ে কোনো হানাহানি হয়নি। কিন্তু ২০১৮ সালে সেই চুক্তিটি ভেঙে পড়ে। জেএসএস চুক্তি লঙ্ঘন করে। তারপর আবার হানাহানি শুরু হয়।”

তবে জেএসএসের সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার ভাষ্য, ইউপিডিএফ যদি এতদিন বিরোধিতা না করত- তাহলে হয়ত চুক্তিটি আরো এগিয়ে যেতে পারত।

২৭ বছর পর এ ধরনের ‘উপলব্ধি’র জন্য ইউপিডিএফকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

সজীব চাকমা বলেন, “পাহাড়ের অধিকাংশ মানুষ চুক্তির বাস্তবায়ন চায়- এটা স্বীকার করার জন্য ইউপিডিএফকে ধন্যবাদ। তারা যদি বিরোধিতা না করত বা সহিংস ভূমিকায় অবতীর্ণ না হত, তাহলে অবশ্যই চুক্তিটি বাস্তবায়িত হত এবং শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের জন্য অবশ্যই চুক্তির বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।”

তিনি বলেন, “আর চুক্তি অসম্পূর্ণ বা পূর্ণ বলতে কিছু নেই। চুক্তি চুক্তিই। বহু সময় নিয়ে, সংগ্রাম ও সংলাপ করে এই চুক্তি হয়েছে। শাসকগোষ্ঠী ন্যূনতম অধিকারও দিতে চায় না। কিন্তু জনসংহতি সমিতি অনেক লড়াই করে এই চুক্তি আদায় করেছে।”

চুক্তির কারণে জুম্মদের অস্তিত্ব রক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার এবং স্থায়ী অধিবাসী বাঙালি জনগোষ্ঠীর জন্যও কিছু উল্লেখযোগ্য অধিকার নিশ্চিত হয়েছে বলে ভাষ্য সজীব চাকমার।

তিনি বলেন, “এই চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পর পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের অধিকারের প্রশ্নে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা নিশ্চয়ই আলোচনা করে সমাধান হবে।”

অন্য ২ পাহাড়ি সংগঠনের ভাষ্য

জেএসএস (সন্তু লারমা) থেকে বেরিয়ে কিছু নেতাকর্মী ২০১০ সালে জেএসএস (এম এন লারমা) নামে সংগঠন তৈরি করে। সংগঠনটির খাগড়াছড়িতে বেশ ভাল অবস্থান রয়েছে।

সংগঠনটি শুরু থেকেই শান্তি চুক্তির পক্ষে ছিল বলে দাবি করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস- এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার বিভাগের প্রধান জুপিটার চাকমা।

চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, “পাহাড়ের সমস্যা সমাধানের রক্ষাকবচ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৮টি ধারা আংশিক এবং ২৯টি ধারা সম্পূর্ণ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।”

জুপিটার চাকমা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, “এ কমিশনের কাছে আমরা দাবি করছি, সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলে যে সব আদিবাসী জাতি রয়েছেন- তাদের প্রত্যেকের নাম যাতে সংবিধানে লিপিবদ্ধ করে জাতি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য বিগত সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে না।”

এক প্রশ্নের জবাবে জেএসএস (এম এন লারমার) নেতা জুপিটার চাকমা বলেন, “জেএসএস ও ইউপিডিএফ এই দুটি দল যদি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে, তাহলে আমরা বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই।”

চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ের ‘ভ্রাতৃঘাতী’ হানাহানি-খুন অনেকাংশেই কমবে বলেও মনে করেন জুপিটার। বলছিলেন, “চুক্তিটার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে এখানকার আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদগুলো সচল হবে। তাতে নির্বাচিত নেতৃত্ব আসবে। এর সুফল অবশ্যই জনগণ পাবে।”

নিজেদের দলের ব্যাপারে জানতে চাইলে জুপিটার চাকমা বলেন, “আমরা দলের প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বলেছি, কোনো ধরনের হানাহানিতে জড়াব না।”

২০১৭ সালে প্রসীত খিসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ থেকে কিছু নেতাকর্মী বেরিয়ে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক নামে সংগঠন তৈরি করেন।

সংগঠনের সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা বলছিলেন, “সবার আশা ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে, চুক্তি বাস্তবায়ন হবে। শেখ হাসিনা সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও তারা বিভিন্ন কলাকৌশলে চুক্তিটা বাস্তবায়ন করেনি।

“তাদের সদিচ্ছার অভাব ছিল। বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতার কারণে চুক্তিটি বাস্তবায়নটি হয়নি।”

বাঙালিভিত্তিক সংগঠনের ভাষ্য

পাহাড়ে বাঙালিদের অধিকার নিয়ে কাজ করে বেশ কিছু সংগঠন। এর মধ্যে বছর পাঁচেক আগে তৈরি হওয়া বাঙালিভিত্তিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ অন্যতম।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান বলছিলেন, “আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন চাই। চুক্তিতে অন্তত ১৪টি ধারা আছে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক। আমরা সেইসব ধারার পুনঃনিরীক্ষা করে সংশোধন দাবি করে আসছি।

“একই দেশে দুই ধরনের ভোটার তালিকা হতে পারে না। চুক্তির ২৭ বছরেও পাহাড়ে শান্তি না আসায় এই চুক্তির দুর্বলতা প্রমাণিত হয়েছে। আশা করছি, বর্তমান বৈষম্যবিরোধী সরকার এসব অসঙ্গতি দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।”

অন্যদিকে চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া।

সাবেক এই সংসদ সদস্যের দাবি, “এই চুক্তির মধ্য দিয়ে পাহাড়ে বৈষম্য এবং বিভেদ বাড়ার পাশাপাশি পাহাড়িদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বেড়েছে। চুক্তির পর পাহাড়ে অস্ত্রের ব্যবহার আরো বেড়েছে।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, “শেখ হাসিনা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার লোভে বৈষম্য সৃষ্টিকারী শান্তি চুক্তি করেছিল। বাঙালিরা যেমন বৈষম্যের শিকার হয়েছিল, তেমনই পাহাড়িদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বেড়েছে। বিএনপির শাসনামলে কোনো আঞ্চলিক সংগঠনের সৃষ্টি হয়নি। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করব- যাতে চুক্তি বাতিল করা হয়।”

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার বাণী

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বছর উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন, “পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ওই এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এই চুক্তি হয়।

“চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক, অবকাঠামো ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন চলমান রয়েছে। পার্বত্য জেলাসমূহে অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য আমি দলমত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই।”

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেছেন, দেশের মোট আয়তনের এক-দশমাংশ এলাকায় পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাই পার্বত্য অঞ্চলকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। “পার্বত্য জেলাসমূহের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ ও পর্যটন শিল্পের প্রসারে স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বেকারত্ব হ্রাস পাবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং জীবনযাত্রার উন্নতি ও সামাজিক বৈষম্য দূর হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল অধিবাসীর জীবনে শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির অভিযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

জেএসএস ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র বাস্তবায়নে মাঠে নামলে ‘পাশে থাকবে’ ইউপিডিএফ

আপডেট সময় ১২:৪৪:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র বিরোধিতা করেই আড়াই দশকের বেশি সময় আগে জেএসএস থেকে বেরিয়ে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল হিসেবে ইউপিডিএফের জন্ম হলেও দলটির মুখপাত্র এখন বলছেন, চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য লড়াইয়ে শামিল হতে তাদের কোনো ‘আপত্তি’ নেই।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএসকে (সন্তু লারমা) ২৭ বছর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হওয়া এই ‘শান্তি চুক্তি’র মূল অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা বলছেন, “পার্বত্য শান্তি চুক্তির মূল স্টেকহোল্ডার জেএসএস। এই চুক্তিতে নানা অসংগতি আছে, চুক্তিটি অসম্পূর্ণ। তবু পাহাড়ের অধিকাংশ মানুষই এই চুক্তিটি চায়।

“ফলে জেএসএস যদি এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করে এবং তাতে ইউপিডিএফের সহযোগিতা চায় তাহলে ইউপিডিএফ আন্তরিকভাবে তাতে শামিল হবে।”

তবে প্রসীত খিসা নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ মুখপাত্রের এই ‘উপলব্ধিকে স্বাগত’ জানালেও এটা ‘পরিস্থিতি বুঝে হঠাৎ করে বলা’ বলে মনে করেন জেএসএস (সন্তু লারমা) নেতা সজীব চাকমা।

জেএসএসের (সন্তু লারমা) এই সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রতিক্রিয়ায় বলছিলেন, “সমস্যা হচ্ছে, ইউপিডিএফ সারা বছর চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে কথা বলে, চুক্তি ও জনসংহতি সমিতির বিরোধী কাজ করে, ষড়যন্ত্র করে।

“কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে হঠাৎ করে তারা আবার চুক্তির বাস্তবায়নের পক্ষেও কাজ করতে চায় বলে; এটা জনগণ বিশ্বাস করতে চায় না।”

পাহাড়ের আরো দুটি আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক এবং জেএসএস (এম এন লারমা) নেতারাও মনে করেন, পাহাড়ের ‘ভ্রাতৃঘাতী’ হানাহানি বন্ধের স্বার্থে এই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন।

তবে পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠী সদস্য অধ্যুষিত চারটি সংগঠনের নেতারাই মনে করেন, চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ‘সদিচ্ছার অভাব’ ছিল এবং দেড় দশকের বেশি সময় ধরে টানা ক্ষমতায় থাকার পরেও বিভিন্ন ‘কলাকৌশল’ সামনে এনে চুক্তিটিকে এগিয়ে নেয়নি।

অপরদিকে শুরু থেকেই চুক্তির বিরোধিতা করলেও পাহাড়ের বাঙালিদের অনেকেই এখন আর সেই অবস্থানে নেই। বরং তারা চুক্তিটির ‘পুনর্মূল্যায়নের’ দাবির কথা বলেন। তবে পাহাড়ের বাঙালি রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ আগের ধারাবাহিকতায় চুক্তি বাতিলের দাবি এখনও অব্যাহত রেখেছেন।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাহাড়ের সংঘাত থামাতে জেএসএসের সঙ্গে চুক্তি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। যার মধ্য দিয়ে পাহাড়ে তিন দশক ধরে চলে সহিংসতার অবসান ঘটে। এই চুক্তির অনেকগুলো ধারা ছিল। যার কিছু তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়; বাকিগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল। যদিও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।

এই চুক্তির বিরোধিতা করেই ১৯৯৮ সালের জুনে ইউপিডিএফের জন্ম হয়। সংগঠনটি পাহাড়ি তরুণদের মধ্যে অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়। ফলে ‘আধিপত্য বিস্তারের’ জেরে ইউপিডিএফ ও জেএসএস বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে জড়িয়েছে, সংগঠন দুটির শত শত সদস্যকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। আতঙ্কে থেকেছে পাহাড়।

যদিও ইউপিডিএফ মুখপাত্র অংগ্য মারমা দাবি করেছেন, “চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের বিষয়টি ইউপিডিএফ ২০০৯ সালেই রাঙামাটিতে একটি সমাবেশে ঘোষণা করেছিল।”

সেখানে চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য জেএসএসকে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছিল বলে ভাষ্য অংগ্য মারমার।

চুক্তির ‘অসম্পূর্ণতার’ দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে পাহাড়িদের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও বাঙালিদের পুনর্বাসন নিয়ে কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। এটা চুক্তির একটি বড় অসম্পূর্ণতা। এ ধরনের আরো কিছু বিষয় আছে।”

“আওয়ামী লীগ লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলেও চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন প্রয়োজন থাকলেও সেটা হয়নি।”

জেএসএসের সঙ্গে সংঘাত ও নিজেদের মধ্যে হানাহানির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইউপিডিএফ মুখপাত্র বলেন, “হানাহানি বন্ধের ব্যাপারে ২০১৫ সালে দুই দলের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তি হয়েছিল। কেউ পরস্পরের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে জড়াবে না। তারপর তিন বছর পর্যন্ত পাহাড়ে কোনো হানাহানি হয়নি। কিন্তু ২০১৮ সালে সেই চুক্তিটি ভেঙে পড়ে। জেএসএস চুক্তি লঙ্ঘন করে। তারপর আবার হানাহানি শুরু হয়।”

তবে জেএসএসের সহতথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার ভাষ্য, ইউপিডিএফ যদি এতদিন বিরোধিতা না করত- তাহলে হয়ত চুক্তিটি আরো এগিয়ে যেতে পারত।

২৭ বছর পর এ ধরনের ‘উপলব্ধি’র জন্য ইউপিডিএফকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

সজীব চাকমা বলেন, “পাহাড়ের অধিকাংশ মানুষ চুক্তির বাস্তবায়ন চায়- এটা স্বীকার করার জন্য ইউপিডিএফকে ধন্যবাদ। তারা যদি বিরোধিতা না করত বা সহিংস ভূমিকায় অবতীর্ণ না হত, তাহলে অবশ্যই চুক্তিটি বাস্তবায়িত হত এবং শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের জন্য অবশ্যই চুক্তির বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।”

তিনি বলেন, “আর চুক্তি অসম্পূর্ণ বা পূর্ণ বলতে কিছু নেই। চুক্তি চুক্তিই। বহু সময় নিয়ে, সংগ্রাম ও সংলাপ করে এই চুক্তি হয়েছে। শাসকগোষ্ঠী ন্যূনতম অধিকারও দিতে চায় না। কিন্তু জনসংহতি সমিতি অনেক লড়াই করে এই চুক্তি আদায় করেছে।”

চুক্তির কারণে জুম্মদের অস্তিত্ব রক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকার এবং স্থায়ী অধিবাসী বাঙালি জনগোষ্ঠীর জন্যও কিছু উল্লেখযোগ্য অধিকার নিশ্চিত হয়েছে বলে ভাষ্য সজীব চাকমার।

তিনি বলেন, “এই চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পর পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের অধিকারের প্রশ্নে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা নিশ্চয়ই আলোচনা করে সমাধান হবে।”

অন্য ২ পাহাড়ি সংগঠনের ভাষ্য

জেএসএস (সন্তু লারমা) থেকে বেরিয়ে কিছু নেতাকর্মী ২০১০ সালে জেএসএস (এম এন লারমা) নামে সংগঠন তৈরি করে। সংগঠনটির খাগড়াছড়িতে বেশ ভাল অবস্থান রয়েছে।

সংগঠনটি শুরু থেকেই শান্তি চুক্তির পক্ষে ছিল বলে দাবি করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস- এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার বিভাগের প্রধান জুপিটার চাকমা।

চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, “পাহাড়ের সমস্যা সমাধানের রক্ষাকবচ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৮টি ধারা আংশিক এবং ২৯টি ধারা সম্পূর্ণ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।”

জুপিটার চাকমা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, “এ কমিশনের কাছে আমরা দাবি করছি, সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলে যে সব আদিবাসী জাতি রয়েছেন- তাদের প্রত্যেকের নাম যাতে সংবিধানে লিপিবদ্ধ করে জাতি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য বিগত সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে না।”

এক প্রশ্নের জবাবে জেএসএস (এম এন লারমার) নেতা জুপিটার চাকমা বলেন, “জেএসএস ও ইউপিডিএফ এই দুটি দল যদি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে, তাহলে আমরা বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই।”

চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ের ‘ভ্রাতৃঘাতী’ হানাহানি-খুন অনেকাংশেই কমবে বলেও মনে করেন জুপিটার। বলছিলেন, “চুক্তিটার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে এখানকার আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদগুলো সচল হবে। তাতে নির্বাচিত নেতৃত্ব আসবে। এর সুফল অবশ্যই জনগণ পাবে।”

নিজেদের দলের ব্যাপারে জানতে চাইলে জুপিটার চাকমা বলেন, “আমরা দলের প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বলেছি, কোনো ধরনের হানাহানিতে জড়াব না।”

২০১৭ সালে প্রসীত খিসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ থেকে কিছু নেতাকর্মী বেরিয়ে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক নামে সংগঠন তৈরি করেন।

সংগঠনের সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা বলছিলেন, “সবার আশা ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে, চুক্তি বাস্তবায়ন হবে। শেখ হাসিনা সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও তারা বিভিন্ন কলাকৌশলে চুক্তিটা বাস্তবায়ন করেনি।

“তাদের সদিচ্ছার অভাব ছিল। বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতার কারণে চুক্তিটি বাস্তবায়নটি হয়নি।”

বাঙালিভিত্তিক সংগঠনের ভাষ্য

পাহাড়ে বাঙালিদের অধিকার নিয়ে কাজ করে বেশ কিছু সংগঠন। এর মধ্যে বছর পাঁচেক আগে তৈরি হওয়া বাঙালিভিত্তিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ অন্যতম।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান বলছিলেন, “আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন চাই। চুক্তিতে অন্তত ১৪টি ধারা আছে, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক। আমরা সেইসব ধারার পুনঃনিরীক্ষা করে সংশোধন দাবি করে আসছি।

“একই দেশে দুই ধরনের ভোটার তালিকা হতে পারে না। চুক্তির ২৭ বছরেও পাহাড়ে শান্তি না আসায় এই চুক্তির দুর্বলতা প্রমাণিত হয়েছে। আশা করছি, বর্তমান বৈষম্যবিরোধী সরকার এসব অসঙ্গতি দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।”

অন্যদিকে চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া।

সাবেক এই সংসদ সদস্যের দাবি, “এই চুক্তির মধ্য দিয়ে পাহাড়ে বৈষম্য এবং বিভেদ বাড়ার পাশাপাশি পাহাড়িদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বেড়েছে। চুক্তির পর পাহাড়ে অস্ত্রের ব্যবহার আরো বেড়েছে।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, “শেখ হাসিনা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার লোভে বৈষম্য সৃষ্টিকারী শান্তি চুক্তি করেছিল। বাঙালিরা যেমন বৈষম্যের শিকার হয়েছিল, তেমনই পাহাড়িদের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বেড়েছে। বিএনপির শাসনামলে কোনো আঞ্চলিক সংগঠনের সৃষ্টি হয়নি। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করব- যাতে চুক্তি বাতিল করা হয়।”

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার বাণী

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বছর উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন, “পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ওই এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এই চুক্তি হয়।

“চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক, অবকাঠামো ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন চলমান রয়েছে। পার্বত্য জেলাসমূহে অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য আমি দলমত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই।”

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেছেন, দেশের মোট আয়তনের এক-দশমাংশ এলাকায় পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাই পার্বত্য অঞ্চলকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। “পার্বত্য জেলাসমূহের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ ও পর্যটন শিল্পের প্রসারে স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বেকারত্ব হ্রাস পাবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং জীবনযাত্রার উন্নতি ও সামাজিক বৈষম্য দূর হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল অধিবাসীর জীবনে শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির অভিযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”