ঢাকা ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুব এশিয়া কাপজয়ী অধিনায়ক আজিজুলের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন

অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জিতে দেশে ফেরার পর থেকেই ব্যস্ততার শেষ নেই আজিজুল হাকিম তামিমের। মঙ্গলবার বিসিবির মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়েই এনসিএল টি-টোয়েন্টি খেলতে তিনি উড়াল দেন সিলেটের পথে। পরদিন বড়দের ক্রিকেটেও যাত্রা শুরু হয়ে যায় যুব এশিয়া কাপজয়ী অধিনায়কের।

স্বীকৃত ক্রিকেটে নিজের প্রথম ম্যাচেই বুধবার চমৎকার ব্যাটিংয়ে প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে দেন তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। উইকেটের চার দিকে দারুণ সব শটে খুলনার হয়ে খেলেন ৩১ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। যুব এশিয়া কাপে ইতিহাসগড়া সেঞ্চুরির পাশাপাশি দুটি ফিফটিতে ১২০ গড়ে ২৪০ রানের সাফল্য তো এখনও টাটকা।

বয়স মাত্র ১৭ হলেও ব্যাটিংয়ের মতো তার চিন্তাভাবনা আর কথাবার্তায়ও পরিপক্বতার ছাপ স্পষ্ট। বুধবার রাতে  দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি শোনালেন ক্রিকেট শুরুর গল্প, সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনা, তামিম ইকবালের সঙ্গে নামের মিল, ভিরাট কোহলিকে আদর্শ মেনে এগিয়ে চলাসহ আরও অনেক কিছু।

সাফল্য দিয়েই শুরু করা যাক। আপনার নেতৃত্বে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে নিজেও দুর্দান্ত টুর্নামেন্ট কাটালেন। আনন্দ বা তৃপ্তি কতটা?

আজিজুল হাকিম তামিম: আলহামদুলিল্লাহ্। যা কিছুই করি, লক্ষ্য একটাই থাকে, যে কোনো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেটা অর্জন করার আনন্দ আসলে বলার কিছু নেই। নিজে রান করায় আনন্দটা আরও বেড়েছে।

দলের সবাই অনেক দিন ধরে অনেক কষ্ট করেছি। আগের সিরিজেও (সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে) সব ম্যাচ জিতেছি। সবার কষ্টের ফল পাওয়ায় বেশি ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে আনন্দ অনেক বেশি।

আমাদের সবার চিন্তাভাবনা মূলত বিশ্বকাপ ঘিরেই। ওই টুর্নামেন্টে ভালো করার জন্য নিজেদের তৈরি করাই এখন মূল দায়িত্ব।

যুব বিশ্বকাপের এখনও বছর দেড়েক বাকি। কোন পরিকল্পনায় এগোচ্ছেন?

আজিজুল: পরিকল্পনা বলতে, আমরা সবাই পরিশ্রম তো করছি। সামনে খেলা আছে আরও। এই সময়ে আরেকটা এশিয়া কাপও হবে সম্ভবত। আমরা ওইভাবেই কষ্ট করছি। মূল লক্ষ্য অবশ্যই বিশ্বকাপ।

রিচার্ড ভাই (স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ রিচার্ড স্টইনিয়ের) আছেন, কোচিং স্টাফের আরও যারা আছেন, সবাই মিলে আমাদের নিয়ে অনেক কাজ করছেন। আরেকটা বিশ্বকাপ জেতার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাকিটা দেখা যাক।

এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আপনাকে মনে হচ্ছিল একটু বেশিই আগ্রাসী। ব্যাটিংয়ে যেমন, তেমনি শরীরী ভাষাতেও। ওদের সঙ্গে কি মাঠে কিছু চলছিল তখন?

আজিজুল: (হাসি) ওই ম্যাচে আমাদের লক্ষ্য বেশি ছিল না। কিন্তু ওরা শুরু থেকেই অনেক স্লেজিং করছিল। নানা ধরনের কথা বলছিল। আমি একটা ফ্রি হিটে রান করতে না পারায় বোলার (আলি রাজা) বলতে শুরু করে, ‘কিরে বল দেখেছিস?’ আশপাশের ফিল্ডাররাও স্লেজিং করতে থাকে। আমার রাগ হচ্ছিল খুব।

এক বল পর ছক্কা মেরে তাই আমিও বোলারকে পাল্টা জবাব দেই, ‘কিরে, বল কই গেল, তুই দেখেছিস?’ পরের বলে আরেকটি ছক্কা মেরেছিলাম। পরে তো দ্রুতই ম্যাচ জিতে যাই। ওদের টানা স্লেজিংয়ের কারণে জবাব দেওয়ার জেদ কাজ করছিল। ছক্কা মারতে পেরে তখন অনেক আনন্দ লেগেছে (হাসি)।

এত দিন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছেন। এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে বড়দের মঞ্চেও অভিষেক হয়ে গেছে। প্রথম ম্যাচে ৪টি ছক্কা মেরেছেন, ৩১ বলে ৫৩ রান করেছেন। মাঠে নামার সময়, ব্যাটিংয়ের সময় রোমাঞ্চটা কেমন ছিল?

আজিজুল: ক্রিকেটে দেখুন, কোনো ছোট-বড় নেই। অভিজ্ঞতার একটা বিষয় অবশ্যই আছে। তবে ক্রিকেটে ছোট-বড় কিছু নেই। দেখবেন ভারতের বা অন্য দেশের তরুণ যারাই অভিষেক করছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, নেমেই সেঞ্চুরি করছে।

এটা ঠিক যে আমি এত দিন যে পর্যায়ে খেলেছি তার চেয়ে এখন মাত্রাটা একটু বেশি। তবে আমি চিন্তাভাবনা সেভাবেই করে রেখেছিলাম যে, মাঠে নামার সুযোগ পেলে ভালো কিছু করব।

দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে কেমন বার্তা পেলেন?

আজিজুল: ম্যাচের আগে আমাদের টিম মিটিং হয়েছে। সবাই বলেছে বেশি কিছু চিন্তা না করে স্বাভাবিক থাকতে, নিজের স্বাভাবিক খেলাটা যেন খেলি। সবার জন্য একটা পরিকল্পনা দেওয়া ছিল। আমি যেন চাপ না নেই, স্বাধীনভাবে ব্যাটিং করতে পারি সেদিকে জোর দিয়েছে সবাই। এখন তো এটা সিনিয়র ক্রিকেট, সবাই জানে কার কী দায়িত্ব। আমিও সেভাবে চেষ্টা করেছি দলের জন্য নিজের দায়িত্বটা যেন পালন করতে পারি।

ক্রিকেটের সঙ্গে বন্ধনের শুরুটা বলুন। আপনি নাকি অনেক ছোট থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু করেছেন…!

আজিজুল: হ্যাঁ… আমার বয়স তখন সম্ভবত ৯ বছর। সারা দিন ক্রিকেট-ক্রিকেট করি দেখে চতুর্থ শ্রেণিতে থাকতে বাবা ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। এরপর ধীরে ধীরে বয়সভিত্তিক সবগুলো ধাপ… অনূর্ধ্ব-১২, অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ পার করি। আমি অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭তেও জাতীয় পর্যায়ে ছিলাম। এখন অনূর্ধ্ব-১৮ পার করে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে এলাম।

পরিবার থেকে সমর্থন কেমন পেয়েছেন? বাবা-মাকে রাজি করাতে বেগ পেতে হয়েছে?

আজিজুল: শুরুর দিকে তো কিছুটা সংশয় ছিলোই সবার। আব্বুকে শুধু বলেছিলাম যে, আমি ক্রিকেটই খেলতে চাই। দেশের জন্য খেলতে চাই। পরে আব্বুই ভর্তি করিয়ে দেন। ধীরে ধীরে সব দিক থেকে প্রতিটা বিষয়েই তারা সমর্থন দিয়েছেন। তেমন সমস্যা হয়নি আমার।

এর মধ্যেই বেশ কয়েক বছর পার করেছেন ক্রিকেট খেলে। কখন মনে হলো যে ক্রিকেটারই হবেন?

আজিজুল: শুরুতে তো শুধু আনন্দের জন্যই খেলতাম। ছোট থাকতে অত কিছু বুঝতামও না। এমনকি অনূর্ধ্ব-১৪ পর্যায়েও যখন রান করি, তেমন কিছু মনে হয়নি। তখন মনে হতো, ক্রিকেট খেলতে পারছি, এটাই অনেক। ক্রিকেট খেলার আনন্দই তখন আমার কাছে সব ছিল। নিয়মিত অনুশীলন করি, মাঝেমধ্যে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলি, এভাবেই ভালো লাগছিল।

পরে অনূর্ধ্ব-১৪ পার করে যখন অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ে যাই, তখন মনে হলো, এখন তো সামনে সুযোগ আছে, জাতীয় দল আছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আছে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে আসার পর এখন বুঝতে পারছি সামনে অনেক সম্ভাবনা আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ আছে। তাই নিজেকে সেভাবেই তৈরি করার চেষ্টা করছি।

আপনার নামের শেষ অংশ বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় একজনের সঙ্গে মিল রয়েছে। তার সঙ্গে মিলিয়েই কি নাম রাখা হয়েছে নাকি এমনিতেই?

আজিজুল: আমি আসলে এটা নিশ্চিত বলতে পারছি না। কখনও জিজ্ঞেস করা হয়নি। তবে আব্বু রেখেছিলেন নামটা। হয়তো তামিম (ইকবাল) ভাইকে দেখেই আমার নামও রেখেছিলেন তামিম। তখন তামিম ভাই নতুন এসেছিলেন জাতীয় দলে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভালো করেছিলেন। হয়তো সেজন্যই আব্বু মিল রেখে নামটা রেখেছিলেন।

তামিম ইকবালের মতো আপনিও বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তাকে অনুসরণ করা হয়?

আজিজুল: তামিম ভাই তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিংবদন্তি। ওপেনার হিসেবে তিনি অনেক রেকর্ড করেছেন। আমিও ওপেনারই ছিলাম। দলের প্রয়োজনে এখন তিন-চার নম্বরেও খেলি।

সত্যি কথা বলতে, আমি দেখি তার ব্যাটিং। অনেক ভালো ভালো ইনিংস খেলেছেন তিনি। একটা দুইশ করেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের মাঠেই (খুলনায়)। লর্ডসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। আমি অনেকবার হাইলাইটস দেখেছি।

অনুসরণের কথা জিজ্ঞেস করলে, আমি সত্যি বলতে ভিরাট কোহলির ব্যাটিং অনুসরণের চেষ্টা করি। তিনি বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার আমার কাছে।

ভিরাট কোহলিকে আদর্শ মেনেই তাহলে এগোচ্ছেন?

আজিজুল: হ্যাঁ… ভিরাট কোহলি। সাচিন টেন্ডুলকারের ব্যাটিংও অনেক ভালো লাগে।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই মূলত ভবিষ্যতের জন্য নিজের ভিত গড়তে হয়। নিজের ব্যাটিংয়ে কোন কোচের অবদান বেশি মনে করেন?

আজিজুল: সবার আগে আমি বলব যশোরের আজিম স্যারের (আজিজুল হক আজিম) কথা। ব্যাট ধরা থেকে শুরু করে অনেক কিছু শিখিয়েছেন তিনি। অনূর্ধ্ব-১৭তে যখন সুযোগ পাই (আব্দুল করিম) জুয়েল স্যার অনেক কাজ করেছেন আমার সঙ্গে।

এখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সেলিম স্যার (মোহাম্মদ সেলিম) আছেন, হেড কোচ (নাভিদ) নাওয়াজ স্যারও অনেক ভালো।

আর আমি একটা কথা বলতে চাই, সেলিম স্যার আমার জন্য খুব ভালো কোচ। তিনি আমার ব্যাটিং পুরোপুরি বুঝতে পেরেছেন। আমার সঙ্গে বন্ধুর মতো করে মিশে সবকিছু ধরিয়ে দেন। আমাকে বুঝে ফেলেছেন তিনি। তার কাছ থেকে আমি অনেক কিছুই শিখেছি।

শেষ করার আগে একটু অন্য বিষয়ে কথা বলা যাক। আপনি এখনও স্কুলের গণ্ডি পার হননি। খেলার ব্যস্ততার পাশাপাশি পড়াশোনাও ঠিক রাখার চ্যালেঞ্জ কেমন টের পাচ্ছেন?

আজিজুল: (হাসি) হ্যাঁ, আমি যশোর শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেব। আশা করি, খেলা ও পড়াশোনা ভালোভাবেই চালিয়ে নিতে পারব। দোয়া করবেন।

ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে যুব এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

জনপ্রিয় সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

যুব এশিয়া কাপজয়ী অধিনায়ক আজিজুলের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন

আপডেট সময় ১০:৫৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জিতে দেশে ফেরার পর থেকেই ব্যস্ততার শেষ নেই আজিজুল হাকিম তামিমের। মঙ্গলবার বিসিবির মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়েই এনসিএল টি-টোয়েন্টি খেলতে তিনি উড়াল দেন সিলেটের পথে। পরদিন বড়দের ক্রিকেটেও যাত্রা শুরু হয়ে যায় যুব এশিয়া কাপজয়ী অধিনায়কের।

স্বীকৃত ক্রিকেটে নিজের প্রথম ম্যাচেই বুধবার চমৎকার ব্যাটিংয়ে প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে দেন তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। উইকেটের চার দিকে দারুণ সব শটে খুলনার হয়ে খেলেন ৩১ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। যুব এশিয়া কাপে ইতিহাসগড়া সেঞ্চুরির পাশাপাশি দুটি ফিফটিতে ১২০ গড়ে ২৪০ রানের সাফল্য তো এখনও টাটকা।

বয়স মাত্র ১৭ হলেও ব্যাটিংয়ের মতো তার চিন্তাভাবনা আর কথাবার্তায়ও পরিপক্বতার ছাপ স্পষ্ট। বুধবার রাতে  দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি শোনালেন ক্রিকেট শুরুর গল্প, সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনা, তামিম ইকবালের সঙ্গে নামের মিল, ভিরাট কোহলিকে আদর্শ মেনে এগিয়ে চলাসহ আরও অনেক কিছু।

সাফল্য দিয়েই শুরু করা যাক। আপনার নেতৃত্বে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে নিজেও দুর্দান্ত টুর্নামেন্ট কাটালেন। আনন্দ বা তৃপ্তি কতটা?

আজিজুল হাকিম তামিম: আলহামদুলিল্লাহ্। যা কিছুই করি, লক্ষ্য একটাই থাকে, যে কোনো টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সেটা অর্জন করার আনন্দ আসলে বলার কিছু নেই। নিজে রান করায় আনন্দটা আরও বেড়েছে।

দলের সবাই অনেক দিন ধরে অনেক কষ্ট করেছি। আগের সিরিজেও (সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে) সব ম্যাচ জিতেছি। সবার কষ্টের ফল পাওয়ায় বেশি ভালো লেগেছে। সব মিলিয়ে আনন্দ অনেক বেশি।

আমাদের সবার চিন্তাভাবনা মূলত বিশ্বকাপ ঘিরেই। ওই টুর্নামেন্টে ভালো করার জন্য নিজেদের তৈরি করাই এখন মূল দায়িত্ব।

যুব বিশ্বকাপের এখনও বছর দেড়েক বাকি। কোন পরিকল্পনায় এগোচ্ছেন?

আজিজুল: পরিকল্পনা বলতে, আমরা সবাই পরিশ্রম তো করছি। সামনে খেলা আছে আরও। এই সময়ে আরেকটা এশিয়া কাপও হবে সম্ভবত। আমরা ওইভাবেই কষ্ট করছি। মূল লক্ষ্য অবশ্যই বিশ্বকাপ।

রিচার্ড ভাই (স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ রিচার্ড স্টইনিয়ের) আছেন, কোচিং স্টাফের আরও যারা আছেন, সবাই মিলে আমাদের নিয়ে অনেক কাজ করছেন। আরেকটা বিশ্বকাপ জেতার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাকিটা দেখা যাক।

এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আপনাকে মনে হচ্ছিল একটু বেশিই আগ্রাসী। ব্যাটিংয়ে যেমন, তেমনি শরীরী ভাষাতেও। ওদের সঙ্গে কি মাঠে কিছু চলছিল তখন?

আজিজুল: (হাসি) ওই ম্যাচে আমাদের লক্ষ্য বেশি ছিল না। কিন্তু ওরা শুরু থেকেই অনেক স্লেজিং করছিল। নানা ধরনের কথা বলছিল। আমি একটা ফ্রি হিটে রান করতে না পারায় বোলার (আলি রাজা) বলতে শুরু করে, ‘কিরে বল দেখেছিস?’ আশপাশের ফিল্ডাররাও স্লেজিং করতে থাকে। আমার রাগ হচ্ছিল খুব।

এক বল পর ছক্কা মেরে তাই আমিও বোলারকে পাল্টা জবাব দেই, ‘কিরে, বল কই গেল, তুই দেখেছিস?’ পরের বলে আরেকটি ছক্কা মেরেছিলাম। পরে তো দ্রুতই ম্যাচ জিতে যাই। ওদের টানা স্লেজিংয়ের কারণে জবাব দেওয়ার জেদ কাজ করছিল। ছক্কা মারতে পেরে তখন অনেক আনন্দ লেগেছে (হাসি)।

এত দিন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছেন। এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে বড়দের মঞ্চেও অভিষেক হয়ে গেছে। প্রথম ম্যাচে ৪টি ছক্কা মেরেছেন, ৩১ বলে ৫৩ রান করেছেন। মাঠে নামার সময়, ব্যাটিংয়ের সময় রোমাঞ্চটা কেমন ছিল?

আজিজুল: ক্রিকেটে দেখুন, কোনো ছোট-বড় নেই। অভিজ্ঞতার একটা বিষয় অবশ্যই আছে। তবে ক্রিকেটে ছোট-বড় কিছু নেই। দেখবেন ভারতের বা অন্য দেশের তরুণ যারাই অভিষেক করছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, নেমেই সেঞ্চুরি করছে।

এটা ঠিক যে আমি এত দিন যে পর্যায়ে খেলেছি তার চেয়ে এখন মাত্রাটা একটু বেশি। তবে আমি চিন্তাভাবনা সেভাবেই করে রেখেছিলাম যে, মাঠে নামার সুযোগ পেলে ভালো কিছু করব।

দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে কেমন বার্তা পেলেন?

আজিজুল: ম্যাচের আগে আমাদের টিম মিটিং হয়েছে। সবাই বলেছে বেশি কিছু চিন্তা না করে স্বাভাবিক থাকতে, নিজের স্বাভাবিক খেলাটা যেন খেলি। সবার জন্য একটা পরিকল্পনা দেওয়া ছিল। আমি যেন চাপ না নেই, স্বাধীনভাবে ব্যাটিং করতে পারি সেদিকে জোর দিয়েছে সবাই। এখন তো এটা সিনিয়র ক্রিকেট, সবাই জানে কার কী দায়িত্ব। আমিও সেভাবে চেষ্টা করেছি দলের জন্য নিজের দায়িত্বটা যেন পালন করতে পারি।

ক্রিকেটের সঙ্গে বন্ধনের শুরুটা বলুন। আপনি নাকি অনেক ছোট থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু করেছেন…!

আজিজুল: হ্যাঁ… আমার বয়স তখন সম্ভবত ৯ বছর। সারা দিন ক্রিকেট-ক্রিকেট করি দেখে চতুর্থ শ্রেণিতে থাকতে বাবা ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। এরপর ধীরে ধীরে বয়সভিত্তিক সবগুলো ধাপ… অনূর্ধ্ব-১২, অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ পার করি। আমি অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭তেও জাতীয় পর্যায়ে ছিলাম। এখন অনূর্ধ্ব-১৮ পার করে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে এলাম।

পরিবার থেকে সমর্থন কেমন পেয়েছেন? বাবা-মাকে রাজি করাতে বেগ পেতে হয়েছে?

আজিজুল: শুরুর দিকে তো কিছুটা সংশয় ছিলোই সবার। আব্বুকে শুধু বলেছিলাম যে, আমি ক্রিকেটই খেলতে চাই। দেশের জন্য খেলতে চাই। পরে আব্বুই ভর্তি করিয়ে দেন। ধীরে ধীরে সব দিক থেকে প্রতিটা বিষয়েই তারা সমর্থন দিয়েছেন। তেমন সমস্যা হয়নি আমার।

এর মধ্যেই বেশ কয়েক বছর পার করেছেন ক্রিকেট খেলে। কখন মনে হলো যে ক্রিকেটারই হবেন?

আজিজুল: শুরুতে তো শুধু আনন্দের জন্যই খেলতাম। ছোট থাকতে অত কিছু বুঝতামও না। এমনকি অনূর্ধ্ব-১৪ পর্যায়েও যখন রান করি, তেমন কিছু মনে হয়নি। তখন মনে হতো, ক্রিকেট খেলতে পারছি, এটাই অনেক। ক্রিকেট খেলার আনন্দই তখন আমার কাছে সব ছিল। নিয়মিত অনুশীলন করি, মাঝেমধ্যে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলি, এভাবেই ভালো লাগছিল।

পরে অনূর্ধ্ব-১৪ পার করে যখন অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায়ে যাই, তখন মনে হলো, এখন তো সামনে সুযোগ আছে, জাতীয় দল আছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আছে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে আসার পর এখন বুঝতে পারছি সামনে অনেক সম্ভাবনা আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ আছে। তাই নিজেকে সেভাবেই তৈরি করার চেষ্টা করছি।

আপনার নামের শেষ অংশ বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় একজনের সঙ্গে মিল রয়েছে। তার সঙ্গে মিলিয়েই কি নাম রাখা হয়েছে নাকি এমনিতেই?

আজিজুল: আমি আসলে এটা নিশ্চিত বলতে পারছি না। কখনও জিজ্ঞেস করা হয়নি। তবে আব্বু রেখেছিলেন নামটা। হয়তো তামিম (ইকবাল) ভাইকে দেখেই আমার নামও রেখেছিলেন তামিম। তখন তামিম ভাই নতুন এসেছিলেন জাতীয় দলে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভালো করেছিলেন। হয়তো সেজন্যই আব্বু মিল রেখে নামটা রেখেছিলেন।

তামিম ইকবালের মতো আপনিও বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তাকে অনুসরণ করা হয়?

আজিজুল: তামিম ভাই তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিংবদন্তি। ওপেনার হিসেবে তিনি অনেক রেকর্ড করেছেন। আমিও ওপেনারই ছিলাম। দলের প্রয়োজনে এখন তিন-চার নম্বরেও খেলি।

সত্যি কথা বলতে, আমি দেখি তার ব্যাটিং। অনেক ভালো ভালো ইনিংস খেলেছেন তিনি। একটা দুইশ করেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের মাঠেই (খুলনায়)। লর্ডসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। আমি অনেকবার হাইলাইটস দেখেছি।

অনুসরণের কথা জিজ্ঞেস করলে, আমি সত্যি বলতে ভিরাট কোহলির ব্যাটিং অনুসরণের চেষ্টা করি। তিনি বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার আমার কাছে।

ভিরাট কোহলিকে আদর্শ মেনেই তাহলে এগোচ্ছেন?

আজিজুল: হ্যাঁ… ভিরাট কোহলি। সাচিন টেন্ডুলকারের ব্যাটিংও অনেক ভালো লাগে।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই মূলত ভবিষ্যতের জন্য নিজের ভিত গড়তে হয়। নিজের ব্যাটিংয়ে কোন কোচের অবদান বেশি মনে করেন?

আজিজুল: সবার আগে আমি বলব যশোরের আজিম স্যারের (আজিজুল হক আজিম) কথা। ব্যাট ধরা থেকে শুরু করে অনেক কিছু শিখিয়েছেন তিনি। অনূর্ধ্ব-১৭তে যখন সুযোগ পাই (আব্দুল করিম) জুয়েল স্যার অনেক কাজ করেছেন আমার সঙ্গে।

এখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সেলিম স্যার (মোহাম্মদ সেলিম) আছেন, হেড কোচ (নাভিদ) নাওয়াজ স্যারও অনেক ভালো।

আর আমি একটা কথা বলতে চাই, সেলিম স্যার আমার জন্য খুব ভালো কোচ। তিনি আমার ব্যাটিং পুরোপুরি বুঝতে পেরেছেন। আমার সঙ্গে বন্ধুর মতো করে মিশে সবকিছু ধরিয়ে দেন। আমাকে বুঝে ফেলেছেন তিনি। তার কাছ থেকে আমি অনেক কিছুই শিখেছি।

শেষ করার আগে একটু অন্য বিষয়ে কথা বলা যাক। আপনি এখনও স্কুলের গণ্ডি পার হননি। খেলার ব্যস্ততার পাশাপাশি পড়াশোনাও ঠিক রাখার চ্যালেঞ্জ কেমন টের পাচ্ছেন?

আজিজুল: (হাসি) হ্যাঁ, আমি যশোর শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেব। আশা করি, খেলা ও পড়াশোনা ভালোভাবেই চালিয়ে নিতে পারব। দোয়া করবেন।

ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে যুব এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ