পাঠ্যবই থেকে আদিবাসী গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মতিঝিলে এনসিটিবির সামনে হাতাহাতি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে দুপক্ষের লোকজন আহত হয়। আজ বিকেলে মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমেনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে পুলিশ দুপক্ষকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। পরে আদিবাসী ছাত্রজনতার সংগঠক অলিক মৃ গণমাধ্যমকে জানান, স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির হামলায় তাদের ১১ জন আহত হন। অন্যদিকে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া দাবি করেন, সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতার হামলায় ১৪ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
তবে, পরিদর্শক মোহাইমেনুল ইসলাম দাবি করেছেন, দুপক্ষই মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। খুব জোর দুপক্ষের তিন-চারজন আহত হয়েছেন। এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত। ঘটনাস্থল থেকে সবাই চলে গেছেন।
জানা গেছে, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এর প্রতিবাদে বুধবার বেলা ১১টায় পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। পরে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ও একইসময়ে পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাও করতে যায়।
সেই ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা। পরে তারা রোকেয়া হল হয়ে কলাভবন ও মধুর ক্যান্টিন প্রদক্ষিণ করে এনসিটিবি ভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
অন্যদিকে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র সদস্যরা বেলা ১১টার দিকেই মতিঝিলে পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ সেখানে পৌঁছালে তৈরি হয় উত্তেজনা। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতি ও সংঘর্ষে রূপ নেয়। তখন পুলিশ দুপক্ষের মাঝে অবস্থান নেয়। এরপর এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।
এ পর্যায়ে পুলিশ দুপক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে আদিবাসী ছাত্র জনতা দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’র সদস্যরা এরপরও লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। কিন্তু, কিছুক্ষণ পর তারাও সেখান থেকে সরে যায়।
এর আগে রাজু ভাস্কর্যে আদিবাসী ছাত্র জনতার সমাবেশে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, একদল বিচ্ছিন্নতাবাদীর চাপে পড়ে তারা সেই গ্ৰাফিতি মুছে ফেলেছে। আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আখ্যা দিয়েছে। এনসিটিবি কী রাষ্ট্র চালায় নাকি সরকার রাষ্ট্র চালায়? আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আপনাদের যেমন অধিকার আছে, আমাদেরও সেই অধিকার আছে। কিন্তু উল্টো আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে আখ্যা দিচ্ছেন তারা।
পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত ওই চিত্রকর্ম পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে অলিক মৃ বলেন, এখন থেকে পাঠ্যবইয়ে আদিবাসীদের যথাযথ মর্যাদা থাকতে হবে।
অন্যদিকে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, পাঠ্যবইয়ের কভার পৃষ্ঠার রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ যুক্ত অখণ্ড ভারতের কল্পিত গ্রাফিতিটি বাদ দেওয়ায় আমাদের আংশিক দাবি পূরণ হয়েছে মাত্র। কিন্তু, পরিমার্জন কমিটিতে থাকা রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদকে অপসারণ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি ছিল। এনসিটিবি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল আমাদের দাবি মেনে নেবে, তদন্ত কমিটি করবে। কিন্তু এখনো আমাদের এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আমরা পুনরায় বিক্ষোভ সমাবেশ এবং এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।
বিতর্কিত ভূমিকায় জড়িত সব কর্মকর্তাকে ধরা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা