ঢাকা ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যে কারণে বিএনপির পক্ষে বাজি ধরছে ভারত

প্রতিবেশী ভারতকে নিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে একটা কথা চালু আছে, যে তারা সে দেশে এতকাল ‘সব ডিম শুধু একটি ঝুড়িতেই রেখেছে’ – মানে শুধু একটি দলের সঙ্গেই তাদের সম্পর্ক ছিল, আর সেটা আওয়ামী লীগ। সে দেশের অপর প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, বিএনপি-কে নিয়ে ভারতের যে কোনও কারণেই হোক একটা যে ‘সমস্যা’ ছিল, সে কথাও সুবিদিত।

দিল্লিতে নেতা-মন্ত্রী-কূটনীতিকরা অবশ্য যুক্তি দেন অতীতে বিএনপি শাসনামলের অভিজ্ঞতা ভারতের জন্য তেমন ভালো ছিল না বলেই দু’পক্ষের মধ্যে আস্থা বা ভরসার সম্পর্ক সেভাবে গড়ে ওঠেনি।

আবার উল্টোদিকে বিএনপির পাল্টা বক্তব্য, তারা বাংলাদেশে ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি’র বিরোধী এবং যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সমান মর্যাদার ভিত্তিতে দেখতে চায় – কিন্তু তাই বলে তাদের ভারত-বিরোধী বলে চিহ্নিত করার কোনও যুক্তি নেই।

এই বাস্তবতার পরও এটা ঘটনা, ২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি প্রথমবারের মতো ভারতের ক্ষমতায় আসে, বিএনপির তরফে সম্পর্কের এই শীতলতা দূর করার একটা সক্রিয় উদ্যোগ লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

সম্ভবত বিএনপির ধারণা ছিল, যে কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রায় ঐতিহাসিক একটা সুসম্পর্ক রয়েছে, তাদের শাসনের অবসানের পর দক্ষিণপন্থি বিজেপির সঙ্গে বিএনপির মধ্যে একটা নতুন সমীকরণের সূচনা হতে পারে।

উল্টোদিকে প্রায় রেকর্ড সময়ের মধ্যে জমাট বেঁধেছে নরেন্দ্র মোদী আর শেখ হাসিনার ‘পার্সোনাল কেমিস্ট্রি’ বা ব্যক্তিগত রসায়ন, মজবুত হয়েছে দুই সরকারের সম্পর্ক।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশের পরপর তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ভারতের ‘চোখ বন্ধ করে’ আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থনের ঘটনাও দিল্লির প্রতি বিএনপি-র অবিশ্বাসকে বদ্ধমূল করেছিল।

কিন্তু ২০২৪-র ৫ই অগাস্ট বাংলাদেশে যে নাটকীয় পটপরিবর্তন ঘটে গেছে, সেই ঘটনাপ্রবাহ বিএনপি-র সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে একটা বাঁকবদলের অবকাশ তৈরি করেছে নিঃসন্দেহে!

দিল্লিতে রাজনীতি, নিরাপত্তা বা কূটনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের বিশেষ কয়েকটি ‘দাবি’ বা ‘প্রয়োজনে’ যদি বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে ভারতের দিক থেকেও বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার হাত বাড়াতে কোনও অসুবিধা থাকার কারণ নেই।

যেহেতু কোণঠাসা আওয়ামী লীগের দ্রুত রাজনৈতিকভাবে ফিরে আসার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির ভালো ফল করার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে – তাই খালেদা জিয়ার দলই যে ভারতের জন্য এই মুহূর্তে সেরা বাজি এবং সম্ভবত একমাত্র বাজি, সেটাও তারা কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই হোক বা অন্য যে কোনও কারণেই হোক, ভারত কিন্তু এখন স্থির করেছে নির্বাচনের আগে অন্তত বাংলাদেশের বিশেষ কোনও দলের প্রতিই প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানানো হবে না, বা থাকলেও অন্তত সেটা প্রকাশ করা হবে না।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ব্যাংককে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বৈঠকেও ঠিক এই বিষয়টির ওপরেই জোর দিয়েছেন এবং সে দেশে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে একরকম তাগাদা দিয়েছেন।

কী বার্তা দিতে চাচ্ছেন সেনাপ্রধান

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

যে কারণে বিএনপির পক্ষে বাজি ধরছে ভারত

আপডেট সময় ১১:৫৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

প্রতিবেশী ভারতকে নিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে একটা কথা চালু আছে, যে তারা সে দেশে এতকাল ‘সব ডিম শুধু একটি ঝুড়িতেই রেখেছে’ – মানে শুধু একটি দলের সঙ্গেই তাদের সম্পর্ক ছিল, আর সেটা আওয়ামী লীগ। সে দেশের অপর প্রধান রাজনৈতিক শক্তি, বিএনপি-কে নিয়ে ভারতের যে কোনও কারণেই হোক একটা যে ‘সমস্যা’ ছিল, সে কথাও সুবিদিত।

দিল্লিতে নেতা-মন্ত্রী-কূটনীতিকরা অবশ্য যুক্তি দেন অতীতে বিএনপি শাসনামলের অভিজ্ঞতা ভারতের জন্য তেমন ভালো ছিল না বলেই দু’পক্ষের মধ্যে আস্থা বা ভরসার সম্পর্ক সেভাবে গড়ে ওঠেনি।

আবার উল্টোদিকে বিএনপির পাল্টা বক্তব্য, তারা বাংলাদেশে ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি’র বিরোধী এবং যে কোনও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সমান মর্যাদার ভিত্তিতে দেখতে চায় – কিন্তু তাই বলে তাদের ভারত-বিরোধী বলে চিহ্নিত করার কোনও যুক্তি নেই।

এই বাস্তবতার পরও এটা ঘটনা, ২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি প্রথমবারের মতো ভারতের ক্ষমতায় আসে, বিএনপির তরফে সম্পর্কের এই শীতলতা দূর করার একটা সক্রিয় উদ্যোগ লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

সম্ভবত বিএনপির ধারণা ছিল, যে কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রায় ঐতিহাসিক একটা সুসম্পর্ক রয়েছে, তাদের শাসনের অবসানের পর দক্ষিণপন্থি বিজেপির সঙ্গে বিএনপির মধ্যে একটা নতুন সমীকরণের সূচনা হতে পারে।

উল্টোদিকে প্রায় রেকর্ড সময়ের মধ্যে জমাট বেঁধেছে নরেন্দ্র মোদী আর শেখ হাসিনার ‘পার্সোনাল কেমিস্ট্রি’ বা ব্যক্তিগত রসায়ন, মজবুত হয়েছে দুই সরকারের সম্পর্ক।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশের পরপর তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ভারতের ‘চোখ বন্ধ করে’ আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থনের ঘটনাও দিল্লির প্রতি বিএনপি-র অবিশ্বাসকে বদ্ধমূল করেছিল।

কিন্তু ২০২৪-র ৫ই অগাস্ট বাংলাদেশে যে নাটকীয় পটপরিবর্তন ঘটে গেছে, সেই ঘটনাপ্রবাহ বিএনপি-র সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে একটা বাঁকবদলের অবকাশ তৈরি করেছে নিঃসন্দেহে!

দিল্লিতে রাজনীতি, নিরাপত্তা বা কূটনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের বিশেষ কয়েকটি ‘দাবি’ বা ‘প্রয়োজনে’ যদি বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে ভারতের দিক থেকেও বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার হাত বাড়াতে কোনও অসুবিধা থাকার কারণ নেই।

যেহেতু কোণঠাসা আওয়ামী লীগের দ্রুত রাজনৈতিকভাবে ফিরে আসার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপির ভালো ফল করার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে – তাই খালেদা জিয়ার দলই যে ভারতের জন্য এই মুহূর্তে সেরা বাজি এবং সম্ভবত একমাত্র বাজি, সেটাও তারা কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই হোক বা অন্য যে কোনও কারণেই হোক, ভারত কিন্তু এখন স্থির করেছে নির্বাচনের আগে অন্তত বাংলাদেশের বিশেষ কোনও দলের প্রতিই প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানানো হবে না, বা থাকলেও অন্তত সেটা প্রকাশ করা হবে না।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ব্যাংককে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বৈঠকেও ঠিক এই বিষয়টির ওপরেই জোর দিয়েছেন এবং সে দেশে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে একরকম তাগাদা দিয়েছেন।

কী বার্তা দিতে চাচ্ছেন সেনাপ্রধান