বিপুল আয়োজন আর প্রত্যাশা নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু দলটি আত্মপ্রকাশের পর শুরু থেকেই দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এমন অবস্থায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে এরই মধ্যে দলের একজন যুগ্ম সদস্য সচিবকে দল থেকে অব্যাহতিও দেয়া হয়েছে।
গত বছর পাঠ্যবই ছাপানোর কাজে দুর্নীতি-অনিয়ম এবং জেলা প্রশাসক নিয়োগে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপের অভিযোগে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়।
গত মার্চে দলটির শীর্ষ নেতা সারজিস আলম নিজ এলাকায় বিশাল গাড়িবহর নিয়ে শোডাউন দেয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা তৈরি হয়।
চলতি মাসেই হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম দুদক চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা দেখা যায়।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের আসছে।
এ নিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপাদান আমাদের ভেতরও আসার চেষ্টা করছে। আমরা সেটাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনছি”।
এমন পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় শীর্ষ কয়েকজন নেতার বিলাসী জীবনযাপন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড কিংবা অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলীয় নেতারা।
সেখানে সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন নেতাদের নাম উল্লেখ না করলেও তাদের অভিযোগগুলো নিয়ে কথা বলেন কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ কেউ।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে নতুন দল হিসেবে যাত্রা শুরুর পরও কেন এসব অভিযোগ আসছে দলটির বিরুদ্ধে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, রাজনীতি করতে গেলে যে কৌশল ও পরিপক্বতা দরকার তা অনেক নেতার মধ্যেই নেই। যে কারণে শুরুতেই নতুন দলটিকে ঘিরে নানা বিতর্ক দেখা যাচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই শীর্ষ নেতা উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠন সারজিস আলম ও দক্ষিণের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।জুলাই অগাস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রথম সারির সমন্বয়ক ছিলেন তারা দু’জনই। আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের দু’জনই বেশ পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ পদ ও পরে এনসিপিরও গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তারা দুইজনই।
গত মার্চে ঈদের আগে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে নিজ এলাকা পঞ্চগড়ে শোডাউন দেন সারজিস আলম। তার এই গাড়িবহরের বিশাল শোডাউন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনা তৈরি হয়। তখন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা তাসনিম জারা বিষয়টির সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও করেন।
গত নয়ই এপ্রিল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম দুর্নীতি দমন কমিশনে যান। এই বিষয়টি নিয়ে তখন নানা ধরনের আলোচনা দেখা যায়। যদিও ওইদিন তারা দুইজন ওইদিনই গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন তারা ব্যক্তিগত কাজেই গিয়েছিলেন দুদকে।
এর আগেও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে এই দুইজন নেতা ফেসবুকে দুটি স্টাটাস দিলে তা নিয়ে বেশ বির্তক তৈরি হয় দল ও দলের বাইরে।
রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন কিংবা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ঘোষণা দিয়ে গত ফেব্রুয়ারির শেষে আত্মপ্রকাশ ঘটে তারুণ্য নির্ভর রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির।
কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের আগে ও পরে দলটির কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য কিংবা চাঁদাবাজির মতো অভিযোগ ওঠে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গত কয়েক মাসে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সোমবার তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মেডিকেল দলের সদস্য বর্তমান স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবীকে নিয়েও মন্ত্রণালয়ে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য কিংবা চাঁদাবাজির মতো অভিযোগও উঠছে এনসিপির কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশে গত তিন দশকে বেশ কিছু নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন এই দলটিকে ঘিরে নানা প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক নানা বিতর্কিত ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে শুরু থেকেই দলটির বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন উঠছে। জনগণের প্রশ্ন, এনসিপি কী তাহলে রাজনীতির সেই পুরোন পথে হাঁটছে?