বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বহু সংখ্যক থানায় হামলা হয়েছে। অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বত্তরা। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে থানা। ধ্বংস হয়ে গেছে আসবাবপত্র, মূল্যবান কাগজপত্র, যানবাহন। লুট হয়ে গেছে অনেককিছুই। এ সকল হামলায় মারা গেছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী আন্দোলনে চূড়ান্ত বিজয়ের পর থানাগুলোকে টার্গেট করে এ সব হামলা চালায়। থানার কর্মকর্তারা অনেকটা বাধ্য হয়ে সবাইকে নিয়ে থানা ত্যাগ করেন। ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকা। একযোগে সব থানা ফেলে পুলিশ সদস্যদের এভাবে থানা ছেড়ে চলে যাবার ঘটনা অতীতে বাংলাদেশে কখনো দেখা যায়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরণের ঘটনা বিরল। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এ ধরণের ঘটনা দেখা যায়।
ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলোকে দেখলে বোঝা মুশকিল এটি একটি থানা। আগুনে পুড়ে দেয়ালগুলো কালো হয়ে গেছে। ভেতরের কক্ষগুলোতে শুধুই ধ্বংসস্তূপ। থানার সামনে স্তূপ করে রাখা আছে পুলিশের কিছু পোশাক, কয়েক জোড়া বুট, কিছু বুলেট প্রুফ জ্যাকেট এবং আরো সরঞ্জাম। সব কিছুই অর্ধেকের মতো পোড়া, ব্যবহারের অনুপযুক্ত। আক্রান্ত থানার ধ্বংসস্তুপ দেখে অনুমান করা যায় পুলিশের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ কতটা পুঞ্জিভূত হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে ‘চরম অনাস্থা’ তৈরি হয়েছে ২০১২ সালে থেকে, যখন পুলিশ ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করা শুরু করে। এছাড়া পুলিশের আচরণগত সমস্যার কারণেও মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। হয়ত সেজন্যই এসব কিছুর বহিঃপ্রকাশ একসাথে হয়েছে।
তবে সাধারণ মানুষের মনে রয়েছে ভিন্ন মত। পুলিশ চলে যাওয়ায় এলাকায় চুরি, ডাকাতি বেড়েছিল। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ জনগণ। তাদের প্রশ্ন কবে ফিরে আসবে থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম, নিরাপদ আর আস্থার সাথে বাস করবে তারা।
নবনিযুক্ত আইজিপি’র নির্দেশে কাজে ফিরতে শুরু করেছে পুলিশ সদস্যরা। এখন যতদ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো, তাহলেই পুলিশের ওপর জনআস্থা ফিরে আসবে। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূলে থাক না কেন, পুলিশ সদস্যদের মাঠে যেতেই হবে। অন্তত তাদের শুরু করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে পুলিশের ওপর আস্থা রাখবে সাধারণ মানুষ। অনেকে মনে করেন, পুলিশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায় আছে। কারণ বহু বছর ধরে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
পুলিশ নিয়ে সার্বিকভাবে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ আছে সেগুলো নিরসনের জন্য পুলিশের সংস্কার করা জরুরী। যদিও কাজটি কঠিন, তবুও এই সংস্কার খুব দ্রুততার সাথে করতে হবে। বিক্ষোভের সময় যেসব জায়গায় পুলিশ বেশি শক্তি প্রয়োগ করেছে সেখানে পরিবর্তন আনতে হবে সবার আগে।
যেসব পুলিশ কর্মকর্তা পুলিশকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং অতীতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। না হলে পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরানো কঠিন হবে।
আরো পড়ুন : শেখ হাসিনার শেষ গন্তব্য কোথায়?