আগে ধারণা ছিল সাজগোজ শুধু নারীদের জন্য। পুরুষদের নাকি শুধু চুলে তেল মেখে, দাড়ি-গোঁফ ছেঁটে, গায়ে শার্ট-প্যান্ট পড়লেই চলবে। কিন্তু সময় বদলেছে।
এখন কর্মক্ষেত্র, সামাজিক আড্ডা, কিংবা ব্যক্তিগত সম্পর্ক সব জায়গায় পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি ও আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ অনেক পুরুষ এখনও গ্রুমিংকে সাজগোজ ভেবে গুলিয়ে ফেলছেন, অথবা নিজের যত্ন নেওয়াকে অবহেলা করছেন।
গ্রুমিং মানে হলো ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, ত্বকের যত্ন, চুল ও দাড়ি-গোঁফ ঠিক রাখা, নখ পরিষ্কার রাখা, পোশাক ও জুতোর পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। সব মিলিয়ে এক ধরনের সুস্থ অভ্যাস চর্চা করা। এর মধ্যে রয়েছে দৈনন্দিন গোসল, ডিওডোরেন্ট ব্যবহার, মুখ ধোয়া, চুল আঁচড়ানো, সঠিকভাবে শেভ করা বা দাড়ি ট্রিম করা, এমনকি দাঁতের যত্নও। সাজগোজ হয়তো ফ্যাশন বা রঙিন পোশাকের ব্যাপার, কিন্তু গ্রুমিং হলো নিজেকে পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ও গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপনের একটি প্রক্রিয়া।
বাংলাদেশে বা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে এখনও গ্রুমিং নিয়ে পুরুষদের মধ্যে সচেতনতা তুলনামূলক কম। কেউ সেলুনে নিজের একটু বাড়তি পরিচর্যা করতে গেলে, অনেকে ঠাট্টামূলক আচরণ করেন। এর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সামাজিক ভুল ধারণা। এশিয়ার দেশগুলোর অনেকে মনে করেন গ্রুমিং মানেই নারীসুলভ আচরণ। অনেকেই আত্মতুষ্টি থেকে মনে করেন ‘আমি যেমন আছি, ঠিক আছি’ এবং বাড়তি যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ব্যস্ত জীবনে সময়ের অভাবও অনেককে গ্রুমিং থেকে দূরে রাখে। তাছাড়া গ্রুমিং পদ্ধতি, পণ্য বা অভ্যাস নিয়ে অনেকেই সঠিকভাবে অবগত নন।
যারা গ্রুমিংয়ের গুরুত্ব বোঝেন, তারা জানেন এটি কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, সঙ্গে আত্মবিশ্বাস এবং পেশাগত সাফল্যের জন্যও জরুরি।
>> কর্মক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার, মিটিং বা ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি লুক প্রথম ইমপ্রেশনকে অনেক শক্তিশালী করে।
>> সামাজিক জীবনে আড্ডা, পারিবারিক অনুষ্ঠান বা পাবলিক ইভেন্টে পরিপাটি থাকা আপনাকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
>> একইসঙ্গে স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও গ্রুমিং জরুরি। কারণ নিয়মিত গোসল, ত্বক পরিষ্কার, নখ কাটা ও মুখের যত্ন জীবাণু সংক্রমণ ও চর্মরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
দৈনিক ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, নিয়মিত চুল ও দাড়ির যত্ন নেওয়া, ফেসওয়াশ ও সানস্ক্রিন ব্যবহার, নখ পরিষ্কার রাখা, এবং পোশাক ও জুতো পরিষ্কার রাখা এসবই সঠিক গ্রুমিংয়ের অংশ। এগুলো কেবল বাহ্যিক সাজ নয়, বরং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অপরিহার্য অভ্যাস।
গ্রুমিংকে সাজগোজ মনে করে অবহেলা করলে ক্ষতি নিজেরই। ঠিক যেমন আমরা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবার, ব্যায়াম বা চিকিৎসায় বিনিয়োগ করি, তেমনই গ্রুমিংও আমাদের আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বে বিনিয়োগ করা। তাই পুরুষদের উচিত এই ধারণা ভাঙা যে গ্রুমিং নারীদের জন্য। বরং এটি প্রতিটি মানুষের জন্য সমানভাবে জরুরি।
পুরুষদের পরিচ্ছন্নতা, ত্বক ও চুলের যত্ন এবং আত্ম-উপস্থাপনার সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, প্রতি বছরের আগস্টের তৃতীয় শুক্রবার; পালিত হয় ‘মেনস গ্রুমিং ডে’। তাই আজই গ্রুমিংকে শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় হিসেবে না, দেখে নিজের জীবনধারার অংশ করে নেওয়া জরুরি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকা মানে শুধু অন্যদের কাছে ভালো ইমপ্রেশন দেওয়া নয়, বরং নিজের প্রতি যত্নশীল ও সম্মান প্রদর্শন করা।
তথ্যসূত্র: ওয়ার্স অ্যান্ড আলপস ডট কম, বেলভিউ কলেজ ডট এডু, আমেরিকান ক্রু ডট কম, বি ক্লেভার ম্যান ডট কম, ডেস অফ দ্য ইয়ার