ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের শীর্ষ ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠান সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে বিশ্বনেতা, ক্যাথলিক কর্মকর্তা, বিশ্বজুড়ে শোকাহত ভক্ত-অনুসারীসহ লাখো মানুষ যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।
অনেক রাষ্ট্রপ্রধান ও রাজপরিবারের সদস্যরা পোপের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যার মধ্যে রয়েছেন প্রিন্স উইলিয়াম, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কায়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, স্পেনের রাজা ফিলিপ ষষ্ঠ ও রানি লেতিজিয়া এবং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা।
বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের ডানদিকে বসবেন ব্যাসিলিকার দিকে মুখ করে এবং আর্জেন্টিনা ও ইতালির রাষ্ট্রপ্রধানরা সামনের আসনে বসবেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কায়ার স্টারমার এক শোক বার্তায় পোপ ফ্রান্সিসের নেতৃত্বকে ‘সাহসী’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি ‘দরিদ্র, নিপীড়িত ও অবহেলিতদের’ পোপ।
নিয়ম অনুযায়ী প্রিন্স উইলিয়াম এবার তার বাবা রাজা তৃতীয় চার্লসের পক্ষে শেষকৃত্যে যোগ দেবেন। ২০০৫ সালে তিনি যখন প্রিন্স অব ওয়েলস ছিলেন, তখন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের পক্ষে পোপ জন পল দ্বিতীয়ের শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন।
এ মাসের শুরুতে ইতালিতে রাজকীয় সফরের সময় পোপের বাসভবন কাসা সান্তা মার্টায় তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলা।
রাজা পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘মানুষ ও পৃথিবী উভয়ের প্রতি তার মনোযোগের মাধ্যমে তিনি অনেকের জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছেন।’
পোপের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা ও ফার্স্ট লেডি শেষকৃত্যে যোগ দেবেন। ব্রাজিল বিশ্বের বৃহত্তম ক্যাথলিক জনসংখ্যার দেশ, যেখানে ১০ কোটিরও বেশি ক্যাথলিক রয়েছেন। গত সোমবার পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর খবরে লুলা সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন।
লুলা বলেন, বিশ্ব আজ অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্বাগত জানানোর এক কণ্ঠস্বর হারিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে পোপের সঙ্গে তার সাক্ষাতের বিষয়টি উল্লেখ করে লুলা বলেন, ‘আমরা শান্তি, সাম্য ও ন্যায়বিচারের আদর্শগুলো ভাগ করে নিতে পেরেছি, যা বিশ্বের সর্বদা প্রয়োজন ছিল এবং প্রয়োজন হবে।’
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ঘোষণা করেছেন, তিনি ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া পোপের শেষকৃত্যে যোগ দেবেন, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বিদেশ সফর।
পোপের মৃত্যুর খবরে ট্রাম্প প্রয়াত পোপের সম্মানে সব ফেডারেল ও অঙ্গরাজ্য পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন। তিনি পোপ ফ্রান্সিসকে ‘একজন খুব ভালো মানুষ’ বলে অভিহিত করে। ট্রাম্প বলেম, তিনি ‘বিশ্বকে ভালোবাসতেন’ এবং ‘তিনি বিশেষ করে এমন লোকদের ভালোবাসতেন, যারা কঠিন সময় পার করছিলেন’।
ফিলিপাইনের প্রসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র পোপের শেষকৃত্যে অংশ নেবেন। তিনি ফ্রান্সিসকে তাঁর দেখা ‘সেরা পোপ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘গভীর বিশ্বাস ও নম্রতার অধিকারী পোপ ফ্রান্সিস কেবল প্রজ্ঞার সঙ্গেই নয়, বরং সবার জন্য, বিশেষ করে দরিদ্র ও অবহেলিতদের জন্য উন্মুক্ত হৃদয় নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
ফিলিপাইন বিশ্বের অন্যতম ক্যাথলিক দেশ, যেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ ফিলিপিনো রোমান ক্যাথলিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন।
পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত হতে যাওয়া অন্যান্য বিশ্বনেতা ও রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা, ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইন, পোপ ফ্রান্সিসের নিজ দেশ আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলি, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেলা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট লুইস আবিনাদার, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ ও রানি ম্যাথিল্ড, ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোরান মিলানোভিচ, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া, আইরিশ প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন, মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্ডু নরওয়ের ক্রাউন প্রিন্স হাকন ও ক্রাউন প্রিন্সেস মেটে-মারিট লাটভিয়ার প্রেসিডেন্ট এডগারস রিঙ্কেভিকস, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন, সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ ও রানি সিলভিয়া এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
পাকিস্তান-ভারতকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ বজায় রাখার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের