ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিরুদ্ধে শান্তি আলোচনায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রুথ সোশালে দেওয়া এক বার্তায় ট্রাম্প দাবি করেন, যুদ্ধ বন্ধের একটি চুক্তি “খুব কাছাকাছি” ছিল, কিন্তু জেলেনস্কির আপোষহীন মনোভাব “এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত ছাড়া আর কিছুই করবে না”। খবর বিবিসির।
সম্প্রতি জেলেনস্কি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেন কখনোই রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়াকে স্বীকৃতি দেবে না। এরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন মন্তব্য করলেন।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, শান্তি চুক্তিতে বর্তমান নিয়ন্ত্রণ রেখাকে প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হবে। তবে ইউক্রেন বহুদিন ধরেই জানিয়ে আসছে, ২০১৪ সালে অবৈধভাবে দখলকৃত দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রিমিয়া কখনোই ছেড়ে দেওয়া হবে না।
ভ্যান্স বলেন, “চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়কেই কিছু কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হবে।”
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে, ক্রিমিয়া নিয়ে রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব স্বীকার করতে চায় কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, “আমি কাউকে পক্ষপাত দিতে চাই না। আমি শুধু যুদ্ধ শেষ হওয়া দেখতে চাই।”
জেলেনস্কি পাল্টা বলেন, “এ নিয়ে কোনো কথা বলার সুযোগই নেই। এটি আমাদের সংবিধানের বিরুদ্ধে।”
এই মন্তব্যের মধ্যেই ইউক্রেনের একাধিক অঞ্চলে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা হয়। হামলায় কিয়েভে ২১ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে তিন শিশু ও এক গর্ভবতী নারী রয়েছেন। ড্রোনের ধ্বংসাবশেষে আগুন ধরে যায় এবং একটি আবাসিক ভবনে মানুষ আটকে পড়ে।
এছাড়া পূর্ব ইউক্রেনের মারহানেতে একটি বাসে রুশ ড্রোন হামলায় অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের সম্পর্ক বরাবরই টানাপোড়েনের। ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
ট্রাম্প বুধবার বলেন, “আমি ভেবেছিলাম জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা সহজ হবে। এখন মনে হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা সহজ।” বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে আবারও দেখা করার ইঙ্গিত দেন।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি একদিনেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ১০০ দিন পূর্ণ হতে চললেও যুদ্ধবিরতির কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “প্রেসিডেন্ট হতাশ। তাঁর ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে।”
ভ্যান্স হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যদি আপোষে না আসে, তবে যুক্তরাষ্ট্র তার মধ্যস্থতা প্রত্যাহার করে নেবে।
এদিকে, যুক্তরাজ্যে আয়োজিত লন্ডন বৈঠকে মার্কো রুবিও ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ অংশ না নেওয়ায় আলোচনা দুর্বল হয়ে পড়ে। এখন জেনারেল কিথ কেলোগ লন্ডনে বৈঠকে অংশ নিলেও, উইটকফ চতুর্থবারের মতো রাশিয়ায় পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা একটি স্পষ্ট ম্যান্ডেট নিয়ে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে—যা একটি যুদ্ধবিরতির পথ খুলে দিতে পারে।
রাশিয়া বুধবার থেকে আবারও হামলা জোরদার করেছে, যদিও ইস্টার উপলক্ষে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলি জানান, “পুতিন একদিকে যুদ্ধবিরতির কথা বললেও, বাস্তবে তিনি হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।”
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে যুদ্ধ চলছেই। এতে কয়েক লাখ মানুষ হতাহত হয়েছেন এবং প্রায় ৭০ লাখ ইউক্রেনীয় বিশ্বজুড়ে শরণার্থী হয়ে আছেন।