ঢাকা ০৫:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যার পেছনের কারণ কী?

টেক্সাসের কেরভিলের গুয়াডালুপ নদীতে আকস্মিক বন্যার ফলে সৃষ্ট বন্যার একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে। ছবি: এএফপি

শিশুদের সামার ক্যাম্পসহ টেক্সাসের বিভিন্ন অবকাশযাপন এলাকায় যে ভয়াবহ বন্যা ধ্বংস নেমে আসে, তা ঘটে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোরে মেয়েরা এবং স্টাফরা যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন একপ্রকার কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই পানি ঢুকে পড়ে ক্যাম্প মিস্টিকের পাথরের কেবিনগুলোতে।

গুয়াডালুপ নদী মাত্র কয়েক ঘণ্টার অতিবৃষ্টিতে ভেসে যায়, যা কর্মকর্তারা “১০০ বছরের দুর্যোগ” বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এই দুর্যোগে টেক্সাসে এখন পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ২৭ জন ছিলেন সামার ক্যাম্পটির মেয়ে ও কর্মী। খবর বিবিসির।

সবুজ ছাদের কেবিনগুলোর ভেতর দিয়ে ছুটে যাওয়া প্রবল স্রোত ৮ বছর বয়সী শিশুর জীবন কেড়ে নিয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মাত্র ২৭ মিনিটের ব্যবধানে কীভাবে পানি বিপজ্জনক হারে বাড়তে থাকে।

এখনও যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের সন্ধান চলছে। তবে প্রশ্ন উঠছে—এত প্রাণহানি কি প্রতিরোধ করা যেত?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুর্যোগের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। চরম আবহাওয়া, ছুটির ঘরগুলোর অবস্থান এবং দুর্যোগের সময়কাল।

বলা হচ্ছে, মেক্সিকোতে বন্যা সৃষ্টি করা একটি ক্রান্তীয় ঝড়ের ফলে বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা সঞ্চিত ছিল, যা পরে টেক্সাসের দিকে সরেছে।

কার কাউন্টিতে অবস্থিত ক্যাম্পটি পার্বত্য এলাকায় হওয়ায় আর্দ্র বাতাস উর্ধ্বমুখী হয়ে বিশাল বজ্র মেঘ তৈরি করে—যেগুলো নিজেরাই একটি স্বতন্ত্র আবহাওয়া ব্যবস্থায় পরিণত হয় এবং প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি ঘটায়।

এই সিস্টেমটি ধীরগতির ছিল, ফলে একই স্থানে দীর্ঘ সময় ধরে ভারী বৃষ্টি ও বজ্রপাত হতে থাকে, বিশেষ করে গুয়াডালুপ নদী এলাকায়।

ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিউএস) জানায়, দক্ষিণ-মধ্য কার কাউন্টিতে মাত্র ৩ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে ৫-১০ ইঞ্চি (১২৫-২৫০ মিমি) বৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত কিছু এলাকায় প্রায় ২১ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

কেরভিল এলাকায় গত ২৫ বছরের জুলাই মাসের গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ২ ইঞ্চি, অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টায় প্রায় চার মাসের সমান বৃষ্টি হয়েছে।

সময়কাল ছিল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—বৃহস্পতিবার রাতে টেক্সানরা ঘুমিয়ে পড়েন, তখনো দুর্যোগের আভাস ছিল না। রাত ১২টার পরে ফ্লাড ওয়াচকে ফ্লাড ওয়ার্নিংয়ে রূপান্তর করা হয় এবং এরপর আসে ফ্ল্যাশ ফ্লাড ওয়ার্নিং।

কেরভিল সিটি ম্যানেজার ডালটন রাইস বলেন, ভোর সাড়ে ৩টায় তিনি নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। আধা ঘণ্টার মধ্যেই জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়—যেখানে বলা হয়, “বিশেষভাবে বিপজ্জনক পরিস্থিতি”।

ক্যাম্প মিস্টিক ছিল সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়া এলাকাগুলোর একটি। কার কাউন্টি অবকাশযাপনের জন্য বিখ্যাত হলেও, এর আরেক নাম—“ফ্ল্যাশ ফ্লাড অ্যালি”, যেখানে আকস্মিক বন্যা সাধারণ ঘটনা।

শুক্রবার ভোরে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি আশপাশের নদীগুলোয় প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় এবং নদীর কাছের নিচু এলাকা মুহূর্তেই প্লাবিত হয়ে পড়ে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, যারা মারা গেছেন বা নিখোঁজ, তাদের অনেকেই নদী তীর থেকে মাত্র ৫০০ ফুট (১৫২ মিটার) দূরের নিচু কেবিনে ছিলেন।

যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন, তাদেরকে সামরিক ট্রাকে করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়েছে। তারা বলছেন, পুরো ক্যাম্প চেনার অযোগ্য হয়ে গেছে—গাছ উপড়ে পড়েছে, কায়াক গাছে আটকে আছে, অনেকে পানির তোড়ে ভেসে গিয়েছেন।

রোববার যখন বিবিসির একটি টিম ক্যাম্পে পৌঁছে, তখন ক্যাম্পের প্রবেশদ্বার পুলিশ দিয়ে ঘেরা ছিল এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত একটি গেটহাউস পড়ে ছিল।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এখানে গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষ করে গালফ অব মেক্সিকোর সাগর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকায় বাষ্প বেশি তৈরি হয়েছে, যা ঝড়কে আরও তীব্র করেছে।

কোপার্নিকাস জলবায়ু পরিবর্তন পরিষেবা বলছে, ২০২৪ সাল ছিল এই ধরণের চরম বৃষ্টিপাতের জন্য রেকর্ড গড়ার বছর।

জলবায়ুবিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, ভবিষ্যতে এ ধরণের চরম ও আকস্মিক বৃষ্টি আরও ঘন ঘন ঘটবে, যদি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ না করা যায়।

টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় ৫০ জনের প্রাণহানি, নিখোঁজ ২৭

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যার পেছনের কারণ কী?

আপডেট সময় ১২:০৯:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

শিশুদের সামার ক্যাম্পসহ টেক্সাসের বিভিন্ন অবকাশযাপন এলাকায় যে ভয়াবহ বন্যা ধ্বংস নেমে আসে, তা ঘটে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ জুলাই) ভোরে মেয়েরা এবং স্টাফরা যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন একপ্রকার কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই পানি ঢুকে পড়ে ক্যাম্প মিস্টিকের পাথরের কেবিনগুলোতে।

গুয়াডালুপ নদী মাত্র কয়েক ঘণ্টার অতিবৃষ্টিতে ভেসে যায়, যা কর্মকর্তারা “১০০ বছরের দুর্যোগ” বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এই দুর্যোগে টেক্সাসে এখন পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ২৭ জন ছিলেন সামার ক্যাম্পটির মেয়ে ও কর্মী। খবর বিবিসির।

সবুজ ছাদের কেবিনগুলোর ভেতর দিয়ে ছুটে যাওয়া প্রবল স্রোত ৮ বছর বয়সী শিশুর জীবন কেড়ে নিয়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মাত্র ২৭ মিনিটের ব্যবধানে কীভাবে পানি বিপজ্জনক হারে বাড়তে থাকে।

এখনও যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের সন্ধান চলছে। তবে প্রশ্ন উঠছে—এত প্রাণহানি কি প্রতিরোধ করা যেত?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুর্যোগের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। চরম আবহাওয়া, ছুটির ঘরগুলোর অবস্থান এবং দুর্যোগের সময়কাল।

বলা হচ্ছে, মেক্সিকোতে বন্যা সৃষ্টি করা একটি ক্রান্তীয় ঝড়ের ফলে বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা সঞ্চিত ছিল, যা পরে টেক্সাসের দিকে সরেছে।

কার কাউন্টিতে অবস্থিত ক্যাম্পটি পার্বত্য এলাকায় হওয়ায় আর্দ্র বাতাস উর্ধ্বমুখী হয়ে বিশাল বজ্র মেঘ তৈরি করে—যেগুলো নিজেরাই একটি স্বতন্ত্র আবহাওয়া ব্যবস্থায় পরিণত হয় এবং প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি ঘটায়।

এই সিস্টেমটি ধীরগতির ছিল, ফলে একই স্থানে দীর্ঘ সময় ধরে ভারী বৃষ্টি ও বজ্রপাত হতে থাকে, বিশেষ করে গুয়াডালুপ নদী এলাকায়।

ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিউএস) জানায়, দক্ষিণ-মধ্য কার কাউন্টিতে মাত্র ৩ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে ৫-১০ ইঞ্চি (১২৫-২৫০ মিমি) বৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত কিছু এলাকায় প্রায় ২১ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

কেরভিল এলাকায় গত ২৫ বছরের জুলাই মাসের গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ২ ইঞ্চি, অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টায় প্রায় চার মাসের সমান বৃষ্টি হয়েছে।

সময়কাল ছিল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—বৃহস্পতিবার রাতে টেক্সানরা ঘুমিয়ে পড়েন, তখনো দুর্যোগের আভাস ছিল না। রাত ১২টার পরে ফ্লাড ওয়াচকে ফ্লাড ওয়ার্নিংয়ে রূপান্তর করা হয় এবং এরপর আসে ফ্ল্যাশ ফ্লাড ওয়ার্নিং।

কেরভিল সিটি ম্যানেজার ডালটন রাইস বলেন, ভোর সাড়ে ৩টায় তিনি নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। আধা ঘণ্টার মধ্যেই জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়—যেখানে বলা হয়, “বিশেষভাবে বিপজ্জনক পরিস্থিতি”।

ক্যাম্প মিস্টিক ছিল সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়া এলাকাগুলোর একটি। কার কাউন্টি অবকাশযাপনের জন্য বিখ্যাত হলেও, এর আরেক নাম—“ফ্ল্যাশ ফ্লাড অ্যালি”, যেখানে আকস্মিক বন্যা সাধারণ ঘটনা।

শুক্রবার ভোরে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি আশপাশের নদীগুলোয় প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় এবং নদীর কাছের নিচু এলাকা মুহূর্তেই প্লাবিত হয়ে পড়ে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, যারা মারা গেছেন বা নিখোঁজ, তাদের অনেকেই নদী তীর থেকে মাত্র ৫০০ ফুট (১৫২ মিটার) দূরের নিচু কেবিনে ছিলেন।

যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন, তাদেরকে সামরিক ট্রাকে করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়েছে। তারা বলছেন, পুরো ক্যাম্প চেনার অযোগ্য হয়ে গেছে—গাছ উপড়ে পড়েছে, কায়াক গাছে আটকে আছে, অনেকে পানির তোড়ে ভেসে গিয়েছেন।

রোববার যখন বিবিসির একটি টিম ক্যাম্পে পৌঁছে, তখন ক্যাম্পের প্রবেশদ্বার পুলিশ দিয়ে ঘেরা ছিল এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত একটি গেটহাউস পড়ে ছিল।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও এখানে গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষ করে গালফ অব মেক্সিকোর সাগর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকায় বাষ্প বেশি তৈরি হয়েছে, যা ঝড়কে আরও তীব্র করেছে।

কোপার্নিকাস জলবায়ু পরিবর্তন পরিষেবা বলছে, ২০২৪ সাল ছিল এই ধরণের চরম বৃষ্টিপাতের জন্য রেকর্ড গড়ার বছর।

জলবায়ুবিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, ভবিষ্যতে এ ধরণের চরম ও আকস্মিক বৃষ্টি আরও ঘন ঘন ঘটবে, যদি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ না করা যায়।

টেক্সাসে আকস্মিক বন্যায় ৫০ জনের প্রাণহানি, নিখোঁজ ২৭