যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মিডটাউন ম্যানহাটনে বন্দুকধারীর হামলায় নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) একজন কর্মকর্তাসহ অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। নিহত পুলিশ সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বলে জানানো হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে ব্যস্ত সময়ে এই গুলির ঘটনা ঘটে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বরাত দিয়ে আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, হামলাকারীর নাম শন দেবন তামুরা। পুলিশ জানায়, হামলাকারী ভারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে একটি বহুতল ভবনে ঢোকার সময় তার ছবি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। পরবর্তীতে ধারণা করা হচ্ছে, গুলির পর সে নিজেও গুলি করে আত্মহত্যা করেছে।
গুলির ঘটনাটি ঘটে ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউয়ের একটি ৬৩৪ ফুট উঁচু অফিস ভবনে। এখানে ন্যাশনাল ফুটবল লিগ (এনএফএল) ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকস্টোনের কর্পোরেট অফিস রয়েছে।
এ ঘটনার পর এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের পরিচয় ও হামলার মোটিভ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এটি একক হামলাকারীর কাজ।
নিউইয়র্ক শহরের মেয়র ও পুলিশ কমিশনার জনসাধারণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) অফিসার ছিলেন বাংলাদেশি অভিবাসী দিদারুল ইসলাম (৩৬)। শহরের মেয়র এরিক অ্যাডামস ও পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ তাকে ‘নায়ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে অন্যদের রক্ষা করেছেন। খবর রয়টার্সের।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা আজ আবারও অকারণে বন্দুক সহিংসতার বলি হলাম। চারটি জীবন চলে গেছে, তার মধ্যে একজন আমাদের পুলিশ বিভাগের সদস্য—অফিসার দিদারুল ইসলাম।”
অ্যাডামস জানান, “অফিসার ইসলাম প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে এনওয়াইপিডিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি নিউইয়র্কবাসীদের রক্ষা করছিলেন, জীবন বাঁচাচ্ছিলেন। তিনি ছিলেন বিশ্বাসী মানুষ ও ঈশ্বরে আস্থাশীল।”
অ্যাডামস আরও জানান, সোমবার রাতে তিনি দিদারুল ইসলামের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন যে দিদার ছিলেন একজন সত্যিকারের বীর।
পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, দিদারুল ইসলাম ছিলেন বিবাহিত, তার দুটি ছোট সন্তান রয়েছে এবং তার স্ত্রী বর্তমানে তৃতীয় সন্তান গর্ভে ধারণ করেছেন। তিনি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। ঠান্ডা মাথায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।”
বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এই মৃত্যু গভীর শোক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে দিদারুল ইসলামের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার পরিবারকে সহানুভূতি জানিয়েছেন।
এদিকে, পুলিশ সদস্য দিদারুল ইসলাম নিহতের খবরে বাংলাদেশে তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় চলছে শোকের মাতম।