ঢাকা ০১:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :

বাঁচার সংগ্রামে গাজাবাসী, কবরস্থান শেষ আশ্রয়স্থল

ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাজার লাখো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি এখন আশ্রয়ের শেষ বিকল্প হিসেবে কবরস্থানে তাঁবু গেড়ে বসবাস করছেন। নাজুক যুদ্ধবিরতির মধ্যেও উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় তীব্র আকার ধারণ করেছে।

দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস শহর থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানান, “এই কবরস্থান জীবিতদের জন্য নয়। কিন্তু এখন এখানে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে—যাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।” খবর আল জাজিরার।

হিন্দ খুদারি বলেন, “মানুষ এখানে থাকতে চায় না, কিন্তু এটিই এখন একমাত্র খালি জায়গা। কবরস্থানগুলো আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে ইচ্ছায় নয়, বাঁচার তাগিদে।”

উত্তর গাজার বেইত হানুন শহর থেকে বাস্তুচ্যুত রামি মুসলেহ নামের এক ফিলিস্তিনি জানান, তার ১২ সদস্যের পরিবার থাকার মতো অন্য কোনো স্থান খুঁজে পায়নি।

মুসলেহ বলেন, “অভিভাবক হিসেবে এটা মানসিকভাবে ভীষণ কষ্টকর। যুদ্ধের মানসিক ট্রমা আরও বেড়ে যায়, যখন সন্তানদের কবরের পাশে বড় করতে হয়।”

আরেক বাসিন্দা সাবাহ মুহাম্মদ বলেন, “কবরস্থান, যা একসময় মৃতদের পবিত্র স্থান ছিল, এখন জীবিতদের দুর্ভোগের নীরব সাক্ষী। এখানে নেই পানি, নেই বিদ্যুৎ, নেই কোনো গোপনীয়তা—শুধু টিকে থাকার ন্যূনতম চেষ্টাই চলছে।”

সাবাহ মুহাম্মদ আরও বলেন, “গাজায় এখন মৃতদের জমিই জীবিতদের একমাত্র আশ্রয়।”

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার প্রায় ১৯ লাখ মানুষ—অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেকেই একাধিকবার স্থান বদল করেছেন, কেউ কেউ ১০ বারেরও বেশি।

ইসরায়েলের জোরপূর্বক উচ্ছেদ আদেশে উত্তর গাজা ও গাজা শহরের বাসিন্দারা দক্ষিণে পালিয়ে গেলেও, পথেই বোমা হামলার শিকার হচ্ছেন অনেকে। দক্ষিণের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত ভিড়ে ঠাসা।

এক টুকরো জমিতে তাঁবু খাটানোর ভাড়াও এখন নাগালের বাইরে। অধিকাংশ ফিলিস্তিনিরই স্থায়ী আয়ের উৎস নেই। সীমিত মানবিক সহায়তার ওপরই তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে।

জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন প্রায় ৬ কোটি ১০ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ জমে আছে এবং পুরো পাড়া-মহল্লা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অনেক পরিবার ধ্বংসস্তূপ ঘেঁটে আশ্রয় বা পানির সন্ধান করছেন।

যদিও ১০ অক্টোবর থেকে এক অনিশ্চিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, ইসরায়েল এখনো গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার (২২ অক্টােবর) রায় দিয়েছে যে, ইসরায়েল গাজায় সহায়তা ঢুকতে বাধা দিতে পারে না এবং “ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।”

বর্তমানে সহায়তা সামগ্রী কেরাম আবু সালেম (কেরেম শালোম) সীমান্ত দিয়ে শুধু গাজার মধ্য ও দক্ষিণ অংশে প্রবেশ করছে, তবে উত্তর গাজার কোনো সীমান্ত এখনো খোলা হয়নি।

কাতারের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান-আফগানিস্তানের যুদ্ধবিরতি

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সিরাজগঞ্জ কাজিপুরে যমুনা উপজেলার দাবিতে গণসংযোগ

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

বাঁচার সংগ্রামে গাজাবাসী, কবরস্থান শেষ আশ্রয়স্থল

আপডেট সময় ০৬:৫০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাজার লাখো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি এখন আশ্রয়ের শেষ বিকল্প হিসেবে কবরস্থানে তাঁবু গেড়ে বসবাস করছেন। নাজুক যুদ্ধবিরতির মধ্যেও উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় তীব্র আকার ধারণ করেছে।

দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস শহর থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানান, “এই কবরস্থান জীবিতদের জন্য নয়। কিন্তু এখন এখানে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে—যাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।” খবর আল জাজিরার।

হিন্দ খুদারি বলেন, “মানুষ এখানে থাকতে চায় না, কিন্তু এটিই এখন একমাত্র খালি জায়গা। কবরস্থানগুলো আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে ইচ্ছায় নয়, বাঁচার তাগিদে।”

উত্তর গাজার বেইত হানুন শহর থেকে বাস্তুচ্যুত রামি মুসলেহ নামের এক ফিলিস্তিনি জানান, তার ১২ সদস্যের পরিবার থাকার মতো অন্য কোনো স্থান খুঁজে পায়নি।

মুসলেহ বলেন, “অভিভাবক হিসেবে এটা মানসিকভাবে ভীষণ কষ্টকর। যুদ্ধের মানসিক ট্রমা আরও বেড়ে যায়, যখন সন্তানদের কবরের পাশে বড় করতে হয়।”

আরেক বাসিন্দা সাবাহ মুহাম্মদ বলেন, “কবরস্থান, যা একসময় মৃতদের পবিত্র স্থান ছিল, এখন জীবিতদের দুর্ভোগের নীরব সাক্ষী। এখানে নেই পানি, নেই বিদ্যুৎ, নেই কোনো গোপনীয়তা—শুধু টিকে থাকার ন্যূনতম চেষ্টাই চলছে।”

সাবাহ মুহাম্মদ আরও বলেন, “গাজায় এখন মৃতদের জমিই জীবিতদের একমাত্র আশ্রয়।”

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার প্রায় ১৯ লাখ মানুষ—অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেকেই একাধিকবার স্থান বদল করেছেন, কেউ কেউ ১০ বারেরও বেশি।

ইসরায়েলের জোরপূর্বক উচ্ছেদ আদেশে উত্তর গাজা ও গাজা শহরের বাসিন্দারা দক্ষিণে পালিয়ে গেলেও, পথেই বোমা হামলার শিকার হচ্ছেন অনেকে। দক্ষিণের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত ভিড়ে ঠাসা।

এক টুকরো জমিতে তাঁবু খাটানোর ভাড়াও এখন নাগালের বাইরে। অধিকাংশ ফিলিস্তিনিরই স্থায়ী আয়ের উৎস নেই। সীমিত মানবিক সহায়তার ওপরই তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে।

জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন প্রায় ৬ কোটি ১০ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ জমে আছে এবং পুরো পাড়া-মহল্লা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অনেক পরিবার ধ্বংসস্তূপ ঘেঁটে আশ্রয় বা পানির সন্ধান করছেন।

যদিও ১০ অক্টোবর থেকে এক অনিশ্চিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, ইসরায়েল এখনো গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার (২২ অক্টােবর) রায় দিয়েছে যে, ইসরায়েল গাজায় সহায়তা ঢুকতে বাধা দিতে পারে না এবং “ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।”

বর্তমানে সহায়তা সামগ্রী কেরাম আবু সালেম (কেরেম শালোম) সীমান্ত দিয়ে শুধু গাজার মধ্য ও দক্ষিণ অংশে প্রবেশ করছে, তবে উত্তর গাজার কোনো সীমান্ত এখনো খোলা হয়নি।

কাতারের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান-আফগানিস্তানের যুদ্ধবিরতি