ঢাকা ১০:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি, আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন মোড়

সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের যেকোনো একটির বিরুদ্ধে আক্রমণকে অপর দেশের বিরুদ্ধেও আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র পাকিস্তান ও ইসলামি বিশ্বের পবিত্র স্থানগুলোর অভিভাবক সৌদি আরবের এই জোট আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। খবর আল জাজিরার।

ঐতিহাসিক সম্পর্ক
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর সৌদি আরব প্রথম দেশগুলোর মধ্যে ছিল যারা পাকিস্তানকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৫১ সালে দুই দেশের মধ্যে “মৈত্রী চুক্তি” স্বাক্ষর হয়, যার ভিত্তিতে কয়েক দশক ধরে কৌশলগত, রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা গড়ে ওঠে।

১৯৬৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তান ৮ হাজারের বেশি সৌদি সেনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ১৯৮২ সালের চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাদের সৌদি আরবে নিয়োগ ও সামরিক প্রশিক্ষণ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। কাতারের দোহায় অবস্থিত মার্কিন সেন্টকম সদর দপ্তরসহ সৌদি আরবে প্রিন্স সুলতান এয়ারবেসে বড় ঘাঁটি রয়েছে।

কিন্তু নতুন চুক্তির ভাষা ও প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগ বাড়তে পারে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাইডেন প্রশাসন পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক সাহার খান বলেছেন, পাকিস্তানের উচিত হবে পরিষ্কারভাবে জানানো যে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুই ভারতকেন্দ্রিক, সৌদি আরবের জন্য কোনো “পারমাণবিক ছাতা” নয়।

ভারতীয় প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ভারত এই চুক্তির প্রভাব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং দেশের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংকটে সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল, অন্যদিকে সৌদি-ভারত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। কিন্তু নতুন এই প্রতিরক্ষা চুক্তি পাকিস্তানকে কৌশলগতভাবে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেল।

পারমাণবিক ইঙ্গিত?
সৌদি আরব বহুদিন ধরে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে মাঝে মাঝে সৌদি নেতাদের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের থেকে সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র কেনার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।

যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন এই চুক্তিতে কোথাও পারমাণবিক ছাতা বা পারমাণবিক আশ্বাসের কথা উল্লেখ নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি শুধু সামরিক সহযোগিতার নতুন মাত্রাই নয়, বরং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির জন্যও এক বড় পরিবর্তনের সূচনা। ভারত, ইরান কিংবা যুক্তরাষ্ট্র— প্রত্যেকের জন্যই এই জোট নতুন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

মোদী কি এবার রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন?

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি, আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন মোড়

আপডেট সময় ০৭:৫০:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের যেকোনো একটির বিরুদ্ধে আক্রমণকে অপর দেশের বিরুদ্ধেও আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র পাকিস্তান ও ইসলামি বিশ্বের পবিত্র স্থানগুলোর অভিভাবক সৌদি আরবের এই জোট আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। খবর আল জাজিরার।

ঐতিহাসিক সম্পর্ক
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর সৌদি আরব প্রথম দেশগুলোর মধ্যে ছিল যারা পাকিস্তানকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৫১ সালে দুই দেশের মধ্যে “মৈত্রী চুক্তি” স্বাক্ষর হয়, যার ভিত্তিতে কয়েক দশক ধরে কৌশলগত, রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা গড়ে ওঠে।

১৯৬৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তান ৮ হাজারের বেশি সৌদি সেনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ১৯৮২ সালের চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাদের সৌদি আরবে নিয়োগ ও সামরিক প্রশিক্ষণ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। কাতারের দোহায় অবস্থিত মার্কিন সেন্টকম সদর দপ্তরসহ সৌদি আরবে প্রিন্স সুলতান এয়ারবেসে বড় ঘাঁটি রয়েছে।

কিন্তু নতুন চুক্তির ভাষা ও প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগ বাড়তে পারে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাইডেন প্রশাসন পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক সাহার খান বলেছেন, পাকিস্তানের উচিত হবে পরিষ্কারভাবে জানানো যে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুই ভারতকেন্দ্রিক, সৌদি আরবের জন্য কোনো “পারমাণবিক ছাতা” নয়।

ভারতীয় প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ভারত এই চুক্তির প্রভাব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং দেশের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংকটে সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল, অন্যদিকে সৌদি-ভারত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। কিন্তু নতুন এই প্রতিরক্ষা চুক্তি পাকিস্তানকে কৌশলগতভাবে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেল।

পারমাণবিক ইঙ্গিত?
সৌদি আরব বহুদিন ধরে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে মাঝে মাঝে সৌদি নেতাদের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের থেকে সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র কেনার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।

যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন এই চুক্তিতে কোথাও পারমাণবিক ছাতা বা পারমাণবিক আশ্বাসের কথা উল্লেখ নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি শুধু সামরিক সহযোগিতার নতুন মাত্রাই নয়, বরং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির জন্যও এক বড় পরিবর্তনের সূচনা। ভারত, ইরান কিংবা যুক্তরাষ্ট্র— প্রত্যেকের জন্যই এই জোট নতুন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

মোদী কি এবার রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন?