শেখ মুজিবুর রহমানকে বর্তমান সরকার জাতির জনক মনে করে না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, গুম-খুন করে, গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল। তো তারা কাকে জাতির পিতা বললো, তারা কোন দিবসকে কোন জাতীয় দিবস ঘোষণা করলো, এই নতুন বাংলাদেশে তো সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না”।
এরপর সাংবাদিকদের মধ্য থেকে একজন নাহিদ ইসলামের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, শেখ মুজিবুর রহমানকে এই সরকার জাতির জনক মনে করে কি-না?
“অবশ্যই না, কেন জাতির জনক মনে করবেন?,” জবাবে বলেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে কেবল একজন না, বহু মানুষের এরকম কিন্তু কন্ট্রিবিউশন (অবদান) রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু শুধু ৫২ থেকে শুরু হয়ে যায় নাই। আমাদের ইতিহাসের দীর্ঘ লড়াই আছে”।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “ব্রিটিশ বিরোধী লড়াই আছে, আমাদের এখানে ‘৪৭ এর লড়াই আছে এই ভূ-খণ্ডের মানুষের, ‘৭১ এর লড়াই আছে, ‘৯০ আছে ও ‘২৪ আছে। আমাদের এখানে শেরে বাংলা ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশেম, যোগেন মণ্ডল, মাওলানা ভাসানী অনেক মানুষের লড়াই আছে। আমরা তো মনে করি এখানে একজন জাতির পিতা না, বরং অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছে, যাদের কন্ট্রিবিউশনের ফলে এই ভূ-খণ্ড, এই রাষ্ট্র, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি” ।
উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত দেড় দশকের শাসনকালে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে বর্ণনা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ, প্রদর্শনের বিধান করা হয়।
এদিকে, সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শোক দিবস, শিশু দিবস ও সাতই মার্চসহ জাতীয় আটটি দিবস বাতিল করতে যাওয়ার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও ব্যাখ্যা দেন তথ্য উপদেষ্টা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “(আওয়ামী লীগ আমলে) বিভিন্ন দলীয় দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তো, সেগুলা এবং যে দিবসগুলোকে অগুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেই দিবসগুলোকে বাতিল করা হয়েছে”। দিবসগুলোর ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য ছিল না বলেই বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “জাতীয় দিবস মানে একটা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে করা দিবস যেটা জাতির সবাই ধারণ করে। যেমন: বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস….এটা (বাতিল দিবসগুলো) আসলে সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের এবং যে ফ্যাসিস্ট আদর্শ সেই আদর্শকে ধারণ করে সেই আদর্শ চর্চার জন্য যে দিবসগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল…..সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিছু দিবসকে বাতিল হয়েছে”।
আগামীতে এ ধরনের আরও কিছু দিবস বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন কয়েকটি দিবসের ঘোষণা আসতে পারে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম।