আন্দোলনের বুঝতে পেরেছেন রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এটা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। একসময় বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে যারা দর কষাকষি করতেন, এখন তারা দিন কাটাচ্ছেন বহিষ্কার আর দুদক আতঙ্কে। সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন তাদের বোধোদয় হয়েছে- আন্দোলন করা ভুল ছিল। এরই মধ্যে কেউ কেউ ‘গণক্ষমা’ চাওয়ার বিষয়ও ভাবছেন।
গত কয়েকদিনে এনবিআরের ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। একই সময়ে ৬ কর্মকর্তাকে বদলি এবং ৫ কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে এনবিআর। এসব ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে।
কেউ কেউ বলছেন, এনবিআর বিলুপ্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে জড়িয়ে কঠিন শাস্তির মুখে পড়েছেন তারা। চাকরি বাঁচাতে এরই মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন কয়েকজন। কেউ আবার যোগাযোগ করছেন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে। অধিকাংশ কর্মকর্তাই আন্দোলনকে ভুল আখ্যা দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এনবিআরের যৌক্তিক সংস্কার ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে প্রথমে মে মাসে ও দ্বিতীয় দফায় জুনের শেষ সপ্তাহে আন্দোলন করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সারাদেশের কাস্টম অফিস, বন্দর বন্ধ রেখে গত ২৮ ও ২৯ জুন কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি পালন করেন তারা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে পালন করা হয় এসব কর্মসূচি। পরে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় গত ২৯ জুন আন্দোলন স্থগিত করে এনবিআর ঐক্য পরিষদ।
বেশিরভাগ কর্মকর্তা গণমাধ্যম এড়িয়ে চলছেন। কেউ কেউ ফোন বন্ধ রেখেছেন। এনবিআর কর্মকর্তাদের নিজস্ব গ্রুপ ও আন্দোলনের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে লিভ নিয়েছেন অনেকেই। সবার মধ্যেই অজানা আতঙ্ক। বড় কর্তাদের বিদায়ের খবরে অনেকেরই মন ভেঙেছে।
এরপর যেন হঠাৎ করেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ২৯ জুন থেকে ৩ জুলাই (৫ দিনে) এনবিআরের ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই ১৬ জনের মধ্যে ১০ জন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য। বাকিদেরও আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা গেছে। ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও তিন মুখপাত্রকে দুদকের জালে আটকানোর বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না এনবিআর কর্মকর্তারা।
তবে দুদক বলছে, যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকর্তার কারণে প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে- এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা ঘুষ না পেয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিককে হয়রানি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে।