আওয়ামী লীগের শাসনামলে ‘গুমের নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। গুমের’ ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু এবং র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশও করেছে তারা।
শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। এরপর সরকার প্রধানের দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গুমের’ ঘটনায় হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে; যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসান এবং আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তাকা পুলিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ও হারুন অর রশীদ।
গুম বিষয়ক কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তারা মার্চে আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন পড়বে।
তিনি বলেন, “গুমের সাথে ‘জড়িত কর্মকর্তারা’ কাজটি এমনভাবে করেছে যাতে এগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। বিভিন্ন ফোর্স নিজেদের মধ্যে ভিকটিম বিনিময় করেছে এবং পরিকল্পনা ভিন্ন ভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করেছে।”
কমিশন প্রধান বলেন, “গুমের শিকার অনেকে এখনও শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না। তাদের ওপর এতটাই ‘ভয়াবহ নির্যাতন’ চালানো হয়েছিল যে তারা এখনও ট্রমায় ভুগছেন।“
কমিশন ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ পেয়ে ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করেছে বলেও প্রতিবেদনে বলা আছে।
প্রধান উপদেষ্টা ‘গুমের শিকার’ ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও সঠিক বিচারের আশ্বাস দেওয়ার পর অভিযোগ ‘অনেক’ বেড়েছে বলে মন্তব্য করে কমিশন সদস্যরা ইউনূসকে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি পাওয়া বহুল আলোচিত ‘গোপন বন্দিশালা’ পরিদর্শনের অনুরোধ জানান।
এতে ভুক্তভোগীরা ‘অভয়’ পেতে পারে বলেও মত দেন তারা।
প্রধান উপদেষ্টা এ অনুরোধে সম্মতি দিয়ে বলেছেন, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল’ দেখতে যাবেন।
এই সেলই ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে, যেগুলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই ছিল।
প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেওয়ায় গুম বিষয়ক কমিশনকে ধন্যবাদ জানান এবং কাজটি এগিয়ে নেওয়ায় প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতার আশ্বাস দেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় গুম বিষয়ক কমিশনের সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।