ইংরেজি নতুন বছর বরণে আগের রাতের আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর মত শব্দদুষণ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি এর পর থেকে ‘থার্টি ফার্স্ট’ যত্রতত্র উদযাপন ঠেকাতে শহরের নির্ধারিত স্থানের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাজ্জাত আলী বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থার্টি ফার্স্ট উদযাপিত হয়৷ বেশিরভাগ দেশে এটি নববর্ষ, আমাদের দেশে নয়।
“অন্যান্য দেশে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করা হয়, পুরো শহর জুড়ে আতশবাজি ফুটানো হয় না। আমরাও এ বছর ঢাকা মহানগরীর একটি নির্দিষ্ট স্থানে থার্টি ফার্স্ট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান আয়োজন করার চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু এই বছর আমরা সেটি পারিনি। আগামী বছর থেকে আমরা সেটি চেষ্টা করব।”
থার্টি ফার্স্টের রাতকে সামনে রেখে গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে অভিযানে আতশবাজি, পটকা, ক্লাস্টার বোমা, রকেট বোমাসহ ১৭২ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।
এই অভিযান ঘিরে ৫টি মামলা দায়ের এবং ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন, “বিগত বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় থার্টি ফার্স্টে ১২টা ১ মিনিটে আতশবাজি, ক্লাস্টার বোমা, ফানুস ব্যবহার হয়ে থাকে। আজ রাতে একই ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে। ঢাকাবাসীর কাছে অনুরোধ এরূপ কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখি।”
এই দিনটি নানা কারণে ‘সিগনিফিকেন্ট’ জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকাবাসীর জন্য ট্রাফিক একটি দুর্ভোগের নাম। আজ নানা ধরনের কর্মসুচি আছে, এ কারণে ডিএমপির ট্রাফিক ব্যবস্থা ও নিরাপত্তাজনিত ব্যপক ব্যবস্থা থাকবে।”
তবে থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে কোনো ‘থ্রেট’ নেই জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার পরিবেশ রক্ষায় নাগরিকদের কিছু দায়িত্ব কর্তব্যের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “শুধু পুলিশ বা পরিবেশ অধিদপ্তর দিয়ে শব্দ দূষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে৷ আমরা সকলের সহযোগিতা চাই।”
৩ হাজার অতিরিক্ত পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকার সড়কে
থার্টি ফার্স্টে কত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেগুলার পুলিশ মোতায়েন থাকে। প্রত্যেক ফাঁড়ি থেকে রাতের বেলা কমপক্ষে দুইটি পেট্রোল টিম থাকে, থানা থেকে চারটি-পাঁচটি টিম থাকে। এটা আমাদের রেগুলার ডিপ্লোয়মেন্ট।
“আজকে শুধু থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে তিন হাজার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আমরা মনে করছি এটা যথেষ্ঠ। আমরা কিছু পয়েন্টকে টার্গেট করেছি৷ বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলশান, ৩০০ ফিট, উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় বেশি পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
“আমাদের পুলিশ ফোর্সের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেটরা থাকবেন। ওনারা যে কোনো জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চালালে আমাদের ফোর্স তাদের সহযোগিতা করবে।”
পুলিশের মনোবল ফিরে এসেছে কী না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন ঘাটতি ‘উৎরে গেছে’।
“আমাদের এখনো কোনো সমস্যা নেই। আমরা যে কোমায় যাওয়ার অবস্থায় গিয়েছিলাম, সেটি থেকে ফিরে এসেছি। আমাদের অফিসারদের মনোবল এখন অনেক ভালো।”
আতশবাজি ও পটকার কারণে সৃষ্ট শব্দদূষণ যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করার হবে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, “শব্দদূষণ রোধে আজ আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। দিনে ও রাতে সমগ্র শহরব্যপী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।
“আমাদের অবস্থান সুদৃঢ়। আমাদের আহ্বানে সাড়া না দিলে যেখানেই আইনের ব্যত্যয় দেখব, দণ্ডের দিকেই যেতেই হবে।”
নিষিদ্ধ হলে আতশবাজি ও পটকা আমদানি কীভাবে হচ্ছে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমদানির সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জড়িত। সেটিকে আমরা অবশ্যই নিরুৎসাহিত করি, কোন বছরই অনুমোদন করছি না অবৈধভাবেই হয়ত আসছে।”
ডিএমপির ১১ দফা নির্দেশনা
থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনজীবন স্বাভাবিক রক্ষার স্বার্থে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ডিএমপি।
১. থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫ উপলক্ষে অনুমতি ছাড়া উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ, গণ-জমায়েত, নাচ, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শোভাযাত্রা করা যাবে না।
২. থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকায় যে কোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ করা হল।
৩. ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব বার বন্ধ থাকবে।
৪. আবাসিক হোটেলগুলো সীমিত আকারে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান করতে পারবে।
৫. ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেঁস্তোরা, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে সব ধরনের লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা যাবে না।
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা মধ্যে স্ব-স্ব এলাকায় প্রত্যাবর্তন করবেন এবং রাত ৮টার পরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।
৭. গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার বাসিন্দাদের ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮ টার মধ্যে যার যার এলাকায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
৮. গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় রাত ৮ টার পর বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারবে না। তবে এ এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দারা নির্ধারিত সময়ের পর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) এবং মহাখালী আমতলী ক্রসিং দিয়ে পরিচয় দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
৯. হাতিরঝিল এলাকায় সন্ধ্যা ৬টা পর থেকে কোন সমাবেশ বা অনুষ্ঠান করা যাবে না এবং কোনো যানবাহন থামিয়ে অথবা পার্কিং করে কেউ অবস্থান করতে পারবেন না।
১০. একইভাবে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় যে সব নাগরিক বসবাস করেন না তাদেরকে এই কয়েকটি এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হল।
১১. উচ্চ শব্দে গাড়ির হর্ন বাজানো বা গণ-উপদ্রব সৃষ্টি করে এমন কোন গান বাজনা চালানো যাবে না।