ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মহল ও জনমনে নানান প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। এ নিয়ে সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোও। অনেকেই যার যার মতো করে অভিমত ব্যক্ত করছেন। মৃত্যু নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ বলছেন মারা গেছেন ২৯ জন, কেউ বলছেন ৩০, আবার কেউবা বলছেন ৩১ জন। এছাড়া মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোট আহতের সংখ্যা নিয়েও পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য।
এ অবস্থায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল হোসেন। তার সই করা এক পরিসংখ্যানের তথ্যের (টেলিফোনের মাধ্যমে প্রাপ্ত) বরাতে এ বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ফয়েজ আহম্মদ এ তথ্য জানান।
তিনি জানিয়েছেন, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বুধবার দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ জনে। এছাড়া জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন ৬৯ জন।
পরিসংখ্যান বলছে, নিহত ২৯ জনের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ১১ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে একজন (পরিচয় জানা যায়নি) ও ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন মারা গেছেন।
তথ্য অনুযায়ী, অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে বর্তমানে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৪ জন, সিএমএইচে ২১ জন, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে একজন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন ও হিউম্যান এইড রিসার্চ ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতালে একজন চিকিৎসাধীন আছেন।
২৯ জনের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ১১ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে একজন (পরিচয় জানা যায়নি) ও ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন মারা গেছেন
ডা. আবু হোসেনের পরিসংখ্যান মোতাবেক, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যাওয়া ১১ জন হলেন- তানভীর (১৪), আদনান ফাইয়াজ (১৪), মাহেরীন (৪৬), বাপ্পি (৯), মাসুকা (৩৭), এবি শামীম (১৪), শায়ান ইউসুফ (১৪), এরিকসন (১৩), আরিয়ান (১৩), নাজিয়া (১৩) ও নাফি (৯)।
সিএমএইচে মারা যাওয়া ১৫ জন হলেন- রজনী ইসলাম (৩৭), এমডি সামিউল করিম (৯), ফাতেমা আক্তার (৯), মেহেনাজ আফরিন হুমায়রা (৯), সারিয়া আক্তার (১৩), নুসরাত জাহান আনিকা (১০), সাদ সালাউদ্দিন (৯) ও সায়মা আক্তার (৯)। তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া বিধ্বস্ত বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মরদেহ এরই মধ্যে সমাহিত করা হয়েছে। ওই হাসপাতালে মারা যাওয়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৬ জন রয়েছেন। এ ছয়জনের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
একই সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে ৯ বছরের শিশু জুনায়েতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লুবানা জেনারেল হাসপাতালে অজ্ঞাতপরিচয় (বয়স উল্লেখ নেই) একজনের মরদেহ রয়েছে। গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে উমায়ের নূর আসফিক নামে ১১ বছর বয়সী এক শিশুর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৯ জনের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষক, ৪১ জন শিক্ষার্থী, একজন স্কুল স্টাফ, একজন ফায়ার ফাইটার, একজন পুলিশ, ১৪ জন সেনাসদস্য, একজন আয়া, একজন ইলেকট্রিশিয়ান ও অন্যান্য চারজন রয়েছেন।
বিধ্বস্ত বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মরদেহ এরই মধ্যে সমাহিত করা হয়েছে। ওই হাসপাতালে মারা যাওয়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৬ জন রয়েছেন। এ ছয়জনের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৪৪ জনের মধ্যে ৩৫ জন শিক্ষার্থী, চারজন শিক্ষক, একজন ইলেকট্রিশিয়ান ও একজন আয়া রয়েছেন। অপর তিনজনের পরিচয় জানা যায়নি।
আহতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে বর্তমানে আটজন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা হলেন- মাহাতাব (১৪), মাসুমা (৩২), আইয়ান (১৪), মাহিয়া (১৫), জারিফ (১২), শিক্ষিকা মাহফুজা খাতুন (৪৫), নাবিদ নাওয়াজ (১২) ও সাইমন (১৮)।
সেখানে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ২১ জন হলেন- তাসনুবা মাহবিন (১১), ফারজানা ইয়াসমিন (৪৫), তাসনিয়া (১০), শ্রেয়া (৯), রাইসা (১১), পায়েল (১২), শিক্ষিকা নিশি (২৮), নুসরাত (১২), তৌফিক (১৩), ইউসা (১১), জাকির (৫৫), সায়েবা (৯), আলবিনা (১০), মুনতাহা (১০), রুপি বড়ুয়া (১০), জায়ানা (১৩), নিলয় (১৩), শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম (৩৭), শিক্ষিকা সুমাইয়া লরিন (৩০), লরিন কাব্য (১৩) ও কাফী আহমেদ (১০)।
এছাড়া আহত পুরুষদের মধ্যে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন মাকিন (১৫), আরিয়ান আফিফ (১২), রোহান (১৪), রাইয়ান (১৪) ও আবিদুর রহমান (১০)।
আহত নারীদের মধ্যে এইচডিইউ চিকিৎসাধীন আছেন সামিয়া (৯), সাইবা জাহান (১০), তাসনিয়া (১৫), মেহেরিন (১১), আইমান (১০), সায়রা (১০), সবুজা বেগম (৪০) ও হাফসা খান (১১)। আয়ান খান (১২) ও কাজী আমজাদ সাঈদ (২০) নামে দুজন জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
চিকিৎসাধীন ৬৯ জনের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষক, ৪১ জন শিক্ষার্থী, একজন স্কুল স্টাফ, একজন ফায়ার ফাইটার, একজন পুলিশ, ১৪ জন সেনাসদস্য, একজন আয়া, একজন ইলেকট্রিশিয়ান ও অন্যান্য চারজন রয়েছেন
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৮ জনের মধ্যে পাঁচজনকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। দুজনকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ২১ জন চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী ৩ জন, শিক্ষক ১ জন, স্কুল স্টাফ ১ জন, ফায়ার সার্ভিস কর্মী ১ জন, পুলিশ ১ জন ও সেনাসদস্য ১৪ জন।
সিএমএইচে বার্ন আইসিইউতে আছেন চারজন। তারা হলেন- আকিব (১২), আনোয়ার (৩৪), আতিক (২১) ও বিল্লাল হোসেন (১২)।
এছাড়াও অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন- আহসান (৪৫), হাবিবুল্লাহ (২৪), আব্দুল্লাহ (২৪), মুত্তাকিন (২৪), শাকিল (২৬), নাফিস (২২), হযরত (২২), মানিক (৪৬), সোহাগ (২৭), ফারহান শাফি (১৭), কামরুজ্জামান (২৫), শাহরিয়ার (২৪), রাকিবুল (২৩), বাবুল (২২), রবিউল (২২), কামাল (২১) ও তাহসান (২৪)।
অগ্নিদগ্ধদের অন্যদের মধ্যে বর্তমানে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে জান্নাতুল মাওয়া নামে ১১ বছরের এক শিশু ও শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেহুরুন্নেসা নামে ১৪ বছরের এক শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন একজন (পরিচয়ের তথ্য পাওয়া যায়নি)। হিউম্যান এইড রিসার্চ ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতালে তাকরিম হক নামে ১৬ বছরের এক শিশু আইসিইউতে আছে।
অবরুদ্ধ থাকার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর মাইলস্টোন ছাড়লেন দুই উপদেষ্টা