ঢাকা ০২:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
টাঙ্গাইলের বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ৪ আবারো লেবাননে বিমান হামলা চালাল ইসরায়েল সাইবার নিরাপত্তাসহ সকল কালো আইন অবশ্যই বাতিল হবে : আসিফ নজরুল ১০ বছর পর বিশ্বকাপে জয় পেল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল টাইম ম্যাগাজিনের উদীয়মান ১০০ বিশ্বনেতার তালিকায় নাহিদ ইসলাম সরকারের সর্বত্র শেখ হাসিনার ভূতরা সক্রিয় : রিজভী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে বসে এখনও ষড়যন্ত্র করছেন : শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ১০ কোটিতে ডিসি নিয়োগ, কেলেঙ্কারির স্ক্রিনশট ফাঁস ড. ইউনূসের ৬৬৬ কোটি টাকা করের রায়ে বিব্রত হাইকোর্ট, নথি গেলো প্রধান বিচারপতির কাছে দুর্গাপূজায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৮ নির্দেশনা

গণপিটুনিতে অংশগ্রহণকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক

দীর্ঘ প্রায় ষোল বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে ছাত্র-জনতা ঐতিহাসিক বিল্পবের মাধ্যমে। ক্ষমতা ছেড়ে ভারত পালিয়ে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বস্তি ফিরে এসেছে নিপীড়িত জনগণের মনে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক কয়েকটি গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এসব মৃত্যু হচ্ছে বিগত সরকারের কর্মী-সমর্থক সন্দেহে, কখনো ধর্ম অবমাননার অভিযোগে, কখনো আবার চুরির সন্দেহে। যদিও কাউকে কেবল সন্দেহের বশে অপরাধী বলে তাৎক্ষণিক জনমত তৈরি করা এবং পরে গণপিটুনি দিয়ে হতাহত করা নতুন কোনো ঘটনা নয়। সবশেষ বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামে এক ব্যক্তিকে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। এ দুটি হত্যাকাণ্ড নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর আগে ৭ই সেপ্টেম্বর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ গণপিটুনিতে নিহত হন। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক গণপিটুনির ঘটনায় হতাহত হওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে। বেশিরভাগ ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও আলোচনায় না আসলে পুলিশের তেমন তৎপরতা থাকে না। সেই মামলার তদন্ত বিচার ঝুলে থাকে বছরের পর বছর।

বুধবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ব্যক্তির ভাত খাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে থাকা ব্যক্তির নাম তোফাজ্জল এবং ছবিটি ধারণের কিছুক্ষণ পর তাকে পিটিয়ে মারা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে। বুধবার ওই ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে আটক করে গণপিটুনির দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে আটটা দিকে দিকে ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা তোফাজ্জল হোসেনকে চোর সন্দেহে আটক করে গেস্টরুমে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত কয়েক দফা মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাত খাইয়ে ছবি ধারণ করা হয়। এরপর আবার তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। রাত ১২টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় কয়েকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানা গেছে, তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ক্যাম্পাসে চলাফেরা থাকায় হলে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি।

বুধবার রাতেই সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার বিকেলে তিনি ক্যাম্পাসে গেলে একদল শিক্ষার্থী তাকে ঘিরে ধরে পেটায়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত শামীমকে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে যায়। সেখানেও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আবারও তাকে মারধর করে। পরে প্রক্টরিয়াল টিম তাকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তাকে সাভার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

এর আগে গণপিটুনিতে আহত অবস্থায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদের যন্ত্রণায় কাতরানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায় তিনি অস্ফুট স্বরে বলছেন, ‘স্ত্রীর জন্য ওষুধ নিতে এসেছিলাম ভাই। আমি ছাত্রলীগ করতাম ওই জন্য ধরেছে। আমি পাঁচই আগস্ট মেডিকেলে ছিলাম। আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগ-টগ সব কাটা ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি ভাই।’ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে মতিহার থানায় পরে বোয়ালিয়া থানায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বোয়ালিয়া থানায় মেঝেতে শুয়ে থাকা অবস্থায় মাসুদের বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল।

তার শারীরিক অবস্থা দেখে পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছিলেন মাসুদ।

দশ বছর আগের এক হামলায় পা হারিয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ২৯শে এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা তার হাত ডান পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, বাম পাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার হাতের রগও কেটে দেয়া হয়।

গুজব বা জনমনে ক্ষোভের উদ্রেকের কারণে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করার ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত পাঁচই অগাস্টের পর বগুড়া, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, খুলনা, মিরসরাই, যাত্রাবাড়ী, টঙ্গী, রাজশাহী এবং বরিশালে গণপিটুনির ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা এর চাইতে আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, দেশে গত সাড়ে ছয় বছরে গণপিটুনিতে কমপক্ষে ২৮৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর কোনোটিতে ছেলেধরা বা ডাকাত সন্দেহে, আবার কোনো কোনো ঘটনায় চোর সন্দেহেও পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ঘটনায় হত্যা মামলা হলেও শাস্তি হওয়ার সংখ্যা খুবই কম।

গণপিটুনি নিয়ে সংবিধান ও আইনে যা আছে :
বাংলাদেশে সংবিধানে, অপরাধী-নিরপরাধী নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিককে আইনের আওতাও বিচার লাভ এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।

অনুচ্ছেদ ৩১ বলছে আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না যাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনামে বা সম্পত্তির হানি ঘটে।

অনুচ্ছেদ ৩৩ অনুযায়ী একজন ব্যক্তির অবশ্যই তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ এবং নিজেকে সমর্থন করার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৩৫ অনুযায়ী অর্থাৎ, আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না এবং অপরাধের জন্য যতটুকু শাস্তি প্রাপ্য তার চেয়ে বেশি বা ভিন্ন কোনো শাস্তি দেয়া যাবে না।

এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৯ ধারা অনুযায়ী, অপরাধী ধরা পড়লে তাকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করতেই হবে। এর ব্যতিক্রম করলে দণ্ডবিধির ১৮৭ ধারা অনুযায়ী অনূর্ধ্ব ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

আটক রাখার পর ওই ব্যক্তিকে যদি সামান্য আঘাতও করা হয় তাহলে ৩১৯ ধারায় উল্লিখিত আঘাতের অপরাধে অপরাধীকে ৩২৩ ধারার অধীনে এক বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ১০০০ টাকা জরিমানা করা যাবে।

যদি পিটুনি দেয়া হয় তবে কারাদণ্ডে মেয়াদ বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে অনূর্ধ্ব তিন বছর এক মাসে। সেইসাথে অনূর্ধ্ব ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে।

যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত দেয়া হয় তবে ৩২৫ ধারার অধীনে সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যায়।

এছাড়া দণ্ডবিধির ৩৩৫ ধারা অনুযায়ী কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড উভয় দণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারেন আঘাতকারীরা।
হামলা চালানোর ফলে যদি ব্যক্তির মৃত্যু হয় তাহলে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী দশ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের সাজা দেয়া যায়।

আর যদি অপরাধীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মেরে ফেলার বিষয়টি প্রমাণিত হয় তবে শাস্তি হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব দশ বছর মেয়াদের যে কোনো কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।

গণপিটুনিতে ওই ব্যক্তি নিহত হলে দণ্ডবিধির ৩৪ ধারা অনুযায়ী গণপিটুনিতে অংশ নেয়া সব ব্যক্তি সমানভাবে এজন্য দায়ী হবে। কেননা আইনে ‘যৌথ দায়িত্বশীলতা’ বলে একটি নীতি আছে। সেখানে বলা হয়েছে, একই অভিপ্রায় নিয়ে একাধিক ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটন করলে, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তি এমনভাবে দায়ী হবেন যেন তিনি নিজেই অপরাধটি করেছেন।

এর মানে গণপিটুনিতে যারাই অংশ নেবেন সেটা আদালতে প্রমাণ করা গেলে সবারই শাস্তি নিশ্চিত করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে কেউ বড় ধরনের জখম করলেও যে শাস্তি পাবেন, একজন সামান্য ধাক্কা দিলেও একই শাস্তির আওতাভুক্ত হবেন।
এছাড়া গণপিটুনিতে যদি কেউ মারা যায় আর সেটা যদি খুন হিসেবে আদালতে প্রমাণ করা যায় তাহলে দণ্ডবিধি- ১৮৬০ এর ২৯৯ ধারায় উল্লিখিত খুনের অপরাধে অপরাধীকে ৩০২ দ্বারার অধীনে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডিত করা যায়।

সে হিসেবে আদালতে গণপিটুনিতে হত্যা প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী সবারই নূন্যতম দণ্ড হবে ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড’।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা-১৯৪৮, এর তিন নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে ঊাবৎুড়হব যধং ঃযব ৎরমযঃ ঃড় ষরভব, ষরনবৎঃু ধহফ ংবপঁৎরঃু ড়ভ ঢ়বৎংড়হ (প্রত্যেকের জীবন, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার আছে)।
অর্থাৎ একজন মানুষ সুস্থ স্বাভাবিকভাবে তার জীবন যাপনের অধিকার রাখেন।

অনুচ্ছেদ পাঁচ অনুযায়ী- কারো প্রতি নির্যাতন, অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ করা যাবে না।
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি- ১৯৬৬ এর অনুচ্ছেদ ছয় একই বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছে। অনুচ্ছেদ সাতে নির্যাতনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটসের অনুচ্ছেদ দুই মানুষের জীবনের অধিকার নিয়ে আলোকপাত করেছে, অনুচ্ছেদ তিনে কারো প্রতি নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অনুচ্ছেদ পাঁচে নিরাপত্তার কথাটি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া ২৬ অনুচ্ছেদে সবার আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনে গণপিটুনিতে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হলেও দেশের প্রচলিত বিচার কাঠামোয় ও তদন্ত ব্যবস্থায় গণপিটুনিতে শাস্তি নিশ্চিত করা বেশ কঠিন বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা।

দেশে আইনের ঘাটতি নেই। সমস্যা হলো আইনের প্রয়োগ করা হয় না এবং তদন্তের দুর্বলতা রয়ে গিয়েছে। সময় মতো আদালতে সাক্ষী হাজির করা যায় না। একারণে গণপিটুনিতে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। প্রচলিত আইনে গণপিটুনিতে অংশগ্রহণকারী সবাইকেই বিচারের আওতায় আনা যায়। দরকার শুধু সচেতনতা ও সদিচ্ছা। গণপিটুনিতে নিহতের একটি ঘটনারও যদি আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে যথাযথ বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া যেত, তাহলে হয়ত গণপিটুনির প্রবণতা হ্রাস পেত।

আরো পড়ুন : রবিউল আওয়াল মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

গণপিটুনিতে অংশগ্রহণকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক

আপডেট সময় ১২:২৩:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দীর্ঘ প্রায় ষোল বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে ছাত্র-জনতা ঐতিহাসিক বিল্পবের মাধ্যমে। ক্ষমতা ছেড়ে ভারত পালিয়ে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বস্তি ফিরে এসেছে নিপীড়িত জনগণের মনে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক কয়েকটি গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এসব মৃত্যু হচ্ছে বিগত সরকারের কর্মী-সমর্থক সন্দেহে, কখনো ধর্ম অবমাননার অভিযোগে, কখনো আবার চুরির সন্দেহে। যদিও কাউকে কেবল সন্দেহের বশে অপরাধী বলে তাৎক্ষণিক জনমত তৈরি করা এবং পরে গণপিটুনি দিয়ে হতাহত করা নতুন কোনো ঘটনা নয়। সবশেষ বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামে এক ব্যক্তিকে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। এ দুটি হত্যাকাণ্ড নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর আগে ৭ই সেপ্টেম্বর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ গণপিটুনিতে নিহত হন। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক গণপিটুনির ঘটনায় হতাহত হওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে। বেশিরভাগ ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও আলোচনায় না আসলে পুলিশের তেমন তৎপরতা থাকে না। সেই মামলার তদন্ত বিচার ঝুলে থাকে বছরের পর বছর।

বুধবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ব্যক্তির ভাত খাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে থাকা ব্যক্তির নাম তোফাজ্জল এবং ছবিটি ধারণের কিছুক্ষণ পর তাকে পিটিয়ে মারা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে। বুধবার ওই ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে আটক করে গণপিটুনির দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে আটটা দিকে দিকে ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা তোফাজ্জল হোসেনকে চোর সন্দেহে আটক করে গেস্টরুমে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত কয়েক দফা মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাত খাইয়ে ছবি ধারণ করা হয়। এরপর আবার তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। রাত ১২টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় কয়েকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানা গেছে, তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ক্যাম্পাসে চলাফেরা থাকায় হলে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি।

বুধবার রাতেই সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার বিকেলে তিনি ক্যাম্পাসে গেলে একদল শিক্ষার্থী তাকে ঘিরে ধরে পেটায়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত শামীমকে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে যায়। সেখানেও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আবারও তাকে মারধর করে। পরে প্রক্টরিয়াল টিম তাকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তাকে সাভার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

এর আগে গণপিটুনিতে আহত অবস্থায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদের যন্ত্রণায় কাতরানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায় তিনি অস্ফুট স্বরে বলছেন, ‘স্ত্রীর জন্য ওষুধ নিতে এসেছিলাম ভাই। আমি ছাত্রলীগ করতাম ওই জন্য ধরেছে। আমি পাঁচই আগস্ট মেডিকেলে ছিলাম। আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগ-টগ সব কাটা ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি ভাই।’ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে মতিহার থানায় পরে বোয়ালিয়া থানায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বোয়ালিয়া থানায় মেঝেতে শুয়ে থাকা অবস্থায় মাসুদের বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল।

তার শারীরিক অবস্থা দেখে পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছিলেন মাসুদ।

দশ বছর আগের এক হামলায় পা হারিয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ২৯শে এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা তার হাত ডান পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, বাম পাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার হাতের রগও কেটে দেয়া হয়।

গুজব বা জনমনে ক্ষোভের উদ্রেকের কারণে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করার ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত পাঁচই অগাস্টের পর বগুড়া, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, খুলনা, মিরসরাই, যাত্রাবাড়ী, টঙ্গী, রাজশাহী এবং বরিশালে গণপিটুনির ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা এর চাইতে আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, দেশে গত সাড়ে ছয় বছরে গণপিটুনিতে কমপক্ষে ২৮৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর কোনোটিতে ছেলেধরা বা ডাকাত সন্দেহে, আবার কোনো কোনো ঘটনায় চোর সন্দেহেও পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ঘটনায় হত্যা মামলা হলেও শাস্তি হওয়ার সংখ্যা খুবই কম।

গণপিটুনি নিয়ে সংবিধান ও আইনে যা আছে :
বাংলাদেশে সংবিধানে, অপরাধী-নিরপরাধী নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিককে আইনের আওতাও বিচার লাভ এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।

অনুচ্ছেদ ৩১ বলছে আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না যাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনামে বা সম্পত্তির হানি ঘটে।

অনুচ্ছেদ ৩৩ অনুযায়ী একজন ব্যক্তির অবশ্যই তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ এবং নিজেকে সমর্থন করার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৩৫ অনুযায়ী অর্থাৎ, আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না এবং অপরাধের জন্য যতটুকু শাস্তি প্রাপ্য তার চেয়ে বেশি বা ভিন্ন কোনো শাস্তি দেয়া যাবে না।

এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৯ ধারা অনুযায়ী, অপরাধী ধরা পড়লে তাকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করতেই হবে। এর ব্যতিক্রম করলে দণ্ডবিধির ১৮৭ ধারা অনুযায়ী অনূর্ধ্ব ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

আটক রাখার পর ওই ব্যক্তিকে যদি সামান্য আঘাতও করা হয় তাহলে ৩১৯ ধারায় উল্লিখিত আঘাতের অপরাধে অপরাধীকে ৩২৩ ধারার অধীনে এক বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ১০০০ টাকা জরিমানা করা যাবে।

যদি পিটুনি দেয়া হয় তবে কারাদণ্ডে মেয়াদ বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে অনূর্ধ্ব তিন বছর এক মাসে। সেইসাথে অনূর্ধ্ব ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে।

যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত দেয়া হয় তবে ৩২৫ ধারার অধীনে সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যায়।

এছাড়া দণ্ডবিধির ৩৩৫ ধারা অনুযায়ী কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড উভয় দণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারেন আঘাতকারীরা।
হামলা চালানোর ফলে যদি ব্যক্তির মৃত্যু হয় তাহলে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী দশ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের সাজা দেয়া যায়।

আর যদি অপরাধীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মেরে ফেলার বিষয়টি প্রমাণিত হয় তবে শাস্তি হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব দশ বছর মেয়াদের যে কোনো কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।

গণপিটুনিতে ওই ব্যক্তি নিহত হলে দণ্ডবিধির ৩৪ ধারা অনুযায়ী গণপিটুনিতে অংশ নেয়া সব ব্যক্তি সমানভাবে এজন্য দায়ী হবে। কেননা আইনে ‘যৌথ দায়িত্বশীলতা’ বলে একটি নীতি আছে। সেখানে বলা হয়েছে, একই অভিপ্রায় নিয়ে একাধিক ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটন করলে, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তি এমনভাবে দায়ী হবেন যেন তিনি নিজেই অপরাধটি করেছেন।

এর মানে গণপিটুনিতে যারাই অংশ নেবেন সেটা আদালতে প্রমাণ করা গেলে সবারই শাস্তি নিশ্চিত করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে কেউ বড় ধরনের জখম করলেও যে শাস্তি পাবেন, একজন সামান্য ধাক্কা দিলেও একই শাস্তির আওতাভুক্ত হবেন।
এছাড়া গণপিটুনিতে যদি কেউ মারা যায় আর সেটা যদি খুন হিসেবে আদালতে প্রমাণ করা যায় তাহলে দণ্ডবিধি- ১৮৬০ এর ২৯৯ ধারায় উল্লিখিত খুনের অপরাধে অপরাধীকে ৩০২ দ্বারার অধীনে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডিত করা যায়।

সে হিসেবে আদালতে গণপিটুনিতে হত্যা প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী সবারই নূন্যতম দণ্ড হবে ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড’।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা-১৯৪৮, এর তিন নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে ঊাবৎুড়হব যধং ঃযব ৎরমযঃ ঃড় ষরভব, ষরনবৎঃু ধহফ ংবপঁৎরঃু ড়ভ ঢ়বৎংড়হ (প্রত্যেকের জীবন, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার আছে)।
অর্থাৎ একজন মানুষ সুস্থ স্বাভাবিকভাবে তার জীবন যাপনের অধিকার রাখেন।

অনুচ্ছেদ পাঁচ অনুযায়ী- কারো প্রতি নির্যাতন, অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ করা যাবে না।
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি- ১৯৬৬ এর অনুচ্ছেদ ছয় একই বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছে। অনুচ্ছেদ সাতে নির্যাতনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটসের অনুচ্ছেদ দুই মানুষের জীবনের অধিকার নিয়ে আলোকপাত করেছে, অনুচ্ছেদ তিনে কারো প্রতি নির্যাতন নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অনুচ্ছেদ পাঁচে নিরাপত্তার কথাটি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া ২৬ অনুচ্ছেদে সবার আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনে গণপিটুনিতে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হলেও দেশের প্রচলিত বিচার কাঠামোয় ও তদন্ত ব্যবস্থায় গণপিটুনিতে শাস্তি নিশ্চিত করা বেশ কঠিন বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা।

দেশে আইনের ঘাটতি নেই। সমস্যা হলো আইনের প্রয়োগ করা হয় না এবং তদন্তের দুর্বলতা রয়ে গিয়েছে। সময় মতো আদালতে সাক্ষী হাজির করা যায় না। একারণে গণপিটুনিতে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। প্রচলিত আইনে গণপিটুনিতে অংশগ্রহণকারী সবাইকেই বিচারের আওতায় আনা যায়। দরকার শুধু সচেতনতা ও সদিচ্ছা। গণপিটুনিতে নিহতের একটি ঘটনারও যদি আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে যথাযথ বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া যেত, তাহলে হয়ত গণপিটুনির প্রবণতা হ্রাস পেত।

আরো পড়ুন : রবিউল আওয়াল মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য