প্রচণ্ড দাবদাহের কবলে বাংলাদেশ। প্রতিদিনই বাড়ছে গরমের তীব্রতা। এর মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ৪২ দশমিক ৬, চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৪ এবং ঢাকায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর দেশে এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। গরমের এই তীব্রতায় নাকাল সমগ্র দেশের মানুষ। মাঠের কৃষক, রিক্সাচালক থেকে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষের পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। গরমের তীব্রতায় পুড়ছে ফসলি জমি। গবাদি পশু নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন খামারিরা। কমলমতি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা বিবেচনায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মৌসুমী রোগে দেশের অনেক জায়গায়হাসপাতালে রোগীর জায়গা হচ্ছে না।
এরই মধ্যে হিট স্ট্রোকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় একজন কৃষক, সিরাজগঞ্জে এক বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং পাবনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের অধিকাংশ জায়গায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
কয়েক বছর হলো এই সময়টাতে অস্বাভাবিক গরম পড়ছে। এর কারণ মূলত বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এর ফলে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি দীর্ঘদিনের পরিবেশ ধ্বংসের একটি ফলাফল।
পরিবেশ ধ্বংসের কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। প্রধানত বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় কারণে সারা দেশের তাপমাত্রা বাড়ছে। পরিবেশদূষণের একটি কারণ হলো, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো নির্বিচারে কার্বন গ্যাস নিঃসরণ করছে। বিজ্ঞানীদের মতে, বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমানোর অন্যতম প্রধান উপায় হলো ব্যাপক হারে গাছ লাগনো। কিন্তু দেশে গাছ লাগনোর পরিবর্তে ব্যাপক হারে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতিনিয়ত নদী দখল ও দূষণে দেশের নদীগুলো অস্তিত্ব হারিয়েছে। একটি দেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রা রাখতে মোট আয়তনের যে পরিমাণ বনভূমি থাকা দরকার, তা আমাদের দেশে নেই। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বনাঞ্চল দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্পকারখনা। এর ফলে কমে যাচ্ছে বনের আয়তন, বাড়ছে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ।
দেশের গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরে তাপমাত্রা বেশি থাকে; বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা কয়েক বছর ধরে বায়ুদূষণের শীর্ষে অবস্থান করছে। এমনিতেই ঢাকার জলাধার ও নদী-নালা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবন, মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়া প্রতিনিয়ত বাড়ছে যানবাহনের পরিমাণ। অন্যদিকে কমছে সবুজায়ন। ফলে শহরের আবহাওয়া ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা বাড়ার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন যতটা দায়ী, এর চেয়ে অনেক বেশি দায়ী অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং নগরের পরিবেশ অব্যবস্থাপনা।
ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাওয়ার আগেই এই তাপপ্রবাহের কবল থেকে নিস্কৃতি পেতে হলে সারাদেশে ব্যাপক হারে গাছ লাগাতে হবে। বন্ধ করতে হবে বৃক্ষ নিধন। শহরের সড়কে যানবাহনের আধিক্যতা কমিয়ে বিকল্প বাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর বিরুদ্ধে কার্বন নিঃসরণের বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বে সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ঢাকাসহ সারা দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
আরো পড়ুন : আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হোক