মাসুদ রানা, মোংলা প্রতিনিধি
সরকারের পদত্যাগ করার সাথে সাথে একদল দুর্বৃত্ত এলাকার নিরিহ মানুষদের জমি, চিংড়ী ঘের, বাড়ি ঘর -মার্কেট সহ মুল্যবান স্থাপনা জোর পুর্বক দখল, মানুষদের মারধর ও লুটপাট শুরু করেছে মোংলা সহ এর আশপাশ এলাকায়। এরই ধারাবাহিকতায় মোংলা বন্দরের শিল্পাঞ্চল দিগরাজ বাজারের উত্তর পাশে নাসির সুপার মার্কেট ও মার্কেট সংলগ্ন দুইটি বাসায় হামলা চালিয়ে নগদ অর্থ, স্বর্ণলংকার, গুরুত্বপূর্ণ দলিল, মটরসাইকেল ও ঘরের মুল্য মালামাল লুট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে একটি চলমান মার্কেটও জোর পুর্বক দখল নিয়ে প্রকাশ্যে নাম পরিবর্তন করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে এসকল লুটকারী সন্ত্রাসীরা। এসময় মার্কেট মালিকের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে লুটপাট, ভাংচুর ও পরিবারের লোকজনকে মারধর করে বের করে দিয়েছে বলে থানার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় মোঃ সোহেল বাদি হয়ে শাহিন শেখকে প্রধান আসামী করে চিহ্ণিত ১০জন সন্ত্রাসী সহ অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জনকে আসামী করে থানায় মামলা করা হয়েছে। জীবনের ভয়ে বাড়ি ঘর রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছে জমির মালিক ও পরিবারের সদস্যরা।
গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করার পর পরই মোংলা এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত অসহায় ও নিরিহ মানুষের জমি, ব্যাবসা, ঘের ও মালামাল লুটতরাজে মরিয়া হয়ে ওঠে। মোংলা উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোতে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, বাড়ি ঘর ভাংচুর, মারপিট ও দখলে ঘটনা ঘটেছে। তেমনী কয়েকদিন আগে মোংলা বন্দরের শিল্পাঞ্চল সংলগ্ন দ্বিগরাজে নাসির সুপার মাকের্টে প্রতি দেিনর ন্যায় অফিস কক্ষে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম শুরু করছিলেন নাসির এন্টার প্রাইজের হিসাব রক্ষক মোঃ সোহেল। এসময় দ্বিগরাজ এলাকার বাসিন্ধা শাহিন শেখ ২৫/৩০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল নিয়ে হঠাৎ তাদের অফিস রুমে প্রবেশ করে ক্যাশিয়ার সোহেল কে মারধর ও লুটপাট শুরু করে। তখন প্রতিবাদ করলে তাকে শাষরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এসময় ওই ব্যাবসায়ীর অফিস কক্ষে থাকা নগদ টাকা, চারটি একাউন্ট এর চেক বই, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ও দলিল পত্র ও মুল্যবান মালামাল লুট করে নেয়। এছাড়া অফিসের সামনে রাখা একটি মটর সাইকেল জোর পুর্বক নিয়ে যায়। এর আগে অফিস কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে হামলাকারীরা। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে মার্কেট সংলগ্ন ব্যবসাযীর নাসির হাওলাদারের দুইটি বাসা বাড়িতেও হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায় এসকল সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে মুল্যবান স্বর্ণলংকার ও বাসার যাবতীয় মালামাল লুটপাট করে নেয় তারা। মারধর করা হয় মার্কেটের মালিক নাসির হাওলাদার এর ছোট ভাই মশিউর ও তার স্ত্রী ও সন্তানদের।
এ ঘটনার পর থানায় পুলিশি কার্যক্রম স্বাভাবিক না থাকায় মামলা করতে পারেনি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। পরে রোববার (১৮ আগষ্ট) লুটপাট ও দখলের প্রধান আসামী শাহিন শেখ সহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে মোংলা থানায় একটি মামলা দায়ের করে নাসির এন্টার প্রাইজের অফিস হিসাব রক্ষক মোঃ সোহেল।
এ মামলার বাদী সোহেল জানান, হামলা ও লুটপাট করার সময় মার্কেটের মালিক নাসির হাওলাদারকে হত্যা করার জন্য খুজতে থাকে। তিনি (ব্যাবসায়ী নাসির) খুলনায় থাকাতে তাকে না পেয়ে আক্রসে তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও দুইটি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায় তারা। হামলাকারীরা তাদের প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মালামাট লুট ও ক্ষতি করেছেন।
দ্বিগরাজ নাসির সুপার মার্কেটের মালিক নাসির হাওলাদার জানান, শাহিন সহ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট করে ব্যাপক ধ্বংশযোজ্ঞ চালিয়েছে। তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল কিন্ত না পেয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। দিন দুপুরে প্রকাশ্যে মার্কেটে থাকা তার সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলে এবং তাদের নামের একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। মার্কেটের ভাড়াটিয়াদেরও প্রান নাশেল হুমকি দিচ্ছে বলেও জানায় নাসির হাওলাদার। হামলা দখল ও লুটপাটকারীরা তাকে মেরে ফেলতে খোজাখুজি করছে তাই তিনি প্রান বাচাঁতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সে সহ তার পরিবারের সদস্যরা।
প্রধান অভিযুক্ত শাহিন শেখ সত্যতা স্বীকার করে জানান, নাসির হাওলাদার তার নিকট থেকে জমি খরিদ করে ছিলেন যা পরবর্তীতে ফেরত দেয়ার কথা ছিল কিন্ত ফেরত দেয়নী। এছাড়া মার্কেটের মালিক নাসির হাওলাদারের নিকট টাকা পাবেন তাই মাকেটটি দখলে নিয়েছেন।
এঘটনায় মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম আজিজুল ইসলাম জানান, দ্বিগরাজ শিল্প এলাকায় একটি মার্কেট দখল, মারধর, লুটপাট ও হত্যার চেষ্টার ঘটনায় অভিযোগ তদন্তে সত্যতা পেয়ে মোংলা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানায় পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরো পড়ুন : প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে একদিনের বেতন জমা দিলো মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ