ঢাকা ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোংলায় সরকারি চাল ওজনে কম দেয়ায় ২০ গ্রাহকের চাল জব্দ, ডিলার পলাতক

মোংলা প্রতিনিধি
মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্ধের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির (ন্যায্যমুল্যের) চাল বিতরণে অনিয়ম ও দুনীর্তি মাধ্যমে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ডিলারের বিরুদ্ধে। নিজ ক্ষমতা বলে সংশ্লিষ্টদের সহযোগীতায় বরাদ্দের সিংহভাগ চালই সে কালো বাজারে বিক্রি করে আসছেন বলেও অভিযোগ করে স্থানীয়রা। এতে সুবিধাবঞ্চিত হয়েছেন এলাকার ১২শ কার্ডধারী সুবিধাভোগীরা। উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের ৪,৫,৬ ও ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার রাজিব মৃধার এই অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে হাতেনাতেই। ডিলার রাজিব চটের বস্তায় ৩০ কেজি করে চাল থাকলেও তা খুলে প্লাষ্টিকের বস্তায় কম দিয়েছে বরে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। বুধবার (২৪এপ্রিল) দুপুরের সুন্দরবন ইউউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মাঝে এই চাল বিতরণে অনিয়ম পাওয়ায় প্রায় ২০/২৫ জন গ্রাহকের চাল জব্দ করে। ডিলার রাজিব পলাতক, তদন্ত কমিটি গঠন।

ভুক্তভোগীরা জানায়, প্রায় ২/৩ বছর যাবত রাজিব নিজে ডিলারশীপ নিয়ে এলাকার ৬টি ওয়াডের প্রায় এক হাজার দুইশ গ্রাহকের চাল বিতরণ করছে। কিন্ত তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতার ভাগ্নে হওয়ায় যেমন ইচ্ছে তেমন করছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে কার্ড বাতিল সহ বিভিন্ন রকম হুমকি দিতো বলেও অভিযোগ অসহায় এ কার্ডধারী গ্রাহকদের। সুন্দরবন ইউনিয়নের সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির চাল বিতরণে অনিয়মের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না। নিজ হাতে মেপে জব্দ করেন ওজনে কম দেওয়া ১৫/২০ বস্তা বিতরণ করা সরকারি চাল। তবে এরমধ্যেই ডিলার রাজিব মৃধা গাঁ ঢাকা দেয়। ইউএনও নিশাত তামান্না এ সময় সাংবাদিকদের কাছে বলেন, এখানে সরকারের দরিদ্রদের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্ধের চাল বিতরণে ওজনে কম দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ৩০কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ২৬/২৭ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। আর মানুষকে যে চটের বস্তায় চাল দেওয়ার কথা সেটাও ডিলার দেয়নি। তার পরিবর্তন করে অন্য প্লাষ্টিক বস্তায় এই চাল দিয়েছেন। চাল বিতরণে প্রতারণা, অনিয়ম এবং সরকারি চাল আত্মসাৎতের প্রমাণ পাওয়ায় ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানায় নির্বাহী কর্মকর্তা।

এছাড়া সরকারি চাল বিতরণের সময় সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহিনুর রহমান প্রশিক্ষনে থাকায় তার প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত না থাকায় তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না। এঘটনায় ডিরার পলাতক থাকলেও ওই এলাকায় তার ডিলারের মাধ্যমে চাল বিতারণ বন্ধ রাখা হয়েছে এবং কৃষি কর্মকর্তাকে দায়ীত্ব দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন কতরা হয়েছে।

এদিন সুন্দরবন ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ রেজাউল করিম বলেন, কয়েক বছর ধরেই ডিলার রাজিব মৃধা এই অনিয়ম করে আসছেন। তাকে নিষেধ করা হলেও কারও কথা শোনেনা বুধবার অনিয়ম করে ১২ জন সহ আরো কয়েকজন অসহায় গরীবদের ৩০কেজি চালে ওজনে ২/৩ কেজি করে কম দিয়েছেন। এই চাল আবার গোপনে অন্যত্র বিক্রি করেন ডিলার রাজিব মৃধা।

ভুক্তভোগী ওয়াদুদু মৃধা, হাফিজুল মৃধা, ফাইজুল মৃধা, হাসিনা বেগম, শুকুমার মন্ডল সহ অনেকেই বলেন, ডিলার রাজিব মৃধা ৩০কেজি সরকারি চালন বস্তার পরিবর্তে অন্য প্লাষ্টিক বস্তায় ২৬/২৭ কেজি করে চাল দিয়েছে। ডিলার বাজিব মৃধার বিরুদ্ধে কথা বলতে কেউ সাহস পায়না। তাই তিনি চাল বিতরণে ওজনে কম দিচ্ছে কিন্ত প্রতিবাদ করলে এলাকার অসহায় মানুষের সরকারী কার্ড ও সকল সাহায্য থেকে বঞ্চিত করবে বলেও হুমকি দিতো এমন বহু অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। রাজিব মৃধা মোংলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম হোসেনের আপন ভাগ্নে। সেই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দীর্ঘদিন তিনি এই অনিয়ম করে আসছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না আরো বলেন, ডিলারকে উপজেলা আসার জন্য বলা হয়েছে এবং তার ডিলারশীপের মাধ্যমে সুন্দরবন ইউনিয়নের ৪ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চাল বিতরণ সাময়ীক বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে প্রশাসনের মাধ্যমে চাল বিতারণ চলবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষি প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলেও জানায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

আরো পড়ুন : মোংলায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

ট্যাগস

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহমুদুন্নবী জ্যোতি

অফিসঃ ২/২ আরকে মিশন রোড , ঢাকা।

ইমেলঃ chalomanbarta@yahoo.com, chalomanbarta@gmail.com

মোবাইলঃ ০১৭১১০৫৬৮৬৬, ০১৬৮১৯২৪০০০

মোংলায় সরকারি চাল ওজনে কম দেয়ায় ২০ গ্রাহকের চাল জব্দ, ডিলার পলাতক

আপডেট সময় ১০:৫৫:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

মোংলা প্রতিনিধি
মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্ধের খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির (ন্যায্যমুল্যের) চাল বিতরণে অনিয়ম ও দুনীর্তি মাধ্যমে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ডিলারের বিরুদ্ধে। নিজ ক্ষমতা বলে সংশ্লিষ্টদের সহযোগীতায় বরাদ্দের সিংহভাগ চালই সে কালো বাজারে বিক্রি করে আসছেন বলেও অভিযোগ করে স্থানীয়রা। এতে সুবিধাবঞ্চিত হয়েছেন এলাকার ১২শ কার্ডধারী সুবিধাভোগীরা। উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের ৪,৫,৬ ও ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার রাজিব মৃধার এই অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে হাতেনাতেই। ডিলার রাজিব চটের বস্তায় ৩০ কেজি করে চাল থাকলেও তা খুলে প্লাষ্টিকের বস্তায় কম দিয়েছে বরে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। বুধবার (২৪এপ্রিল) দুপুরের সুন্দরবন ইউউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মাঝে এই চাল বিতরণে অনিয়ম পাওয়ায় প্রায় ২০/২৫ জন গ্রাহকের চাল জব্দ করে। ডিলার রাজিব পলাতক, তদন্ত কমিটি গঠন।

ভুক্তভোগীরা জানায়, প্রায় ২/৩ বছর যাবত রাজিব নিজে ডিলারশীপ নিয়ে এলাকার ৬টি ওয়াডের প্রায় এক হাজার দুইশ গ্রাহকের চাল বিতরণ করছে। কিন্ত তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতার ভাগ্নে হওয়ায় যেমন ইচ্ছে তেমন করছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে কার্ড বাতিল সহ বিভিন্ন রকম হুমকি দিতো বলেও অভিযোগ অসহায় এ কার্ডধারী গ্রাহকদের। সুন্দরবন ইউনিয়নের সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির চাল বিতরণে অনিয়মের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না। নিজ হাতে মেপে জব্দ করেন ওজনে কম দেওয়া ১৫/২০ বস্তা বিতরণ করা সরকারি চাল। তবে এরমধ্যেই ডিলার রাজিব মৃধা গাঁ ঢাকা দেয়। ইউএনও নিশাত তামান্না এ সময় সাংবাদিকদের কাছে বলেন, এখানে সরকারের দরিদ্রদের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্ধের চাল বিতরণে ওজনে কম দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ৩০কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ২৬/২৭ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। আর মানুষকে যে চটের বস্তায় চাল দেওয়ার কথা সেটাও ডিলার দেয়নি। তার পরিবর্তন করে অন্য প্লাষ্টিক বস্তায় এই চাল দিয়েছেন। চাল বিতরণে প্রতারণা, অনিয়ম এবং সরকারি চাল আত্মসাৎতের প্রমাণ পাওয়ায় ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানায় নির্বাহী কর্মকর্তা।

এছাড়া সরকারি চাল বিতরণের সময় সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহিনুর রহমান প্রশিক্ষনে থাকায় তার প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত না থাকায় তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না। এঘটনায় ডিরার পলাতক থাকলেও ওই এলাকায় তার ডিলারের মাধ্যমে চাল বিতারণ বন্ধ রাখা হয়েছে এবং কৃষি কর্মকর্তাকে দায়ীত্ব দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন কতরা হয়েছে।

এদিন সুন্দরবন ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ রেজাউল করিম বলেন, কয়েক বছর ধরেই ডিলার রাজিব মৃধা এই অনিয়ম করে আসছেন। তাকে নিষেধ করা হলেও কারও কথা শোনেনা বুধবার অনিয়ম করে ১২ জন সহ আরো কয়েকজন অসহায় গরীবদের ৩০কেজি চালে ওজনে ২/৩ কেজি করে কম দিয়েছেন। এই চাল আবার গোপনে অন্যত্র বিক্রি করেন ডিলার রাজিব মৃধা।

ভুক্তভোগী ওয়াদুদু মৃধা, হাফিজুল মৃধা, ফাইজুল মৃধা, হাসিনা বেগম, শুকুমার মন্ডল সহ অনেকেই বলেন, ডিলার রাজিব মৃধা ৩০কেজি সরকারি চালন বস্তার পরিবর্তে অন্য প্লাষ্টিক বস্তায় ২৬/২৭ কেজি করে চাল দিয়েছে। ডিলার বাজিব মৃধার বিরুদ্ধে কথা বলতে কেউ সাহস পায়না। তাই তিনি চাল বিতরণে ওজনে কম দিচ্ছে কিন্ত প্রতিবাদ করলে এলাকার অসহায় মানুষের সরকারী কার্ড ও সকল সাহায্য থেকে বঞ্চিত করবে বলেও হুমকি দিতো এমন বহু অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। রাজিব মৃধা মোংলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম হোসেনের আপন ভাগ্নে। সেই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দীর্ঘদিন তিনি এই অনিয়ম করে আসছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না আরো বলেন, ডিলারকে উপজেলা আসার জন্য বলা হয়েছে এবং তার ডিলারশীপের মাধ্যমে সুন্দরবন ইউনিয়নের ৪ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চাল বিতরণ সাময়ীক বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে প্রশাসনের মাধ্যমে চাল বিতারণ চলবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষি প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলেও জানায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

আরো পড়ুন : মোংলায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়